২২ লাখের মধ্যে কোনটা সেরা: টয়োটা অ্যাক্সিও নাকি হোন্ডা গ্রেস

আপনি যদি প্রতিদিনের চলাচলের জন্য ২০ থেকে ২২ লাখ টাকার মধ্যে মাঝারি আকারের সেডান কেনার পরিকল্পনা করে থাকেন; তাহলে আপনাকে পুরানো প্রিম্যালিয়নের জন্য সেকেন্ডহ্যান্ড মার্কেটে খুঁজতে হবে। যা অনেকটা জুয়া খেলার মতোই ঝুঁকিপূর্ণ। তবে এ ক্ষেত্রে আপনি কিছুটা নিরাপদ বিকল্প হিসেবে টয়োটা অ্যাক্সিও বা হোন্ডা গ্রেস-এর মতো রিকন্ডিশনড গাড়ি কিনতে পারেন। 

আপনি যদি প্রতিদিনের চলাচলের জন্য ২০ থেকে ২২ লাখ টাকার মধ্যে মাঝারি আকারের সেডান কেনার পরিকল্পনা করে থাকেন; তাহলে আপনাকে পুরানো প্রিম্যালিয়নের জন্য সেকেন্ডহ্যান্ড মার্কেটে খুঁজতে হবে। যা অনেকটা জুয়া খেলার মতোই ঝুঁকিপূর্ণ। তবে এ ক্ষেত্রে আপনি কিছুটা নিরাপদ বিকল্প হিসেবে টয়োটা অ্যাক্সিও বা হোন্ডা গ্রেস-এর মতো রিকন্ডিশনড গাড়ি কিনতে পারেন। 

এখন পর্যন্ত সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য গাড়িগুলোর মধ্যে রয়েছে জনপ্রিয় এই দুটো মডেলের গাড়ি। তা ছাড়া ঢাকা শহরে দিন দিন গাড়ি দুটো বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। 

তবে একই ধরনের বৈশিষ্ট্য এবং কাছাকাছি দামে গাড়ি দুটির মধ্যে আপনি ঠিক কোনটি বেছে নেবেন? টয়োটা অ্যাক্সিও নাকি হোন্ডা গ্রেস? সেটি বিবেচনার জন্য এ দুটি মডেলের মধ্যে কিছু মূল পার্থক্য নিয়ে আজকের আলোচনা।

হোন্ডা নাকি টয়োটা

প্রথমেই বলে নেওয়া ভালো, সেডানের জন্য দুটি গাড়িই দুর্দান্ত। দেশের গ্রাহকদের মধ্যে টয়োটার প্রতি এক ধরনের পক্ষপাতিত্ব লক্ষ্য করা যায়। তার কারণ এগুলো সহজেই আবার বিক্রি করা যায় এবং শহরের মোটর মেকানিকরা টয়োটা গাড়ির ভেতর থেকে বাহির পর্যন্ত পুরোটার সঙ্গেই বেশ ভালোভাবে পরিচিত। 

অন্যদিকে, কাছাকাছি দামে হোন্ডার পাওয়া যায় গ্রেস মডেলটিও। গাড়ি দুটির বৈশিষ্ট্য একই রকম হওয়ার কারণে কোনটি বেশি ভালো তা নিয়ে কিছু বিতর্কও রয়েছে। যেহেতু গত কয়েক বছরে ঢাকা শহরের রাস্তায় হোন্ডা বেশ পরিচিতি গাড়িতে পরিণত হয়েছে। তাই মেকানিকরাও হোন্ডার গাড়ি মেরামতে দক্ষ হয়ে উঠেছেন। সেক্ষেত্রে আপনি আশা করতে পারেন, আগামী কয়েক বছরের মধ্যে আপনার হোন্ডা গ্রেস মেরামত করা দেশের অন্য যেকোনো গাড়ি মেরামতের মতোই সহজ ও নির্ঝঞ্জাট হবে।

স্পেসিফিকেশন

যতটা সম্ভব কাছাকাছি মডেলের দুটি গাডড়ির মধ্যে তুলনার জন্য আমরা গ্রেসের ২০১৪-২০১৫ মডেলের সঙ্গে নতুন মডেলের অ্যাক্সিও (২০১৫ এবং পরবর্তী ফেসলিফ্ট মডেলের) মধ্যে তুলনা করবো। 

এই দুটিই গাড়িই এফএফ লেআউটসহ মাঝারি আকারের সেডান - উভয়ই হাইব্রিড হিসেবে পাওয়া যায় এবং অ্যাক্সিও শুধু পেট্রোল-অনলি অপশনসহ পাওয়া যায়। হোন্ডা গ্রেস এবং টয়োটা অ্যাক্সিও উভয়েরই একটি অপশনাল এডব্লিউডি রয়েছে এবং ইঞ্জিনের আকারের দিক থেকে উভয়েরই এক দশমিক ৫ লিটারের ৪-সিলিন্ডার ইঞ্জিন রয়েছে। টয়োটা তার কুখ্যাত ভিভিটি-আই প্রযুক্তি ব্যবহার করে এবং হোন্ডা তার ভ্যারিয়েবল ভালভ টাইমিং এবং লিফট প্রযুক্তি ব্যবহার করে, যা ভিটেক নামেও পরিচিত। যদিও গাড়িদুটোকে বেশ কাছাকাছি বলে মনে হয়, তারপরও এই দুটো গাড়ি একে অপরের থেকে বেশ স্বতন্ত্র এবং আলাদা।

নকশা এবং এক্সটেরিওর

যখন আকৃতির কথা আসে, তখন গ্রেসকে একটু বেশি বোল্ড এবং নকশায় বেশ চিন্তা-ভাবনা করা হয়েছে বলে মনে হয়। এর বাহ্যিক অংশটি অ্যাক্সিওর চেয়ে একটু বড় এবং সামগ্রিকভাবে আরও 'পরিপক্ক' দেখায়, যেখানে অ্যাক্সিওটি গ্রেসের তুলনায় একটু ছোট এবং দেখতে একটু বেশি স্পোর্টি এবং ক্ষিপ্র মনে হয়। অ্যাক্সিওর পেছনের অংশটির নকশা বিচার করা একটু কঠিন, তার কারণ এর ট্রাংটি বাম্পার এবং টেললাইটগুলোর সঙ্গে সম্পূর্ণভাবে খাপ খায় না, যে কারণে মনে হয় কিছু একটা অনুপস্থিত। 

অন্যদিকে, গ্রেসের পেছনের অংশটি বেশ সুন্দরভাবে তৈরি করা এবং সবকিছুই পরিপূর্ণভাবে বসানো এবং কোনো কিছু আলাদা করে সেভাবে দৃষ্টিকটু মনে হয় না। তবে অবশ্যই, নিজস্ব ব্যাখ্যা একপাশে রাখলে উভয় বাহনই চমৎকারভাবে নকশা করা হয়েছে। 

ইন্টেরিয়র এবং ইনফোটেইনমেন্ট সিস্টেম

যেহেতু এই দুটি গাড়িই নিত্যদিনের চলাচলের জন্য। তাই ভেতরের স্থানটি চালক এবং আরোহী উভয়ের জন্যই সমান গুরুত্বপূর্ণ। অ্যাক্সিওতে গ্রেসের তুলনায় বেশ পাতলা ও বেশিমেলা আসন রয়েছে। গ্রেসের আসনগুলো কাপড়েরই কিন্তু বড় এবং আরও বড় তাকিয়াযুক্ত, যা বাঁক নেওয়ার সময় বেশ ভালো সাপোর্ট দেয়।

অ্যাক্সিও এবং গ্রেস উভয়েরই চামড়ার স্টিয়ারিং হুইলের অপশন আছে এবং গাড়ি সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য প্রদর্শনের জন্য একটি অতিরিক্ত ডিসপ্লেসহ একটি অ্যানালগ স্পিডোমিটার রয়েছে। উভয় গাড়ির ইনফোটেইনমেন্ট সিস্টেমই বেশ প্রাথমিক পর্যায়ের এবং সেগুলোতে বিভিন্ন প্রয়োজনীয় উপাদান রয়েছে। যেমন হ্যান্ডস-ফ্রি কলিং ও সঙ্গীতের জন্য ব্লুটুথ পেয়ারিং। দুটি গাড়িরই রয়েছে ব্যাকআপ ক্যামেরা। সামগ্রিকভাবে দুটি গাড়িই চমৎকার এবং গাড়ির অভ্যন্তরের ক্ষেত্রে কোনো কোম্পানিই কার্পণ্য করেনি।

ইঞ্জিন এবং জ্বালানি খরচ

দুটি গাড়িতেই ১ দশমিক ৫-লিটার ইঞ্জিনের সঙ্গে একটি সিভিটি গিয়ারবক্স রয়েছে। তবে আপনি যদি খুব ভালো করে খেয়াল করেন তাহলে কখনো কখনো আপনি ৫-স্পিড ম্যানুয়াল অ্যাক্সিও পেয়ে যেতে পারেন। যদিও এই মডেলগুলো দেশে অত্যন্ত বিরল এবং পাওয়া বেশ কঠিন। পেট্রোল মডেলগুলোর সঙ্গে রয়েছে একটি ১-এনজেড ইঞ্জিন, যদিও সেটা খুব বেশি আশ্চর্যিত হওয়ার মতো বিষয় নয়। যাতে রয়েছে ১০৯ হর্সপাওয়ার এবং ১৩৮ এনএম টর্ক। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত হাইব্রিড সংস্করণে একই ইঞ্জিন থাকার কারণে সেটি অতিরিক্ত শক্তি হারিয়ে ৭৪ হর্সপাওয়ার এবং ১১১ এনএম টর্ক-এ নেমে যায়।

অন্যদিকে, গ্রেস মডেলটিতে একটি হাইব্রিড অনলি এল সিরিজ ইঞ্জিনের সঙ্গে হোন্ডা আর্থ ড্রিমস হাইব্রিড প্রযুক্তির ৭-স্পিড ডুয়াল-ক্লাচ ট্রান্সমিশন থাকায় অ্যাক্সিওর চেয়ে বেশি শক্তিসম্পন্ন এবং গড়ে ১১০ হর্স পাওয়ার এবং ১৩২ এনএম টর্ক প্রদান করে। 

যেহেতু এ দুটোই হাইব্রিড গাড়ি, তাই এদের জ্বালানি খরচ তুলনামূলকভাবে কম। যেখানে অ্যাক্সিও শহর অঞ্চলে গড়ে ২০ থেকে ২২ কিলোমিটার এবং হাইওয়েতে ২৬ থেকে ২৮ কিলোমিটার পর্যন্ত মাইলেজ দেয়। অন্যদিকে, গ্রেস শহর অঞ্চলে গড়ে ১৮ থেকে ২০ কিলোমিটার এবং হাইওয়েতে ২০ থেকে ২২ কিলোমিটার পর্যন্ত মাইলেজ দেয়।

তাহলে কোনটি কিনবেন?

সামগ্রিকভাবে কাছাকাছি মূল্যের মধ্যে দুটি গাড়িতেই বেশ ভালোমানের অপশন রয়েছে। তবে, যখন কাউকে সেরাটি বেছে নিতে বলা হয় তখন সেটি পুরোপুরি তার ব্যক্তিগত পছন্দের বিষয়। এ ছাড়া ক্রেতা কী খুঁজছেন তার ওপর অনেকটা নির্ভর করে। তবে টয়োটার রিসেল ভ্যালু চমৎকার এবং জ্বালানীর সাশ্রয়ী। 

হোন্ডা বেশ ভালোমানের উপাদানে তৈরি এবং চমৎকার ড্রাইভিং অভিজ্ঞতা দেয়। বেশিরভাগ ব্যবহারকারী এক্ষেত্রে একমত হবেন যে হোন্ডা গ্রেস অ্যাক্সিওর তুলনায় দেখতে আকর্ষণীয়। 

তবে শেষ পর্যন্ত, গাড়ি দুটির লুক এবং এর বৈশিষ্ট্য বা ফিচারগুলো নিজেই বিচার করুন এবং আপনার মন থেকে যে সিদ্ধান্ত আসে সেটাই বেছে নেন। এ ক্ষেত্রে দুটিই গাড়ি বেশ ভালো এবং সত্যি বলতে কোনোটির ক্ষেত্রেই আপনি ঠকবেন না।

 

অনুবাদ: আহমেদ বিন কাদের অনি

 

Comments