অ্যাকাউন্ট জব্দের আগেই বেনজীর তুলে নেন ৭০-৮০ কোটি টাকা

বেনজীর আহমেদ। ছবি: সংগৃহীত

পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদ ও তার পরিবারের সদস্যরা তাদের ৩৩টি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে গত এক মাসে অন্তত ৭০ থেকে ৮০ কোটি টাকা তুলে নিয়েছেন।

বেনজীরের অবৈধ সম্পদের অভিযোগের তদন্তে সংশ্লিষ্ট দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সূত্র দ্য ডেইলি স্টারকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।

গত ১৮ এপ্রিল দুদক তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে বেনজীরের অবৈধ সম্পদের অনুসন্ধান শুরু করে।

সূত্র বলছে, 'বেনজীর, তার স্ত্রী জিশান মির্জা এবং তাদের দুই মেয়ে ফারহিন রিসতা বিনতে বেনজীর ও তাহসিন রাইসা বিনতে বেনজীরের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট (ব্যাংক) অ্যাকাউন্টগুলো শনাক্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে সেভিংস অ্যাকাউন্ট, ফিক্সড ডিপোজিট অ্যাকাউন্ট ও স্পেশাল নোটিশ ডিপোজিট আছে। কিছু লোন অ্যাকাউন্টও পাওয়া গেছে।'

কিন্তু এসব অ্যাকাউন্ট জব্দের আদেশ কার্যকরের আগেই ডিপোজিট অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা তুলে নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে সূত্র।

তদন্ত সংশ্লিষ্ট ওই কর্মকর্তা জানান, বেনজীরের কিছু অ্যাকাউন্ট 'জিরো ব্যালেন্স' হয়ে গেছে, যদিও তিনি পরিমাণ জানাননি। 

'তিনি (বেনজীর) হয়ত ধারণা করেছিলেন যে তার অ্যাকাউন্টগুলো জব্দ করার আদেশ আসতে পারে। অ্যাকাউন্ট থেকে কত টাকা তোলা হয়েছে আমরা এখনো তার সঠিক পরিমাণ জানতে পারিনি, তবে তা কয়েকশ কোটি ছাড়িয়ে যেতে পারে,' বলেন তিনি।

দুদক কমিশনার (তদন্ত) মো. জহুরুল হক দ্য ডেইলি স্টারকে এ তথ্য নিশ্চিত করলেও কত টাকা তোলা হয়েছে তা উল্লেখ করেননি।

তিনি বলেন, 'আমরা ইতোমধ্যে স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ জব্দ করেছি। কিন্তু আমরা জেনেছি যে তাদের অ্যাকাউন্টগুলো থেকে টাকা আগেই তোলা হয়েছে।'

মো. জহুরুল আরও বলেন, 'তদন্ত কর্মকর্তারা আইনি প্রক্রিয়া ও হাইকোর্টের নির্দেশনা মেনে কাজ করছেন। তদন্ত কাজে আমরা অল্প সময়ের মধ্যে যথেষ্ট এগিয়ে গেছি।'

অ্যাকাউন্টগুলো কার নামে 

দুদকের সংশ্লিষ্ট তদন্ত দল সূত্র জানায়, আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী তারা ৩৩টি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট শনাক্ত করেছে। এর মধ্যে বেনজীর আহমেদের নামে ছয়টি, স্ত্রী জিশান মির্জার নামে পাঁচটি, ফারহিন রিসতা বিনতে বেনজীরের তিনটি ও তাহসিন রাইসা বিনতে বেনজীরের একটি।

জিশান মির্জার সঙ্গে মির্জা মনোয়ারা রেজা ও মির্জা আনোয়ার পারভেজের একটি যৌথ অ্যাকাউন্ট রয়েছে।

অন্যান্য অ্যাকাউন্টগুলো একটি শিশির বিন্দু, স্টিলথ ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড, সাভানা ফার্ম প্রোডাক্টস, সাভানা অ্যাগ্রো লিমিটেড, সাভানা পার্ক রিসোর্ট অ্যান্ড কান্ট্রি ক্লাব এবং বাংলা টি ম্যানুফ্যাকচারিং ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের নামে। 

এছাড়াও সোনালী ব্যাংকে তিনটি অ্যাকাউন্টের খোঁজ পাওয়া গেছে, তবে তা সুনির্দিষ্ট করা যাচ্ছে না এবং ৩০ লাখ টাকার একটি সঞ্চয়পত্রের বিষয়ে জানা গেছে।

গত ২৩ মে ঢাকা মহানগর সিনিয়র স্পেশাল জজ আদালত এসব অ্যাকাউন্ট জব্দের আদেশ দেন।

বেনজীরের নামে আইএফসিআই সিকিউরিটিজ লিমিটেড এবং ড্রাগন সিকিউরিটিজ লিমিটেডের দুটি বিও অ্যাকাউন্ট আছে। জিশান মির্জার আছে সাউথইস্ট ব্যাংক ক্যাপিটাল সার্ভিসেস লিমিটেড এবং ইবিএল সিকিউরিটিজ লিমিটেডের দুটি বিও অ্যাকাউন্ট। 

মেয়ে তাহসিন রাইসারও দুটি বিও অ্যাকাউন্ট আছে ডাইন্যাস্টি সিকিউরিটিজ লিমিটেড এবং ইবিএল সিকিউরিটিজ লিমিটেডের।

বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন গত সোমবার বিও অ্যাকাউন্টগুলো জব্দ করেছে।

সিকিউরিটিজ এক্সচেঞ্জ কমিশনের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ জানিয়ে ডেইলি স্টারকে বলেন, 'দুদকের অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে আমরা বিও অ্যাকাউন্টগুলো জব্দ করেছি।'

কর্মকর্তারা বলছেন, কমিশন ইতোমধ্যে শেয়ারবাজারের মনিটরিং সংস্থা সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি বাংলাদেশ লিমিটেডকে এসব বিও অ্যাকাউন্ট স্থানান্তর ও নিষ্পত্তি ঠেকাতে অ্যাকাউন্টগুলো বন্ধের নির্দেশ দিয়েছে।

দেশে নেই বেনজীর

সাবেক আইজিপি বেনজীর গত ৪ মে সিঙ্গাপুর চলে গেছেন। তার পাসপোর্টের তথ্যের বরাতে গোয়েন্দা সূত্র ডেইলি স্টারকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।

যদিও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান গতকাল বলেছেন যে, বেনজীর দেশে আছেন কি না তা তিনি জানেন না।

তিনি বলেছেন, 'এখনো তার (বিদেশ ভ্রমণ) ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়নি। আমি এখনো নিশ্চিতভাবে জানি না যে তিনি আছেন কি না। আমাকে নিশ্চিত হতে হবে।'

 

Comments

The Daily Star  | English

18 lower court judges sent into forced retirement

A circular was issued in this regard tonight by Branch-3 of the Judicial Division under the Law and Justice Division

2h ago