প্রধান শিক্ষক-পরিচালনা কমিটির দ্বন্দ্বে ভুগছে স্কুল শিক্ষার্থীরা

নরসিংদীর বেলাব উপজেলার দক্ষিণধরু উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক ও পরিচালনা কমিটির সভাপতির দ্বন্দ্বের কারণে স্কুলের প্রাতিষ্ঠানিক কাজসহ শিক্ষাকার্যক্রম ব্যাহত হওয়ার অভিযোগ উঠেছে।
দক্ষিণধরু উচ্চ বিদ্যালয়
নরসিংদীর বেলাব উপজেলার দক্ষিণধরু উচ্চ বিদ্যালয়। ছবি: স্টার

নরসিংদীর বেলাব উপজেলার দক্ষিণধরু উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক ও পরিচালনা কমিটির সভাপতির দ্বন্দ্বের কারণে স্কুলের প্রাতিষ্ঠানিক কাজসহ শিক্ষাকার্যক্রম ব্যাহত হওয়ার অভিযোগ উঠেছে।

জানা গেছে, একাধিক অনিয়মের অভিযোগ তুলে একে অপরের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছেন বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক আবু তাহের ও পরিচালনা কমিটির সভাপতি আবুল কালাম ভূঁইয়া।

ফলে স্কুলের স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন স্কুলটির প্রায় ৫ শতাধিক শিক্ষার্থী ও অন্যান্য শিক্ষক।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত ফেব্রুয়ারিতে বিদ্যালয়ে ৪র্থ শ্রেণির নিয়োগ পরীক্ষায় অংশ নেওয়া প্রার্থীদের মধ্যে উত্তীর্ণদের চূড়ান্তভাবে চাকরি না দেওয়া নিয়ে দ্বন্দ্বের শুরু।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন শিক্ষক ও শিক্ষার্থী দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, চলতি মাসে প্রধান শিক্ষক আবু তাহের ও বর্তমান পরিচালনা কমিটির সভাপতি আবুল কালাম ভূঁইয়ার মধ্যে দ্বন্দ্ব চরমে পৌঁছায়।

গত ২৮ জুলাই প্রধান শিক্ষকের নানান অনিয়মের জবাব চেয়ে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি।

এর জবাব না দিয়ে গত ২৩ আগস্ট বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি আবুল কালাম ভূঁইয়ার বিরুদ্ধে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষাবোর্ডে লিখিত অভিযোগ দেন প্রধান শিক্ষক আবু তাহের।

গত ১২ সেপ্টেম্বর প্রধান শিক্ষক আবু তাহেরকে সাময়িক বরখাস্ত করেন সভাপতি আবুল কালাম ভূঁইয়া।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষক ডেইলি স্টারকে বলেন, 'মূলত নিয়োগ দেওয়াকে কেন্দ্র করে তাদের মধ্যে ঝামেলা হচ্ছে। তারা প্রার্থীদের কাছ থেকে টাকা নিয়েছেন।'

তিনি আরও বলেন, 'শিক্ষকদের ব্যবহার করে ২ পক্ষই ফায়দা নেওয়ার চেষ্টা করছে। এ দ্বন্দ্বের কারণে স্কুলের কার্যক্রম ও শিক্ষার পরিবেশ বজায় রাখা কঠিন হয়ে পড়েছে।'

স্কুলের একজন শিক্ষার্থী নাম প্রকাশ না করার শর্তে ডেইলি স্টারকে বলে, 'আমাদের ক্লাস-পরীক্ষা ঠিক মতো হয় না। ক্লাস রেখে শিক্ষকেরা মিটিংয়ে চলে যান। শিক্ষকরাও ২ গ্রুপে বিভক্ত। এক শিক্ষকের সঙ্গে কথা বললে অন্য শিক্ষক রাগ করেন। আমরা এই দ্বন্দ্বের অবসান চাই।'

বিদ্যালয় সূত্র জানায়, বর্তমান পরিচালনা কমিটি গঠনের পর প্রধান শিক্ষক আবু তাহের কমিটিকে নানাভাবে অসহযোগিতা করছেন বলে অভিযোগ উঠে। তার বিরুদ্ধে গত ২১ জুন কমিটির পক্ষ থেকে তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়।

গত ২৮ জুলাই স্কুল কমিটি প্রধান শিক্ষককে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়। এতে তার বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি অভিযোগের বিষয়ে লিখিত জবাব চাওয়া হয়। পরবর্তীতে আরও ২ বার কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়।

নোটিশে তার বিরুদ্ধে শিক্ষক ও কমিটির সদস্যদের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ, বিদ্যালয়ে না এসেই হাজিরা খাতায় সই, বর্তমান কমিটি নির্বাচিত হওয়ার পর সভায় উপস্থিত না হওয়া, বিদ্যালয়ের তহবিল থেকে টাকা ঋণ নিয়ে ফেরত না দেওয়া, ঈদুল আযহার সময় শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন-বোনাস না দেওয়াসহ বেশ কয়েকটি অভিযোগ আনা হয়।

প্রধান শিক্ষক আবু তাহের গত ২৩ আগস্ট বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি আবুল কালাম ভূঁইয়ার বিরুদ্ধে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষাবোর্ডে লিখিত অভিযোগ দেন।

সভাপতি হওয়ার ৩ মাসের মধ্যে কমিটির সভা না করা, বিদ্যালয়ের নতুন ভবনের ঠিকাদারের কাছ থেকে উন্নয়নের জন্য পাওয়া টাকার মধ্যে ৬০ হাজার টাকা আত্মসাৎ, কমিটিতে এককালীন ১৫ হাজার টাকা জমা না দেওয়া, কয়েকজন শিক্ষককে নিয়ে গ্রুপিং ও বিদ্যালয়ে শৃঙ্খলা পরিপন্থি কাজ করার অভিযোগ আনা হয় সভাপতি আবুল কালাম ভূঁইয়ার বিরুদ্ধে।

বিদ্যালয়টির পরিচালনা কমিটির সভাপতি আবুল কালাম ভূঁইয়া ডেইলি স্টারকে বলেন, 'প্রধান শিক্ষক মিটিংয়ে আসেন না। কমিটির সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করেন না। কমিটি ও অন্যান্য শিক্ষকরা অতিষ্ঠ হয়ে তাকে ৩ বার কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছেন। তিনি একবারও এর জবাব দেননি। এসব কারণে কমিটি তাকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে।'

শিক্ষাবোর্ডে তার বিরুদ্ধে অভিযোগের বিষয়ে আবুল কালাম ভূঁইয়া বলেন, 'আমাকে হেয় করতে অভিযোগ দেওয়া হয়েছে।'

প্রধান শিক্ষক আবু তাহের ডেইলি স্টারকে বলেন, 'সভাপতির বিরুদ্ধে শিক্ষাবোর্ডে লিখিত অভিযোগ দিয়েছি। অভিযোগের তদন্ত চলাকালে তিনি আমাকে কোনোভাবে সাময়িক বরখাস্ত বা অন্য কোনো ব্যবস্থা নিতে পারেন না। আমার বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগ মিথ্যা। আমাকে দায়িত্ব থেকে সরানোর জন্যই তারা এসব অভিযোগ করেছেন।'

স্কুলের বর্তমান ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মো বাহাউদ্দিন ডেইলি স্টারকে বলেন, 'কিছু সমস্যা চলছে। আশা করি, অচিরেই সমাধান হবে।'

উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শেখ মোহাম্মদ মতিউর রহমান ডেইলি স্টারকে বলেন, 'প্রধান শিক্ষক ও সভাপতির দ্বন্দ্বে প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। সভাপতির বিরুদ্ধে বর্তমানে প্রধান শিক্ষকের দেওয়া অভিযোগের তদন্ত চলছে।'

'অন্যদিকে প্রধান শিক্ষককে কয়েকবার কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়ার তথ্য জানলেও তাকে সাময়িক বরখাস্তের ব্যাপারে কিছু জানি না,' যোগ করেন তিনি।

Comments