ইমরান খান গ্রেপ্তার: যে কারণে পাকিস্তানে সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে বিক্ষোভ

বুধবার ইমরান খানের ৮ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।
ইমরান খান। রয়টার্স ফাইল ফটো

পাকিস্তানে সাবেক কোনো প্রধানমন্ত্রীকে গ্রেপ্তারের ঘটনা এবারই প্রথম নয়। এর আগেও পাকিস্তানের কয়েকজন রাষ্ট্রপ্রধানকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। তবে, বিরোধীদলীয় নেতা ইমরানের খানের ঘটনায় উল্লেখযোগ্য বিষয়টি হলো সরকারের পাশাপাশি সামরিক বাহিনীসহ অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিরুদ্ধে বিপুল সমর্থকদের সক্রিয় অবস্থান ও বিক্ষোভ।

গতকাল মঙ্গলবার পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও প্রধান বিরোধী দল তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) চেয়ারম্যান ইমরান খানকে আল-কাদির ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বুধবার ইমরান খানের ৮ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। এ ছাড়া, আজ একটি দায়রা আদালতে তোশাখানা মামলায়ও তাকে অভিযুক্ত করা হয়েছে।

মঙ্গলবার ইমরান খানকে গ্রেপ্তারের পরপরই লাহোরে ক্যান্টনমেন্টের ভেতরে প্রবেশ করে হামলা, ভাঙচুর ও আগুন দেয় পিটিআই সমর্থকরা, প্রতিবাদে উত্তাল হয়ে উঠেছে পাকিস্তান। মোবাইল ইন্টারনেট ব্যবহার বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে, টুইটার, ফেসবুক ও ইউটিউবের মতো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করা যাচ্ছে না। বুধবার থেকে সারাদেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কার্যক্রমও ব্যাহত হয়েছে।

ইমরান খানকে গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে করাচিতে একটি পুলিশের চেকপোস্ট ভাঙচুর করেছে পিটিআই সমর্থকরা। ছবি: রয়টার্স

আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত বিক্ষোভের ছবিতে দেখা গেছে, পুলিশের সঙ্গে সরাসরি সংঘর্ষ চলছে পিটিআই সমর্থকদের। বিক্ষোভকারীরা পুলিশের গাড়ি, চেকপোস্ট, আধাসামরিক বাহিনীর চেকপোস্ট, সরকারি অ্যাম্বুলেন্স, সরকারি রেডিও ভবনসহ বিভিন্ন স্থাপনায় ভাঙচুর করেছে, আগুন দিয়েছে।

পেশোয়ার, পাঞ্জাব, লাহোর, করাচি, ইসলামাবাদসহ বড় বড় শহরগুলোতে জোরালো হচ্ছে বিক্ষোভ, পুলিশের সঙ্গে সহিংসতায় বহু হতাহতের খবর পাওয়া যাচ্ছে। কয়েকটি প্রদেশে ইতোমধ্যেই ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে।

পিটিআই সমর্থকদের ওপর পুলিশ গুলি চালাচ্ছে বলেও নেতারা অভিযোগ করেছেন।

বিপুল জনসমর্থনের কারণে ইমরান খানকে গ্রেপ্তার পরবর্তী পরিস্থিতি পাকিস্তানকে গুরুতর রাজনৈতিক সংকটে ফেলে দিয়েছে। গত ২ দিনে দেশটির সামরিক বাহিনীর প্রতি বিপুল পিটিআই সমর্থকরা রাস্তায় নেমে একরকম প্রকাশ্যেই অনাস্থা দেখাতে শুরু করেছেন।

'সবচেয়ে জনপ্রিয় রাজনীতিবিদ'

একসময়ের জনপ্রিয় ক্রিকেটার ইমরান খান পাকিস্তানের জাতীয় ক্রিকেট দলনেতা থেকে নিজেকে পুরোপুরি বদলে ফেলে একজন পেশাদার রাজনীতিবিদে পরিণত হয়েছিলেন। ২০১৮ সালে তিনি পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন। ২০২২ সালের ১০ এপ্রিল অনাস্থা ভোটে হেরে তিনি প্রধানমন্ত্রীত্ব থেকে অপসারিত হন। তাতেও থেমে থাকেননি তিনি। পাকিস্তানের কয়েক দশক ধরে চলা উচ্চ মূল্যস্ফীতি ও অর্থনৈতিক দুর্দশার মধ্যে বিপুল জনপ্রিয়তা অর্জন করেছেন ইমরান খান।

৭০ বছর বয়সী এ নেতা পার্লামেন্টের সদস্যপদ হারালেও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফের নেতৃত্বাধীন ক্ষমতাসীন পাকিস্তান ডেমোক্রেটিক মুভমেন্ট (পিডিএম) জোটের বিরুদ্ধে জোর প্রচারণা চালিয়েছেন। তিনি শরীফ সরকারের বিরুদ্ধে তাকে ক্ষমতা থেকে সরানোর জন্য মার্কিন ও পাকিস্তানি সামরিক বাহিনীর সঙ্গে যোগসাজশের অভিযোগ তুলেছেন।

ইমরান খানকে গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে করাচিতে একটি আধাসামরিক বাহিনীর চেকপোস্টে আগুন দিয়েছে পিটিআই সমর্থকরা। ছবি: রয়টার্স

তিনি যে নেতা হিসেবে সফল ও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছেন তার প্রমাণ মেলে গত বছর জুলাইয়ে যখন তার দল পিটিআই পাকিস্তানের সবচেয়ে জনবহুল প্রদেশ পাঞ্জাবের স্থানীয় নির্বাচনে জয়লাভ করে। পাঞ্জাবের প্রাদেশিক নির্বাচনকে জাতীয় নির্বাচনের জন্য 'লিটমাস পরীক্ষা' হিসেবে গণ্য করা হয়ে থাকে। তার এই নির্বাচনে জয়ের পর নড়েচড়ে বসে ক্ষমতাসীন দল পিডিএম।

গত ২১ অক্টোবর দুর্নীতির অভিযোগে তার ওপর ৫ বছরের নিষেধাজ্ঞা দেয় দেশটির নির্বাচন কমিশন (ইসিপি)। ফলে তিনি আগামী জাতীয় নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না। খারিজ করা হয় তার সংসদ সদস্য পদও।

এরপর থেকেই পাকিস্তানে সরকারবিরোধী বিক্ষোভ দানা বাধতে থাকে, পাশাপাশি শক্তিশালী জনসমর্থন পেতে থাকে ইমরানের দল পিটিআই।

গতবছর ২৮ অক্টোবর লাহোরের লিবার্টি চক থেকে রাজধানী ইসলামাবাদের অভিমুখে পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) লংমার্চ কর্মসূচির ডাক দেন ইমরান খান। এই লংমার্চ চলাকালীন গুলিবিদ্ধ হন তিনি।

এ বছর ২৮ ফেব্রুয়ারি তোশাখানা মামলার অভিযোগ গঠনের শুনানিতে টানা অনুপস্থিত থাকায় ইমরান খানের বিরুদ্ধে অজামিনযোগ্য গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন ইসলামাবাদের সেশন কোর্ট। গত ৫ মার্চ ইমরান খানের বাসভবনে গেলেও পিটিআই নেতাকর্মীদের বিক্ষোভের মুখে সেদিন ইমরান খানকে গ্রেপ্তার না করেই ইমরান খানের বাসভবন ত্যাগ করে পুলিশ।

ইমরান খানের জনপ্রিয়তা প্রসঙ্গে ওয়াশিংটনের উইলসন সেন্টারের গবেষক সৈয়দ বাকির সাজ্জাদ সিএনএনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, 'ইমরান খানের দাবিগুলো পাকিস্তানের তরুণ জনগোষ্ঠীকে আকর্ষিত করেছে। ক্রমবর্ধমান মূল্যস্ফীতির কারণে দীর্ঘদিন ধরেই দেশটির নিত্যপণ্য জনসাধারণের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে যাওয়ায় সরকার বিরোধী মনোভাব তীব্র হয়ে উঠছিল।'

পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যম ডনে প্রকাশিত প্রতিবেদনে দেশটির আইনজীবী আবদুল মইজ জাফরির উদ্ধৃতি দিয়ে বলা হয়েছে, 'ইমরান খান একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রী এবং প্রতিটি জরিপ অনুসারে, তিনি বর্তমানে দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় রাজনীতিবিদ। তার গ্রেপ্তারকে ঘিরে যে হিংসাত্মক এবং উদ্বেগজনক নজির তৈরি হলো তা ভবিষ্যতে এই অঞ্চলে আরও ঘটতে থাকবে।'

ইমরান খানের গ্রেপ্তার কি বৈধ

ইমরান খান গ্রেপ্তার হওয়ার পর থেকেই পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যম ও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে এই গ্রেপ্তারের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। ইসলামাবাদ হাইকোর্টের প্রাঙ্গণ থেকে তাকে ধরতে ইসলামাবাদ পুলিশ নয়, পাঞ্জাব রেঞ্জার্স গিয়েছিল। এ নিয়েও সমালোচনা করেছেন বিশ্লেষকরা।

পাকিস্তানের আইনজীবী আবুজার সালমান নিয়াজি আল জাজিরাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, গত বছর এনএবি আইনে যে সংশোধনী আনা হয়েছে এর পরে ইমরান খানকে গ্রেপ্তার করা 'অবৈধ' বলে মনে হয়।

সালমান নিয়াজির মতে, এনএবির আইনের সংশোধনী অনুযায়ী, অভিযোগ ওঠা ব্যক্তিকে একাধিক নোটিশ দিতে হবে। যদি তিনি এনএবিকে সহযোগিতায় বারবার ব্যর্থ হন, ইচ্ছাকৃতভাবে গ্রেপ্তার এড়াতে চেষ্টা করেন, তাহলেই শুধু পরোয়ানা জারি করা যেতে পারে।

'আগে এনএবির চেয়ারম্যান যে কোনো আসামির বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করার ক্ষেত্রে লাগামহীন ক্ষমতা রাখতেন। তবে, আইন সংশোধনের পরে, এটি আর ঘটতে পারে না,' বলেন তিনি।

এনএবির সাবেক প্রসিকিউটর ইমরান শফিক বলেছেন, অভিযোগ ওঠা ব্যক্তির বারবার গরহাজিরার ক্ষেত্রে তাকে গ্রেপ্তারের অধিকার এনএবির আছে। তবে ইমরান খানকে যে মামলায় গ্রেপ্তার করা হলো, সেটিকে দুর্বল মনে হচ্ছে।

'যদিও এনএবি বলেছে যে তারা একাধিক নোটিশ জারি করেছে যা ইমরান খান কর্ণপাত করেননি। তবে এনএবির যে সংশোধিত আইন, সে অনুসারে, কর্তৃপক্ষকে প্রথমে অভিযোগের তদন্ত শেষ করতে হবে। যার বিরুদ্ধে অভিযোগ, তাকে সেই তদন্তের প্রতিবেদন দিতে হবে,' বলেন তিনি।

সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে কেন ক্ষোভ

গত ৬ মে লাহোরে একটি সমাবেশে ভাষণ দেওয়ার সময় কিছুটা দুঃসাহসী কাজ করে বসেন ইমরান। ভাষণে তিনি ইন্টার-সার্ভিসেস ইন্টেলিজেন্স (আইএসআই) এর কাউন্টার ইন্টেলিজেন্সের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল ফয়সাল নাসিরের বিরুদ্ধে তাকে দুবার হত্যার চেষ্টার অভিযোগ তোলেন।

এর আগেও তিনি বিভিন্ন বক্তৃতায় জেনারেলকে ইঙ্গিত করে অভিযোগ তুলেছিলেন কিন্তু এবারই প্রথম প্রকাশ্যে নাম উল্লেখ করেন তিনি। এরপরই তার বিরুদ্ধে বিবৃতি দেয় দেশটির সেনাবাহিনী। বিবৃতিতে বলা হয়েছিল, পিটিআই প্রধান কোনো প্রমাণ ছাড়াই একজন চাকরিরত সামরিক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে 'অত্যন্ত দায়িত্বজ্ঞানহীন এবং ভিত্তিহীন অভিযোগ' এনেছেন। এটি গত এক বছর ধরে একটি ধারাবাহিকভাবে চলে আসছে। সামরিক ও গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তাদের নিয়ে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ইশারা ইঙ্গিতে চাঞ্চল্যকর প্রচারণা করা হচ্ছে বলে সামরিক বাহিনীর বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়।

ইমরান খানকে গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে লাহোরের ক্যান্টনমেন্ট এলাকার একটি বাড়িতে আগুন দিয়েছে পিটিআই সমর্থকরা। ছবি: রয়টার্স

বিবৃতিতে সামরিক বাহিনী ইমরান খানকে এ সব অভিযোগে আইনি উপায়ের আশ্রয় নিতে এবং মিথ্যা অভিযোগ করা বন্ধ করতে বলেছিল। সামরিক বাহিনী 'মিথ্যা এবং অপপ্রচারের' বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার অধিকারও সংরক্ষণ করে বলে বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়।

এরপরই ইমরানের ওই ভাষণের সমালোচনা করেন প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরীফ। তিনি সেনাবাহিনী এবং আইএসআইকে 'অপমান করা হয়েছে ও হুমকি দেওয়া হয়েছে' উল্লেখ করে এই ভাষণের নিন্দা জানান।

এর ৩ দিন পর, গত ৯ মে হাইকোর্ট প্রাঙ্গন থেকে ইমরান খানকে আধা সামরিক বাহিনী রেঞ্জার্সের সহায়তায় গ্রেপ্তার করে দেশটির দুর্নীতিবিরোধী নজরদারি সংস্থা ন্যাশনাল অ্যাকাউন্টেবিলিটি ব্যুরো (এনএবি)।

আইএসআইয়ের জেনারেলের বিরুদ্ধে অভিযোগ, সামরিক বাহিনীর বিবৃতি ও সরকার পক্ষের সেই বিবৃতির পুনরাবৃত্তির পর রেঞ্জার্স বাহিনীর হাতে ইমরান খান গ্রেপ্তারের ঘটনায় সামরিক বাহিনীর সরাসরি যোগসাজশ খুঁজে পাচ্ছেন সমর্থকরা। এ কারণে সরকার বিরোধিতার পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিরুদ্ধেও অনাস্থা ও ক্ষোভ তৈরি হয়েছে।

সামরিক বাহিনীর ওপর চাপের বিষয়টি উল্লেখ করে ওয়াশিংটনের উইলসন সেন্টারের গবেষক সৈয়দ বাকির সাজ্জাদ জানান, বিশেষ করে গত বছর ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর থেকে ইমরান খান ক্রমাগত সামরিক বাহিনীর আক্রমণ করছিলেন। ইমরান খানের জনপ্রিয়তার কারণে তার এই তীব্র আক্রমণ দিনদিন জনমতকে আরও বেশি প্রভাবিত করছিল। এটি সামরিক সংস্থার ওপর চাপ বাড়িয়েছে।

ডনে প্রকাশিত প্রতিবেদনে দেশটির আইনজীবী আবদুল মইজ জাফরি বলেন, 'ইমরান খান তার ক্ষতি করার ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে একজন সেনা কর্মকর্তার নাম নিয়ে অভিযোগ করেছিলেন। এর প্রতিক্রিয়ায় আমরা দেখেছি যে সামরিক বাহিনী এক ধরনের আক্রমণাত্মক অবস্থান নেয়, যেটি সরকারও পুনরাবৃত্তি করে। এরপরে আমরা দেখতে পাই একটি আধাসামরিক বাহিনী, যার আইনত কোনো ক্ষমতা নেই গ্রেপ্তার করার, তারা হাইকোর্টের ফাইলিং সেকশনে ঘেরাও করে ইমরান খানকে গ্রেপ্তার করেছেন। ইমরান খানের বিরুদ্ধে কয়েক ডজন মামলা চলমান থাকলেও এনএবি চেয়ারম্যানের জারি করা গ্রেপ্তারের আদেশই তিনি গ্রেপ্তার হলেন।'

আরেক আইনজীবী রিদা হোসেন বলেন, 'ইমরান খানকে যেভাবে গ্রেপ্তার করা হয়েছে তা আইনের শাসনে বিশ্বাসী প্রত্যেকের জন্য বেদনাদায়ক। সেখানে শতাধিক রেঞ্জার্স (কর্মী) জড়ো হয়েছিল, জানালা ভাঙচুর করা হয়েছিল এবং একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে গ্রেপ্তারের জন্য আদালত প্রাঙ্গণ থেকে টেনে-হিঁচড়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল।'

করাচিতে প্রতিবাদ-বিক্ষোভের এক পর্যায়ে পুলিশের গাড়িতে আগুন দিয়েছে ইমরান খানের সমর্থকরা। ছবি: রয়টার্স

তিনি রেঞ্জার্সের ভূমিকা এবং এই ধরনের ধরপাকড় 'বৈধ' বলে বিবেচিত হতে পারে কি না এ নিয়ে প্রশ্ন তোলেন।

'সরকারকে অবশ্যই এটি স্পষ্ট করতে হবে যে ইউনিফর্ম পরিহিত কিছু সংখ্যক রেঞ্জার্স (কর্মীকে) গ্রেপ্তার করতে পাঠানোর যৌক্তিকতা কী,' বলেন তিনি।

সামরিক বাহিনীর ওপর জনগণের ক্ষোভের বিষয়টি উল্লেখ করে গতকাল বুধবার প্রকাশিত সম্পাদকীয়তে ডন বলছে, 'সাম্প্রতিক ঘটনাবলী - বিশেষ করে, সশস্ত্র বাহিনীর সঙ্গে ইমরানের খানের নতুন করে দ্বন্দ্ব থেকে মনে হচ্ছে যে তাকে সম্পূর্ণ ভিন্ন কারণে বন্দি করা হতে পারে। ইসলামাবাদ হাইকোর্টের প্রাঙ্গণ থেকে ইসলামাবাদ পুলিশ না পাঠিয়ে পাঞ্জাব রেঞ্জার্স পাঠানোর কারণে তাকে ভিন্ন কারণে বন্দি করা হতে পারে এমন সন্দেহই তীব্র হয়।'

সম্পাদকীয়তে আরও বলা হয়েছে, ইমরান খানকে গ্রেপ্তারের পর পাকিস্তানজুড়ে যে বিক্ষোভ চলছে তার ধরন এবং অবস্থা ইঙ্গিত দেয় যে জনগণের ক্ষোভ সেনাবাহিনীর দিকেও পরিচালিত হয়েছে। বিভিন্ন বিক্ষোভে রেকর্ড করা ভিডিও ফুটেজ দেখে বোঝা যাচ্ছে যে, জনগণ ভীষণ ক্ষুব্ধ। আগের কোনো আন্দোলনে প্রতিবাদকারীরা যে সীমারেখা অতিক্রম করার সাহস করেনি, এখন সেটা করছে। ইমরান খানের এই গ্রেপ্তার সরকার ও রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের সম্পর্ক নিয়ে যে বিতর্ক চলমান তা আরও গভীর করে তুলল। এর ফলে সরকারের নীতির প্রতি আরও বেশি জনসাধারণের অবিশ্বাস জন্ম নেবে।

এ প্রসঙ্গে পাকিস্তানের চলমান পরিস্থিতি সম্পর্কে ওয়াশিংটনের উইলসন সেন্টারের গবেষক সৈয়দ বাকির সাজ্জাদ সিএনএনকে বলেন, 'জনগণকে ঐক্যবদ্ধ রাখতে তৎপর এবং রাষ্ট্রের অভিভাবক হিসেবে সামরিক বাহিনীর ভাবমূর্তি এ ঘটনায় গুরুতরভাবে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। প্রতিষ্ঠানটির প্রতি জনগণ আস্থা হারিয়েছে। এর ফলে অস্থিতিশীলতা এবং সামাজিক বিশৃঙ্খলার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।'

এদিকে ইমরান খানের গ্রেপ্তারের ঘটনায় কেউ কেউ ইমরান খানকেই দায়ী করছেন। পাকিস্তানের প্রতিথযশা  সাংবাদিক শাহজেব জিলানি একটি কলামে লিখেছেন, 'ইমরান খান নিজের কর্মের ফল পাচ্ছেন। যখন তিনি প্রধানমন্ত্রী ছিলেন তখন সমালোচক ও বিরোধীদের দমনে কারাগারে পাঠানোর উদ্দেশ্যে তিনি এনএবি ও এফআইএকে'র মতো রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান ব্যবহার করেছিলেন। আজ তিনি তার নিজের কর্মের ফলই পাচ্ছেন। তবে ইসলামাবাদ হাইকোর্টের চত্বর থেকে যেভাবে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে তা নজিরবিহীন ও শোচনীয়।'

পাকিস্তানে গত ১৩ মাস ধরে চলা রাজনৈতিক মেরুকরণ ও দীর্ঘদিনের অর্থনৈতিক সংকট দেশটিকে একটি জটিল পরিস্থিতিতে ফেলে দিয়েছে। বিশ্লেষকদের মতে, এই পরিস্থিতি স্থায়ী সংকটে পরিণত হওয়ার সম্ভাবনাও রয়েছে। পাকিস্তানের ভবিষ্যৎ গতিপথ ব্যাপকভাবে নির্ভর করবে কীভাবে দেশটির নেতারা চলমান সংকট মোকাবিলা করেন তার ওপরে। তারা জনগণের অভিযোগের সমাধান এবং স্থিতিশীলতা পুনরুদ্ধারের উপায় খুঁজবেন নাকি অন্য কোনো উপায়ে এই বিক্ষোভ মোকাবিলা করবেন সেটিই নির্ধারণ করে দেবে পাকিস্তানের ভবিষ্যৎ গতিপথ।

Comments