রোনালদোর ইতিহাসের পর শেষের রোমাঞ্চে জিতল পর্তুগাল
প্রথমার্ধে পর্তুগালের মুহুর্মুহু আক্রমণ দাঁতে দাঁত চেপে সইল ঘানা। শরীরী আগ্রাসনে একাধিক হলুদ কার্ডও গুনল তারা। বিরতির পর পেনাল্টি থেকে ইতিহাস গড়া গোলে বাঁধ ভাঙলেন ক্রিস্তিয়ানো রোনালদো। ঘানাও সমতায় ফিরলো দ্রুতই। জোয়াও ফেলিক্স, রাফায়েল লিয়াওয়ের গোলে পর্তুগালও ব্যবধান বাড়াতে সময় নিল না। শেষ দিকে আরেক গোল শোধ দিয়ে ঘানা উত্তেজনা চড়া করলেও হাসি চওড়া রইল রোনালদোদের।
বৃহস্পতিবার কাতারের দোহায় 'এইচ' গ্রুপের ম্যাচে ঘানাকে ৩-২ গোলে হারিয়েছে পর্তুগাল। ৬৪ মিনিটে রোনালদো দলকে এগিয়ে নেওয়ার পর ৭৮ ও ৮০ মিনিটে দুই গোল করেন ফেলিক্স ও লিয়াও। ঘানার হয়ে ৭৩ মিনিটে আন্দ্রে আয়া সমতা আনার পর ৮৯ মিনিটে ব্যবধান কমান ওসমান বুকারি।
৬১ শতাংশ বল দখলে রেখে গোলে ৮টি শত নেয় পর্তুগাল, যার পাঁচটি ছিল লক্ষ্যে। অপরদিকে ৩৮ শতাংশ বল দখলে রাখা ঘানা ৮টি শটের মধ্যে ৩টি রাখতে পেরেছিল লক্ষ্যে।
ম্যাচ শুরু হতেই বল নিয়ন্ত্রণে নিতে দেরি করেনি পর্তুগাল। আক্রমণেও উঠে দ্রুতই। ৬ষ্ঠ মিনিটে ফেলিক্স একবার বল নিয়ে ঢুকেও গিয়েছিলেন বক্সে, সুবিধা করতে পারনেননি। ঘানাও নিজেদের রক্ষণ সামলে উঠার চেষ্টা করে আক্রমণে।
১০ মিনিটে প্রথম সুযোগ পান রোনালদো। বার্নেডো সিলভার পাস পেয়েছিলেন দারুণ জায়গায়, কেবল গোলরক্ষক ছিলেন তার সামনে। কিন্তু বল ঠিকমতো পায়ে জমাতে পারেননি তিনি।
১৩ মিনিটে আরেকটি পরিকল্পিত আক্রমণ শানায় পর্তুগাল। আবারও সুযোগ আসে রোনালদোর সামনে। এবার রাফায়েল গুরেইরার মারা ক্রস থেকে হেড মারলেও লক্ষ্যে রাখতে পারেননি পাঁচ বারের ব্যালন ডি'অর জয়ী তারকা।
৩১ মিনিটে বল জালে জড়িয়েছিলেন রোনালদো। কিন্তু বা প্রান্ত থেকে বল নিয়ে প্লেসিং শটে জালে জড়ানোর আগে প্রতিপক্ষ ডিফেন্ডারকে ফাউল করায় তা বাতিল হয়ে যায়।
পরের কয়েক মিনিটে প্রতি আক্রমণে গিয়ে দুটি কর্নার আদায় করে গোলের পরিস্থিতি তৈরি করতে পারেনি ঘানা।
৪৪ মিনিটে রুবেন নাভাসের পাস থেকে বল পেয়ে বারের উপর দিয়ে মেরে সুযোগ হারান ওটাভিও। প্রথমার্ধে প্রায় ৭০ শতাংশ বল দখলে নিয়েও গোল আদায় করতে পারেনি পর্তুগিজরা।
৫৩ মিনিটে প্রতি আক্রমণ থেকে মোহামেদ কুদুস ও আব্দুল সামান বিপদজনকভাবে ঢুকে গিয়েছিলে পর্তুগালের রক্ষণে। কিন্তু শেষটায় আর পেরে উঠেননি তারা।
৫৪ মিনিটে রোনালদো প্রতিপক্ষের বক্সে বল নিয়ে ঢুকে সতীর্থকে ঠিকমতো পাস দিতে পারেননি। ওই বল নিয়ে প্রতি আক্রমণে গিয়ে কুদুস আতঙ্ক ছড়ান পর্তুগাল শিবিরে। তার নেওয়া শট অল্পের জন্য বাইরে যায় বার ঘেঁষে।
৬৩ মিনিটে ঘানার বক্সে বল পেয়ে গিয়েছিলেন রোনালদো। তাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেন ঘানার ডিফেন্ডার সালিসু, পেনাল্টি পায় পর্তুগাল। তা থেকে বিদ্যুৎ গতির শট জালে জড়িয়ে নেন তিনি। প্রথম ফুটবলার হিসেবে পাঁচটি বিশ্বকাপে গোল করার রেকর্ড গড়েন এই তারকা।
এই গোলের পরই তৈরি হয় নাটকীয়তা। খেলার গতিও যায় বদলে। ৭২ মিনিটে গোল শোধের সুযোগ পায় ঘানা। কুদুসের ২০ গজ দূর থেকে নেওয়া শট ফিরিয়ে দেন কস্তা।
পরের মিনিটেই সমতায় ফিরে আসে ঘানা। প্রতি আক্রমণে উঠে দারুণ এক দৌড় দেন কুদুস। তার থেকে বল পেয়ে ডিফেন্ডারের পায়ের ফাঁক দিয়ে বল জালে জড়িয়ে দেন আন্দ্রে আয়া।
আবার এগিয়ে যেতে একদম সময় নেয়নি পর্তুগিজরা। ব্রুনো ফার্নান্দেজের পাস থেকে ৮০ মিনিটে ডান পায়ের নিখুঁত শটে উল্লাসে মাতেন ফেলিক্স। খানিক পর আবার গোলের উৎসদাতা ব্রুনো। আবার আগ্রাসী পর্তুগাল ফরোয়ার্ডদের দুরন্ত ছুটে চলায় ভড়কে যায় ঘানার ডিফেন্স। ব্রুনোর কাছ থেকে বলের যোগান পেয়ে কোনাকোনি শটে তৃতীয় গোল করেন রাফায়েল লিয়াও।
৮৯ মিনিটে আরেক গোল শোধ দিয়ে দেয় আফ্রিকান দেশটি। আবারও তাদের গোলের সূত্রপাত হয় পালটা আক্রমণ থেকে। হাইলাইনে থাকা পর্তুগিজ ডিফেন্স চিরে ছুটে যান রাহমান। তার ক্রস থেকে হেডে বল জালে জড়িয়ে দেন ওসমান বুকারি।
যোগ করা সময়ের একদম শেষ মিনিটেও গোল পেতে পারত ঘানা। পর্তুগিজ গোলরক্ষকের ভুলে সুযোগ পেয়ে গিয়েছিলেন ঘানার উইলিয়ামস। শেষ পর্যন্ত রুবেন ডিয়াস আর পেরেইরা গিয়ে রক্ষা করেন দলকে। স্বস্তিতে মাঠ ছাড়ে শিরোপা প্রত্যাশীরা।
Comments