বাংলাদেশের ক্রিকেট আপনাকে নিয়মিতই অবাক করবে

বাংলাদেশকে হারাতে আলিশান শরাফু খেলেন ৬৮ রানের ইনিংস।

গত ডিসেম্বরে এই সংযুক্ত আরব আমিরাত দলটি সৌদি আরবের কাছেও হেরেছিলো, কুয়েতকে হারাতে পেরেছিলো মাত্র ২ রানে। এরাই কিনা বাংলাদেশকে টি-টোয়েন্টি সিরিজ হারিয়ে দিল! বিস্মিত হবেন? তাহলে আপনার জন্য হয়ত সামনে আরও কোন বড় বিস্ময় অপেক্ষা করছে। নিঃসন্দেহে আনন্দময় বিস্ময় নয়, হতভম্ব হয়ে কোমরে হাত দেওয়ার মতন ব্যাপার আর কী।

ঠিক এক বছর পিছিয়ে যান, এই মে মাসেই যুক্তরাষ্ট্রের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজ হেরে দেখিয়েছিলো বাংলাদেশ। যুক্তরাষ্ট্রের সেই দলের বেশিরভার ক্রিকেটার মূলত পেশাদার নন, অন্য চাকরির ফাঁকে উপমহাদেশীয় সত্ত্বা জারি রাখতে খেলেন ক্রিকেট। তারাই নাকানি-চুবানি খাইয়ে ছেড়েছিলেন নাজমুল হোসেন শান্তদের।

সেবার টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আগে প্রস্তুতি নিতে সিরিজটির আয়োজন করা হয়েছিলো। এবার একটা প্রতিশ্রুতি রক্ষা আর পাকিস্তান সফরের আগে প্রস্তুতির চিন্তাও ছিলো মাথায়। এখন থেকে হয়ত আইসিসি সহযোগী সদস্য দেশগুলোর বিপক্ষে এরকম 'প্রস্তুতির' সিরিজ খেলতে গিয়ে অপ্রস্তুত অবস্থায় পড়তে দশবার ভাববে বিসিবি।

আইসিসি আসরে দেখা হয়ে গেলে মানে মানে উদ্ধারের চিন্তা ভর করবে। ২০১৪ সালে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে যেমন হংকংয়ের কাছে হেরে গিয়েছিলেন সাকিব আল হাসানরা। কুড়ি ওভারের সংস্করণে আফগানিস্তান ঢের এগিয়ে গেছে। আয়ারল্যান্ড, জিম্বাবুয়ে স্কটল্যান্ড, নেদারল্যান্ড-এদের চেয়ে যে বাংলাদেশ এগিয়ে থাকা দল তা খুব জোর দিয়ে বলার উপায় নেই।

বাংলাদেশের ক্রিকেট এক পা এগিয়ে, দশ পা পিছিয়ে যাচ্ছে কিনা এই আলাপ এখন জোরালো। এমনিতে জাতীয় দল ব্যবস্থাপনায় সুযোগ সুবিধার দিক থেকে দৃশ্যমান কোন খামতি দেখতে পাবেন না। কাড়ি কাড়ি টাকা দিয়ে সব ধরণের কোচিং স্টাফ রাখা আছে। বেতন-ভাতার দিক থেকেও কোন সংকট নেই।

তাহলে? মূলত স্কিল ও মানসিকতার ঘাটতি প্রবল। এই বাস্তবতা দিনের পর দিন অস্বীকার করে গেলে রোগ সারবে না। বাংলাদেশের কোচরা প্রায়ই বলেন, 'ছেলেদের মধ্যে স্কিলের কোন ঘাটতি নাই, প্রয়োগে সমস্য।' এই ক্লিশে রেকর্ড হয়ত এখন আর তেমন গ্রহণযোগ্য হবে না। স্কিলের ঘাটতি যে এখন আর আড়ালের কোন ব্যাপার নয়।

আইসিসির সহযোগী সদস্য দেশগুলো নিজেদের মধ্যে ক্রমাগত টি-টোয়েন্টি খেলে। এই সংস্করণের ধরণ ধারণ তাদের আত্মস্থ। সামান্য ভুল করলে তারা সুযোগ নেবেই, একের পর এক বিব্রতকর পরিস্থিতি তখন হবে থামানো কঠিন হবে।

সিরিজ হারের পেছনে অধিনায়ক লিটন দাস দায় দিয়েছেন 'শিশিরের'। আমিরাতে প্রচণ্ড আর্দ্রতায় বল মূলত ভিজে যাচ্ছিলো দ্রুত। ভেজা বল বোলারদের গ্রিপ করতে সমস্যা হয়, পরে বোলিং করা তাই কিছুটা কঠিন। এই কারণটি যৌক্তিক কিন্তু প্রতিপক্ষ যখন আমিরাত তখন এটি আর খাটে না।

টি-টোয়েন্টি ম্যাচ রাতের আলোয় হবে, টসও আপনার নিয়ন্ত্রণে নেই। বল ভিজে যাওয়ার সমস্যা নিয়েই খেলতে হবে। পুরো সিরিজেই বাংলাদেশের বোলারদের ভেজা বলে বল করতে ভুগতে দেখা গেছে।  'শিশির' সমস্যায় বল গ্রিপ করতে স্পিনারদের বেশি সমস্যা হওয়ার কথা। তবে গত দুই ম্যাচে সবচেয়ে খরুচে বোলার তানজিম হাসান সাকিব একজন পেসার। এখানেই প্রশ্নটা আসে স্কিলের ঘাটতির। কোন কন্ডিশনে খেলা হবে সেটা ভেবে আজকাল খেলোয়াড়রা সেই তরিকা অনুযায়ী নিজেদের ঝালাই করেন। আমিরাতে যাওয়ার আগে বল ভিজিয়ে বোলাররা অনুশীলন করেননি কেন?

স্কিলের ঘাটতি ব্যাটিংয়েও। প্রথম দুই ম্যাচের স্কোরকার্ড দেখলে মনে হবে ব্যাটাররা তো বড় পুঁজিই এনেছেন। বিশেষ করে দ্বিতীয় ম্যাচে তো দুইশো ছাড়ানো পুঁজি নিয়েও হারতে হয়েছে। তবে আধুনিক টি-টোয়েন্টি যে তালে এগিয়েছে পরিস্থিতি বিচারে দুইশো রান যে সব সময় নিরাপদ নয় এই উপলব্ধিটা জরুরি। ভেজা বলে সমস্যা হতে পারে ভেবে আপনাকে পুঁজিটা এমন জায়গায় নিতে হবে যেখানে প্রতিপক্ষ নাগাল না পায়।  ব্যাটিং ইউনিট হিসেবে বাংলাদেশের খেলা দেখলে আপনার মনে হবে কোথায় যেন জড়তা কাজ করছে, ব্যাটাররা কেউ কেউ যেন কোন এক গর্তে পা ঢুকিয়ে বসে আছেন।

সাম্প্রতিক সময়ে হোম অব ক্রিকেটে ঢুকলে মনে হবে এক জেলখানায় প্রবেশ করছেন আপনি। খেলোয়াড়রা যেসব জায়গায় অনুশীলন করেন সেসব জায়গা উঁচু স্টিলের কাঠামো দিয়ে ঢেকে রাখা হয়েছে। অনুশীলন ইদানিং ১৫ মিনিটের বেশি গণমাধ্যম-কর্মীদের দেখার ব্যবস্থা নেই। বেশিরভাগ সময় তারা 'ক্লোজডোর' অনুশীলন করেন। ক্রিকেটাররাই নাকি বিসিবির কাছে নালিশ করে এই ব্যবস্থা করে নিয়েছেন। ভিডিও কন্টেন্টের হার বেড়ে যাওয়ায় অনুশীলনের নানান ফুটেজ নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় অদ্ভুত সব কন্টেন্ট হয়, এতে করে বিব্রত হন ক্রিকেটাররা। বোঝা যায় সারাক্ষণই এক্সপোজড হওয়ার আতঙ্কে থাকেন তারা। কিন্তু অনুশীলন ক্লোজডোর করলেও ম্যাচ তো আর ক্লোজডোর করা সম্ভব না। রোগ থাকলে চিকিৎসা জরুরী, ঘাটতি থাকলে ধার দেওয়া দরকার। উপেক্ষা করে ছুটতে গেলে সুদিনের অপেক্ষাও বাড়বে।

 

Comments

The Daily Star  | English

Public servants won’t be forced to retire

The Advisory Council has decided to abolish a provision of the Public Service Act, 2018, which allows the government to send public servants into forced retirement after 25 years of service.

8h ago