ইংলিসের দ্রুততম সেঞ্চুরিতে ইংল্যান্ডকে হারিয়ে অস্ট্রেলিয়ার রেকর্ড

আগের ২৭ ওয়ানডেতে ফিফটি তিনটি। রানের গড় মাত্র ২৩.৬০। সেই জশ ইংলিসের ব্যাটই হয়ে উঠল উত্তাল। ৫০ ওভারের ক্রিকেটে প্রথম সেঞ্চুরির স্বাদ নিতে উইকেটরক্ষক-ব্যাটার বেছে নিলেন বড় মঞ্চ। তাও আবার রেকর্ড গড়ে। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে বিরেন্দর শেবাগের সঙ্গে যৌথভাবে দ্রুততম শতকের মালিক হলেন তিনি। ইংলিসের স্মরণীয় দিনে ইতিহাস গড়ল তার দল অস্ট্রেলিয়াও। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে সর্বোচ্চ রান তাড়া করে জেতার পাশাপাশি টুর্নামেন্টে সর্বোচ্চ দলীয় সংগ্রহের রেকর্ড গড়ল তারা।
শনিবার চলতি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির 'বি' গ্রুপের ম্যাচে দুর্দান্ত জয় ছিনিয়ে নিয়েছে অজিরা। ১৫ বল হাতে রেখে ৫ উইকেটের ব্যবধানে জিতে আসরে শুভ সূচনা করেছে দলটি। অথচ মূল তিন পেসার প্যাট কামিন্স, জশ হ্যাজেলউড, মিচেল স্টার্কসহ বেশ কয়েকজন নিয়মিত মুখকে চলতি আসরে না পাওয়ায় শক্তি কমেছে তাদের।
লাহোরের গাদ্দাফি স্টেডিয়ামে টস হেরে আগে ব্যাট করতে নেমে ইংলিশরা পায় ৮ উইকেটে ৩৫১ রানের বিশাল পুঁজি। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে সর্বোচ্চ দলীয় সংগ্রহের রেকর্ড গড়ে তারা। পেরিয়ে যায় ২০০৪ সালের আসরে যুক্তরাষ্ট্রের বিপক্ষে নিউজিল্যান্ডের করা ৪ উইকেটে ৩৪৭ রান। কিন্তু তাদের অর্জন টিকল মাত্র কয়েক ঘণ্টা। বরং বড় লক্ষ্যকে সহজ বানিয়ে ৪৭.৩ ওভারে ৫ উইকেটে ৩৫৬ রান তুলে উল্লাসে মাতল অস্ট্রেলিয়া।
অজিদের জয়ের নায়ক ইংলিস ছক্কা মেরে শেষ করে দেন ম্যাচ। পাঁচে নেমে মাত্র ৭৭ বলে সেঞ্চুরি ছুঁয়ে তিনি অপরাজিত থাকেন ১২০ রানে। ৮৬ বল মোকাবিলায় তার ব্যাট থেকে আসে আটটি চার ও ছয়টি ছক্কা। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে এর আগে ৭৭ বলে সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছিলেন ভারতের সাবেক ওপেনার শেবাগ। তিনি ২০০২ সালের আসরে ওই ঝড়ো ইনিংস খেলেছিলেন ইংল্যান্ডেরই বিপক্ষে।
চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে সর্বোচ্চ রান তাড়ার আগের কীর্তি ছিল শ্রীলঙ্কার। ২০১৭ সালে অনুষ্ঠিত আগের আসরে ভারতের করা ৩২১ রান পেরিয়ে জিতেছিল লঙ্কানরা। এবার সেই রেকর্ড দুইয়ে নেমে গেল ইংলিসের বদৌলতে পাওয়া অস্ট্রেলিয়ার জয়ে। ইংলিসকে যোগ্য সমর্থন দেন অ্যালেক্স ক্যারি। পঞ্চম উইকেটে দুজনে গড়েন ১১৬ বলে ১৪৬ রানের জুটি। ক্যারি ৮ চারে ৬৩ বলে ৬৯ করে ফেরেন সাজঘরে।
ওপেনার ম্যাথু শর্ট খেলেন ৬৩ রানের কার্যকর ইনিংস। ৬৬ বলে তার ব্যাট থেকে আসে ৯ চার ও ১ ছক্কা। দলীয় ২৭ রানের মধ্যে ট্রাভিস হেড ও অধিনায়ক স্টিভেন স্মিথের বিদায়ের পর শর্ট ও মারনাস লাবুশেন ধরেন হাল। চাপ জেঁকে বসতে না দিয়ে দ্রুত এগোতে থাকেন তারা। তৃতীয় উইকেটে দুজনে আনেন ৯১ বলে ৯৫ রান। ৪৫ বলে ৫ চারে ৪৭ করা লাবুশেন সাজঘরে ফেরার কিছুক্ষণ পর আউট হয়ে যান শর্ট।
১৩৬ রানে ৪ উইকেট পড়লেও ধীর হয়নি অজিদের রান তোলার গতি। চাহিদার সঙ্গে তাল মিলিয়ে খেলতে থাকে তারা। ইংলিস ফিফটি স্পর্শ করেন ৪১ বলে। ক্যারি হাফসেঞ্চুরিতে পৌঁছান ৪৯ বলে। ৩৮তম ওভারে তাকে ফেরানোর সুযোগ মিলেছিল ইংল্যান্ডের। কিন্তু আদিল রশিদের বলে সহজ ক্যাচ ফেলে দেন জোফরা আর্চার। ওই বলেই ডাবল নিয়ে ফিফটি পূরণ করেন ক্যারি।
পরে ক্যারি যখন বিদায় নেন, তখন ৫০ বলে ৭০ রান দরকার ছিল অজিদের। কিন্তু থিতু থাকা ইংলিস আর গ্লেন ম্যাক্সওয়েল ইংলিশদের ফেরার আশা দেন ভেস্তে। বাউন্ডারির পসরা সাজিয়ে তাড়াতাড়ি লক্ষ্য মিলিয়ে ফেলেন তারা। সাতে নামা ম্যাক্সওয়েল ১৫ বলে ৪ চার ও ২ ছক্কায় অপরাজিত থাকেন ৩২ রানে। ইংলিসের সঙ্গে তার অবিচ্ছিন্ন জুটি ছিল ৩৬ বলে ৭৪ রানের।
জো রুট ছাড়া ইংল্যান্ডের অধিনায়ক জস বাটলারের ব্যবহার করা বাকি পাঁচ বোলার নেন একটি করে উইকেট। তবে লেগ স্পিনার রশিদ ছাড়া সবাই ওভারপ্রতি গড়ে ছয়ের বেশি রান দেন। গতিময় পেসার আর্চারের ১০ ওভারে আসে ৮২ রান। ব্রাইডন কার্স ৭ ওভারেই দিয়ে ফেলেন ৬৯ রান। আরেক গতিময় বোলার মার্ক উডের ৯.৩ ওভারে ওঠে ৭৫ রান।
ইংল্যান্ড হারায় বিফলে গেল ওপেনার বেন ডাকেটের অর্জন। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড গড়েও তাকে মাঠ ছাড়তে হয় চরম হতাশা নিয়ে। ১৪৩ বলে ১৭ চার ও ৩ ছক্কায় তিনি খেলেন ১৬৫ রানের ঝলমলে ইনিংস। টুর্নামেন্টে আগের সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত ইনিংস ছিল ২০০৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রের বিপক্ষে নিউজিল্যান্ডের ন্যাথান অ্যাস্টলের ১৪৫ রান।
Comments