‘জেদ’ থেকে তৈরি যে স্টেডিয়াম

পুনেতে এর আগেও দুই বিশ্বকাপের ম্যাচ হয়েছে । ১৯৯৬ সালের বিশ্বকাপে তো এই শহরেই ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারিয়ে দিয়েছিল কেনিয়া। তবে ১৯৮৭ আর ১৯৯৬ সালে যে মাঠে খেলা হয়েছে সেই জহরলাল নেহরু স্টেডিয়ামে এখন আর আন্তর্জাতিক ক্রিকেট হয় না

পুনে থেকে

‘জেদ’ থেকে তৈরি যে স্টেডিয়াম

পুনেতে এর আগেও দুই বিশ্বকাপের ম্যাচ হয়েছে । ১৯৯৬ সালের বিশ্বকাপে তো এই শহরেই ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারিয়ে দিয়েছিল কেনিয়া। তবে ১৯৮৭ আর ১৯৯৬ সালে যে মাঠে খেলা হয়েছে সেই জহরলাল নেহরু স্টেডিয়ামে এখন আর আন্তর্জাতিক ক্রিকেট হয় না
Pune Cricket Stadium

পুনেতে এর আগেও দুই বিশ্বকাপের ম্যাচ হয়েছে। ১৯৯৬ সালের বিশ্বকাপে তো এই শহরেই ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারিয়ে দিয়েছিল কেনিয়া। তবে ১৯৮৭ আর ১৯৯৬ সালে যে মাঠে খেলা হয়েছে সেই জহরলাল নেহরু স্টেডিয়ামে এখন আর আন্তর্জাতিক ক্রিকেট হয় না। রীতিমতো বিরোধের জেরে ক্রিকেটের জন্য ২০১২ সালে পুনে-মুম্বাই হাইওয়েতে তৈরি করা হয়েছে আস্ত এক স্টেডিয়াম।

মহারাষ্ট্র ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশনের দৃষ্টিনন্দন মাঠেই বৃহস্পতিবার ভারতের বিপক্ষে বিশ্বকাপে চতুর্থ ম্যাচ খেলবে বাংলাদেশ। হাইওয়ের ধারে আশেপাশে কোথাও কিছু নেই, মনে হবে আচমকা যেন বসিয়ে দেওয়া হয়েছে একটা কাঠামো। ভেতরে প্রবেশ করলে সেই কাঠামো নজর কাড়বে যে কারো। আরেক প্রান্তে দৃষ্টিকে প্রশান্তি দেয় পেছনে দাঁড়ানো গোরাদেশ্বর পাহাড়।

মূল রাস্তা থেকে মাঠে যাওয়ার দু'ধারে বনফুলের সমারোহ সতেজ একটা ভাব এনে দেবে। তবে আশেপাশে আর কোন কিছুই না থাকায় প্রখর রোদ ভ্রম তৈরি করে মরুর বুকে এসে পড়লাম না তো!

জনবসতিহীন প্রান্তরে এই স্টেডিয়াম তৈরির পেছনে কাজ করেছে প্রবল জেদ। এক যুগ আগে নেহেরু স্টেডিয়ামের মালিকানায় থাকা পুনে মিউনিসিপাল কর্পোরেশনের সঙ্গে ম্যাচ টিকেটের ভাগ বাটোয়ারা নিয়ে দ্বন্দ্ব তৈরি হয় মহারাষ্ট্র ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশনের (এমসিএ)। বিরোধের জেরে একবার ভারত-শ্রীলঙ্কার ম্যাচ সরিয়ে নেওয়া হয় কলকাতায়। তখনই এমসিএ সিদ্ধান্ত নেয় নেহেরু স্টেডিয়ামে আর না, ক্রিকেটের জন্য নিজেদেরই একটি আলাদা মাঠ বানাবে তারা।

ইংল্যান্ডের সাউদাম্পটন স্টেডিয়ামের যিনি স্থপতি  সেই মাইকেল হপকিন্স দায়িত্ব পান নতুন স্টেডিয়ামের নকশার। তার নকশায় ফাঁকা প্রান্তরে ফুটতে থাকে ফুল। সাউদাম্পটনের সঙ্গে মিল পাওয়া যায় মূল স্ট্যান্ডের আদলেও। এই স্টেডিয়াম নির্মাণে অর্থায়নে এগিয়ে আসে সাহারা গ্রুপ। কিন্তু অর্ধেক কাজের পর সাহারা গ্রুপ সরে যায়।

এখন এই স্টেডিয়ামকে কেউ অর্ধেক ফোটা ফুল বললেও ভুল করবে না। কারণ এক পাশের কাজ পুরোটাই এখনো বাকি। কয়েকটি গ্যালারি ও মিডিয়া সেন্টার বানানো হয়নি,   এখনো তৈরি হয়নি অনুশীলন গ্রাউন্ড।

গ্যালারির ব্যবস্থা তবু  বেশ ভালোই। এক পাশে আছে চার স্তরের বসার ব্যবস্থা। পুরো মাঠের গ্যালারিতে ৩৭ হাজার দর্শক একসঙ্গে খেলা দেখতে পারেন। সম্পূর্ণ কাজ শেষ হলে ৫০ হাজার মানুষের বসার ব্যবস্থা থাকবে। এমসিএ সব খেলার সময়ই এখানে দর্শকদের জন্য বিনামূল্যে পানীয় জলের সরবরাহ করে, অন্য মাঠের তুলনায় এটাও একটা মৌলিক দিক।

পুনের মূল শহর থেকে ৩০ কিলোমিটার দূরত্বের কারণে এখানে খেলা দেখতে আসা দর্শকদের হ্যাপা কম নয়, গণমাধ্যমসহ সংশ্লিষ্টদেরও পড়তে হয় দীর্ঘ ভ্রমণের ঝক্কিতে। অবশ্যই স্টেডিয়ামের পাশেই তৈরি হয়ে যাচ্ছে বিশাল এক আবাসন, অনেক হোটেলও চালু হয়ে গেছে। এই মাঠ কেন্দ্র করে আর দুই-তিন বছরের মধ্যে পুরো এলাকার ছবিই হয়ত বদল যাবে।

পুনের এই মাঠে খুব বেশি খেলা হয়নি। ৭ ওয়ানডের ১৪ ইনিংসের মধ্যে ৮ বারই দেখা গেছে তিনশো ছাড়ানো পুঁজি। মঙ্গলবার প্রথম দিনের অনুশীলনে দুই দলেরই বিগ শটের মহড়া জানান দিচ্ছে এবারও বড় রানের ম্যাচই হবে।

ব্যাটিং বান্ধব উইকেটের পাশাপাশি এখানকার আউটফিল্ডও দারুণ। ড্রেনেজ সিষ্টেম আধুনিক থাকায় বৃষ্টি হলেও মাঠ প্রস্তুত করতে তেমন দেরি হয় না। শহর থেকে খানিকটা দূরে হলেও এখানে উপভোগ্য এক ক্রিকেট ম্যাচ হওয়ার আভাস স্পষ্ট।

Comments