‘ব্যাটিংয়ে ক্যারিয়ারের সেরা সময়ে আছে সাকিব’

সাকিব আল হাসান যেন নিজেকেই চ্যালেঞ্জ করছেন, সেই চ্যালেঞ্জে উৎরে ছাড়িয়ে যাচ্ছেন নিজেকে। এবার বিপিএলে ফরচুন বরিশালের অধিনায়ক প্রতি ম্যাচেই ব্যাট হাতে তুলছেন ঝড়, গড়ে দিচ্ছেন ব্যবধান।
Shakib Al Hasan
ব্যাট হাতে সেরা ছন্দে পাওয়া যাচ্ছে সাকিব আল হাসানকে। ছবি: ফিরোজ আহমেদ

সাকিব আল হাসান যেন নিজেকেই চ্যালেঞ্জ করছেন, সেই চ্যালেঞ্জে উৎরে ছাড়িয়ে যাচ্ছেন নিজেকে। এবার বিপিএলে ফরচুন বরিশালের অধিনায়ক প্রতি ম্যাচেই ব্যাট হাতে তুলছেন ঝড়, গড়ে দিচ্ছেন ব্যবধান। কোচ নাজমুল আবেদিন ফাহিমের মতে ব্যাটিংয়ে ক্যারিয়ারের সেরা সময় পার করছেন বাংলাদেশের শীর্ষ তারকা।

বিপিএলে এখন পর্যন্ত ৬ ম্যাচের ৫ ইনিংস ব্যাট করে ৯১.৬৬ গড় আর ১৯৬.৪২ স্ট্রাইকরেটে সাকিব রান করেছেন ২৭৫। ফিফটি করেছেন তিনটি। স্বীকৃত টি-টোয়েন্টিতে ক্যারিয়ার সেরা ইনিংসও এসেছে এ বছর। রংপুর রাইডার্সের বিপক্ষে ৪৩ বলে ৯ চার, ৬ ছক্কায় সাকিব করেন ৮৯ রান। রান সংগ্রহে সাকিব আছেন সবার উপরে, তার স্ট্রাইকরেটও সবার চেয়ে বেশি।

ব্যাট করার সময় ফুটওয়ার্কেও কিছুটা ভিন্নতা দেখা যাচ্ছে সাকিবের। আড়ষ্ট না থাকে ক্রিজে তিনি যেন চঞ্চল প্রাণ। যার ফল পাচ্ছে তার দল।

চট্টগ্রাম পর্বের শেষ ম্যাচে ঢাকা ডমিনেটর্সের বিপক্ষে সাকিব বড় রান পাননি। তবে এদিনও পাঁচে নেমে তিনি করেন ১৭ বলে ৩০। মাঝের ওভারে যখন রানের গতি থাকে মন্থর, সেই সময়টায় আগ্রাসী ব্যাট চালিয়ে সাকিব তৈরি করে ফেলছেন দুই দলের পার্থক্য।

ঢাকাকে ১৩ রানে হারিয়ে আসার পর সংবাদ সম্মেলনে সাকিবকে দীর্ঘদিন ধরে চেনা কোচ নাজমুল আবেদিন ফাহিম বললেন, তার মতে ব্যাটিংয়ে এটাই সাকিবের সেরা সময়,  'টেকনিক্যাল বিষয় ও নিজে কিছুটা উদ্ভাবন করে। কিছুটা আমার সঙ্গে আলাপ করে হয়। কিছুটা আমরা অনুশীলন করি সেটার সঙ্গে (আসে)। সে খুব স্মার্ট। ও নিজেই খুঁজতে থাকে কোথায় গেলে আরেকটু ভালো হওয়া যায়।'

'আমার কেন জানি মনে হচ্ছে, আমি ওর ব্যাটিং যতদিন দেখেছি ও বোধহয় ব্যাটিংয়ের পিকে আছে। ওই বিশ্বকাপটার (২০১৯) কথা স্মরণ রেখেই আমি বলছি। ও এত সহজে ব্যাট করছে এটা ভাবাই যায় না।'

২০১৯ ওয়ানডে বিশ্বকাপে ৮৬.৫৭ গড়ে ৬০৬ রান করেছিলেন সাকিব। যা ছিল আসরের তৃতীয় সর্বোচ্চ। দুই সেঞ্চুরির সঙ্গে ফিফটি করেছিলেন পাঁচটি। ফরম্যাট আর মঞ্চ ভিন্ন হলেও সাকিবের খেলার ধরণে এবার তাকে আরও সহজ, সাবলীল ও আগ্রাসী মনে হচ্ছে ফাহিমের।

দারুণ ছন্দে টুর্নামেন্টে ছাপ রাখতে সাকিব যে খুব কঠোর অনুশীলনে নিজেকে ব্যস্ত রেখেছেন এমনটা নয়। চট্টগ্রাম পর্বের দুই ম্যাচের মাঝে তাকে ঢাকায় পারিবারিক কাজেও ফিরতে দেখা গেছে। অনুশীলনের দিনগুলোতে থেকেছেন মাঠের বাইরে। বরিশাল কোচ মনে করেন, টুর্নামেন্টের খেলা শুরু হয়ে গেলে নেটের অনুশীলন আর জরুরী কিছু না,  'টুর্নামেন্ট শুরুর আগে এক রকম ছিল। কিন্তু টুর্নামেন্ট শুরু পর একজন খেলোয়াড় যখন পারফর্ম করে ওটাই তার অনুশীলন। আমি আজকেই সেটা নিয়ে আলাপ করছিলাম ওর সঙ্গে।'

'ব্যাপারটা এমন একটা ৮০ রানের ইনিংস এরকম ইন্টেনসিটি নিয়ে খেলে। তারপর হঠাৎ করে গিয়ে ওরকম অনুশীলন করার চেয়ে না করাই ভালো। অনুশীলনের ইন্টেনসিটি মোটেও এরকম থাকবে না নেটে।'

ফাহিম মনে করেন খেলাটা বোঝা, খেলার পরিস্থিতি বিচার করার দিক থেকে সাকিব নিজেকে করেছেন আলাদা। অনেকের স্কিল থাকলেও স্কিলের সঙ্গে বুদ্ধির জোরে সাকিব অনন্য,  'একজন খেলোয়াড় ১৫ বছর ধরে খেলে আসছে, খেলাটা তার কিন্তু মুখস্ত। আজকেও দেখেছি কিন্তু একটা বল করেছে ওয়ার্মআপ করার সময়, স্রেফ একটা বল। তারপর বুঝেছি আমি ঠিকাছি। ও শক্তি সঞ্চয় করে।'

'ওর অ্যাওয়ারনেসটা দুর্দান্ত। খুব লক্ষ্য করে সব কিছু। ও বোধহয় এই সেই করে বেড়াচ্ছে। ওর বোলিং চেঞ্জ, ফিল্ডিং চেঞ্জ। কোন ব্যাটার কখন যাবে স্পট অন কিন্তু। এটা কিন্তু এমনি এমনি হয় না। সবার শক্তির জায়গা। বিপক্ষ দলে কারা খেলছে। বামহাতি, ডানহাতি সব তার মুখস্ত কিন্তু। এসব কারণে সে ব্যতিক্রমী ক্রিকেটার। শুধু স্কিলের ব্যাপার না। স্কিল তো অনেকেরই আছে।'

'আমি যেটা বললাম ও এখন পিকে আছে। ও উপভোগ করছে খেলাটা, ভীষণ উপভোগ করছে। বাংলাদেশের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ ও এভাবে খেলুক। সামনে আমাদের বড় বড় টুর্নামেন্ট আছে। বিশ্বকাপ আছে। উই নিড হিম।'

Comments