ভিসির পদত্যাগ দাবিতে কুয়েট শিক্ষার্থীদের মশাল মিছিল

খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) উপাচার্য অধ্যাপক মো. মাসুদের পদত্যাগের এক দফা দাবিতে মশাল করেছেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে কুয়েটের ভাস্কর্য দুর্বার বাংলার পাদদেশ থেকে মশাল মিছিলটি শুরু হয়ে কুয়েট উডে গিয়ে শেষ হয়। তারপর শিক্ষার্থীরা সেখানে সংক্ষিপ্ত আলোচনা করেন ও বিক্ষোভ করেন। তারপর শহীদ মিনারের পাদদেশে প্রেস ব্রিফিং করেন। তারপর আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা আবার দুর্বার বাংলার পাদদেশে গিয়ে মশাল মিছিল শেষ করেন রাত সাড়ে আটটায়।
মশাল মিছিলের করার সময় শিক্ষার্থীরা ভিসিবিরোধী নানান রকমের স্লোগান দেন।
প্রেস ব্রিফিংয়ে শিক্ষার্থীরা বলেন, আমরা আবারও দুঃখ-ভারাক্রান্ত মন নিয়ে দেশবাসীর কাছে দাঁড়াচ্ছি। আপনারা দেখেছেন গতকাল আমাদের কতিপয় শিক্ষকরা আমাদের বিরুদ্ধে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে নিয়ে মানববন্ধনে দাঁড়িয়েছেন। আমরা পরিষ্কারভাবে বলতে চাই, আমাদের সংগ্রাম আমাদের শিক্ষকদের বিরুদ্ধে নয়। তারা আমাদের পিতৃতুল্য। আমাদের যদি ভুল হয়ে থাকে, আপনারা আমাদের ক্ষমা করবেন। কিন্তু আমরা ব্যথিত আজ দুইমাস ধরেও আপনারা আমাদের বিরুদ্ধে যারা হামলা করেছে তাদের বিরুদ্ধে কোনো মানববন্ধন করলেন না। আমাদের নামে মিথ্যা মামলা হলো, তাও আমাদের পক্ষে দাঁড়িয়ে মানববন্ধন করলেন না। আর এখন আপনারা আমাদের বিরুদ্ধে কীভাবে গেলেন? যেখানে সারাদেশ আমাদের পক্ষে দাঁড়াচ্ছে।
'আমরা আরও দেখলাম, আপনাদের সঙ্গে মো. আতাউর রহমান মোড়ল নামে একজন ভাষণ দিলেন। তিনি বিএনপির ২০২৪ সালের দ্বিবার্ষিক সম্মেলনের আপ্যায়ন কমিটির আহ্বায়ক ছিলেন। আবার একইসঙ্গে বিএনপির যোগীপোল ইউনিয়নের ৩১ সদস্য-বিশিষ্ট কমিটির সদস্য। যেখানে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের রাজনীতি নিষিদ্ধ, সেইখানে তিনি এখনো কীভাবে চাকরিরত? আর যেই স্থানীয় বিএনপির কর্মীরা আমাদের আক্রমণ করে, কার চক্রান্তে আমাদের শিক্ষকদের তাদের সঙ্গে দাঁড় করানো হয়েছে? আমরা তার জবাব চাই।'
তারা বলেন, আমরা আরও দেখেছি, শিক্ষকরা বলেছেন যারা বহিষ্কার হয়েছে, সেই তালিকা থেকে নাকি সবাই নির্দোষ প্রমাণ হলেও হতে পারে। তাহলে ৫৫ দিন ধরে তদন্ত কমিটি কি প্রহসনের রিপোর্ট বের করল? আমরা চাই সেই ৩৭ জনের তালিকা দ্রুত প্রকাশ করা হোক এবং এতে ছাত্রদলের শিক্ষার্থী ব্যতীত নিরীহ কেউ থাকলে তদন্ত কমিটি কেন তাকে সাময়িকভাবে বহিষ্কার করলো? তার জবাব দিতে হবে। আমরা সারা বাংলাদেশকে ধন্যবাদ জানাতে চাই আমাদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য। আমাদের জন্য বুয়েট, রুয়েট, চুয়েট, ডিইউ, সিইউ ও ব্র্যাকসহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা দাঁড়িয়েছেন। তাদের প্রতি আমরা কৃতজ্ঞ। আমাদের সংগ্রাম স্বৈরাচারিতার বিরুদ্ধে। আমাদের বিশ্বাস, পুরো দেশ জুলাই-আগস্টের পর আর কোনো স্বৈরাচারকে ঠাঁই দিবে না।
'কিন্তু আমরা ব্যথিত। কারণ ৫৮ দিন পরেও অন্তর্বর্তী সরকার আমাদের দিকে তাকাচ্ছে না। আমাদের ক্যাম্পাসে রামদা, চাপাতি এমনকি আগ্নেয়াস্ত্র তাক করে গুলি করা হলো, তাও তারা নিশ্চুপ ভূমিকা পালন করেছে। আমাদের নামে মামলা, বহিষ্কার হওয়ার পরেও তারা আমাদের দিকে তাকায়নি। যেই আসিফ মাহমুদের জন্য আমরা রাস্তায় নেমে রক্ত দিয়েছি, ওই আসিফ মাহমুদ আমাদের দিকে তাকান। আমরা কিন্তু এখনো রাজপথ ছাড়িনি। কোথায় মাহফুজ আলম? আপনারা দেখেন না আমার ভাইরা কুকুরের সঙ্গে শুয়ে ঘুমিয়ে কাটাচ্ছে? আমরা আপনাদেরকে হুঁশিয়ার করছি। আপনারা যদি এখনো আমাদের ভিসিকে অপসারণ না করেন, তাহলে আমরা ধরে নেবো সারা দেশের বিরুদ্ধে গিয়ে অন্তর্বর্তী সরকার স্বৈরাচারকে সেফ গার্ড দিচ্ছে। আর স্বৈরাচার দমানোর জন্য আমরা প্রয়োজনে আবার জুলাই নামাব।
শিক্ষার্থীরা আরও বলেন, আমরা জানতে পেরেছি আগামীকাল ভিসি পরিষদের মিটিং আছে। আমরা সব বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মানিত ভিসিদের ওই মিটিং বর্জন করার অনুরোধ করছি। যেই ভিসির হাতে আমাদের রক্ত লেগে আছে, যেই ভিসি আমাদের নিরাপত্তা দিতে পারে নাই, যেই ভিসির তত্ত্বাবধানে শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে মামলা ও বহিষ্কার করা হয়েছে, সেই ভিসির অধীনে যেকোনো ধরনের মিটিংয়ে যাওয়া আমাদের সাধারণ শিক্ষার্থীদের রক্তের ওপর পা দিয়ে যাওয়ার শামিল।
শিক্ষার্থীরা আগামীকাল ভিসিদের মিটিংয়ে অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিদের উপস্থিত না হওয়ার জন্য আহ্বান জানান।
Comments