বিলিভ ইট অর নট

ব্লুটুথের নামকরণ হলো যেভাবে

রাজা হেরাল্ড গ্রমসন ছিলেন ভাইকিংদের রাজা। ৯৫৮ সালে তিনি নরওয়ের সিংহাসনে আসীন হন। তার একটি ছেদন দাঁত ছিলো নিষ্ক্রিয়। দাঁতটি কালচে নীল হয়ে গিয়েছিলো। একারণেই 'ব্লুটুথ' বলে খ্যাতি পান এই রাজা। 
ব্লুটুথের নামকরণ হলো যেভাবে
ছবি: সংগৃহীত

ব্লুটুথের সঙ্গে আমাদের প্রায় সবারই পরিচয় আছে। স্মার্টফোনগুলোকে স্বল্প পরিসরে পরস্পর সংযুক্ত করে বিভিন্ন ফাইল ট্রান্সফার করতে ব্লুটুথ ব্যবহার করা হয়। 
 
কিন্তু এর নাম কেন ব্লুটুথ তা কি আমরা জানি? 

ভাইকিং রাজার গল্প

১৯৯০ দশকের শেষ দিকে এরিকসন, ইনটেল, নোকিয়ার মতো কোম্পানিগুলো একজোট হয়ে স্বল্প পরিসরে বেতার তরঙ্গ ব্যবহার করে বিভিন্ন ডিভাইসকে সংযুক্ত করার প্রক্রিয়া শুরু করছিলেন। সে সময় আইবিএম ও তোশিবা একে অপরকে বিশ্বাস করতে না পারায় এবং এরিকসন ও নোকিয়ারও পরস্পরের প্রতি আস্থা না থাকায় কোম্পানিগুলোর ভেতর সমন্বয়কের জায়গাটি নিয়ে নেয় ইন্টেল।

একদিন এক আলোচনা সভায় সবগুলো কোম্পানির প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। ইন্টেলের মোবাইল কম্পিউটিং প্রকৌশলী জিম কারদাখ সে সময় ভাইকিংদের নিয়ে একটি ইতিহাস আশ্রিত উপন্যাস পড়ছিলেন। সেখানেই পেয়ে যান রাজা হেরাল্ড 'ব্লুটুথ' গ্রমসনের পরিচয়। 

রাজা হেরাল্ড গ্রমসন ছিলেন ভাইকিংদের রাজা। ৯৫৮ সালে তিনি নরওয়ের সিংহাসনে আসীন হন। তার একটি ছেদন দাঁত ছিলো নিষ্ক্রিয়। দাঁতটি কালচে নীল হয়ে গিয়েছিলো। একারণেই 'ব্লুটুথ' বলে খ্যাতি পান এই রাজা। 

যাত্রা হলো শুরু
 
রাজা হেরাল্ড সমগ্র স্ক্যান্ডিনেভিয়াকে ঐক্যবদ্ধ করেছিলেন। কেন্দ্রবিন্দু ছিলো নরওয়ে। এই ব্যাপারটির সঙ্গে নিজেদের কাজের মিল খুঁজে পান কারদাখ। তারাও সে সময় চেষ্টা করছিলেন স্বল্প পরিসরের বেতার যোগাযোগ সৃষ্টির মাধ্যমে পিসি ও সেলুলার মাধ্যমের সংযোগ ঘটাতে। 

তবে নামটি তখনো পাকাপাকি হয়নি। মার্কেটিং টিম অন্য নামও ভাবছিলো, যেমন- রেডিওওয়্যার কিংবা প্যান (পার্সোনাল এরিয়া নেটওয়ার্কিং)। প্রথমটায় সমস্যা হলো ট্রেডমার্ক ভেরিফিকেশনে, আর দ্বিতীয়টি ইতোমধ্যেই প্রচলিত ছিলো অনলাইনে। কাজেই শেষপর্যন্ত ব্লুটুথ নামটিই রয়ে গেলো, যা শুনলে আমরা বুঝি স্বল্প পরিসরে বেতার তরঙ্গের মাধ্যমে যোগাযোগকে। 

ব্লুটুথের লোগোতে আছে প্রাচীন ইউরোপে ব্যবহৃত বর্ণ 'রুন'। দুটো রুন যেন বাঁধা পড়েছে একে অপরের সঙ্গে। নীল ব্যাকগ্রাউন্ডে থাকা সাদা চিহ্নগুলোকে পড়ার চেষ্টা করুন- দেখবেন, লেখা আছে- 'এইচবি'; যেটা মূলত হেরাল্ড ব্লুটুথের আদ্যক্ষর। 

ব্লুটুথ কয়েন 

২০১৮ সালে তরুণ প্রত্নতত্ত্ববিদ রেনে স্কোন ও তার কিশোর সহযোগী লুকা ম্যালাসচন জার্মানির উত্তরে এক দ্বীপে প্রচুর গুপ্তধন খুঁজে পান। ধারণা করা হয়, এগুলো রাজা ব্লুটুথের। 

ব্রুক (দামি জহরত), আংটি, গলার হার, মুক্তোর মালা ও 'থরের হাতুড়ি'- সবকিছুই মেলে এর ভেতর। বিশেষ আকর্ষণ ছিলো শতাধিক বেশি মুদ্রা যা থেকে তার শাসনকাল সম্পর্কে আরও পরিষ্কার ধারণা পাওয়া যায়। তার রাজ্য বিস্তৃত ছিলো আজকের ডেনমার্ক এবং জার্মানি, নরওয়ে ও সুইডেনের বিভিন্ন অংশজুড়ে।
 
এই অঞ্চলের ইতিহাসে একদফায় সবচেয়ে বেশি 'ব্লুটুথ কয়েন' উদ্ধারের ঘটনা এটিই। প্রত্নতত্ত্ববিদ মাইকেল শিরানের মতে, পুত্র গ্যাবেলবার্ট বিদ্রোহী হলে রাজা হেরাল্ড পালিয়ে যান পোমেরানিয়ায়। ৯৮০-এর দশকের ঘটনা সেটি। পালাবার আগে ধনসম্পদ ভূগর্ভস্থ করে রেখে যান সেখানে। 
 
রাজা ব্লুটুথ মারা যান আনুমানিক ৯৮৫ খ্রিষ্টাব্দে। ধারণা করা হয়, তার কবর রয়েছে পোল্যান্ডে। কারও মতে, তিনি ডেনমার্কের রসক্লাইডে চিরনিদ্রায় শায়িত আছেন। 

তবে শেষ শয্যা যেখানেই হোক না কেন, তার সেই বিখ্যাত কালচে নীল দাঁতটির নামেই নামকরণ হয়েছে ব্লুটুথ নামের; এই বহুল ব্যবহৃত স্বল্পপরিসর বেতার তরঙ্গ প্রযুক্তির, আর তার একরকম স্মারক হয়ে রয়েছে এর লোগোটি। 

তথ্যসূত্র: রিপলি'স বিলিভ ইট অর নট
গ্রন্থনা: মাহমুদ নেওয়াজ জয়

 

Comments

The Daily Star  | English
Pro-Awami League journalist couple arrested

The indiscriminate arrests and murder charges

Reckless and unsubstantiated use of murder charges will only make a farce of the law, not bring justice to those who deserve it.

9h ago