গ্রুপ পর্যালোচনা

ভারত-পাকিস্তানের গ্রুপে চমক হতে পারবে বাংলাদেশ?

স্কোয়াডের শক্তি, সাম্প্রতিক ছন্দ, বড় আসরের অভিজ্ঞতা মিলিয়ে 'এ' গ্রুপে বাকিদের চেয়ে স্পষ্ট ব্যবধানে এগিয়ে ভারত। জাসপ্রিত বুমরাহ না থাকলেও ফেভারিট তকমায় তেমন আঁচড় পড়ছে না রোহিত শর্মার দলের। 'এ' গ্রুপ থেকে সেমিফাইনালের লড়াইয়ে সমান সম্ভাবনা নিয়ে থাকবে পাকিস্তান-নিউজিল্যান্ড। দেশের ভক্তরা মনঃক্ষুণ্ণ হলেও বাংলাদেশকে এই বিচারে পিছিয়েই রাখতে হচ্ছে।

বাংলাদেশ

এবার চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে যাওয়ার আগে গলা চড়া করে শিরোপা জেতার লক্ষ্য জানিয়ে গেছেন বাংলাদেশ অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত। তবে তার এই কথা বিশ্ব ক্রিকেটে খুব একটা পাত্তা পাচ্ছে বলে আভাস নেই। বরং রিকি পন্টিং, এবিডি ভিলিয়ার্সরা বাংলাদেশের সম্ভাবনা নিয়ে নেতিবাচক মন্তব্যই করছেন বেশি। ক্রিকেট পণ্ডিতদের এরকম চিন্তার জগত বদলে দিতে মাঠেই জবাব দিতে হবে শান্তদের।

প্রশ্ন হলো সেই জায়গায় তারা কতটা প্রস্তুত? টুর্নামেন্টের আগে একমাত্র প্রস্তুতি ম্যাচে পাকিস্তান 'এ' দলের কাছেই খাবি খেয়েছে বাংলাদেশ। তবে অনেক সময় প্রস্তুতি খারাপ হলেও মূল পরীক্ষা ভালো হয়, আশার জায়গা সেখানেই রাখতে পারেন দেশের ভক্তরা।

এমনিতে এবার সেরা স্কোয়াড নিয়েও যেতে পারেনি বাংলাদেশ। স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে সাকিব আল হাসান হতেন দলের প্রধানতম ভরসা, তিনি নেই নানাবিধ কারণে। ছন্দহীনতায় বাদ দেওয়া হয়েছে লিটন দাসের মতন ব্যাটারকে। বৈশ্বিক আসরে এই দুই তারকা বরাবরই বাংলাদেশের সাফল্যে রেখেছেন ভূমিকা। এই ঘাটতি পূরণে নির্বাচকদের ব্যাখ্যা পরিস্কার হয়নি।  সাকিব-শান্তর না থাকার পাশাপাশি অধিনায়ক শান্তর লম্বা সময় ম্যাচ না খেলার ঘাটতি দলটিকে ফেলতে পারে সমস্যায়, সেই সঙ্গে মুশফিকুর রহিমের মতন অভিজ্ঞ ব্যাটারের ছন্দহীনতাও চিন্তার কারণ।

বাংলাদেশের এমনিতেই শক্তি মাঝারি। বড় দলকে টপকে সেমিতে যেতে সামর্থ্যের সেরাটা দেওয়ার পাশাপাশি প্রতিপক্ষের খারাপ দিনেরও প্রত্যাশা করতে হয়। সেই জায়গায় নিজেদের ঘাটতি চিন্তার স্রোত তৈরি করলে বড় স্বপ্ন অর্জন অনেক কঠিন। যদিও ক্রিকেট খেলায় নির্দিষ্ট দিনে হতে পারে অনেক কিছুই, সেই সঙ্গে ৫০ ওভারের ক্রিকেটটা বাংলাদেশের খেলোয়াড়দের ডিএনএ'র ভেতর থাকায় একদম নৈরাশ্যে ডুবে যাওয়ারও মানে নেই। বাংলাদেশকে আশাবাদী করবে পেস আক্রমণ। পেসাররা নিজেদের সাম্প্রতিক ছন্দ ধরে রাখতে পারলে প্রতি ম্যাচেই জমে উঠবে লড়াই।

নিউজিল্যান্ড

চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির আগে সবগুলো দলের মধ্যে সেরা প্রস্তুতি হয়েছে নিউজিল্যান্ডের। ব্ল্যাক ক্যাপসরা আগেভাগে পাকিস্তানে গিয়ে জিতেছে ত্রিদেশীয় সিরিজ। স্কোয়াডেও তরুণ ও অভিজ্ঞতার মিশ্রণে আছে দারুণ ভারসাম্য।

সাবেক কিউই পেসার টিম সাউদি তো প্রায় নিশ্চিত, তাদের দলই দ্বিতীয়বারের মতন জিতবে এলিট এই ওয়ানডে আসর। নিউজিল্যান্ড গ্রুপ পর্ব পেরিয়ে সেমিফাইনালে যেতে কাগজে কলমের সম্ভাবনায় ভারতের ঠিক পরেই থাকবে। অর্থাৎ স্বাগতিক পাকিস্তান থেকে এই মুহূর্তে এগিয়ে আছে তারা। ত্রিদেশীয় সিরিজে পাকিস্তানকে দুইবার হারানো যার প্রমাণ।

উপমহাদেশের বাইরের অন্য দলগুলোর সঙ্গে নিউজিল্যান্ডের পার্থক্য হলো তারা হিসেব করতে পাকা। কন্ডিশন বিচার করে মানিয়ে নিয়ে কীভাবে এগুতে হয় সেই ছক, হোম ওয়ার্ক দলটির চিরায়ত ঐতিহ্যের অংশ। কেন উইলিয়াসন, টম ল্যাথাম, ডেভন কনওয়ে, রাচিন রবীন্দ্র, ড্যারেল মিচেলদের নিয়ে ঋদ্ধ ব্যাটিং লাইনআপ।

গ্লেন ফিলিপস, মিচেল ব্রেসওয়েল, মার্ক চাপম্যানদের মতন কার্যকর অলরাউন্ডার আছে দলটিতে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে পেস আক্রমণে সাউদি, ট্রেন্ট বোল্টের ঘাটতি বুঝতে দিচ্ছেন না ম্যাট হেনরি, উইল ও'রর্কির মতন পেসাররা। তবে টুর্নামেন্টের আগের দিন লকি ফার্গুসেনকে হারানো দলটির জন্য ধাক্কা।

প্রথম বড় কোন আসরে অধিনায়কত্বের চ্যালেঞ্জ নিতে হবে মিচেল স্যান্টনারকে। তিনি কীভাবে পুরো পরিস্থিতি সামলান দেখার বিষয়। তবে নিউজিল্যান্ড এই গ্রুপ থেকে সেরা হয়ে সেমিফাইনাল নিশ্চিত করে পরে কাপও জেতা হবে খুব স্বাভাবিক। সেই সামর্থ্য পুরোপুরি আছে তাদের।

পাকিস্তান

ঘরের মাঠে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির আসর বলে সহজ হিসেবে ফেভারিট পাকিস্তান। যদিও গ্রুপের একটা ম্যাচ দুবাইতে গিয়ে খেলতে হবে মোহাম্মদ রিজওয়ানের দলকে। তবে দুবাইর কন্ডিশনও তাদের হাতের তালুর মতনই মুখস্ত।

পাকিস্তানকে এই গ্রুপে সবার উপরে রাখা যাচ্ছে না সাম্প্রতিক ছন্দের কারণে। উত্থান-পতন লেগেই আছে দলটির। কদিন আগে ত্রিদেশীয় সিরিজে দক্ষিণ আফ্রিকাকে দুই দফায় হারালো কিউইদের কাছে ধরাশায়ী হয়েছে তারা। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে নামার আগে আত্মবিশ্বাসে লেগেছে চোট। যদিও অনেকের মতে চোট লাগা পাকিস্তানই বড় আসরে সবচেয়ে বিপদজনক দল।

বরাবরের মতন এবারও চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির দল নিয়ে বিতর্ক, সমালোচনা হয়েছে পাকিস্তানে। ফাহিম আশরাফ, খুশদিল শাহদের দলে নেওয়ার সমালোচনা করেন ওয়াসিম আকরাম। তাদের উপর চাপ নিশ্চিত বাড়ছে তাতে।

পাকিস্তানের জন্য ধাক্কা হচ্ছে সাইম আইয়ুবের না থাকা। ত্রিদেশীয় সিরিজের আগের তিন সিরিজে দলের জয়ে ভূমিকা ছিলো সাইমের। এই ওপেনারের বদলে অভিজ্ঞ ফখর জামান অবশ্য বড় কিছু করতে পারেন। ২০১৭ সালে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি জয়ে ছিলো তার ভূমিকা।

পাকিস্তানের বড় অস্বস্তির কারণ বাবর আজমের ছন্দহীনতা। বাবর অনেকদিন ধরেই নিজের সেরা অবস্থায় নেই। তিনি যদি আগের দাপট ফেরাতে পারেন পাকিস্তান ঘরের মাঠের দর্শকদের সুবিধা নিয়ে শিরোপা ধরে রাখতেই পারে।

ভারত

আইসিসি আসর মানেই হট ফেভারিট তকমা থাকবে ভারতের। এবারও ব্যতিক্রম নয়। যদিও এই সময়ে সব সংস্করণ মিলিয়ে সেরা পেসার জাসপ্রিত বুমরাহকে পাচ্ছে না তারা। এতে করে পেস আক্রমণ দুর্বল হয়েছে তাদের।

বুমরাহকে ছাড়াই অবশ্য কদিন আগে ইংল্যান্ডকে হোয়াইটওয়াশ করে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির প্রস্তুতি সেরেছে ভারত। সেখানে দলটির আশা বাড়িয়ে দুর্দান্ত সেঞ্চুরিতে ছন্দে ফিরেছেন রোহিত শর্মা। যদিও বিরাট কোহলি এখনো নেই নিজের সুনামের আশেপাশে।

ভারতের সবচেয়ে শক্তির জায়গা ব্যাটিং। উপরে রোহিত-কোহলির পাশাপাশি শুবমান গিল ওয়ানডে ক্রিকেটে নিজের জায়গা করে নিয়েছেন। পরের দিকে শ্রেয়াস আইয়ার, লোকেশ রাহুল, হার্দিক পান্ডিয়া, রিশভ পান্তরা আছেন। রবীন্দ্র জাদেজা, অক্ষর প্যাটেল থাকায় পাঁচজন বিশেষজ্ঞ বোলার খেলালেও ব্যাটিং লাইনআপ ছোট হয় না তাদের।

'এ' গ্রুপ থেকে ভারত সেমিফাইনালে যেতে না পারলে সেটা হবে বরং অঘটন। যদিও সেমির পরে হিসেব ভিন্ন, সেখানে বুমরাহ না থাকার ঘাটতি টের পেতেই পারে গত ওয়ানডে বিশ্বকাপের ফাইনালিস্টরা।

'এ' গ্রুপের ম্যাচের সূচি

পাকিস্তান-নিউজিল্যান্ড (১৯ ফেব্রুয়ারি, করাচি)

বাংলাদেশ-ভারত (২০ ফেব্রুয়ারি, দুবাই)

ভারত-পাকিস্তান (২৩ ফেব্রুয়ারি, দুবাই)

বাংলাদেশ-নিউজিল্যান্ড (২৪ ফেব্রুয়ারি, রাওয়ালপিন্ডি)

পাকিস্তান-বাংলাদেশ (২৭ ফেব্রুয়ারি, রাওয়ালপিন্ডি)

ভারত-নিউজিল্যান্ড (২ মার্চ, দুবাই)

Comments

The Daily Star  | English
problems faced by Bangladeshi passport holders

The sorry state of our green passports

Bangladeshi passports are ranked among the weakest in the world.

5h ago