অ্যান্ড্রয়েড ফোনকে যেভাবে জিপিএস ট্র্যাকার বানাবেন
আপনার যদি একটি জিপিএস ট্র্যাকার প্রয়োজন হয়, তাহলে সঙ্গে থাকা অ্যান্ড্রয়েড ফোনটিকে ব্যবহার করতে পারেন জিপিএস ট্র্যাকার হিসেবে। জিপিএস ট্র্যাকার কী এবং কীভাবে আপনার ফোনকে একটি অস্থায়ী জিপিএস ট্র্যাকার ডিভাইসে পরিণত করবেন সে বিষয়ে আজকের আলোচনা।
বর্তমানের গতিময় বিশ্বে যেখানে মানুষ, যানবাহন এবং পণ্য সর্বদা চলাচলের মধ্যে থাকে, সেখানে ট্র্যাকিং আগের চেয়ে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। আধুনিক জীবনে যেসব ক্ষেত্রে জিপিএসের ব্যবহার লক্ষ্য করা যায়, তাদের মধ্যে রয়েছে-
যানবাহন ট্র্যাকিংয়ের জন্য, শিশুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে স্কুল বাস সিস্টেমের জন্য, ট্রানজিটে মূল্যবান সম্পদ ট্র্যাকিংয়ের জন্য, বিভিন্ন ব্যবসা বা স্থানের লোকেশন খোঁজার জন্য, লোকেশনগুলোয় রিয়েলটাইম সতর্কতা দেওয়ার জন্য, আলঝেইমারের মতো রোগের রোগীদের ট্র্যাকিং বা নিরীক্ষণ করতে, গাড়ির গতি, সময় এবং দিক নিরীক্ষণসহ বেশ অনেক ক্ষেত্রেই এটি ব্যবহৃত হয়।
এ ছাড়া আপনার ফোন হারিয়ে গেলে বা চুরি হয়ে গেলে সেটি পুনরুদ্ধারের জন্য এবং ড্রাইভিংয়ের সময় গুগল ম্যাপের সাহায্যে নেভিগেট করার জন্য জিপিএস বেশ দুর্দান্ত। আর মজার বিষয় এই যে, কোনো কারণে ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেলেও জিপিএস কাজ করে। শুধু আগে থেকে ম্যাপ ডাউনলোড করে রাখতে হবে।
আপনার অ্যান্ড্রয়েড ফোনটিকে জিপিএস ট্র্যাকার বানানো সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য বিকল্প নাও হতে পারে এবং এ ক্ষেত্রে কিছু ত্রুটিও রয়েছে। তবে, আপনার যদি এটি বেশিই প্রয়োজন হয় তাহলে এটি কাজ চালানোর জন্য যথেষ্ট।
যেভাবে আপনার ফোন একটি জিপিএস ট্র্যাকারে পরিণত করবেন।
অ্যান্ড্রয়েডের বিল্ট-ইন ফিচারের সাহায্যে ট্র্যাকিং
২০১৪ বা তার পরে রিলিজ হওয়া বেশিরভাগ অ্যান্ড্রয়েড ডিভাইসে 'ফাইন্ড মাই ডিভাইস' (পূর্বে ফাইন্ড মাই অ্যান্ড্রয়েড) নামে একটি বিল্ট-ইন ফিচার রয়েছে। এই পরিষেবাটি ক্রমাগত গুগলের সার্ভারে আপনার ডিভাইসের অবস্থান পিং করে। যাতে গুগল জানতে পারে আপনার ফোনটি কোথায় আছে। এ ছাড়া আপনি গুগলের ওয়েব ইন্টারফেস ব্যবহার করে কোনো নির্দিষ্ট সময়ে আপনার ডিভাইসটি কোথায় আছে তা দেখতে পারবেন। এই ফিচারটি ব্যবহারের জন্য আপনার একটি গুগল অ্যাকাউন্টের প্রয়োজন হবে।
অ্যান্ড্রয়েডে ফাইন্ড মাই ডিভাইস চালু করতে যা করতে হবে-
সেটিংস > পাসওয়ার্ড অ্যান্ড সিকিউরিটি > প্রাইভেসি > ফাইন্ড মাই ডিভাইস সিলেক্ট করুন। এরপর সেখান থেকে ফিচারটি চালু করুন।
এই সেটিংসটি ফোনভেদে ভিন্ন হতে পারে, তবে বেশিরভাগ অ্যান্ড্রয়েড ডিভাইসের জন্য এগুলো তুলনামূলকভাবে একই রকম। আর যদি আপনার ডিভাইসে 'ফাইন্ড মাই ডিভাইস' ফিচারটি কোথায় অবস্থিত, তা বুঝতে না পারেন। তাহলে ঝামেলামুক্ত অভিজ্ঞতার জন্য সেটিংস খুলে ওপর থেকে সার্চ বারটি ব্যবহার করুন। আর চমৎকার বিষয় এই যে, 'ফাইন্ড মাই ডিভাইস' ফিচারটি শুধু একটি ট্র্যাকার নয়, এর মাধ্যমে আপনি দূর থেকেও আপনার ডিভাইস নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন।
'ফাইন্ড মাই ডিভাইস' ব্যবহার করবেন যেভাবে
একবার চালু হয়ে গেলে, আপনাকে যা করতে হবে তা হলো, একটি ওয়েব ব্রাউজার নেভিগেট করে 'ফাইন্ড মাই ডিভাইস' ড্যাশবোর্ডে যেতে হবে এবং ডিভাইসের সঙ্গে কানেক্টেড গুগল অ্যাকাউন্টে সাইন-ইন করতে হবে।
লগ-ইন হলে, আপনি যে ডিভাইসটি শনাক্ত করতে চান তা নির্বাচন করুন (যদি একাধিক ডিভাইস থাকে) তাহলে, 'ফাইন্ড মাই ডিভাইস' সেটির সর্বশেষ অবস্থান খুঁজে বের করবে। কতক্ষণ আগে দেখা গিয়েছিল এবং এটি ইন্টারনেটের সঙ্গে সংযুক্ত থাকলে ব্যাটারির স্তর দেখাবে।
যদি আপনি শহুরে পরিবেশে থাকেন তাহলে এটি মোটামুটি নির্ভুলভাবে আপনাকে শনাক্ত করতে পারবে। যে এলাকাগুলোয় জিপিএস দুর্বল, সেই এলাকাগুলোয় এটি ২০ মিটার তফাতে থাকতে পারে। এ ছাড়া, বিল্ডিংয়ের ভেতরে থাকাকালীন জিপিএসে ত্রুটি থাকতে পারে।
এ ছাড়া বর্তমানে গুগল ম্যাপ প্রায় সব অ্যান্ড্রয়েড ডিভাইসে আগে থেকেই থাকে। এর লোকেশন শেয়ার ফিচারটি একটি রিয়েল-টাইম লোকেশন শেয়ারের মাধ্যমে ম্যাপে ব্যবহারকারীদের অবস্থান সঠিকভাবে জানাতে পারে। এটি এমনকি লোকেশন শেয়ারকারী ব্যক্তির ব্যাটারি লাইফও প্রদর্শন করে।
থার্ড-পার্টি অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপস দিয়ে ট্র্যাকিং
আপনি যদি কোনো কারণে ফাইন্ড মাই ডিভাইস পছন্দ না করেন, তাহলে বিকল্প হিসেবে গুগল প্লে স্টোরে অনেকগুলো থার্ড পার্টি অ্যাপ রয়েছে। বেশিরভাগ ট্র্যাকিং অ্যাপ্লিকেশানগুলো, অ্যান্টি-থেফট এবং অ্যান্টি-লস সিকিউরিটি অ্যাপ্লিকেশন হিসেবে বিপণন করা হয়। তবে আপনি চাইলে সরাসরি ট্র্যাকিংয়ের জন্যও সেগুলো ব্যবহার করতে পারেন।
এরকম কয়েকটি অ্যাপের মধ্যে রয়েছে:
লাইফ৩৬০: লাইফ৩৬০ দিয়ে আপনি আপনার পরিবারের সদস্যদের ডিভাইস ব্যবহার করে কে কোথায় আছে তার খোঁজ রাখতে পারবেন। তবে আপনার ফোনটি হারিয়ে গেলে, আপনি চাইলে এর জিপিএস ব্যবহার করে তা ট্র্যাক করতে পারেন।
এটি অভিভাবকদের জন্য বেশ সুবিধাজনক, কারণ তারা তাদের সন্তানরা কোথায় রয়েছে তা ট্র্যাক করতে পারে। এর একমাত্র নেতিবাচক দিক হলো অ্যাপটিতে 'ফাইন্ড মাই ডিভাইস'-এর মতো হারিয়ে যাওয়া ডিভাইস লক করা বা ডেটা মুছে ফেলার ফিচার নেই।
প্রে
ব্যবহারিকভাবে, প্রে অনেকটা 'ফাইন্ড মাই ডিভাইস'-এর মতই। এর বড় সুবিধা হলো এটি উইন্ডোজ, ম্যাক, লিনাক্স এবং আইফোনসহ একাধিক প্ল্যাটফর্মজুড়ে পাওয়া যায়। তাই আপনি যেকোনো জায়গা থেকে আপনার সব ডিভাইস ট্র্যাক করতে পারবেন।
ফ্যামিলি অরবিট
এটি এমন একটি জিপিএস ট্র্যাকার প্রযুক্তি যা আপনি আপনার পরিবারকে রক্ষা করতে ব্যবহার করতে পারেন। এটি একটি বহুমুখী মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন যা আপনি আপনার পুরানো অ্যান্ড্রয়েড ফোনটিকে একটি জিপিএস ট্র্যাকারে পরিণত করতেও ব্যবহার করতে পারেন৷ প্যারেন্টাল কন্ট্রোল অ্যাপটি অভিভাবককে তার সন্তানের অবস্থান এবং ফোনের ক্রিয়াকলাপ নিরীক্ষণ করতে দেয়।
এমট্র্যাকার জিপিএস ফোন ট্র্যাকার
এই অ্যাপ্লিকেশনটিতে, আপনি যে ডিভাইসটি ট্র্যাক করতে চান তার ফোন নম্বর প্রয়োজন হয়। এই অ্যাপের কিছু কার্যকারিতার মধ্যে রয়েছে, শুধু ফোন নম্বর ব্যবহার করে লাইভ লোকেশন দেখানো। অ্যাপটি বর্তমান শহর, রাজ্য এবং দেশ, অক্ষাংশ এবং দ্রাঘিমাংশের মতো অবস্থানের বিবরণগুলো সংগ্রহ করে।
ফোন দিয়ে গাড়ি ট্র্যাক করুন
সবচেয়ে সহজ এবং সবচেয়ে কার্যকর বিকল্প হলো একটি ম্যাগনেটিক কার মাউন্ট ব্যবহার করা। এক্ষেত্রে উইক্সগিয়ার ইউনিভার্সাল স্টিক-অন ম্যাগনেটিক কার মাউন্ট সহজ, সুবিধাজনক এবং সাশ্রয়ী। এটি একটি স্টিক-অন মডেল, যা অ্যাডহেসিভ ব্যবহার করে এবং সঙ্গে সর্বাধিক চৌম্বকীয় শক্তির জন্য ১০টি চুম্বকও ব্যবহার করে।
আর যদি আপনি অ্যাডহেসিভে বিশ্বাস না রাখেন, তাহলে আপনি উইক্সগিয়ার ইউনিভার্সাল সাকশন কাপ ম্যাগনেটিক কার মাউন্ট বিবেচনায় রাখতে পারেন।
ফোন কেসের জন্য আপনি অ্যাডহেসিভ মেটাল প্লেট ব্যবহার করতে পারেন, যেমন: পপ-টেক ইউনিভার্সাল অ্যাডহেসিভ মেটাল মাউন্ট। এগুলো আপনার ডিভাইসের সঙ্গে লেগে থাকে এবং আপনাকে এর সঙ্গে ম্যাগনেটিক মাউন্ট ব্যবহার করতে সক্ষম করে।
তবে একটি ডেডিকেটেড জিপিএস ট্র্যাকারের বিকল্প কিছু হতে পারে না।
যদিও আপনার অ্যান্ড্রয়েড ডিভাইস একটি ট্র্যাকার হিসাবে কাজ করতে পারে, তবে এটি একটি পেশাদার ট্র্যাকিং ডিভাইসের বিকল্প হতে পারে না। ফোনকে ট্র্যাকার হিসেবে ব্যবহারের ৩টি প্রধান ত্রুটি রয়েছে। যদি এই ত্রুটিগুলো আপনার জন্য বেশি অসুবিধা সৃষ্টি করে, তাহলে আপনার ফোনের পরিবর্তে একটি ডেডিকেটেড ট্র্যাকার ব্যবহার করার কথা বিবেচনা করা উচিত।
ত্রুটিগুলোর মধ্যে আছে-
ব্যাটারি লাইফ: আপনার স্মার্টফোনে সব সময় ব্যাকগ্রাউন্ডে প্রচুর সফটওয়ার চলছে, যেমন সিস্টেম-লেভেল সার্ভিস এবং থার্ড পার্টি অ্যাপগুলো। এগুলো প্রচুর ব্যাটারি নষ্ট করে। একটি ডেডিকেটেড জিপিএস ট্র্যাকারে শুধু জিপিএস ট্র্যাকিং প্রক্রিয়া করতে হয়, যার ফলে প্রতি চার্জে অনেক বেশি ব্যাটারি লাইফ পাওয়া যায়।
সিগন্যাল কোয়ালিটি: জিপিএস ট্র্যাকার নিখুঁত নয়, তবে এদের সিগন্যাল কোয়ালিটি স্মার্টফোন সিগন্যালের থেকে অনেক বেশি উন্নত। ডেডিকেটেড জিপিএস ট্র্যাকারগুলো অনেক সময় এমন জায়গায়ও ট্র্যাক করতে পারে, যেখানে স্মার্টফোনগুলো সাধারণত পারে না।
ঝুঁকি এবং খরচ: আপনি যদি আপনার অ্যান্ড্রয়েড ডিভাইস হারানোর ভয়ে থাকেন, তাহলে সেটিকে যেকোনো জায়গায় জিপিএস ট্র্যাকার হিসেবে ব্যবহার না করাই ভালো। ধরুন আপনি আপনার ফোনকে একটি গাড়ির আন্ডারক্যারেজে মাউন্ট করলেন এবং এটি একটি হাইওয়ের মাঝখানে পড়ে গেল। সে হিসেবে ডেডিকেটেড জিপিএস ট্র্যাকারগুলো মাউন্ট করা সহজ এবং আরও মজবুত, এমনকি যদি সেগুলো হারিয়ে যায় বা ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তাহলে সেগুলো প্রতিস্থাপন করাও তুলনামূলক সস্তা।
সহজ কথায়, আপনার অ্যান্ড্রয়েড ফোনটিকে এ ক্ষেত্রে জিপিএস ট্র্যাকারে রূপান্তর করবেন না, যদি না আপনার কাছে অন্য কোনো বিকল্প না থাকে। এ ক্ষেত্রে আরও সঠিক এবং নির্ভরযোগ্য ট্র্যাকিংয়ের জন্য, স্পাইটেক পোর্টেবল জিপিএস ট্র্যাকারের মতো ডিভাইস ব্যবহারের কথা বিবেচনা করতে পারেন।
তথ্যসূত্র: মেক ইউজ অফ, এয়ারড্রয়েড, নাম্বার ট্র্যাকার প্রো
অনুবাদ করেছেন, আহমেদ বিন কাদের অনি
Comments