হোন্ডা বিআর-ভি ২০২৩: ৪৫ লাখের মধ্যে প্রয়োজনীয় ফিচার

জাপানের গাড়ি নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান হোন্ডা তাদের নির্ভরযোগ্য ভিটেক ও আই-ভিটেক ইঞ্জিনের জন্য বিখ্যাত। হোন্ডা বাংলাদেশে বেশ কয়েক বছর ধরে আনুষ্ঠানিকভাবেই তাদের ব্যবসায়ীক কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে এবং সিভিক, অ্যাকর্ড, সিআর-ভি এবং এইচআর-ভি’র মতো বেশ কিছু জনপ্রিয় গাড়ি লঞ্চ করেছে। যেগুলো দেশের বাজারে বেশ দ্রুত জনপ্রিয়তাও পেয়েছে। 
লেটেস্ট হোন্ডা ২০২৩ বিআর-ভি। ছবি: আবরার শারিক খান

জাপানের গাড়ি নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান হোন্ডা তাদের নির্ভরযোগ্য ভিটেক ও আই-ভিটেক ইঞ্জিনের জন্য বিখ্যাত। হোন্ডা বাংলাদেশে বেশ কয়েক বছর ধরে আনুষ্ঠানিকভাবেই তাদের ব্যবসায়ীক কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে এবং সিভিক, অ্যাকর্ড, সিআর-ভি এবং এইচআর-ভি'র মতো বেশ কিছু জনপ্রিয় গাড়ি লঞ্চ করেছে। যেগুলো দেশের বাজারে বেশ দ্রুত জনপ্রিয়তাও পেয়েছে। 

গত বছর হোন্ডা তাদের বিআর-ভি দ্বিতীয় প্রজন্মের মডেলটি ইন্দোনেশিয়ার বাজারে এবং বছরের শেষ দিকে থাইল্যান্ডের বাজারে ছেড়েছে।

বিআর-ভি মডেলটি ইন্দোনেশিয়ার বাজারে ৩টি গ্রেডে ছাড়া হয়েছে। সেগুলোর মধ্যে আছে, 'এস', 'ই' ও 'এবং' প্রেস্টিজ। যার মধ্যে প্রেস্টিজে সর্বোচ্চ গ্রেড এবং একমাত্র গ্রেড যেখানে সেন্সিংয়ের অপশন রয়েছে। হোন্ডা সেন্সিং হচ্ছে লেনওয়াচসহ একটি সক্রিয় নিরাপত্তা ব্যবস্থা। থাইল্যান্ডের বাজারের জন্য তারা ২টি গ্রেড 'ই' এবং 'ইএল' ছেড়েছে। দুটো গ্রেডেই হোন্ডা সেন্সিং ফিচারটি রয়েছে।

হোন্ডা ইন্দোনেশিয়া থেকে তাদের নতুন ২০২৩ বিআর-ভি এর টপ-অব-দ্য-লাইন প্রেস্টিজ প্যাক নিয়ে আসছে বাংলাদেশের বাজারে। 
গত সপ্তাহে আমরা হোন্ডার সর্বশেষ বিআর-ভি ২০২৩ ড্রাইভ করার সুযোগ পেয়েছি। সেই অভিজ্ঞতা তুলে ধরা হবে আজকের আলোচনায়।

বাইরের অংশ 

প্রথম দেখায় হোন্ডা ২০২৩ বিআর-ভি'র সামনের অংশটি অনেকটা হোন্ডা সিআর-ভি এবং এইচআর-ভি এর মতো মনে হবে। বিশেষ করে এগুলোর এলইডি হেডলাইট ডিজাইনের সঙ্গে মিল পাবেন। স্টাইলিশ ডে-টাইম লাইটগুলো দিনের আলোয় চলমান অবস্থায় বেলা খুব বেশি একটা আড়ম্বরপূর্ণ মনে হয় না। তবে শেষ বিকেল থেকে এটা আকর্ষণীয় মনে হতে থাকে।

বিআর-ভি হলো ৪৪৯০ মিলিমিটার গুণ ১৭৮০ মিলিমিটার গুণ ১৬৮৫ মিলিমিটারের একটি মাঝারি আকারের সমন্বয়। যার ২১০ মিলিমিটারের গ্রাউন্ড ক্লিয়ারেন্স, ২৭০০ মিলিমিটারের হুইলবেস এইচআর-ভি থেকে বড় তবে সিআর-ভি থেকে ছোট। মডেলটির পেছনের দিকে তাকালে আমরা দেখতে পাই বাঁকা এলইডি টেললাইট ডিজাইন এবং উপরে একটি স্পয়লারসহ তীর্যক রিয়ার উইন্ডশিল্ড যা অনেকটা নতুন এইচআর-ভির মতো দেখতে।

বাম দিকের আয়নার নিচে রয়েছে একটি ক্যামেরা। যখনই আপনি বামে বাঁক নেওয়ার সংকেত চালু করবেন তখনই ক্যামেরার ভিউ আপনার ডিসপ্লেতে হাজির হবে। 

নতুন বিআর-ভির ১৭-ইঞ্চি রিমগুলো আগের প্রজন্মের বিআর-ভি থেকে বড়। যার ফলে এটিকে একটি এসইউভি ধরনের লুক পাওয়া যায়। মডেলটির  সার্বিক বডি অংশ একটি সাধারণ নকশা অনুসরণ করলেও এর মূল আকর্ষণ রঙের দিক দিয়ে। যা এটিকে আরও লোভনীয় করে তোলে। ৪টি রঙে এই মডেলটি পাওয়া যায়। সেগুলোর মধ্যে আছে, ক্রিস্টাল ব্ল্যাক পার্ল, আধুনিক স্টিল মেটালিক, লুনার সিলভার মেটালিক ও প্রিমিয়াম ওপাল হোয়াইট পার্ল।

ভেতরের অংশ

হোন্ডা বিআরভির ভেতরের কেবিনের আসন বিন্যাস ৫+২ হওয়ায় বেশ প্রশস্ত। যেখানে দ্বিতীয় সারি ও তৃতীয় সারির উভয় আসনই ভাঁজ করে আপনার জিনিসপত্র রাখার জন্য প্রায় ২২৩ লিটার পর্যন্ত জায়গা করে নিতে পারবেন। বেশিরভাগ অভ্যন্তরীণ প্যানেল প্লাস্টিকের তৈরি হলেও এর আসনগুলো চামড়ার তৈরি এবং বসতে বেশ আরামদায়ক। তৃতীয় সারির আসনগুলোও চামড়ার তৈরি হওয়ায় পিছনের দিকে খুব বেশি আঁটসাঁট নয় এবং দুজন মানুষকে সহজেই জায়গা দিতে পারে। চামড়া ব্যবহৃত হয়েছে এমন আরও কয়েকটি অংশের মধ্যে রয়েছে স্টিয়ারিং হুইল, শিফট নবসহ বেশ কয়েকটি অংশে। 

ব্যবহার উপযোগিতা এবং স্থানের দিক দিয়ে হোন্ডা বেশ চমৎকারভাবে কাজ করেছে। এর সবগুলো সারিতে একটি ১২ভোল্ট পাওয়ার আউটলেটের সঙ্গে রয়েছে জিনিসপত্র রাখার জন্য কাপ হোল্ডার ও পকেট। বিআরভি'র ক্লাইমেট কন্ট্রোলও বেশ দুর্দান্ত, যেখানে পিছনের সিটের জন্য রয়েছে ডেডিকেটেড ডুয়াল এয়ার কন্ডিশনার। পিছনের যাত্রীরাও ফ্যানের গতি নিজেদের মতো করে নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন। এর ইনফোটেইনমেন্টটি তৈরি ৭-ইঞ্চি টাচস্ক্রিন মনিটরের। যেখানে রয়েছে বেসিক হ্যান্ডস-ফ্রি কলিং, মিউজিকসহ একটি হোন্ডার অ্যাপ। তবে দুর্ভাগ্যবশত এতে অ্যাপল কার-প্লে বা অ্যান্ড্রয়েডঅটোর সুবিধা নেই।

বিআর-ভি'র ড্রাইভিং অভিজ্ঞতা

সামগ্রিকভাবে বিআর-ভি ড্রাইভিংয়ের অভিজ্ঞতা বেশ ভালো ছিল। সিটিং পজিশন সামান্য উঁচু হওয়ায় গাড়িতে ভিজিবিলিটি দারুণ, যা চালককে বনেটের ওপর দিয়ে দেখতে সাহায্য করে। ট্যাকিমিটার হলো স্টক মিটার, যার মাঝখানে একটি ৪-ইঞ্চি টিএফটি ডিসপ্লে রয়েছে, যেখানে গাড়ি সম্পর্কে বিবিধ তথ্য পাওয়া যায়। এ ছাড়া জানালাগুলো বড় হওয়ায় কেবিনের ভেতরে প্রচুর প্রাকৃতিক আলো ঢুকতে পারে। বিআর-ভি'র স্টিয়ারিংটি হালকা হওয়ায় এটি কৌশলের সঙ্গে ট্রাফিক ঠেলে দ্রুত লেন পরিবর্তনকে আরামদায়ক করে তোলে।

যখন ইনডিকেটর চালু থাকে, তখন সাইড মিররের নিচে থাকা ক্যামেরাগুলো ইনফোটেইনমেন্ট স্ক্রিনে প্রতিটি পাশের যে স্পটগুলো সাধারণভাবে দেখা যায় না সেগুলো দেখিয়ে ড্রাইভারকে সহায়তা করে। এ ছাড়া সাসপেনশনটিও বেশ আরামদায়ক। গাড়িটি সহজে ঝাঁকি নিতে পারে, তবে কম ওজন বহন করার সময় কিছুটা দোলা লাগতে পারে কারণ সাসপেনশনটি একই সময়ে ৭ জন যাত্রী নিয়ে চলার উদ্দেশ্যে তৈরি। তা ছাড়া গাড়িটিতে রয়েছে মানসম্মত ক্রুজ কন্ট্রোল, লেন অ্যাসিস্ট এবং স্বয়ংক্রিয় ব্রেকিং।

স্পেসিফিকেশন

বেশিরভাগ নতুন হোন্ডার মতো এটিতেও ১ দশমিক ৫ লিটার ইঞ্জিন রয়েছে। এটি এইচআর-ভি'র মতো একই ইঞ্জিন ব্যবহার করে। যা একটি ৪-সিলিন্ডারযুক্ত ১ দশমিক ৫-লিটার আই-ভিইসি ইঞ্জিন। যেটি ৬ হাজার আরপিএমে ১২১ পিএস শক্তি এবং ৪ হাজার ৬০০ আরপিএমে ১৪৫ এনএম টর্ক তৈরি করতে পারে। এটিতে একটি সিভিটি গিয়ারবক্স থাকায় সামনের চাকাগুলো চলতে পারে।

এ ছাড়া সামনের দিকে গাড়িটির একটি ১৫ ইঞ্চি ভেন্টিলেটেড ডিস্ক এবং পিছনে একটি ২২০মিলিমিটার ড্রাম ব্রেক রয়েছে। যা এই আকারের একটি গাড়ির জন্য বেশ অস্বাভাবিক। এটিতে এবিএস এবং ইপিএসের মতো সব স্ট্যান্ডার্ড বৈশিষ্ট্যগুলো রাখা হয়েছে। পাশাপাশি এতে অ্যাডাপটিভ ক্রুজ কন্ট্রোল, সংঘর্ষের মাত্রা কমাতে ব্রেকিং সিস্টেম এবং লেন-কিপিং অ্যাসিস্টের মতো অতিরিক্ত বৈশিষ্ট্যও রয়েছে।

মন্তব্য

আমাদের পরীক্ষামূলকভাবে চালানো গাড়িটি ছিল একটি লুনার সিলভার মেটালিক বিআর-ভি। যেটিতে হোন্ডা বাংলাদেশের পক্ষ থেকে নিয়ে আসা অন্যান্য বিআর-ভি'র মতোই। গাড়িটি সম্পর্কে আমাদের প্রথম ধারণা হলো, এতে রয়েছে আধুনিক প্রযুক্তির ছোঁয়া, তবে প্রতিটি দিক দিয়ে এটি খুবই সহজ-সরল। গাড়িটি চালানোর পরে আমরা যে বিষয়গুলো বুঝতে পেরেছি তা হলো, গাড়িটির পেছনের ড্রাম ব্রেক থাকলেও ব্রেকগুলো বেশ ভালো। গাড়িটি চালানোর সময় খুব মসৃণভাবে চলে এবং নয়েজ আইসোলেশন সন্তোষজনক।

স্পোর্ট মোডে থাকাকালীন এর প্যাডেল শিফটার দিয়ে গিয়ারগুলো ম্যানুয়ালি পরিবর্তন করা যেতে পারে। তবে স্পোর্ট মোড এবং প্যাডেল শিফটারেও এটি খুব দ্রুতগতির মনে হয় না। তবে এটি হাইওয়ে ক্রুজিংয়ের জন্য ভালো বলে মনে হয়েছে। সাসপেনশনটি সিভিকের মতো অত ভালো নয়, তবে এটি যে খুব বেশি খারাপ তেমনও নয়। গর্তে খুব বেশি ঝাঁকি অনুভূত হয়নি যার কারণে এর অভিজ্ঞতা বেশ আরামদায়ক ছিল।

সংক্ষিপ্ত টেস্ট ড্রাইভে আমরা যে মাইলেজ পেয়েছি তা ১০ থেকে ১২-এর মধ্যে ছিল। যা অবশ্যই অতিরিক্ত ট্রাফিক জ্যামের সময় কিছুটা হ্রাস পাবে। ২০২৩ হোন্ডা বিআর-ভি'র দাম স্থানীয় বাজারে ৪৫ লাখ টাকা। দিন শেষে, এর মসৃণতা, প্রশস্ততা এবং মিনিমালিস্টিক বৈশিষ্ট্যের সঠিক মিশ্রণ একে একটি বেশ ভালো মানের গাড়িতে পরিণত করে তুলেছে।

অনুবাদ করেছেন আহমেদ বিন কাদের অনি
 

Comments