ক্যাম্পাস

চতুর্থ বর্ষেও গণরুম: মাঝরাতে হলের সামনে জাবি শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) ছাত্রীদের জন্য নবনির্মিত আবাসিক হলের আসন বণ্টনে জটিলতার সৃষ্টি হয়েছে। এ ঘটনায় হল গেটে অবস্থান করে আগুন জ্বালিয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেছে ফজিলাতুন্নেছা হলের শিক্ষার্থীরা।
বুধবার ফজিলাতুন্নেছা হলের বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা আগুন জ্বালিয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে। ছবি: শেখ তাজুল ইসলাম তাজ/ স্টার

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) ছাত্রীদের জন্য নবনির্মিত আবাসিক হলের আসন বণ্টনে জটিলতার সৃষ্টি হয়েছে। এ ঘটনায় হল গেটে অবস্থান করে আগুন জ্বালিয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেছে ফজিলাতুন্নেছা হলের শিক্ষার্থীরা।

গতকাল বুধবার সন্ধ্যা ৬টায় নতুন হলের আসন বিন্যাসে অগ্রাধিকারের দাবিতে মতবিনিময় সভা করেন হল প্রভোস্ট। কিন্তু শিক্ষার্থীরা ৫টি দাবি উত্থাপন করলে হল প্রশাসন মানতে অপারগতা প্রকাশ করে। পরবর্তীতে ফজিলাতুন্নেছা হলের শিক্ষার্থীরা হল গেটে আগুন জ্বালিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন ও গভীর রাত পর্যন্ত হল গেটে অবস্থান করেন। এ সময় তারা হলের প্রাধ্যক্ষ আতিকুর রহমান ও প্রক্টর আ স ম ফিরোজ উল হাসানকে অবরুদ্ধ করে রাখেন।

শিক্ষার্থীদের লিখিত ৫টি দাবির মধ্যে রয়েছে, আগামী ১০ ডিসেম্বরের মধ্যে ফজিলাতুন্নেসা হলের আবাসন স্থানান্তর নিশ্চিত করা, প্রথম উদ্বোধনকৃত হলের নাম 'ফজিলাতুন্নেসা' রাখা, অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ফজিলাতুন্নেসার সব শিক্ষার্থীদের আবাসন নিশ্চিত করা, সব শিক্ষার্থীদের একসঙ্গে স্থানান্তর করা এবং অতিদ্রুত দাবির পরিপ্রেক্ষিতে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানানো।

ফজিলাতুন্নেছা হলের স্নাতকোত্তর পর্বের শিক্ষার্থী জুলফিকার রাবেয়া মুমু বলেন, 'প্রতিটি হল থেকে ১০০ জন করে নতুন হলে স্থানান্তর করার সিদ্ধান্তে আমাদের সঙ্গে প্রহসন করা হয়েছে। কেননা গত ২ বছর থেকে প্রতিশ্রুতি শুনছি আমাদের দুর্ভোগকে প্রাধান্য দিয়ে সর্বপ্রথম এই হলের ছাত্রীদের নতুন হলে উঠানো হবে। কিন্তু হঠাৎ বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছে প্রত্যেক হল থেকে ছাত্রী নেওয়া হবে। যা আমাদের সঙ্গে প্রতারণা হয়েছে।'

৪৯ ব্যাচের শিক্ষার্থী তানজিনা তাবাসসুম তন্দ্রা বলেন, 'নতুন হলে উঠানোর কথা বলে এখানে কোনো ধরনের সংস্কার কাজ হয় না ২ বছর ধরে। এখানকার ওয়াশরুমগুলো ব্যবহারের অযোগ্য, রিডিং রুম-ডাইনিং রুমে গাদাগাদি করে থাকতে হয়। তা ছাড়া স্যাঁতস্যাঁতে পরিবেশ, বৃষ্টিতে পানির ছিটার কারণে এখানে থাকা আমাদের পক্ষে অসাধ্য হয়ে পড়েছে।'

৪৮ ব্যাচের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী মনি নাসরীন বলেন, 'আমাদের অনেকেই চতুর্থ বর্ষে এসেও গণরুমে থাকতে হচ্ছে। এই অমানবিক পরিবেশ আমাদের অতিষ্ঠ করে তুলেছে।'

এ বিষয়ে হল প্রভোস্ট অধ্যাপক এ টি এম আতিকুর রহমান বলেন, 'আমরা শিক্ষার্থীদের যে দাবি তা প্রভোস্ট কমিটির সভায় উপস্থাপন করেছি। প্রত্যেকটি হলে গণরুম বন্ধ করতে এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আর এ সিদ্ধান্তের রিভিউ করতে গেলেও পুনরায় মিটিং করতে হবে। মিটিং হলে শিক্ষার্থীদের দাবি তুলে ধরা হবে।'

এর আগে গত ১৪ নভেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের কাউন্সিল হলে নবনির্মিত ২টি হলের আসন বণ্টনের বিষয়ে অনুষ্ঠিত সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সভায় উপাচার্য অধ্যাপক নূরুল আলমের সভাপতিত্বে হল সমূহের প্রভোস্টগণ অংশ নেন বলে জানা গেছে।

এতে ২০২৩ সালের ১ জানুয়ারি থেকে প্রথম বর্ষের ক্লাস শুরু করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। পাশাপাশি প্রতিটি হলের ২০১৬-১৭ থেকে ২০২০-২০২১ শিক্ষাবর্ষের ১০০ জন শিক্ষার্থী নতুন হলে স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। স্থানান্তরকৃত শিক্ষার্থীদের তালিকা আগামী ২২ নভেম্বরের মধ্যে শিক্ষা শাখায় জমা দিতে বলা হয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আ স ম ফিরোজ উল হাসান বলেন, 'আমাদের যে সিদ্ধান্ত, এটা উপাচার্য কোনো একক সিদ্ধান্ত নেননি, প্রভোস্ট কমিটির সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এখন এ সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করতে গেলে পুনরায় প্রভোস্ট কমিটির সভায় তা করতে হবে। এটুকু সময় তো আমাদের দিতে হবে।'

তিনি আরও জানান, 'এখন আমাদেরকে হয় নতুন হল উদ্বোধন পেছাতে হবে অথবা গৃহীত সিদ্ধান্তের বাস্তবায়ন করতে হবে। আর এখানে শিক্ষার্থীরা, হলের মোট শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৬০০ জনের কথা বললেও তা প্রকৃতপক্ষে ৩০০ জনের কাছাকাছি।'

তবে শিক্ষার্থীরা বলেছেন, ছাত্রীদের সংখ্যা ৬০০ এর বেশি। বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৯ ও ৫০ তম ব্যাচের শিক্ষার্থীরা দূরে একটি আবাসিক কোয়ার্টারে মানবেতর জীবনযাপন করছেন বলে জানান তুলনামূলক সাহিত্য ও সংস্কৃতি বিভাগের এক শিক্ষার্থী।

শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ প্রদর্শনের খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে আরও উপস্থিত হন প্রভোস্ট কমিটির সভাপতি বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক আব্দুল্লাহ হেল কাফি, বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেসা মুজিব হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক মোহা. মুজিবুর রহমান, সুফিয়া কামাল হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক মোতাহার হোসেনসহ প্রমুখ। রাত প্রায় ২টা পর্যন্ত আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সমঝোতার চেষ্টা করেন শিক্ষকরা।

তবে, এসময় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড নুরুল আলমকে ঘটনাস্থলে আসতে দেখা যায়নি। উপাচার্যকে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেন নি।

Comments