গুগলের সার্বক্ষণিক নজরদারি থেকে মুক্তি পেতে যা করবেন

এমনকি গুগলের সাহায্য নিয়ে আপাত ‘গুগলবিরোধী’ এই প্রবন্ধ লেখার সময় কিংবা পাঠক যখন এটি পড়ছেন তখনো হয়তো গুগল আমাদের ওপর নজর রাখছে।
প্রতীকী ছবি। রয়টার্স ফাইল ফটো

অনেকেই মনে করেন, সরাসরি গুগল সার্চ ইঞ্জিন বা ক্রোম ব্যবহার না করলে গুগলের নজরদারির বাইরে থাকা যাবে। কিন্তু বিষয়টি মোটেও তা নয়। কারণ অন্য অনেক সার্ভিসের সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িয়ে থাকার ফলে ব্যবহারকারীকে সর্বক্ষণ চোখে চোখে রাখতে পারে গুগল।

কেউ কেউ হয়তো গুগলের এই তথ্য ছিনতাইয়ের বিষয়টিকে হালকাভাবে নেন। তাদের কাছে এটি তেমন ঝুঁকিপূর্ণ বলে মনে না হলেও জীবন থেকে গুগলের নজরদারি সরাতে পুরো একটি আন্দোলনই গড়ে উঠেছে।

'ডি-গুগল' নামের এ আন্দোলনে যুক্তরা বিশ্বাস করেন, এসব প্রযুক্তিদানবের কবলে সাধারণ মানুষের ব্যক্তিগত গোপনীয়তা হুমকির মুখে রয়েছে।

কিন্তু জীবন যেভাবে প্রতিদিন আরেকটু করে 'অনলাইন' হয়ে উঠছে, সেক্ষেত্রে কি পুরোপুরি গুগলমুক্তি সম্ভব? হয়তো অ্যাপ পারমিশনগুলো একটু এদিক-সেদিক করে তথ্য প্রদানের কিছু সীমা নির্ধারণ করে দেওয়া যায়, বা লোকেশন সেটিং পরিবর্তন করা যায়। কিন্তু সত্যি বলতে, এসবের মাধ্যমে গুগলকে পুরোপুরি সরানো সম্ভব নয়।

এপির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, লোকেশন বন্ধ করে রাখলেও গুগল চাইলেই ব্যবহারকারীর অবস্থান বের করতে পারে। অর্থাৎ, এই প্রাইভেসি সেটিং দিয়ে আপনাকে মনে করানো হচ্ছে যে নিয়ন্ত্রণ আপনার হাতেই, কিন্তু বাস্তবতা এর বিপরীত। প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন গবেষক এর সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।

এমনকি গুগলের সাহায্য নিয়ে আপাত 'গুগলবিরোধী' এই প্রবন্ধ লেখার সময় কিংবা পাঠক যখন এটি পড়ছেন তখনো হয়তো গুগল আমাদের ওপর নজর রাখছে।

কেন এই নজরদারি?

কারণটা খুবই সহজ। ব্যবহারকারীদের তথ্য জেনে সে অনুযায়ী তাদেরকে বিজ্ঞাপন দেখানো হয়। মূলত কে কোথায় থাকে, তাদের পেশা-বয়স, পছন্দ-অপছন্দ ইত্যাদি 'ট্র্যাক' করতে পারলে তাদেরকে কী ধরনের পণ্য, সেবা বা কনটেন্ট দেখাতে হবে– এ বিষয়টি অনেক ছোট পরিসরে চলে আসে।

মূলত ভোক্তা হিসেবে মানুষের সম্ভাবনা খতিয়ে দেখাই তাদের তথ্য সংগ্রহের মূল উদ্দেশ্য। ইউটিউব, ইমেইল, ম্যাপ, ক্রোম– গুগলের সঙ্গে যুক্ত যে সার্ভিসই আপনি ব্যবহার করুন না কেন, প্রতিটি 'সার্চ' ক্লিকের সঙ্গে সঙ্গেই গুগল কিছু না কিছু তথ্য নিয়ে নিচ্ছে।

তবে কয়েকটি পদ্ধতি মেনে চললে কিছুটা হলেও গুগলের চিলচোখ থেকে বাঁচা যেতে পারে।

১. অ্যান্ড্রয়েড অপারেটিং সিস্টেম আনইনস্টল করে দিয়ে গ্রাফিন ওএস বা লিনিয়েজ ওএসের মতো অপেক্ষাকৃত সুরক্ষিত সিস্টেম ব্যবহার করা যায়।

২. অন্য সুরক্ষিত সার্চ ইঞ্জিন ব্যবহার করার মাধ্যমে গুগল থেকে দূরে থাকা যায়। তবে সেসব সার্চ ইঞ্জিন হয়তোবা গুগলের মতো এত নির্ভুল হবে না।

৩. ব্রাউজার বদলানোও একটি ভালো উপায়। ক্রোমের পরিবর্তে মজিলা ফায়ারফক্স বা ব্রেভ ব্রাউজার ব্যবহার করা যায়। এই ব্রাউজারগুলো গুগলের ট্র্যাকার ব্লক করে দেয় এবং তথ্য সংগ্রহ করা থেকে বিরত রাখে।

এছাড়াও ব্রাউজারে গোপনীয়তা বৃদ্ধির জন্য কিছু 'এক্সটেনশন' যোগ করে দিলে প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোর জন্য ব্রাউজারের মাধ্যমে কারো তথ্য সংগ্রহ করা প্রায় অসম্ভব হবে।

৪. জিমেইলের জায়গায় আরও স্বচ্ছন্দ মানের এনক্রিপ্টেড ইমেইল প্রোভাইডার ব্যবহার করা যায়, এতে করে ইমেইলগুলো সুরক্ষিত থাকবে।

৫. গুগল অ্যানালিটিক্স ব্যবহার করা বন্ধ করে দেওয়া। কেননা এই সার্ভিসটি শুধু মৌলিক পরিসংখ্যানগত তথ্যই নয় বরং সাইট পরিদর্শনকারীদের প্রায় সব ধরনের তথ্যই সংগ্রহ করে। তাই গুগল অ্যানালিটিক্স ব্যবহার করে এমন ওয়েবসাইটে ঢোকার অর্থই হলো ব্যবহারকারীর ব্রাউজিং হিস্ট্রি গুগলের হাতে তুলে দেওয়া। যদি কারো নিজের ওয়েবসাইট থাকে, তাহলে গুগল অ্যানালিটিক্স ছাড়া অন্য বিকল্প পাওয়াটা একটু কঠিন। তবে মাটোমো, ফ্যাদম, সিম্পল ইত্যাদি অ্যানালিটিক্স ব্যবহারের মাধ্যমে ব্যবহারকারীর তথ্য ও গোপনীয়তার সুরক্ষা দেওয়া সম্ভব।

জলে বাস করে যেমন কুমিরের সঙ্গে বিবাদ করা যায় না, তেমনি তথ্য-প্রযুক্তির অবাধ জগতে, এই ডিজিটাল সময়ে বাস করে প্রায় সব সেবা গ্রহণ করে নিজের তথ্যগুলোকে সম্পূর্ণরূপে সুরক্ষিত রাখাও পুরোপুরি সম্ভব না। তবু সাবধান থাকা ভালো। তাই নিজের সাধ্যমতো সাবধানতা অবলম্বন করে চলা দরকার। তাছাড়া কেউ যদি পুরোপুরিভাবে গুগল, এমনকি প্রযুক্তিরই নজরদারি এড়াতে চায় তবে তাদের জন্য 'ডিজিটাল ডিটক্স' সবচেয়ে ভালো বিকল্প।

তথ্যসূত্র: নিউজসায়েন্টিস্ট, মেইকইউজঅফ, ওয়্যারড

Comments

The Daily Star  | English

Unrest emerges as a new threat to RMG recovery

The number of apparel work orders received by Bangladeshi companies from international retailers and brands for the autumn and winter seasons of 2025 dropped by nearly 10 percent compared to the past due to major shocks from the nationwide student movement and labour unrest in major industrial belts over the past two and half months.

10h ago