২০২৩ সালে সামাজিক মাধ্যমে যে পরিবর্তনগুলো আসছে

প্রতিনিয়তই নতুনত্ব আর চমক দেখানোই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ধরন। হোক সেটা নতুন কোনো ফিচার কিংবা নতুন কোনো ট্রেন্ড। আজ যা খুব জনপ্রিয়, কালই সেটা হয়ে পড়ছে সেকেলে।
২০২৩ সালে সামাজিক মাধ্যমে যে পরিবর্তনগুলো আসছে

প্রতিনিয়তই নতুনত্ব আর চমক দেখানোই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ধরন। হোক সেটা নতুন কোনো ফিচার কিংবা নতুন কোনো ট্রেন্ড। আজ যা খুব জনপ্রিয়, কালই সেটা হয়ে পড়ছে সেকেলে।

আসছে বছর নতুন কিছু পরিবর্তন আসতে চলেছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। বিশেষজ্ঞদের মতে, ২০২৩ সালে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ৬টি বড় ধরনের পরিবর্তন আসতে পারে। সেগুলোর মধ্যে রয়েছে-

প্রাধান্য পাবে অরিজিনাল ও বাস্তবধর্মী কনটেন্ট

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বললেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে ঝাঁ চকচকে রঙিন এক দুনিয়া। তবে এই কৃত্তিমতার আকর্ষণ থেকে দিন দিন দূরে সরে আসছেন এর ব্যবহারকারীরা।

এসব কারণে সম্প্রতি 'বি রিয়েল' ও 'টিকটক নাও' পেয়েছে তুমুল জনপ্রিয়তা।

এই অ্যাপগুলোর বিশেষত্ব হলো, এতে ব্যবহারকারীর বাস্তব জীবনের প্রতিচ্ছবি ভেসে ওঠে। অনেক সময় নিয়ে সাজগোজ ঠিক করে ফিল্টার ব্যবহার করে তোলা নিখুঁত ছবি ভিডিও এতে পোস্ট করার সুযোগ নেই।

ব্যবহারকারীরা এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বাস্তব দুনিয়ার প্রতিচ্ছবি দেখতেই বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করছেন। আর এই ধারা ২০২৩-এ গিয়ে আরও প্রকট হয়ে উঠবে বলেই মনে করা হচ্ছে।

এরই ধারাবাহিকতায় বিভিন্ন ব্র্যান্ডের পণ্যের ক্ষেত্রে চিরচরিত কৃত্তিম ও অবাস্তব বিজ্ঞাপন প্রচারের পরিবর্তে বাস্তবধর্মী বিজ্ঞাপনের দেখা মিলবে।

দেখা মিলবে মেটাভার্সের নতুন ফিচারের

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকের মূল কোম্পানি মেটা এ বছর তাদের মেটাভার্স নিয়ে নানা কৌতুহলোদ্দীপক পরিকল্পনা হাতে নিলেও বড় ধরনের কোনো সফলতার দেখা পারেনি। সামনের বছর মেটা কিছু নতুন ধরনের ফিচার আনবে। ফেসবুক অ্যাপে আরও বেশি ফিচার চালু করবে, যাতে মানুষ মেটাভার্স সম্পর্কে আরও বেশি আগ্রহী হয়ে ওঠে।

ইতোমধ্যে ফেসবুকে নিজেদের অবতার তৈরি, বিভিন্ন ফিল্টারের মাধ্যমে অগমেন্টেড রিয়ালিটির অভিজ্ঞতা লাভ করার মতো কিছু ফিচার এনেছে মেটা। সামনের বছর এই ফিচারগুলো আরও উন্নত হবে এবং বর্ধিত আকারে ব্যবহারের সুযোগ মিলবে।

এ ছাড়া সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোতে মেটাভার্স নিয়ে প্রচুর বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে নিত্যনতুন ব্রান্ড এবং বিজ্ঞাপনদাতাদেরকে তাদের প্ল্যাটফর্মে অংশগ্রহণে প্রভাবিত করার প্রবণতাও বাড়বে। তবে তা কতটুকু সফল হবে সেটা বলা বেশ মুশকিল।

প্রসার বাড়বে স্বল্পদৈর্ঘ্য কনটেন্টের

চলতি বছর ইনস্টাগ্রাম ও ফেসবুকে চালু হওয়া নতুন 'রিল' ফিচারটি বেশ ভালোভাবেই ব্যবহারকারীদের মাঝে সাড়া ফেলেছে। টিকটকের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, স্ন্যাপচ্যাটেও এখন দেখা মিলছে স্বল্পদৈর্ঘ্যের ভিডিও কনটেন্টের বিপুল জনপ্রিয়তা। সামনের বছর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অন্য যেকোনো ধরনের কনটেন্টের চেয়ে স্বল্পদৈর্ঘ্যের ভিডিওর প্রসার সর্বাধিক বৃদ্ধি পাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

অল্প সময়ে মনোযোগ আকর্ষণের উদ্দেশ্যে ইনস্টাগ্রাম ও স্ন্যাপচ্যাট স্টোরিজের মতো নতুন 'ফ্লিটস' নামে ফিচার এনেছে টুইটার। আগামী বছরেও এমন বাইট-আকারের কনটেন্ট সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে জনপ্রিয়তার তুঙ্গে থাকবে।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ক্রয়-বিক্রয় পাবে নতুন মাত্রা

বিভিন্ন ব্রান্ড বহু আগে থেকেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করে বিজ্ঞাপন ও প্রচারের কাজ করে আসছে। তবে বর্তমানে সরাসরি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করেই পণ্য ক্রয়-বিক্রয় হচ্ছে।

এই কাজটি সহজ করতে ফেসবুকে মার্কেটপ্লেস এবং ইনস্টাগ্রামে শপ নামে নতুন ট্যাব সংযোজন করা হয়েছে। আগামী বছর স্ন্যাপচ্যাট ও পিন্টারেস্টও এ ধরনের নতুন ফিচার আনতে পারে। 

এ ছাড়া সব ধরনের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করে ক্রয়-বিক্রয়ের অভিজ্ঞতা আরও উন্নত করার লক্ষ্যে এসব প্ল্যাটফর্মের অ্যালগরিদম এবং ফিচারেও পরিবর্তন আনা হবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

নিউজফিডে আসবে পরিবর্তন

আগে ফেসবুক ও ইনস্টাগ্রামের নিউজফিডে শুধু বন্ধু বা ফলো করা হয় এমন ব্যক্তিদের পোস্ট করা কনটেন্টের দেখা মিলতো। তবে মেটার প্রতিষ্ঠাতা মার্ক জাকারবার্গ জানিয়েছেন, এই ধারায় আসতে চলেছে আমূল পরিবর্তন। নিউজফিডে এখন সংযোগ নেই এমন নির্মাতাদের কনটেন্টের দেখাও মিলবে। টিকটকের 'ফর ইউ' কিংবা ইনস্টাগ্রামের 'এক্সপ্লোর' ফিচারসমূহের ধারণার সঙ্গে এর বেশ মিল রয়েছে।

এর ফলে প্রতিদিন ব্যবহারকারীরা নতুন নতুন কন্টেন্ট দেখতে পারবেন এবং নিত্যনতুন যোগাযোগ বৃদ্ধি পাবে।

জাকারবার্গের মতে, আগামী বছর থেকেই নিউজফিডে প্রায় ৪০ শতাংশ  কনটেন্ট আসবে এমন প্রোফাইল বা পেজ থেকে যার সঙ্গে ব্যবহারকারীর পূর্ব যোগাযোগ বা জানাশোনা নেই।

জনপ্রিয়তা বাড়বে বিকল্প সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের 

সামনের দিনগুলোয় ফেসবুক, টুইটারের মতো মূলধারার বাণিজ্যিক সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলো ছেড়ে অনেকেই 'বিকেন্দ্রীভূত' যোগাযোগ মাধ্যমগুলো ব্যবহার শুরু করবেন বলে মনে করা হচ্ছে। কেন না মূলধারার প্ল্যাটফর্মগুলোয় ব্যবহারকারীদের নিয়ন্ত্রণ খুবই কম। এ ছাড়া এগুলোর বিরুদ্ধে প্রতিনিয়তই তথ্য চুরি ও ব্যক্তিগত তথ্যের অনাকাঙিক্ষত ব্যবহারের মতো নানা অভিযোগ উঠে আসছে।

সেন্সরশিপ এবং তথ্যগত নিরাপত্তার মতো বিষয়গুলো নিয়ে ব্যবহারকারীরা বারবার অস্বস্তির সম্মুখীন হয়েই চলেছেন। আর তাই অপেক্ষাকৃত নিরাপদ ও স্বাধীন ধারার সামাজিক মাধ্যমগুলো জোরেশোরে নিজেদের অবস্থান জানান দেওয়া শুরু করেছে।

সম্প্রতিকালে ইলন মাস্কের টুইটার কাণ্ডের পর এর বিকল্প হিসেবে অনেকেই মাস্টোডন (Mastodon) ব্যবহারের দিকে ঝুঁকছেন। তেমনই ফেসবুক ও ইনস্টাগ্রামের বিকল্প হিসেবে উঠে আসছে ওপেন সোর্স প্ল্যাটফর্ম মাইন্ডস (Minds)। এ ছাড়া রয়েছে ডায়াসপোরা (ফেসবুকের বিকল্প), সিগনাল (হোয়াটসঅ্যাপ ও মেসেঞ্জারের বিকল্প) এবং টেলিগ্রামের মতো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম।

 

তথ্যসূত্র: মেকইউজঅব, পিআরডেইলিডটকম

গ্রন্থনা: নাফিসা ইসলাম মেঘা

 

Comments