নাসুমের ব্যাটিং বীরত্বে জিতে শিরোপার আশা বাঁচিয়ে রাখল মোহামেডান

ছবি: বিসিবি

প্রয়োজনীয় ১ রান পূর্ণ করেই ব্যাট ফেলে দিলেন নাসুম আহমেদ। দুই হাত প্রসারিত করে দৌড়াতে দৌড়াতে তিনি মাতলেন তীব্র উল্লাসে। মুখে চওড়া হাসি নিয়ে ডাগআউট থেকে ছুটে এসে তাকে জড়িয়ে ধরলেন সতীর্থরা। মূল কাজ বোলিং হলেও নাসুম ব্যাট হাতে বীরত্ব দেখানোয় ঢাকা প্রিমিয়ার লিগের শিরোপার আশা বাঁচিয়ে রাখল মোহামেডান। শেষ বলের রোমাঞ্চে তারা হারিয়ে দিল গাজী গ্রুপকে।

শনিবার মিরপুর শেরে বাংলা স্টেডিয়ামে সুপার লিগের নাটকীয় ম্যাচে ৪ উইকেটের রুদ্ধশ্বাস জয় পেয়েছে মোহামেডান। টস জিতে আগে ব্যাট করে ৪৯.৪ ওভারে ২৩৬ রানে গুটিয়ে যায় গাজী গ্রুপ। জবাবে পুরো ওভার খেলে ৬ উইকেটে ২৩৭ রান তুলে আনন্দের জোয়ারে ভাসে তাওহিদ হৃদয়ের দল।

জয়ের জন্য অফ স্পিনার শেখ পারভেজ জীবনের করা ম্যাচের শেষ ওভারে ১২ রানের চাহিদা ছিল সাদা-কালোদের। ক্রিজে সংগ্রাম করতে থাকা মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন প্রথম বল ডট দেওয়ার পর নেন সিঙ্গেল। তৃতীয় বলে স্ট্রাইক পেয়েই চার মেরে দেন নাসুম। পরের বল ডট হলে ২ বলে ৭ রানের কঠিন সমীকরণ দাঁড়ায়। ম্যাচের ভাগ্য তখন হেলে গাজী গ্রুপের দিকে। তবে পঞ্চম বলে ডিপ মিড উইকেট দিয়ে ছক্কা হাঁকিয়ে মোহামেডানকে চালকের আসনে বসিয়ে দেন নাসুম।

ছবি: বিসিবি

১ বলে ১ রানের চাহিদা যখন, তখন সব ফিল্ডারকে ৩০ গজের বৃত্তের ভেতরে নিয়ে আসেন গাজীর অধিনায়ক সালমান হোসেন ইমন। উদ্দেশ্য ছিল, যে কোনোভাবেই হোক সিঙ্গেল আটকানো। নাসুম মিড অনে বল ঠেলেই দেন পড়িমরি করে দৌড়। বিপদ অবশ্য ঘটতে পারত। তবে সেখানে থাকা ফিল্ডার আব্দুল গাফফার সাকলাইন গড়িয়ে আসা বল ধরতে খাবি খান। তিনি যতক্ষণে নন-স্ট্রাইকে প্রান্তে থ্রো করেন, তার আগেই রান পূর্ণ করে মোহামেডানকে স্মরণীয় জয় পাইয়ে দেন নাসুম। তিনি ১৩ বলে একটি চার ও দুটি ছক্কায় ২১ রানে অপরাজিত থাকেন।

১৫ ম্যাচে মোহামেডানের পয়েন্ট এখন ২৪। সমান ম্যাচে ২৬ পয়েন্ট নিয়ে লিগের শীর্ষে রয়েছে আবাহনী। আগামী মঙ্গলবার এই মাঠেই অঘোষিত ফাইনালে রূপ নেওয়া সুপার লিগের শেষ ম্যাচে মুখোমুখি হবে দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী আবাহনী ও মোহামেডান। সেদিন যারা জিতবে, তাদের হাতেই উঠবে দেশের শীর্ষ ৫০ ওভারের ঘরোয়া টুর্নামেন্টের শিরোপা।

গাজী গ্রুপ লড়াইয়ের পুঁজি পায় ওপেনার মুনিম শাহরিয়ারের ব্যাটে। তিনি ৮২ বলে দশটি চার ও দুটি ছক্কায় করেন ৮০ রান। দলীয় ১২৬ রানে তৃতীয় ব্যাটার হিসেবে তার বিদায়ের পর আর কেউ লম্বা ইনিংস খেলতে পারেননি। ছয়ে নামা গাজী মোহাম্মদ তাহজিবুল ইসলামের ৪০ বলে ৩২ ও সাতে নামা জীবনের ২৯ বলে ৩৩ রানের ইনিংস আড়াইশর কাছাকাছি পৌঁছায় দলটি। মোহামেডানের হয়ে সাইফউদ্দিন ৪২ ও মোস্তাফিজুর রহমান ৪৬ রানে ৩ উইকেট করে নেন।

জবাব দিতে নেম ৪০ রানে ২ উইকেট খুইয়ে কিছুটা চাপে পড়ে মোহামেডান। আনিসুল ইসলাম ১০ বলে ২ এবং তৌফিক খান তুষার ২৩ বলে ১৪ রানে থামেন। এরপর জুটি বাঁধেন রনি তালুকদার ও নিষেধাজ্ঞা জুটলেও গতকাল তামিম ইকবালের নেতৃত্বে অনেক প্রতিবাদী ক্রিকেটারের চাপের মুখে বিসিবি সিদ্ধান্ত পাল্টে ফেলায় খেলার সুযোগ পাওয়া হৃদয়। তারা ৭৫ রান যোগ করেন। হৃদয় লেগ স্পিনার ওয়াসি সিদ্দিকির শিকার হন ৫৪ বলে ৩৭ রানে।

ভালো অবস্থান থেকে এরপর পা হড়কে যায় ঐতিহ্যবাহী সাদা-কালোদের। দলীয় ১৪৬ রানে রনি এবং দলীয় ১৪৮ রানে আরিফুল ফিরলে নতুন করে বিপাকে পড়ে তারা। রনি করেন ৮৩ বলে ৫৫ রান। আরিফুল রানআউট হন ১ বলে ১ রানে। সেখান থেকে দলকে টানেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ও সাইফউদ্দিন। তাদের ৫৬ রানের জুটিতে অগ্রণী ছিলেন মাহমুদউল্লাহ। ৬২ বলে ৪৯ রান করে তিনি আউট হন বাঁহাতি স্পিনার শামিম মিয়ার বলে।

এতে ম্যাচের মোড় আবার ঘুরে যায়। দুই স্পিনার শামিম ও জীবনের আঁটসাঁট বোলিংয়ে মোহামেডানের চ্যালেঞ্জ হয়ে যায় কঠিন। এক পর্যায়ে, হাতে ৫ উইকেট নিয়ে ৫৪ বলে ৫১ রানে থাকা সমীকরণ গিয়ে দাঁড়ায় ১২ বলে ২৩ রানে। সাইফউদ্দিন খোলসে বন্দি থাকায় দায়িত্ব কাঁধে তুলে নেন নাসুম। তার কল্যাণেই অসাধারণ জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে মোহামেডান। ম্যাচসেরার পুরস্কার জেতা সাইফউদ্দিন অপরাজিত থাকেন ৫৫ বলে ৩০ রানে।

Comments

The Daily Star  | English

Please don't resign: An appeal to Prof Yunus

Every beat of my patriotic heart, every spark of my nation building energy, every iota of my common sense, every conclusion of my rational thinking compels me to most ardently, passionately and humbly appeal to Prof Yunus not to resign from the position of holding the helm of the nation at this crucial time.

6h ago