জুলাই থেকে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মিড-ডে মিল চালুর সম্ভাবনা

শিক্ষার্থীদের খিচুড়ি দেওয়া হবে নাকি উচ্চ শক্তি ও পুষ্টিসমৃদ্ধ ফর্টিফাইড বিস্কুট সরবরাহ করা হবে তা এখনো চূড়ান্ত হয়নি।
প্রাথমিক বিদ্যালয়
স্টার ফাইল ফটো

সরকার আগামী জুলাই থেকে সব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য স্কুল ফিডিং প্রোগ্রাম চালুর পরিকল্পনা করছে। এই কর্মসূচি শিক্ষার্থীদের ক্লাসে উপস্থিতি বাড়াতে ও বিদ্যালয় থেকে ঝরে পড়া কমাতে সহায়তা করবে।

মিড-ডে মিল শিশুদের স্কুলেই তাদের দৈনিক ক্যালোরি চাহিদার অন্তত ৩০ শতাংশ পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করবে।

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব ফরিদ আহমেদ বলেন, মন্ত্রণালয় চলতি মাসেই মিড-ডে মিল কর্মসূচির সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের কাজ শেষ করবে এবং আগামী মাসে উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) প্রণয়ন শুরু করবে।

গতকাল মঙ্গলবার প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন তার কার্যালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, 'আমরা আশাবাদী যে জুলাইয়ে সব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মিড-ডে মিল কর্মসূচি শুরু হবে।'

দেশের ১০৪ উপজেলার দারিদ্র্যপীড়িত এলাকার শিক্ষার্থীদের জন্য স্কুল মিল কর্মসূচি থাকলেও তা গত বছরের জুনে শেষ হয়।

এই কর্মসূচি শেষ হওয়ার আগেই ২০২০ সালের আগস্টে ৬৫ হাজার ৫৬৬ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ১ কোটি ৪১ লাখ শিক্ষার্থীকে ৫ বছর খাবার দেওয়া অব্যাহত রাখার জন্য ১৭ হাজার ২৯০ কোটি টাকার কর্মসূচি প্রস্তুত করে মন্ত্রণালয়।

এই কর্মসূচিতে খিচুড়িসহ অন্যান্য মিড-ডে মিল সরবরাহ ও প্রস্তুতি পর্যবেক্ষণের জন্য কর্মকর্তাদের বিদেশে পাঠানোর বিধান থাকায় এটি ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়ে।

২০২১ সালের জুনে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) এই প্রকল্পের অনুমোদন দিতে অস্বীকার করে।

পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান সে সময় বলেছিলেন, 'এ প্রকল্প অনুমোদন পায়নি। কারণ, প্রধানমন্ত্রী এর কাঠামো (মোডাস অপারেন্ডি) নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন। তিনি জানান, স্কুলে খিচুড়ি রান্না হলে পড়ালেখার পরিবেশ বিঘ্নিত হতে পারে।'

তিনি আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী প্রকল্প পরিকল্পনা সংস্কারের নির্দেশ দেন।

এছাড়াও, এ প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাই করা হয়নি বলেও গতকাল জানান সচিব ফরিদ।

পরিকল্পনা কমিশনের নীতিমালা অনুসারে, ৫০ কোটি বা তার চেয়ে বেশি মূল্যমানের কোনো উন্নয়ন প্রকল্প শুরুর আগে এর সম্ভাব্যতা যাচাই করা আবশ্যক।

ফরিদ আহমেদ জানান, শিক্ষার্থীদের খিচুড়ি দেওয়া হবে নাকি উচ্চ শক্তি ও পুষ্টিসমৃদ্ধ ফর্টিফাইড বিস্কুট সরবরাহ করা হবে তা এখনো চূড়ান্ত হয়নি।

'ফল, ডিম বা সমুচা দেওয়ারও প্রস্তাব আছে। শিগগির বিষয়টি চূড়ান্ত করবো', যোগ করেন তিনি।

কর্মকর্তারা যত দ্রুত সম্ভব নতুন ডিপিপি শেষ করার চেষ্টা করছেন এবং প্রকল্পের খরচ ২০২০ সালে প্রস্তাবিত খরচের চেয়ে কম হতে পারে।

ফরিদ আহমেদ বলেন, সরকার দারিদ্র্যপীড়িত এলাকার স্কুলগুলোয় অন্তত দুপুরের খাবার চালু করতে চায়।

কর্মকর্তারা গ্লোবাল পার্টনারশিপ ফর এডুকেশনের সঙ্গেও আলোচনা করছেন, যাতে তারা খাবারের জন্য তাদের ৯০ মিলিয়ন ডলার অনুদানের কিছু অংশ ব্যবহার করতে পারেন।

সচিব আরও বলেন, যেসব স্কুল প্রাথমিকভাবে এই কর্মসূচির আওতায় আসবে না, সেগুলোকে অন্তর্ভুক্ত করতে মন্ত্রণালয় জিপিই তহবিল ব্যবহারে আগ্রহী।

কর্মকর্তারা জানান, খাবার সরবরাহের জন্য গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে স্বাস্থ্য, কৃষি এবং মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় কাজ করার আগ্রহ প্রকাশ করেছে।

প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় চলতি মাস থেকে ৫০ স্কুলের প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে ২৫০ মিলিলিটার ইউএইচটি (আল্ট্রা হাই টেম্পারেচার) দুধ সরবরাহ শুরু করতে চায়। জুলাইয়ে স্কুলের সংখ্যা বাড়িয়ে ৩০০ করা হবে এবং খাদ্য তালিকায় ডিম যুক্ত করা হবে।

কর্মকর্তারা রাজস্ব খাত থেকে মিড-ডে মিলের অর্থায়নের ব্যবস্থা রাখতে চেয়েছিলেন বলে জানান ফরিদ আহমেদ।

জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি ২০০১ থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত স্কুলশিশুদের খাওয়ানোর জন্য প্রকল্প চালিয়েছিল। সর্বশেষ ২০১০ সালে সরকারি স্কুল ফিডিং প্রোগ্রাম চালু করা হয়েছিল।

এ কর্মসূচির আওতায় সরকার ১০৪ উপজেলার প্রায় ৩০ লাখ স্কুলশিক্ষার্থীকে ৭৫ গ্রাম ফর্টিফাইড বিস্কুট দিয়েছে।

প্রাথমিক শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এসব বিদ্যালয়ে উপস্থিতি বেড়েছে ৬ দশমিক ৬ শতাংশ ও ঝরে পড়ার হার কমেছে ৬ শতাংশ।

প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের তথ্য অনুসারে, ২০১০ সালে প্রাথমিক পর্যায়ে ঝরে পড়ার হার ছিল ৩৯ দশমিক ৮ শতাংশ। ২০২১ সালে তা কমে দাঁড়িয়েছে ১৪ দশমিক ১৫ শতাংশে।

ক্যাম্পেইন ফর পপুলার এডুকেশনের উপ-পরিচালক কে এম এনামুল হক বলেন, 'প্রতিদিন অনেক শিশু খালি পেটে স্কুলে যায়। তাদের জন্য ক্লাসে মনোযোগ দেওয়া কঠিন হয়ে পড়ে। তারা প্রত্যাশা অনুযায়ী শিক্ষা নিতে পারে না।'

তিনি বলেন, 'স্কুলে মিড-ডে মিল পেলে শিক্ষার্থীরা আরও ভালো পুষ্টি পাবে। এটি একইসঙ্গে পরিবারগুলোকে তাদের শিশুদের স্কুলে পাঠানোর জন্য ভালো অনুপ্রেরণা।'

অনুবাদ করেছেন মোহাম্মদ ইশতিয়াক খান

Comments