‘ডাকসুর প্রেসিডেন্ট পদে নির্বাচিত শিক্ষার্থী প্রতিনিধি পেতে গঠনতন্ত্রে পরিবর্তন আনব’

শেখ তানভীর বারী হামিম | ছবি: সংগৃহীত

নির্বাচিত হলে ডাকসুর গঠনতন্ত্রে বেশ কিছু পরিবর্তন আনতে চান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল মনোনীত প্যানেলের সাধারণ সম্পাদক (জিএস) প্রার্থী শেখ তানভীর বারী হামিম।

এছাড়া, শিক্ষার্থীদের আবাসন-খাদ্য-স্বাস্থ্য সমস্যা নিরসন ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ডাকসুকে কার্যকরভাবে ব্যবহারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তিনি।

দ্য ডেইলি স্টারকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে হামিম বলেন, 'নির্বাচিত হলে একটি বড় কাজ করতে চাই—সেটা হলো ডাকসুর গঠনতন্ত্র পরিবর্তন। আমরা মনে করি ডাকসু হবে পুরোপুরি নির্বাচিত শিক্ষার্থীদের বডি।'

'কিন্তু এখানে বিনা নির্বাচনে উপাচার্য এই বডির প্রেসিডেন্ট হন। আমরা প্রেসিডেন্ট হিসেবে শিক্ষার্থী প্রতিনিধি চাই। সম্মানিত উপাচার্য প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে ডাকসুর উপদেষ্টা পরিষদে থাকবেন,' বলেন তিনি।

এই ছাত্রনেতা মনে করেন, 'লিঙ্গ সমতা নিশ্চিত করতে ডাকসুর ভিপি দুজন থাকতে পারে—একজন নারী ও একজন পুরুষ প্রতিনিধি। এছাড়া, ডাকসু নির্বাচন যেন নিয়মিত হয়, সে জন্য আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের বার্ষিক ক্যালেন্ডারে ডাকসু নির্বাচনকে নিয়ে আসব।'

হামিম বলেন, 'ডাকসুতে শিক্ষার্থীরা সরাসরি ভোটাধিকারের মাধ্যমে তাদের নেতৃত্ব নির্বাচন করে। আমি দীর্ঘদিন ধরে ছাত্ররাজনীতি করছি, ডাকসুতে নির্বাচিত হলে সব শিক্ষার্থীদের কল্যাণে কাজ করার সুযোগ তৈরি হবে। এতে আমার রাজনৈতিক পরিপূর্ণতা আসবে।'

'জুলাই আন্দোলনের আগেও আমি রাজপথে শিক্ষার্থীদের পক্ষে এবং ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করেছি, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের মাধ্যমে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের জন্য স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে নারীদের হলে মেডিকেল ক্যাম্প এবং শিক্ষার্থীদের মন ও শরীরকে সুস্থ রাখতে বিভিন্ন ক্রীড়া প্রতিযোগিতা আয়োজন করেছি। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছি, পবিত্র কোরআন তেলাওয়াতের প্রতিযোগিতা যেমন করেছি, একইভাবে নাচ-গান-অভিনয়ের ট্যালেন্ট হান্ট প্রতিযোগিতার আয়োজনও করেছি।'

শিক্ষার্থীবান্ধব কাজের জন্যই শিক্ষার্থীরা তাকে সাধারণ সম্পাদক হিসেবে বেছে নেবে বলে আত্মবিশ্বাসী হামিম।

'তবে, ডাকসুর গঠনতন্ত্রটা এমন যে, চাইলেই রাতারাতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে পরিবর্তন করতে পারবো না। বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের বেসিক কিছু নিডস আছে, যেগুলো আমরা হয়তো পূরণ করতে পারবো। যেমন প্রথম বর্ষ এবং দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থীর সবচেয়ে বড় সমস্যা আবাসন সমস্যা এবং ভালো মানের খাদ্যের সমস্যা। আমি চেষ্টা করব যেন আমাদের যে চর্চা আছে যে, মাস্টার্সের পরেও শিক্ষার্থীরা হলে অবস্থান করে, পরীক্ষা শেষ হলেও তারা সিট ছাড়ে না, সে ক্ষেত্রে আমরা চেষ্টা করব প্রথম বর্ষেই প্রয়োজন অনুযায়ী সিট বরাদ্দের। চেষ্টা করব যে, মাস্টার্স পরীক্ষার রেজাল্ট যেদিন দেবে, সেদিন যেন অটোমেটেড সিস্টেমে ডিজিটালি সিট ক্যানসেল হয়।'

'এই চর্চা শুরু হলে মাস্টার্সের শিক্ষার্থীরা মানসিকভাবে প্রস্তুত থাকবে ফাইনাল পরীক্ষার পর বিকল্প আবাসনের। এতে মনে হয় প্রথমবর্ষের আবাসন সংকট অনেকাংশে কেটে যাবে,' যোগ করেন তিনি।

প্রান্তিক পর্যায় থেকে আসা শিক্ষার্থীদের জন্য ডাকসুর তত্ত্বাবধানে বেসিক কম্পিউটার লিটারেসি নিশ্চিত করা, শিক্ষার্থীদের ভালো রেজাল্টের জন্য মাস্টার্সসহ বিভিন্ন বর্ষের মেধাবী শিক্ষার্থীদের নিয়ে অ্যাডভাইজারি টিম গঠন, নারী হলে পাবলিক-প্রাইভেট কোলাবরেশনে ছোট মেডিকেল সেন্টার স্থাপনের কথাও ভাবছেন এই প্রার্থী।

বিশ্ববিদ্যালয়ের নারী শিক্ষার্থীদের হ্যারাসমেন্টের প্রতিকারে একটি হেল্পলাইন চালুর কথা ভাবছেন হামিম। তিনি বলেন, 'আমাদের নারী শিক্ষার্থীরা হ্যারাসমেন্টের শিকার হলে সামাজিকযোগাযোগ মাধ্যমে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কেন্দ্রিক বিভিন্ন গ্রুপে জানায়। এটা একটা দীর্ঘ প্রক্রিয়া এবং তাৎক্ষণিকভাবে সাড়া দেওয়া সম্ভব হয় না। ছাত্রদল মনোনীত প্যানেল নির্বাচিত হলে ডাকসুর সার্বিক তত্ত্বাবধানে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের মাধ্যমে হেল্পলাইন চালু করব। যার মাধ্যমে আমাদের কোনো শিক্ষার্থী ঢাকাসহ দেশের যেকোনো স্থানে সমস্যার সম্মুখীন হলে সেখানে কল করে প্রতিকার পেতে পারেন।'

ডাকসু নির্বাচনের পরিবেশ উৎসবমুখর হলেও ইসলামী ছাত্রশিবির ও কিছু স্বতন্ত্র প্রার্থীর বিরুদ্ধে আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ তোলেন ছাত্রদলের এই নেতা। 

এছাড়া, ভোটের দিন সেনা মোতায়েনকেও ইতিবাচকভাবে দেখছেন না তিনি।

'সেনা মোতায়েনের বিষয়টি আমাদের কাছে মনে হচ্ছে ভীতিকর পরিবেশ তৈরির চেষ্টা। আমি দেখছি, শিক্ষার্থীদের ভেতর এক ধরনের ভীতি সঞ্চার হচ্ছে। এখানে তো কোনো যুদ্ধ-অবস্থা তৈরি হয়নি যে সেনাবাহিনী লাগবে!'

তার মতে, জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের প্যানেলটি একটি ইনক্লুসিভ প্যানেল, যেখানে নারী প্রতিনিধি, সনাতন ধর্মাবলম্বী, পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধিত্ব রয়েছে, এমনকি প্রথমবর্ষের শিক্ষার্থীও আছে, যেটি আর কোনো প্যানেলে নেই। একইভাবে এই প্যানেলে জুলাই শহীদ পরিবারের প্রতিনিধিত্বও আছে, উল্লেখ করেন তিনি।

'আমি মনে করি, আমাদের শিক্ষার্থীরা ইনক্লুসিভনেসকে পছন্দ করে, তাই তারা ছাত্রদলের প্যানেলকে এবার ডাকসুতে নির্বাচিত করবে।'

নির্বাচনের বাজেট কত জানতে চাইলে হামিম বলেন, 'আমার আসলে বাজেট বলতে কিছু নেই। কিছু লিফলেট করতে পারি। কিন্তু আমার দুই হাত, দুই পা, দুই চোখ, দুই কান—এই নিয়েই আমার প্রচারণা। দুই পা দিয়ে শিক্ষার্থীদের কাছে যাব, হাত মেলাব, কান দিয়ে দাবি-দাওয়া শুনবো, চোখ দিয়ে সমস্যা দেখব আর সমাধানের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ভোট চাইব।'

Comments

The Daily Star  | English

Students’ unions: Legal bars, admin delays stall polls in many universities

Of 56 public universities across the country, only seven have the legal provision for a central students' union

3h ago