‘গণঅভ্যুত্থানে আহত আরও ৬০ জনকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানো হবে’

জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে আহত আরও ৬০ জনকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর প্রস্তুতি চলছে। থাইল্যান্ড, পাকিস্তানসহ কয়েকটি দেশে তাদেরকে পাঠানো হবে।
গতকাল রোববার বিকেলে রাজধানীর বেইলি রোডে ফরেন সার্ভিস অ্যাকাডেমিতে এক সংবাদ সম্মেলনে এই তথ্য জানান স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম।
স্বাস্থ্য উপদেষ্টা জানান, এখন পর্যন্ত গণঅভ্যুত্থানে আহত ৪০ জনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানো হয়েছে। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের নিয়ে গঠিত বোর্ডের পরামর্শ অনুযায়ী তাদের বিদেশে পাঠানো হয়।
এবার আরও ৬০ জনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর প্রস্তুতি চলছে।
পাশাপাশি, জুলাই যোদ্ধারা হেলথ কার্ড দেখিয়ে দেশের সব হাসপাতালে বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবা নিতে পারবেন বলেও উল্লেখ করেন উপদেষ্টা।
'যাদের এ পর্যন্ত বিদেশে পাঠানো হয়েছে তাদের চিকিৎসার ব্যয়ে সরকার কোনো কার্পণ্য করেনি', যোগ করেন তিনি।
তিনি বলেন, 'বিদেশে পাঠাতে আমরা ২৫ কোটি ৩৭ লাখ টাকা প্রধান উপদেষ্টার ত্রাণ তহবিল থেকে পেয়েছিলাম। সেখান থেকে প্রায় সাড়ে ১৯ কোটি টাকা খরচ হয়েছে। বাকি টাকাটা আমাদের কাছে আছে। হাসপাতালে যা খরচ হয়েছে তা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলতে পারবে।
আহতদের তুরস্ক, পাকিস্তান, ব্যাংকক ও সিঙ্গাপুরে পাঠানো হবে
তিনি বলেন, 'আহত ৮ জনকে ব্যাংকক ও সিঙ্গাপুরে পাঠানো হবে। আর ২১ জনকে তুরস্কে ও ৩১ জনকে পাকিস্তানে পাঠানো হবে।'
স্বাস্থ্য উপদেষ্টা জানান, স্বাধীনতার পর অর্ধ শতাব্দী পেরিয়ে গেলেও দেশের নিজস্ব এয়ার অ্যাম্বুলেন্স নেই। জুলাই গণঅভ্যুত্থানে মারাত্মক আহতদের বিদেশ পাঠানোর সময় বিষয়টি সামনে আসে। বিদেশে পাঠানো আহতদের মধ্যে মুমূর্ষু চারজনকে থাইল্যান্ড থেকে ভাড়া করা এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে বিদেশি হাসপাতালে পাঠানো হয়।
'৯ আগস্ট থেকে শুরু করে এপ্রিলের ১৩ তারিখ পর্যন্ত সময়ে সাত মাস ধরে চিকিৎসা চলছে। আমরা এ পর্যন্ত ৪০ জনকে বিদেশে পাঠিয়েছি। এর মধ্যে ২৬ জন ব্যাংককে, ১৩ জন সিঙ্গাপুরে, ১ জন রাশিয়াতে গেছেন।
এ পর্যন্ত শহীদ হয়েছেন ৮৬৪ জনের বেশি। কিছু এখনো যাচাইয়ের পর্যায়ে আছে। আর আহত ১৪ হাজারের বেশি। এই দুটি তথ্যই গেজেট আকারে প্রকাশ হয়েছে। আহতদের তথ্য আরও এসেছে, সেগুলো যাচাই করা হচ্ছে। আহতদের চিকিৎসা দেওয়ার জন্য চীন, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স, সিঙ্গাপুর ও থাইল্যান্ড থেকে ২৬ জন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দেশে এসেছেন
জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আহতদের সুচিকিৎসা নিশ্চিত করতে সরকার আপ্রাণ চেষ্টা চালিয় যাচ্ছে উল্লেখ করে নূর জাহান বেগম বলেন, 'আহতদের মধ্যে ২১ জন দুই চোখ ও ৪৫০ জন এক চোখ হারিয়েছেন। তারা মারাত্মক ট্রমায় ভুগছেন। শহীদ ও আহতদের তালিকার হালনাগাদ ও যাচাই চলছে। একটা নির্ভুল পরিসংখ্যান তৈরি করার চেষ্টা করছি আমরা। এর জন্য সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করতে হয়েছে।'
উপদেষ্টা জানান, এখনো জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট হাসপাতাল ও জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠান বেশ কিছু রোগী ভর্তি আছেন।
স্বাস্থ্য উপদেষ্টা বলেন, 'চীনের রাষ্ট্রদূতকে আমরা বলেছিলাম, রবোটিক ফিজিওথেরাপির সেট একটি আমাদের উপহার হিসেবে দিতে। চীন আমাদের কথা রেখেছ, একটি সেট আমাদের উপহার হিসেবে দিয়েছে। এটা বর্তমানে চট্টগ্রাম বন্দরে আছে। এটা স্থাপন করতে আমাদের ৬ হাজার বর্গফুটের মতো জায়গা লাগবে। আমরা সেই জায়গা ঠিক করেছি বাংলাদেশ মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে (সাবেক বিএসএমএমইউ)। সেখানে এটা ডেডিকেটেড করা থাকবে। আমাদের আহতরা সেখানে ফিজিওথেরাপি নিতে পারবে।'
পাকিস্তানে কী বিশেষজ্ঞ চিকিৎসার জন্য আমাদের রোগী পাঠানো হলো, তাদের কী এমন সেবা আছে--এমন প্রশ্নের জবাবে স্বাস্থ্য উপদেষ্টা বলেন, ওটা তো যুদ্ধবিদ্ধস্ত দেশ। মাইন বিস্ফোরণে তাদের বড় রকমের টেকনোলজি তারা ডেভেলপ করেছে। ইউকের ডা. আমাদের জানিয়েছে, যারা হাত-পা হারিয়েছে তাদের জন্য লাহোরে বিশেষায়িত একটি হাসপাতাল তৈরি আছে, সেখানে পাঠানোর পরামর্শ দিয়েছেন।
দেশে বিশ্বমানের বিশেষায়িত সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতাল পড়ে থাকতে কেন আহতদের বিদেশে পাঠানো হচ্ছে, জানতে চাইলে স্বাস্থ্য উপদেষ্টা বলেন, চুক্তি অনুযায়ী ওই হাসপাতালে যে প্রশিক্ষণ হওয়ার কথা ছিল, তা হয়নি। ফলে জনবল সমস্যা দেখা দিয়েছে। দেশে চিকিৎসকদের ৫ হাজার পদ শূন্য। তাদের ক্যারিয়ার পাথ তৈরির চেষ্টা আমরা করছি। প্রণোদনা দিয়ে বেসিক সাবজেক্টের ডা. দের বেতন বাড়ানোর ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
আহতদের চিকিৎসায় কত টাকা খরচ হয়েছে-এমন প্রশ্নের জবাবে স্বাস্থ্য উপদেষ্টা বলেন, জুলাই স্মৃতি ফাউন্ডেশন আহতদের টাকা দিয়েছে খাওয়া-দাওয়া, নানান কাজের জন্য। মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয় শহীদদের ৩০ লাখ টাকা দিচ্ছে, এটা মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ের বিষয়। চিকিৎসার বিষয়টি সম্পূর্ণ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বিষয়।
রংপুরে এক হাজার শয্যার হাসপাতাল
রংপুরে এক হাজার শয্যার একটি আধুনিক বিশেষায়িত হাসপাতাল নির্মাণ করবে চীন।
চীন-বাংলাদেশ কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তিতে এই হাসপাতালটি উপহার হিসেবে দিচ্ছে দেশটি। হাসপাতালটি তিস্তা প্রকল্প এলাকার কাছে নির্মিত হবে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম।
নূরজাহান বেগম বলেন, চীনের সঙ্গে আলোচনা চলছে। তারা আমাদের একটি হাসপাতাল উপহার দিতে চায়, যা আমরা রংপুরে নির্মাণের পরিকল্পনা করছি। দ্রুত কাজ শুরুর ব্যাপারে আমরা আশাবাদী।
রংপুরে হাসপাতাল তৈরি প্রসঙ্গে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবু জাফর বলেন, 'তিস্তা প্রকল্পের আশেপাশে ন্যূনতম ১২ একর জায়গা খোঁজা হচ্ছে। নীলফামারী, রংপুর এবং দিনাজপুরের মাঝামাঝি জায়গায়। তবে নীলফামারীর একটা জায়গা পেয়েছি। এটার সম্ভাবনা যাচাইয়ের একটা সমীক্ষা আমরা করবো।'
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম, স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিব মো. সাইদুর রহমান, জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের পরিচালক ডা. আবুল খায়ের, জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানের (নিটোর) পরিচালক ডা. মো. আবুল কেনান, প্রধান উপদেষ্টার জ্যেষ্ঠ সহকারী প্রেস সচিব ফয়েজ আহম্মদ প্রমুখ।
Comments