আমাদের ব্র্যান্ড অব ফুটবল দেখে অনেকেই অবাক হয়েছে: বাটলার

ছবি: স্টার

সপ্তাহ খানেক আগেও নারী এশিয়ান কাপের বাছাইপর্বে বাংলাদেশ কোয়ালিফাই করবে এমনটা খুব কম মানুষই আশা করেছিল। এক বছর ধরে কোনো ম্যাচ না জেতা এবং দলের সবচেয়ে অভিজ্ঞ কয়েকজন খেলোয়াড়কে হারানো অবস্থায় এই অর্জন যেন স্বপ্নের মতো।

বিশ্ব র‍্যাংকিংয়ে ১২৮ নম্বরে এবং এশিয়ায় ২৫ নম্বরে অবস্থান করা 'বেঙ্গল টাইগ্রেস' নামক নারী ফুটবল দলটি মায়ানমারে পা রেখেছিল অধিনায়ক ও সর্বকালের সর্বোচ্চ গোলদাতা সাবিনা খাতুনকে ছাড়াই। ইংলিশ কোচ পিটার বাটলারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদস্বরূপ ফেব্রুয়ারিতে দল ত্যাগ করেছিলেন সাবিনা ও কয়েকজন খেলোয়াড়।

তবে সব প্রতিকূলতা উপেক্ষা করে বাংলাদেশ ইয়াংগুনে তিনটি ম্যাচই জিতে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয় এবং আগামী বছরে অস্ট্রেলিয়ায় অনুষ্ঠিতব্য মূল পর্বে জায়গা করে নেয়। ইতিহাসে প্রথমবারের মতো এই টুর্নামেন্টে জায়গা করে নেয় বাংলাদেশের মেয়েরা।

'আমি আমার খেলোয়াড়দের নিয়ে সত্যিই গর্বিত… এ মেয়েরা অনেক ত্যাগ স্বীকার করেছে,' রবিবার ঢাকায় রওনা হওয়ার আগে বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেন বাটলার। গভীর রাতে ঢাকায় পৌঁছালে বিশাল জনসমাগমে তাদের বরণ করে নেওয়া হয়।

'ওদের অনেক পরীক্ষা নেওয়া হয়েছে, আর তারই ফল এখন ওরা পাচ্ছে।'

ওয়েস্ট হ্যাম ইউনাইটেডের সাবেক মিডফিল্ডার বাটলার গত দুই দশক ধরে এশিয়া ও আফ্রিকার বিভিন্ন ক্লাব ও জাতীয় দলের কোচিংয়ে যুক্ত ছিলেন। ২০২৪ সালের মার্চে তিনি বাংলাদেশ নারী দলের দায়িত্ব নেন।

'আমি যখন এই দলে যোগ দিলাম, তখন দেখা গেল কিছু খেলোয়াড় নিজেরাই নিজেদের দলে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিচ্ছে,' বলেন ৫৮ বছর বয়সী বাটলার।

'দলে কোনো শৃঙ্খলা ছিল না। আর শৃঙ্খলা না থাকলে দল কোথাও যাওয়া যায় না।'

তিনি নতুন একটি প্রশিক্ষণ পদ্ধতি চালু করেন এবং তরুণ খেলোয়াড়দের সুযোগ দেওয়ার চেষ্টা করেন। এর ফলেই প্রতিষ্ঠিত খেলোয়াড়দের একটি অংশ বিদ্রোহ ঘোষণা করে।

তারা ফেডারেশন বরাবর একটি চিঠিতে বাটলারকে বরখাস্ত করার দাবি জানায়। চিঠিতে কোচের বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্ব, দল ভাগ করে দেওয়া, খেলোয়াড়দের ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে অনভিপ্রেত মন্তব্য এবং অপমানজনক আচরণের অভিযোগ তোলা হয়।

'কোনো কোচই চায় না তার বিরুদ্ধে মিথ্যা ও ভিত্তিহীন অভিযোগ উঠুক,' বলেন বাটলার।

'এগুলো ছিল মিথ্যে, আর মিথ্যের পর মিথ্যে… যেন কখনো শেষ হবে না। খুবই ক্লান্তিকর ও হতাশাজনক।

'আমার কোনো ব্যক্তিগত উদ্দেশ্য ছিল না… আমি যা করেছি, সবই বাংলাদেশের নারী ফুটবলের উন্নয়নের জন্য।'

বিদ্রোহ ধীরে ধীরে স্তিমিত হয়ে আসে, যখন মার্চে খেলোয়াড়রা নতুন চুক্তিতে স্বাক্ষর করে। তবে সাবিনা খাতুন, সানজিদা আখতার ও মাসুরা পারভিন এরপর আর জাতীয় দলের হয়ে খেলেননি।

বাটলার তবুও থেমে থাকেননি। তার কঠোর অনুশীলন রুটিনে ছিল ভোর ৫টার ঘুম থেকে ওঠা, ৬টায় অনুশীলন শুরু, ৯০ মিনিটের টানা উচ্চগতির সেশন—সব মিলিয়ে এক কঠিন শৃঙ্খলার আবহ।

'আমি মনে করি, এই সময়টাই ছিল বাংলাদেশের নারী ফুটবলের পরিবর্তনের এক মোড়, যেখানে শৃঙ্খলা সামনে এসেছে। আগে সেটা ছিলই না।'

একটি সংস্কৃতিতে যেখানে জ্যেষ্ঠতা অনেক গুরুত্ব পায়, সেখানে বাটলার সাহসিকতার সঙ্গে তরুণদের এগিয়ে এনেছেন অভিজ্ঞদের পাশাপাশি। গত সপ্তাহের বাছাইপর্বের জন্য যাদের তিনি বেছে নিয়েছেন, তাদের অর্ধেকের বেশি বয়স ছিল ২০ বছরের নিচে। তারা আগে কখনো সুযোগই পায়নি।

'তরুণরা প্রতিযোগিতার পরিবেশ তৈরি করে… এতে সবাই নিজ নিজ স্বস্তির জায়গা থেকে বেরিয়ে আসে। আমি সেটাই করেছি, সিস্টেমটাকে নাড়িয়ে দিয়েছি,' বলেন বাটলার।

বাংলাদেশ বাছাইপর্ব শুরু করে বাহরাইনকে ৭-০ গোলে হারিয়ে। কিন্তু আসল পরীক্ষা আসে স্বাগতিক মায়ানমারের বিরুদ্ধে, যারা বিশ্ব র‍্যাংকিংয়ে ৫৫ নম্বরে।

বিদ্রোহী খেলোয়াড়দের অন্যতম, ঋতুপর্ণা চাকমা, দুটি গোল করে ২-১ ব্যবধানে জেতান বাংলাদেশকে। এরপর শনিবার তুর্কমেনিস্তানকে ৭-০ গোলে হারিয়ে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয় বাংলাদেশ।

'আমাদের ফুটবলের ধরন অনেককে চমকে দিয়েছে,' বলেন বাটলার। 'বিশ্বাস রাখতে হয়, আর আমি আমার খেলোয়াড়দের ওপর বিশ্বাস রেখেছিলাম।'

তবে বাটলার নিশ্চিত নন তিনি ভবিষ্যতেও দলে থাকবেন কি না, কারণ তার চুক্তি শেষ হতে চলেছে।

'আমি জানি না পরবর্তী টুর্নামেন্টে আমি থাকব কি না। আমার ভবিষ্যৎ কী, সেটাও পরিষ্কার নয়,' বলেন তিনি।

'আমি থাকি বা না থাকি, সেটি মুখ্য নয়। আমি যা করার কথা ভেবেছিলাম, তা করেছি… আমরা পৌঁছে গেছি, এবং এটা ইতিহাস।

'আমি আশা করি, আমি বাংলাদেশের নারী ফুটবলের চেহারা কিছুটা হলেও বদলাতে পেরেছি।'

Comments

The Daily Star  | English

US lowers Bangladesh tariff to 35% from 37%

Failure to secure a more favourable bilateral agreement by the Aug 1 deadline would be a significant blow to the country's export-oriented economy

2h ago