ইউরোপে সাবস্ক্রিপশন ফির বিনিময়ে বিজ্ঞাপনমুক্ত ফেসবুক ব্যবহারের সুযোগ

ইউরোপীয় ইউনিয়নে আসতে পারে বিজ্ঞাপনমুক্ত ফেসবুক-ইনস্টাগ্রাম সেবা। ছবি: সংগৃহীত
ইউরোপীয় ইউনিয়নে আসতে পারে বিজ্ঞাপনমুক্ত ফেসবুক-ইনস্টাগ্রাম সেবা। ছবি: সংগৃহীত

ফেসবুকে বিজ্ঞাপনের যন্ত্রণায় অনেক ব্যবহারকারী অতিষ্ঠ হয়ে পড়ছেন। টার্গেটেড ও অ্যালগরিদম ভিত্তিক বিজ্ঞাপনকে অনেকে ব্যক্তিগত গোপনীয়তার প্রতি হস্তক্ষেপ হিসেবেও বিবেচনা করেন।

এ পরিস্থিতিতে এক সময়োপযোগী সেবা নিয়ে আসছে ফেসবুকের মূল প্রতিষ্ঠান মেটা। আর তা হলো-বিজ্ঞাপনবিহীন ফেসবুক ও ইনস্টাগ্রাম।

সম্প্রতি মার্কিন সংবাদমাধ্যম ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা গেছে।

স্বভাবতই, এই সেবা বিনামূল্যে পাবেন না ব্যবহারকারীরা। ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোতে ডেস্কটপ পিসিতে বিজ্ঞাপনমুক্ত ফেসবুক ও ইনস্টাগ্রাম সেবা পেতে মাসিক প্রায় ১৪ ডলার খরচ গুণতে হতে পারে বলে জানা গেছে। মোবাইলের ক্ষেত্রে খরচ ১৭ ডলার হতে পারে। 

মেটার পরিকল্পনা সম্পর্কে জানে এমন সূত্রের বরাত দিয়ে ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল জানিয়েছে, ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলোতে ডেস্কটপে বিজ্ঞাপনমুক্ত ফেসবুক বা ইনস্টাগ্রাম ব্যবহারের জন্য মাসে প্রায় ১০ ইউরো এবং অতিরিক্ত সংযুক্ত অ্যাকাউন্টের প্রতিটির জন্য প্রায় ৬ ইউরো চার্জ করবে মেটা।

মোবাইল ডিভাইসের ক্ষেত্রে খরচ একটু বেশি। মোবাইলে প্রতিটি অ্যাকাউন্টের জন্য প্রায় ১৩ ইউরো পরিশোধ করতে হবে।

বিশ্বের সবচেয়ে বড় এই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম প্রতিষ্ঠানকে এ বছরের শুরুতে আয়ারল্যান্ডের তথ্য গোপনীয়তা কমিশন ৩৯০ মিলিয়ন ইউরো জরিমানা করেছিল।

মেটাকে সতর্ক করে দিয়ে আয়ারল্যান্ড কর্তৃপক্ষ বলেছিল, শুধু 'ব্যবহারের শর্তাবলীর' ওপর ভিত্তি করে ব্যবহারকারীদের অনলাইন কার্যকলাপের ভিত্তিতে বিজ্ঞাপন দেখানো যাবে না।

এরপরেই মেটা জানতে চেয়েছিল, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো বিজ্ঞাপনের জন্য গ্রাহকদের তথ্য ব্যবহার করতে পারবে কি না। ইউরোপীয় ইউনিয়নের গ্রাহকদের সম্মতি পেতে তারা উদ্যোগ নেবে।

ইউরোপের আরও কয়েকটি আইনের কারণেও এই উদ্যোগের প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করেছিল মেটা।

ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের প্রতিবেদনে বলা হয়, মেটা ইউরোপীয় নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছে যে তারা আগামী কয়েক মাসের মধ্যে ইউরোপের ব্যবহারকারীদের জন্য 'সাবস্ক্রিপশন নো অ্যাডস (এসএনএ)' নামের বিজ্ঞাপনমুক্ত ফেসবুক ও ইনস্টাগ্রাম সেবা চালু করতে চায়।

মেটার এক মুখপাত্র ওয়াল স্ট্রিট জার্নালকে জানিয়েছেন, প্রতিষ্ঠানটি 'বিজ্ঞাপনের আয়' থেকে সেবা বিনামূল্যে দেওয়ার কৌশলে বিশ্বাসী। কিন্তু একইসঙ্গে 'নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষের চাহিদা মেনে চলতে বিকল্প উপায়গুলো' যাচাই করে দেখা হচ্ছে।

আয়ারল্যান্ডের কর্তৃপক্ষ এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের ডিজিটাল-কম্পিটিশন কর্তৃপক্ষের কাছে এই পরিকল্পনার বিস্তারিত উপস্থাপন করেছে মেটা। পরিকল্পনাটি ইইউর গোপনীয়তা দেখভালকারী কর্তৃপক্ষের কাছেও দেওয়া হয়েছে, যেন এ ব্যাপারে তারা তাদের মতামত জানাতে পারে।  

মেটার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মার্ক জাকারবার্গ। ফাইল ছবি: রয়টার্স
মেটার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মার্ক জাকারবার্গ। ফাইল ছবি: রয়টার্স

ইউরোপে বিজ্ঞাপনমুক্ত ফেসবুক ও ইনস্টাগ্রাম সেবা চালুর ব্যাপারে মেটার পরিকল্পনার কথা সর্বপ্রথম প্রকাশ করে মার্কিন সংবাদমাধ্যম নিউইয়র্ক টাইমস। তবে তাদের প্রতিবেদনে বিস্তারিত তেমন কোনো তথ্য ছিল না। পরে ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল আরও বিস্তারিত তথ্যসহ প্রতিবেদন প্রকাশ করে।

পরিকল্পনা অনুযায়ী, ইউরোপীয় গ্রাহকদেরকে মেটা দুটি বিকল্প দেবে। একটি বিজ্ঞাপনসহ বিনামূল্যের সেবা, অপরটি বিজ্ঞাপনমুক্ত সাবস্ক্রিপশন ফি সেবা।

সামাজিকযোগাযোগ মাধ্যম খাতে মেটা অপ্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবেই বিবেচিত। ফেসবুক, ইনস্টাগ্রামের পাশাপাশি হোয়াটসঅ্যাপ এবং থ্রেডসের স্বত্বাধিকারী এই প্রতিষ্ঠানটি। তবে মেটার প্রধান ও সবচেয়ে বড় সেবা হচ্ছে ফেসবুক। একসময় মূল প্রতিষ্ঠানের নামও ছিল ফেসবুক। ২০২১ সালে এর নাম পরিবর্তন করে 'মেটা' রাখা হয়।

অর্থের বিনিময়ে ফেসবুকের সেবা চালু করা হলে সেটি হবে মেটার জন্য এক উল্লেখযোগ্য ঘটনা।

মেটার প্রধান নির্বাহী মার্ক জাকারবার্গ বরাবরই বলে আসছেন, প্রতিষ্ঠানটির মূল সেবাগুলো সবসময়ই বিনামূল্যে পাওয়া যাবে। জাতধর্ম-বর্ণ ও উপার্জন সক্ষমতা ভেদে সারা বিশ্বের মানুষ যাতে এই সেবাগুলো ব্যবহার করতে পারেন, সে জন্য জাকারবার্গ সব সময় ফেসবুক ও অন্যান্য সেবাকে 'বিজ্ঞাপন সমর্থিত' ফ্রি মডেলেই সীমাবদ্ধ রাখতে চেয়েছিলেন।

তবে ইইউর পরিস্থিতি মেটাকে এই কৌশল থেকে সরে দাঁড়াতে বাধ্য করেছে।

সূত্র: ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল

গ্রন্থনা: আহমেদ হিমেল

Comments

The Daily Star  | English

One-stop crisis centre: Conviction in less than 2pc cases

The one-stop crisis centres are supposed to provide comprehensive support to women and children victims of violence, offering healthcare, police assistance, legal aid and other services.

7h ago