বিমানবন্দরে লাগেজ হারানো প্রতিরোধে নব প্রযুক্তি

সাম্প্রতিক মাসগুলোতে বিমানবন্দরে যাত্রীদের লাগেজ হারানোর ঘটনা অনেক বেড়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও বিভিন্ন গণমাধ্যমে এ বিষয়ে বিস্তর লেখালেখিও হচ্ছে। এ সমস্যার হাত থেকে বাঁচতে যাত্রী ও উড়োজাহাজ সংস্থাগুলো প্রযুক্তি-ভিত্তিক সমাধানের দিকে ঝুঁকছেন।
বিমানবন্দরে লাগেজ হারানো অনেকের জন্যই বড় সমস্যা। ফাইল ছবি: রয়টার্স
বিমানবন্দরে লাগেজ হারানো অনেকের জন্যই বড় সমস্যা। ফাইল ছবি: রয়টার্স

সাম্প্রতিক মাসগুলোতে বিমানবন্দরে যাত্রীদের লাগেজ হারানোর ঘটনা অনেক বেড়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও বিভিন্ন গণমাধ্যমে এ বিষয়ে বিস্তর লেখালেখিও হচ্ছে। এ সমস্যার হাত থেকে বাঁচতে যাত্রী ও উড়োজাহাজ সংস্থাগুলো প্রযুক্তি-ভিত্তিক সমাধানের দিকে ঝুঁকছেন।

আজ যুক্তরাজ্যের সংবাদ সংস্থা বিবিসির এক প্রতিবেদনে এমন কয়েকটি সমাধানের বিষয়ে বলা হয়েছে।

লাগেজ হারিয়ে যাওয়ার কারণ

প্রত্যেক বিমানবন্দরে ব্যাগেজের ব্যবস্থাপনা এক দুঃস্বপ্নের মতো ব্যাপার। ফাইল ছবি: রয়টার্স

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ যখন অনেক বেশি ছিল, তখন বিশ্বে উড়োজাহাজ চলাচল কার্যত বন্ধ ছিল। ফলে বিমানবন্দরগুলোতে বাড়তি কর্মী ছাঁটাই করে খরচ কমানো হয়। তবে এখন আবারও ছুটির মৌসুমে মানুষের বিদেশ ভ্রমণের প্রবণতা বেড়ে যাওয়ায় বিমানবন্দরগুলো সীমিত কর্মী দিয়ে লাগেজ ব্যবস্থাপনাসহ গুরুত্বপূর্ণ সেবাগুলো দিতে হিমশিম খাচ্ছে।

স্পেনের ম্যাপফ্রে নামের বিমা সংস্থা জানিয়েছে, এই গ্রীষ্মে লাগেজ হারিয়ে ফেলা ভ্রমণকারীর সংখ্যা ২০১৯ সালের তুলনায় ৩০ শতাংশ বেশি।

লাগেজ ব্যবস্থাপনা সফটওয়্যার নির্মাতা প্রতিষ্ঠান এসআইটিএ'র বার্ষিক প্রতিবেদন অনুসারে, ২০১৯ সালে সারাবিশ্বে ১ কোটি ৯০ লাখ ব্যাগ ও স্যুটকেস যাত্রীদের সঙ্গে একই ফ্লাইটে ওঠেনি। এর মধ্যে ১৩ লাখ ব্যাগ ও স্যুটকেসের আর কোনো হদিসই পাওয়া যায়নি।

জিপিএস ট্র্যাকারের ব্যবহার

অ্যাপলের এয়ারট্যাগের মাধ্যমে খুব সহজেই লাগেজ ট্র্যাক করা যায়। ছবি: রয়টার্স
অ্যাপলের এয়ারট্যাগের মাধ্যমে খুব সহজেই লাগেজ ট্র্যাক করা যায়। ছবি: রয়টার্স

নিজেদের ব্যাগ ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় উপকরণের খোঁজ রাখতে যাত্রীরাই স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে প্রযুক্তির সাহায্য নিচ্ছেন। তারা তাদের লাগেজের সঙ্গে অ্যাপলের এয়ারট্যাগের মত জিপিএস ট্র্যাকার সংযুক্ত করে দিচ্ছেন।

অ্যাপল জানিয়েছে, সাম্প্রতিক সময়ে এয়ারট্যাগের বিক্রি অনেক বেড়েছে।

স্মার্টফোন বা কম্পিউটারের মাধ্যমে এয়ারট্যাগ যুক্ত স্যুটকেসগুলোকে পৃথিবীর যেকোনো জায়গায় চিহ্নিত করা সম্ভব। গত মাসে প্রকাশিত ব্লুমবার্গের এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, এক ব্যক্তি বিয়ের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া থেকে স্কটল্যান্ড যান। কিন্তু তিনি ট্র্যাকারে দেখতে পান তার লাগেজ কানাডার টরন্টো হয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ডেট্রয়েটে চলে গেছে।

তবে পরিবহন খাত বিশেষজ্ঞ এরিক লিওপল্ডের মতে, এ ধরনের ট্যাগিং যন্ত্র যাত্রীদের মনে কিছুটা শান্তি আনতে পারলেও এতে মূল সমস্যার সমাধান হচ্ছে না। তার মতে, লাগেজের ব্যবস্থাপনা ও ফ্লাইট ছেড়ে যাওয়ার সময়ের মধ্যে সমন্বয় না হলে এ ধরনের সমস্যার সমাধান হবে না।

সিট্রুর সমাধান

সিট্রু'র প্রযুক্তিতে দ্রুত লাগেজের নিরাপত্তা পরীক্ষা শেষ করা যায়। ছবি: সিট্রু'র ওয়েবসাইট।
সিট্রু'র প্রযুক্তিতে দ্রুত লাগেজের নিরাপত্তা পরীক্ষা শেষ করা যায়। ছবি: সিট্রু'র ওয়েবসাইট।

সিট্রু নামের একটি প্রতিষ্ঠান বিমানবন্দর ও উড়োজাহাজ সংস্থাগুলোকে বিমানে আরও উপযোগিতার সঙ্গে লাগেজ ওঠানোর ক্ষেত্রে সহায়তা করার ব্যাপারে আশাবাদী। এই ইসরায়েলি প্রতিষ্ঠানটি একটি সফটওয়্যার তৈরি করেছে, যেটি নিরাপত্তা কর্মীদের চেয়ে দ্রুত চেক-ইন লাগেজ স্ক্যান করতে পারে।

সিট্রুর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আসসাফ ফ্রেনকেল বলেন, 'সিট্রু কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও কম্পিউটার ভিশন অ্যালগোরিদম ব্যবহার করে ব্যাগে নিষিদ্ধ বস্তুর উপস্থিতি চিহ্নিত করে।'

এটি এক্স-রে ও সিটি স্ক্যানারের সঙ্গে যুক্ত হয়ে মানব চোখের চেয়ে দ্রুত এবং তাৎক্ষণিকভাবে এসব উপকরণ চিহ্নিত করতে পারে বলেও মন্তব্য করেন তিনি। বলেন, 'এটি সবসময় চালু থাকে, কখনো অন্যমনস্ক বা ক্লান্ত হয় না।'

ফ্রেনকেল দাবি করেন, এই প্রযুক্তির সহায়তায় লাগেজগুলো নির্ধারিত সময় অনুযায়ী উড়োজাহাজে ওঠানো যায়।

এয়ারপোর্টারের সমাধান

এয়ারপোর্টারের অ্যাপের মাধ্যমে লাগেজ ট্র্যাক করা যায় যেকোনো সময়। ছবি: এয়ারপোর্টারের সৌজন্যে
এয়ারপোর্টারের অ্যাপের মাধ্যমে লাগেজ ট্র্যাক করা যায় যেকোনো সময়। ছবি: এয়ারপোর্টারের সৌজন্যে

যুক্তরাজ্যের প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান এয়ারপোর্টারের সমাধানটি ভিন্নধর্মী। তাদের প্রস্তাব, বিমানবন্দরে যাত্রীদের লাইন ধরে লাগেজ পরীক্ষা করাতে আসারই প্রয়োজন নেই।

এর পরিবর্তে যাত্রীদের বাসা থেকে এসে লাগেজ নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করেছে এই প্রতিষ্ঠানটি। একটি অ্যাপ কিংবা ওয়েবসাইট ব্যবহার করে এই সেবা নিতে পারেন ভ্রমণকারীরা।

এ মুহূর্তে লন্ডন থেকে জেনেভার ফ্লাইটে ব্রিটিশ এয়ারওয়েজ ও সুইস ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের ফ্লাইটগুলোতে এই সেবা চালু আছে। এয়ারপোর্টারের একজন কর্মী ভ্রমণকারীদের বাসায় গিয়ে তাদের কাছ থেকে স্যুটকেস সংগ্রহ করবেন। তারপর সরাসরি এই লাগেজ বিমানবন্দরে নিরাপত্তা পরীক্ষা ও চেক-ইনের জন্য চলে যাবে।

যাত্রী গন্তব্যে পৌঁছানোর পর এয়ারপোর্টারের পরিবহণ অংশীদাররা যাত্রীর দেওয়া ঠিকানায় লাগেজ পৌঁছে দেবেন।

এ মুহূর্তে কেবল ২টি দেশে কাজ করলেও পর্যায়ক্রমে বিশ্বজুড়ে সেবা দেওয়ার পরিকল্পনা আছে এয়ারপোর্টারের।

যদি যাত্রার ১ দিন আগে লাগেজ সংগ্রহ করা হয়, সেক্ষেত্রে যাত্রীকে প্রতিটি ব্যাগের জন্য ৪০ পাউন্ড করে দিতে হবে। তবে শেষ মুহূর্তে এ সেবা গ্রহণ করলে খরচ আরও বেড়ে যেতে পারে। বিমানবন্দর থেকে দূরত্বের ওপরেও মূল্যের তারতম্য হয়।

এটি এখন একটি বিলাসবহুল সেবা হলেও আগামীতে এর খরচ কমিয়ে সবার জন্য সহজলভ্য করার চেষ্টা করবেন বলে জানিয়েছেন এয়ারপোর্টারের প্রধান নির্বাহী র‍্যান্ডেল ডার্বি।

তিনি বিশ্বাস করেন, বিমানবন্দর ও উড়োজাহাজ সংস্থা ভর্তুকি দিয়ে হলেও এ ধরনের সেবাকে আরও জনপ্রিয় করার চেষ্টা করবে। কারণ ভর্তুকির পরেও বর্তমান প্রক্রিয়ায় বিমানবন্দরে যাত্রীদের লাগেজ ব্যবস্থাপনার খরচ তুলনামূলকভাবে বেশি থাকবে।

আশা করা যায় আগামীতে আরও উন্নত ও বুদ্ধিদীপ্ত সমাধানের মাধ্যমে উড়োজাহাজযাত্রীদের ব্যাগ হারিয়ে যাওয়া বা দেরিতে পৌঁছানোর দীর্ঘদিনের যন্ত্রণা অনেকাংশেই কমে আসবে।

 

Comments

The Daily Star  | English

Teesta floods bury arable land in sand, leaving farmers devastated

40 unions across 13 upazilas in Lalmonirhat, Kurigram, Rangpur, Gaibandha, and Nilphamari are part of the Teesta shoal region

1h ago