ইয়াহু-জিমেইল ছাড়াও জনপ্রিয় কিছু ই-মেইল প্রোভাইডার

বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় ই-মেইল প্রোভাইডার হওয়ার উদ্দেশ্যে ২০১২ সালে হটমেইল কিনে নেয় জিমেইল। এরপর থেকে অন্যতম জনপ্রিয় ই-মেইল প্রোভাইডার কোম্পানিটি শীর্ষ স্থান দখল করে আছে। বর্তমানে ১.৮ বিলিয়ন ব্যবহারকারী রয়েছে জিমেইলের।
ছবি: টুইকলাইব্রেরি

বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় ই-মেইল প্রোভাইডার হওয়ার উদ্দেশ্যে ২০১২ সালে হটমেইল কিনে নেয় জিমেইল। এরপর থেকে অন্যতম জনপ্রিয় ই-মেইল প্রোভাইডার কোম্পানিটি শীর্ষ স্থান দখল করে আছে। বর্তমানে ১.৮ বিলিয়ন ব্যবহারকারী রয়েছে জিমেইলের।
 
জনপ্রিয় ই-মেইল প্রোভাইডারগুলোর তালিকায় অন্যতম আরেকটি প্রতিষ্ঠান হলো ইয়াহু। যার ব্যবহারকারীর সংখ্যা ২৩০ মিলিয়নের ঘরে। 

তবে, এই দুটি প্রতিষ্ঠানের বাইরেও যে আরও বেশ কিছু ই-মেইল প্রোভাইডার উন্নতমানের ই-মেইল সুবিধা প্রদান করে থাকে, তা হয়তো অনেকের অজানা। এরকম ৬টি জনপ্রিয় ই-মেইল প্রোভাইডারের ব্যবহারবিধি ও সুবিধা নিয়ে আজকের আয়োজন। 

মাইক্রোসফট আউটলুক 

আউটলুক শব্দ দেখে মনে হতে পারে, এটি মাইক্রোসফট উইন্ডোজ অ্যাপ বা অফিস ৩৬৫ অ্যাপের নাম। কিন্তু একই নামে রয়েছে মাইক্রোসফটের বিনামূল্যের একটি ই-মেইল পরিষেবা। 

ছবি: সংগৃহীত

ইয়াহুকে পেছনে ফেলে বর্তমানে বিশ্বের দ্বিতীয় জনপ্রিয় ই-মেইল প্রোভাইডার হিসেবে তালিকায় স্থান করে নিয়েছে আউটলুক। মাইক্রোসফটের পরিষেবা হওয়ায় উইন্ডোজ ১০ অপারেটিং সিস্টেম এবং আউটলুক অফিস ৩৬৫ অ্যাপের সঙ্গে সমন্বয়ের মাধ্যমে আউটলুক ই-মেইল ব্যবহারকারীরা কিছু সুবিধা পেয়ে থাকে।   

কেউ যদি ডেস্কটপ ক্লায়েন্ট বা ওয়েব ক্লায়েন্ট ব্যবহার করতে চায়, সেক্ষেত্রেও আউটলুকের সুবিধা পাওয়া যাবে।

আউটলুক ব্যবহারের জন্য @outlook.com লিখে সাইন-আপ করতে হয়।

জিএমএক্স মেইল 

জার্মানির অন্যতম ইন্টারনেট পরিষেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান ইউনাইটেড ইন্টারনেটের সহযোগী সেবা হলো জিএমএক্স মেইল। ১৯৯৭ সাল থেকে এটির ব্যবহার শুরু হলেও গত কয়েক বছর ধরে বেশি জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।

ছবি: সংগৃহীত

এটির মাসিক ব্যবহারকারীর সংখ্যা ১৫ মিলিয়ন হলেও সেরা ১০টি বিনামূল্যের ই-মেইল প্রোভাইডারের তালিকায় স্থান করে নিয়েছে। যা জিমেইল, ইয়াহু, আউটলুকের পরিষেবার মতো জনপ্রিয়তার জানান দিচ্ছে। 

এ ছাড়া সুবিধা হিসেবে এতে পাওয়া যাবে ১ গিগাবাইটের ফাইল স্টোরেজ, ৫০ মেগাবাইট অ্যাটাচমেন্ট লিমিট এবং আইএমএপি ও পিওপি সাপোর্ট। 

শুধু তাই নয়, জায়গার সীমাবদ্ধতার অসুবিধা এড়াতে ৬৫ মেগাবাইট ই-মেইল স্টোরেজ পাওয়া যাবে। তবে আরএসএস রিডার ও কনভারসেশন ভিউয়ের সুবিধা পাওয়া যাবে না।   

জোহো মেইল

নতুন ই-মেইল প্রোভাইডারের তালিকায় থাকা আরেকটি উল্লেখযোগ্য নাম হলো জোহো মেইল। যার যাত্রা শুরু হয় ২০০৮ সালের অক্টোবরে। 

তবে জিমেইল, ইয়াহু ও আউটলুকের মতো বিনামূল্যে ই-মেইল ব্যবহারের পরিষেবা দেওয়া ও বিজ্ঞাপন ছাড়া ই-মেইল আদান-প্রদানের ক্ষেত্রে জোহো মেইল সেরাদের মধ্যে অন্যতম। বিগত কয়েক বছরে এটির ব্যবহারকারীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১২ মিলিয়নের মতো।    

ছবি: সংগৃহীত

অন্যান্য বিনামূল্যে ই-মেইল পরিষেবা প্রদানকারীর মতো মাল্টি-লেভেল ফোল্ডার, কনভারসেশন ভিউ, ড্র্যাগ অ্যান্ড ড্রপ ইনবক্স অর্গানাইজিং এবং ফিল্টারের সুবিধা পাওয়া যাবে জোহো মেইলে। এ ছাড়া ব্যবহারকারীর ডোমেইনে বিনামূল্যে ই-মেইল সেট আপের সুবিধা পাওয়া যাবে। 

জোহো মেইল মাইক্রোসফটের মতোই বিশাল অফিস সুইটের একটি অংশ। যেখানে মাইক্রোসফট অফিসের বিকল্প হিসেবে জোহো ডকসে টেক্সট লিখা, এডিট করার পাশাপাশি প্রেজেন্টেশন এবং স্প্রেডশিট ডকুমেন্ট সমন্বয় করা যাবে। তবে এতে ভিডিও চ্যাট টুলের সুবিধা নেই। 

আইক্লাউড

আইক্লাউড মূলত অ্যাপল ব্যবহারকারীদের জন্য একটি বিশেষ পরিষেবা। যেখানে বেশিরভাগ ম্যাক, আইপ্যাড, আইফোন ব্যবহারকারীদের অ্যাকাউন্ট থাকে। এটি এমন একটি ক্লাউড পরিষেবা, যার মাধ্যমে ফাইন্ড মাই আইফোন, ফটো স্ট্রিম, কী-চেইন এবং আইক্লাউড ড্রাইভের সুবিধা পাওয়া যায়। এ ক্ষেত্রে আইক্লাউড অ্যাপের ই-মেইল সেবা একটি অংশবিশেষ মাত্র। 

৮৫০ মিলিয়ন অ্যাপ ব্যবহারকারীর মধ্যে ঠিক কতজন @icloud.com ই-মেইল অ্যাড্রেস ব্যবহার করে সে সম্পর্কে জানা যায়নি। 

ছবি: সংগৃহীত

মাইক্রোসফট ও @outlook.com-এর মতো আইক্লাউড ম্যাকওএস এবং আইওএস উভয় ব্যবহারকারীদের ক্ষেত্রে অ্যাপলের ডিফল্ট মেইল ক্লায়েন্ট সমন্বয় করে। মোবাইল ফোনে অ্যাপটিতে যেকোনো সংখ্যক ই-মেইল প্রোভাইডার সংযোগ করা যায়। আর ওয়েব ক্লায়েন্টে ব্যবহারকারী আইক্লাউড অ্যাড্রেস অ্যাক্সেস করতে পারে।

এ ছাড়া আইক্লাউডে ৫ গিগাবাইট অবধি বিনামূল্যে স্টোরেজ সুবিধা পাওয়া যায়। তবে ছবি, ফাইল, ডকুমেন্ট সংরক্ষণ করার ক্ষেত্রে আরও স্টোরেজ চাইলে বাড়তি অর্থ প্রদান করতে হবে। 

প্রোটনমেইল 

ই-মেইল প্রোভাইডারের দুনিয়ায় নতুন হলেও বেশ জনপ্রিয়তা লাভ করেছে প্রোটনমেইল। বিশেষ করে গোপনীয়তার প্রতি জোর দেওয়ার জন্য এটির জুড়ি মেলা ভার। 

২০১৪ সালে সুইজারল্যান্ডের সিইআরএন প্রোটনমেইলের আদিভূমি। এখনো সেখান থেকেই মূল কার্যক্রম পরিচালিত হয়। এটি সুইজারল্যান্ডের ফেডারেল অ্যাক্ট প্রোটেকশন ও ফেডারেল ডেটা প্রোটেকশন অর্ডিন্যান্স অনুযায়ী কঠোর নিরাপত্তা প্রদানের বিষয়টির প্রতি বিশেষ নজর রাখে। 

ছবি: সংগৃহীত

প্রোটনমেইলের সার্ভারে ক্ষতি না হওয়া পর্যন্ত এটি গ্রাহকের তথ্য গোপনে ক্লায়েন্ট-সাইড এনক্রিপশন ব্যবহার করে। এমনকি প্রতিষ্ঠানটি দাবি করছে, গ্রাহকের তথ্য জানার মতো প্রযুক্তিগত সুবিধা তাদের আয়ত্তের বাইরে। যা থার্ড পার্টির কাছে ব্যবহারকারীর বার্তা পৌঁছানো প্রায় অসম্ভব। এ ক্ষেত্রে জিমেইল এবং আউটলুককে সরাসরি চ্যালেঞ্জ করছে। 

প্রোটনমেইল সাইন-আপের জন্য প্রয়োজনীয় কিছু তথ্যের বাইরে ট্র্যাক বা লগিং রেকর্ড না রাখার পাশাপাশি বার্তা মুছে ফেলার কাজ করে। 

এগুলো ছাড়াও অনেক ই-মেইল প্রোভাইডার রয়েছে। তবে, আপনি কোন প্রোভাইডার ব্যবহার করবেন তা সম্পূর্ণ আপনার ওপর নির্ভর করে। এ ক্ষেত্রে জিমেইল, ইয়াহুর বিকল্প হিসেবে কোনো পরিষেবা গ্রহণ করার আগে ব্যক্তিগত চাহিদার পাশাপাশি কোনটি ব্যবহারে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ হবে সে বিষয়টি মাথায় রাখতে হবে। 

 

তথ্যসূত্র: মেইক ইউজ অব 

গ্রন্থনা: আসরিফা সুলতানা রিয়া 

 

Comments