ফেডারেশন কাপে সাফল্যের মূল চাবিকাঠি স্থানীয়রাই: তপু

অধিনায়ক হিসেবে ফেডারেশন কাপ জয়ে নেতৃত্ব দিয়ে সর্বোচ্চ গোলদাতাদের একজনও হয়ে ওঠেন বসুন্ধরা কিংসের সেন্ট্রাল ডিফেন্ডার তপু বর্মণ। সেইসঙ্গে টুর্নামেন্টের সেরা খেলোয়াড়ও নির্বাচিত হন তিনি। ৩০ বছর বয়সী এই ফুটবলার মৌসুমের শুরুতে অনুষ্ঠিত চ্যালেঞ্জ কাপের ফাইনালেও সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার পেয়েছিলেন।

দ্য ডেইলি স্টারের আনিসুর রহমানকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তপু কথা বলেন নিজের পারফরম্যান্স, কিংসের চড়াই-উতরাইয়ের মৌসুম এবং দেশের ঘরোয়া ও জাতীয় ফুটবলের বর্তমান অবস্থা নিয়ে। নিচে সাক্ষাৎকারের নির্বাচিত অংশ তুলে ধরা হলো:

দ্য ডেইলি স্টার: চ্যালেঞ্জ কাপ জয়ের পর কিছুটা অস্থির মৌসুম পার করলেও কীভাবে কিংস ফেডারেশন কাপ ধরে রাখতে পারল?

তপু বর্মণ: এএফসি চ্যালেঞ্জ লিগে আমরা তিনটি ম্যাচই হেরেছিলাম… তবে ভুটানে ভালো অভিজ্ঞতা হয়েছে আমাদের। ঘরোয়া মৌসুমটা ভালোভাবেই শুরু করেছিলাম চ্যালেঞ্জ কাপ জিতে। লিগেও দারুণ শুরু হয়েছিল, কিন্তু সেই গতি ধরে রাখতে পারিনি… সব মিলিয়ে এটি ছিল কিংসের জন্য চ্যালেঞ্জিং এক মৌসুম। তবু আমরা দুটি ট্রফি জিতে প্রমাণ করেছি যে এখনও আমরা দেশের সেরা দল।

ডেইলি স্টার: ফিফার ট্রান্সফার নিষেধাজ্ঞা উঠে যাওয়ার পর মৌসুমের মাঝপথে বিদেশি খেলোয়াড় সাইন করাটা কতটা কাজে লেগেছে?

তপু: যারা মাঝ-মৌসুমে দলে এসেছে, তারা মিগুয়েল ফেরেইরার মতো মানের খেলোয়াড় নয়… তাই শুধু তাদের ওপর ভরসা করে ফেডারেশন কাপ জেতা যেত না। স্থানীয় খেলোয়াড়দের প্রচেষ্টাই ছিল এই সাফল্যের মূল।

ডেইলি স্টার: বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে কিংসের পারফরম্যান্স এতটা ওঠানামা করল কেন?

তপু: লিগ হচ্ছে দীর্ঘমেয়াদি এক প্রতিযোগিতা, যেখানে প্রতিটি ম্যাচেই ধারাবাহিকতা দেখাতে হয়… এখন আমাদের লক্ষ্য লিগে দ্বিতীয় স্থান অর্জন করা।

ডেইলি স্টার: কোচ অস্কার ব্রুজোনের চলে যাওয়া পারফরম্যান্সে প্রভাব ফেলেছে কি?

তপু: অস্কার থাকাকালে আমাদের দলে রবসন, ডরিয়েলটনসহ বেশ কিছু মানসম্পন্ন বিদেশি খেলোয়াড় ছিল, এখন সেরকম কেউ নেই। তবে আমার মতে বর্তমান কোচ ভ্যালেরিউ তিতাও একজন ভালো কোচ।

ডেইলি স্টার: শেখ জামাল ধানমণ্ডি ক্লাব ও শেখ রাসেল ক্রীড়া চক্রের সরে যাওয়ায় লিগের প্রতিযোগিতা কমে গেছে কি?

তপু: অবশ্যই। প্রতিযোগিতার মান অনেকটাই কমে গেছে। অনেক খেলোয়াড় আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। এটি দেশের ফুটবলের জন্য বড় এক ধাক্কা।

ডেইলি স্টার: ৫ আগস্টের রাজনৈতিক পরিবর্তনের পর আপনি কি বেতন কমিয়েছেন?

তপু: আমরা এখনও আগের চুক্তি অনুযায়ীই চলছি। মৌসুমের শুরু থেকে ক্লাবের নানা সংকট ছিল, কিন্তু ম্যানেজমেন্ট খেলোয়াড়দের সবরকম সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছে।

ডেইলি স্টার: ঘরোয়া মৌসুম প্রায় শেষ, সামনে জাতীয় দলের এশিয়ান কাপ বাছাইপর্ব—এই পরিস্থিতিতে আপনি কী ভাবছেন?

তপু: মৌসুম শুরু নিয়েই একসময় অনেক অনিশ্চয়তা ছিল, কিন্তু শেষ পর্যন্ত এটা ফুটবলারদের জন্য বড় একটি অর্জন যে এখনও মৌসুম চালু রয়েছে।

হামজা চৌধুরীর আগমন দেশের ফুটবলে নতুন আলো এনেছে। এটি দেশের ফুটবলের জন্য ইতিবাচক একটা ঢেউ। সিঙ্গাপুরের বিপক্ষে তিন পয়েন্ট পাওয়া আমাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ আমরা পরের রাউন্ডে যেতে চাই। আমি বিশ্বাস করি আমরা পারব, কারণ হামজার আগমনের পর দলে আত্মবিশ্বাস বেড়েছে।

ডেইলি স্টার: শামিত সোম ও কিউবা মিচেলের মতো প্রবাসী ফুটবলারদের জাতীয় দলে অন্তর্ভুক্তির সম্ভাবনা আপনি কীভাবে দেখেন?

তপু: আমার মতে, জাতীয় দল হচ্ছে দেশের প্রতিনিধিত্বের সর্বোচ্চ জায়গা, এবং এখানেই সেরা খেলোয়াড়দের খেলতে হবে। ওরা বাংলাদেশ দলে খেলতে আগ্রহী—এটা নিঃসন্দেহে ভালো খবর। ওদের অন্তর্ভুক্তি দলের শক্তি বাড়াবে, আর স্থানীয়রাও ওদের সঙ্গে খেলে অনেক কিছু শিখতে পারবে।

Comments