মেসি-রামোসের বিদায়ী ম্যাচে পিএসজির হার
খেলা শুরুর ২১ মিনিটের মধ্যে দুই গোলের লিড নিল পিএসজি। তখন তাদের জন্য বড় জয়ের সম্ভাবনা দেখা অস্বাভাবিক ছিল না। কিন্তু প্রতিপক্ষ ক্লেঁমো ফুত হাল ছাড়ল না মোটেও। প্রথমার্ধেই সমতায় ফিরে দ্বিতীয়ার্ধে তারা উল্টো গেল এগিয়ে। এরপর ঘুরে দাঁড়াতে ব্যর্থ প্যারিসিয়ানরা হার মানল লিওনেল মেসি-সার্জিও রামোসের বিদায়ী ম্যাচে।
ফরাসি লিগ ওয়ানে শনিবার রাতে পার্ক দে প্রিন্সেসে স্বাগতিকদের বিপক্ষে স্মরণীয় জয় পেয়েছে ক্লেঁমো। দুর্দান্ত প্রত্যাবর্তনের নজির দেখিয়ে ক্রিস্তফ গালতিয়ের শিষ্যদের তারা পরাস্ত করেছে ৩-২ গোলে। ফলে হার দিয়ে ২০২২-২৩ মৌসুম শেষ করল আসরের শিরোপাধারী পিএসজি।
এই ম্যাচ দিয়ে পিএসজিতে শেষ হলো আর্জেন্টাইন ফরোয়ার্ড মেসি ও স্প্যানিশ ডিফেন্ডার রামোসের পথচলা। আগামী মৌসুমে নতুন ঠিকানায় পাড়ি জমাবেন তারা। বিদায়ী ম্যাচে রামোস জালের দেখা পান। তবে মেসিকে মাঠ ছাড়তে হয় খালি হাতে। রামোসের পর কিলিয়ান এমবাপে দ্বিগুণ করেন ব্যবধান। তবে মজবুত অবস্থান ধরে রাখতে পারেনি পিএসজি। বিরতির আগেই ইয়োহান গাস্তিয়েন ব্যবধান কমানোর পর সমতা টানেন মেহদি জেফান। বিরতির পর ক্লেঁমোর পক্ষে জয়সূচক গোল করেন গ্রেয়ন কিয়েই।
৩৮ ম্যাচে ৮৫ পয়েন্ট নিয়ে লিগ শেষ করল পিএসজি। তাদের পাশাপাশি আগামী মৌসুমের চ্যাম্পিয়ন্স লিগে সরাসরি খেলবে লেঁস। ৮৪ পয়েন্ট নিয়ে দ্বিতীয় হয়েছে তারা। ৭৩ পয়েন্ট নিয়ে তৃতীয় স্থান পেয়েছে মার্সেই। তাদেরকে বাছাইপর্ব পেরিয়ে জায়গা করে নিতে হবে চ্যাম্পিয়ন্স লিগে।
ম্যাচের পঞ্চম মিনিটেই বল জড়ায় পিএসজির জালে। তবে এর আগে বল কিয়েইর হাতে লাগায় ভিএআরের সাহায্য নিয়ে গোল বাতিল করেন রেফারি। পিছিয়ে পড়ার শঙ্কা সামলে তেতে ওঠে গালতিয়ের দল। ১৪তম মিনিটে মেসির শট রুখে দেন ক্লেঁমো গোলরক্ষক মোরি দিয়াও। পরের মিনিটে এমবাপের প্রচেষ্টাও তাকে ফাঁকি দিতে পারেনি।
১৬তম মিনিটে পিএসজিকে আর ঠেকিয়ে রাখা যায়নি। ভিতিনহার ক্রসে দারুণ হেড করে জাল কাঁপান রামোস। পাঁচ মিনিট পর গোলের দেখা পান এমবাপে। স্পট-কিক থেকে ব্যবধান বাড়ান ফরাসি স্ট্রাইকার। ডি-বক্সে আশরাফ হাকিমি ফাউলের শিকার হওয়ায় বেজেছিল পেনাল্টির বাঁশি।
মাত্র তিন মিনিট পরই সফরকারীরা গাস্তিয়েনের লক্ষ্যভেদে ব্যবধান কমায়। এতে বড় দায় আছে ইতালিয়ান মিডফিল্ডার মার্কো ভেরাত্তির। ডি-বক্সে তার দুর্বল পাসের খেসারত দিতে হয় প্যারিসিয়ানদের। ৩৭তম মিনিটে সমতায় ফেরার সুবর্ণ সুযোগ হাতছাড়া করে ক্লেঁমো। ডি-বক্সে ওয়ারেন জায়ারে-এমেরির হাতে বল লাগলে রেফারি পেনাল্টির সিদ্ধান্ত দেন। কিন্তু কিয়েই বল মারেন বাইরে।
৪২তম মিনিটে মেসির ফ্রি-কিক ক্রসবারের সামান্য উপর দিয়ে চলে যায়। এর কিছুক্ষণের মধ্যে সমতা টানে ক্লেঁমো। প্রথমার্ধের যোগ করা সময়ের প্রথম মিনিটে মোহাম্মদ চামের ক্রস পিএসজি গোলরক্ষক জিয়ানলুইজি দোন্নারুমা বিপদমুক্ত করতে পারেননি। খুব কাছ থেকে আলগা বল জালে পাঠান জেফান।
দ্বিতীয়ার্ধের নবম মিনিটে বিস্ময়করভাবে হতাশ করেন মেসি। এমবাপের কাছ থেকে ফাঁকায় বল পেলেও তার এলোমেলো শট চলে যায় অনেক উপর দিয়ে। পাঁচ মিনিট পর তার আরেকটি প্রচেষ্টা কর্নারের বিনিময়ে ঠেকান দিয়াও।
ম্যাচের ৬৩তম মিনিটে অনেকটা আচমকা এগিয়ে যায় ক্লেঁমো। এলবাসান রাশানির মাপা ক্রসে পা ছুঁইয়ে গোল করেন কিয়েই। চার মিনিট পর চতুর্থ গোল প্রায় পেয়েই গিয়েছিল তারা। রাশানির ব্যাক-ফ্লিক কোনোমতে ঠেকান দোন্নারুমা। দ্বিতীয়ার্ধের যোগ করা সময়ের তৃতীয় মিনিটে পিএসজিকে সমতায় ফেরানোর সম্ভাবনা জাগান মেসি। তবে তার ফ্রি-কিক দারুণ দক্ষতায় আটকে দেন গোলরক্ষক।
এই ম্যাচে পিএসজির খেলোয়াড়দের সবার জার্সির পেছনে লেখা ছিল সতীর্থ সার্জিও রিকোর নাম। দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত স্প্যানিশ গোলরক্ষকের প্রতি সমর্থন জানাতে এমন উদ্যোগ। টানা পঞ্চমবার লিগ ওয়ানের সর্বোচ্চ গোলদাতার পুরস্কার জেতা এমবাপে তার ২৯তম গোলের পর রিকোর জার্সি হাতে নিয়ে উদযাপন করেন।
Comments