ইমেইলে সিগনেচার যোগ করবেন যেভাবে

ইমেইল সিগনেচার আপনার পরিচয় তুলে ধরতে পারে। আপনি কে, আপনার ব্যবসার বিষয়ে, আপনার যোগ্যতা বা আপনার সম্পর্কে যে কোনো বিষয় আপনি এর মাধ্যমে জানাতে পারবেন।
জিমেইলে মেইল না আসলে যা করবেন
ছবি: সংগৃহীত

দৈনন্দিন জীবনে প্রায় প্রতিদিনই আমাদের অসংখ্য ইমেইল আদান-প্রদান করতে হয়। আমাদের পাঠানো ইমেইল ব্যক্তিগত হোক কিংবা পেশাদার; এগুলো আমাদের ব্যাক্তিত্ব উপস্থাপনের একটি উপায়ও বটে।

ইমেইল সিগনেচার আপনার পরিচয় তুলে ধরতে পারে। আপনি কে, আপনার ব্যবসার বিষয়ে, আপনার যোগ্যতা বা আপনার সম্পর্কে যে কোনো বিষয় আপনি এগুলোর মাধ্যমে জানাতে পারবেন।

তাই আপনি যদি আপনার ইমেইল সিগনেচারে শুধু নাম এবং ফোন নম্বরের মতো দুই একটা তথ্য দিয়ে রেখে দেন, তাহলে আপনি ই-মেইল সিগনেচারের সম্পূর্ণ সদ্ব্যবহার করছেন না।

ঠিক কী কী বিষয় আপনার ইমেইল সিগনেচারে রাখবেন এবং কীভাবে একটি দুর্দান্ত ই-মেইল সিগনেচার বানাবেন জেনে নেওয়া যাক।

একটি ইমেইল সিগনেচারে যেসব উপাদান রাখবেন

১. পুরো নাম

সাধারণ হাতে লেখা চিঠিপত্রের মতোই, ইমেইলে আপনার নাম সবসময় অন্তর্ভুক্ত করা উচিত। যাতে আপনার বার্তার প্রাপক বুঝতে পারে যে এটি কার কাছ থেকে এসেছে। ইমেইল সিগনেচারে সাধারণত সবার প্রথমে উল্লেখ করা উচিত আপনার পুরো নাম।

২. পেশা বা কাজ বিষয়ক তথ্য

নামের পর আপনার পেশা বা কাজ সম্পর্কে কিছু তথ্য থাকা উচিত। সেখানে আপনার কাজ বা চাকরির শিরোনাম, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নাম, আপনার কোম্পানি বা সংস্থার নাম কিংবা আপনি কোন বিভাগে কাজ করেন সেগুলো অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে। এসব তথ্য আপনার নেটওয়ার্কিংয়ে সহায়ক হবে। তার ওপর আপনি যদি কোনো বড় সংস্থায় কাজ করে থাকেন, সেক্ষেত্রে সেটি আপনাকে আরও বিশ্বাসযোগ্য করে তোলার পাশাপাশি বিশেষ স্বীকৃতিও প্রদান করবে। এটি আপনার ইমেইলের প্রাপকের মনোযোগ কাড়বে এবং আপনার বার্তাটি তখন তারা গুরুত্ব দিয়ে দেখবে।

৩. অন্যান্য উপায়ে যোগাযোগের তথ্য

ই-মেইলের বাইরেও অন্যান্য উপায়ে যেন প্রাপক আপনার সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারে সেসব তথ্য দেওয়াও বেশ গুরুত্বপূর্ণ। এর মধ্যে থাকতে পারে ফোন, ফ্যাক্স, ব্যাক্তিগত ওয়েবসাইট বা যোগাযোগের অন্য কোনো উপায়।

৪. সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের প্রোফাইলের আইকন

আপনার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের উপস্থিতি আপনার ব্যক্তিগত ব্র্যান্ডিংয়ের একটি প্রধান অংশ হয়ে উঠতে পারে। বর্তমানে আপনার ব্যক্তিত্ব, আপনি কী পছন্দ করেন কিংবা আপনার আগ্রহের বিষয়গুলো আপনার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের প্রোফাইলে ফুটে উঠতে পারে।

তাই আপনার ইমেইল সিগনেচারে আপনার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের প্রোফাইলের লিংকের অন্তর্ভুক্তি, আপনার জন্য চমৎকার সব ফলাফল নিয়ে আসতে পারে। এটি মানুষকে আপনার সঙ্গে যোগাযোগ করার এবং অনুসরণ করার নতুন একটি উপায় তৈরি করে দেয়। তবে এক্ষেত্রে মনে রাখবেন, টেক্সট লিংকের পরিবর্তে সেখানে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের আইকন ব্যবহার করা উচিত। এতে করে কম জায়গায়, সুন্দর করে অনেকগুলো সাইটের লিংক যুক্ত করতে পারবেন।

৫. কল টু অ্যাকশন

আপনার ইমেইল সিগনেচারে সবচেয়ে স্মার্ট যে জিনিসগুলো আপনি অন্তর্ভুক্ত করতে পারেন, সেগুলোর মধ্যে একটি হচ্ছে কল-টু-অ্যাকশন। ভালো ইমেইল সিগনেচারে কল-টু-অ্যাকশন বা সিটিএ-গুলো হওয়া উচিত সহজ, আপ-টু-ডেট এবং আপনার ইমেইলের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।

৬. বুকিং লিংক

কোনো মিটিং বুক করার জন্য আপনার সহকর্মী এবং ক্লায়েন্টদের সঙ্গে বারবার ইমেইল আদানপ্রদান করা বেশ ঝামেলার হতে পারে। সেজন্য আপনার ইমেইল সিগনেচারে আপনার ক্যালেন্ডারে বুক করার একটি লিংক দিয়ে রাখুন। আপনি অনলাইনে এরকম অনেক ক্যালেন্ডার টুল পাবেন, যেখানে মানুষ আপনার সঙ্গে অ্যাপয়েন্টমেন্ট বুক করতে পারবে যেমন, ক্যালেন্ডি, হাবস্পট, গুগল কিংবা অফিস ৩৬০ ক্যালেন্ডার, ইউ ক্যান বুক ডট মি ইত্যাদি।

৭. ছবি বা লোগো

আপনার ই-মেইল সিগনেচারকে আরও দারুণ দেখানোর জন্য একটি ছবি বা লোগো যোগ করতে পারেন। আপনি চাইলে কোনো পেশাদার ছবি ব্যবহার করতে পারেন কিংবা আপনার ব্র্যান্ড সম্পর্কে সবার মধ্যে আরও সচেতনতা বাড়াতে চাইলে কোম্পানির লোগো ব্যবহার করতে পারেন।

ইমেইল সিগনেচার তৈরিতে যেসব বিষয়ে গুরুত্ব দেবেন

পেশাদার ইমেইল সিগনেচার তৈরিতে কী কী বিষয়ের ওপর গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন জেনে নেওয়া যাক।

১. আপনার নাম, অধিভুক্তি ও অন্যান্য যোগাযোগের তথ্যের ওপর জোর দিন।

২. রঙ সাধারণ ও সামঞ্জস্যপূর্ণ রাখুন। ব্র্যান্ডিং সবচেয়ে কার্যকর হয় যখন এটি সামঞ্জস্যপূর্ণ হয়। আপনার ইমেইল সিগনেচারে রঙের ব্যবহার এর নকশায় একটি চমৎকার স্পর্শ যোগ করতে পারে। আপনার লোগো বা ব্র্যান্ডিংয়ের সঙ্গে মেলে এরকম সূক্ষ্ম রঙ ব্যবহার করুন।

৩. তথ্যগুলো সুন্দর করে সাজান। তথ্যগুলো সুন্দর করে সাজালে সেগুলো সহজে বোধগম্য হয়। তাই আপনার ইমেইল সিগনেচার আকর্ষণীয় করতে একটি সঠিক শ্রেণিবিন্যাস ব্যবহার করুন। যেমন, আপনার নামটি প্রথমে একটি বড় ফন্টে লিখুন। তারপর গুরুত্বের ওপর ভিত্তি করে বোল্ড এবং রঙ নির্ধারণ করুন।

৪. লিংকগুলো ট্র্যাকেবল করুন। ইমেইল সিগনেচারে আপনার ব্যবহৃত সিটিএ এবং আপনার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের আইকনগুলোয় কেউ ক্লিক করছে কি না তা বের করুন। আপনি ইন্টারনেটে সহজেই একটি ট্র্যাকিং লিঙ্ক তৈরি করতে পারবেন।

৫. স্পেস ডিভাইডার ব্যবহার করুন। ইমেইল সিগনেচারে লেখাগুলোর মাঝে যদি কোনো ফাঁকা না থাকে তাহলে সেটি দেখতে সুন্দর লাগবে না। তাই আপনার তথ্যগুলোর মাঝে ফাঁকা রাখতে স্পেস ডিভাইডার ব্যবহার করুন। এছাড়া গ্লিফ ডিভাইডার বা ভার্টিকাল বার চিহ্ন ব্যাবহার করতে পারেন।

৬. আপনার ইমেইল সিগনেচারটির নকশা যেন মোবাইলবান্ধব হয় তা নিশ্চিত করুন। কারণ বর্তমানে বেশিরভাগ মানুষই তাদের ইমেইল ফোন থেকে পড়েন।

৭. আপনি যদি ওপরের সব পদক্ষেপগুলো মানার পরেও মনমতো সিগনেচার বানাতে না পারেন। তাহলে একটি ইমেইল সিগনেচার জেনারেটর ব্যবহার করতে পারেন। অনলাইনে ইমেইল সিগনেচার জেনারেটর লিখে সার্চ দিলে আপনি অসংখ্য সাইট পেয়ে যাবেন। তথ্য, ছবি এবং লিংক যোগ করে আপনার পছন্দমতো রঙ নির্বাচন করলে সেখানে পেয়ে যাবেন বিভিন্ন ধরনের ইমেইল সিগনেচার।

বিভিন্ন পরিষেবায় যেভাবে ইমেইল সিগনেচার তৈরি করবেন

বেশিরভাগ ইমেইল অ্যাকাউন্টের সেটিংস অপশনেই আপনি ইমেইল সিগনেচার যোগ করার অপশন পেয়ে যাবেন। তবে এদের মধ্যে কিছুটা ভিন্নতা থাকতে পারে।

জিমেইলে যেভাবে সিগনেচার যোগ করবেন

জিমেইলের ইমেইল সিগনেচারে আপনি ১০ হাজার পর্যন্ত অক্ষর রাখতে পারবেন। সিগনেচার যোগ করতে-

• জিমেইল খুলুন।

• উপরের ডানদিকে সেটিংসে ক্লিক করুন

• সেখান থেকে অল সেটিংসে যান

• সেখানে সিগনেচার বিভাগে গিয়ে একটি বক্স পাবেন যেখানে আপনি আপনার সিগনেচার টেক্সট যোগ করতে পারবেন

• আপনি চাইলে সেখানে একটি ছবি যোগ করতে পারেন কিংবা টেক্সট স্টাইল ফরম্যাট করতে পারেন

• কাজ শেষ হয়ে গেলে পৃষ্ঠার নিচে 'সেভ চেঞ্জেস' এ ক্লিক করুন

মাইক্রোসফট আউলুকে যেভাবে সিগনেচার যোগ করবেন

• নিউ ইমেইল নির্বাচন করুন

• সেখান থেকে সিগনেচার নির্বাচন করুন

• 'নিউ' নির্বাচন করুন এবং নতুন সিগনেচারের জন্যে একটি নাম দিন

• এডিট সিগনেচার অপশনে গিয়ে আপনার সিগনেচারের টেক্সট লিখুন এবং আপনার পছন্দমতো ফরম্যাট করুন

• 'ওকে' নির্বাচন করুন এবং ইমেইল বন্ধ করুন

• আপনার তৈরি করা সিগনেচারটি দেখতে আবার নিউ ইমেইল নির্বাচন করুন

ইয়াহু-তে যেভাবে সিগনেচার যোগ করবেন

• মেনু আইকনে ক্লিক করুন

• সেটিংস নির্বাচন করুন

• সিগনেচার অপশনে যান

• টগল বাটনের মাধ্যমে সিগনেচার চালু অথবা বন্ধ করুন

• ইউজারনেমের নিচে চাপুন

• সেখানে আপনার নতুন সিগনেচার লিখুন কিংবা চাইলে আগেরগুলো সম্পাদনা করুন

Comments