স্টেটমেন্ট অব পারপাস বা এসওপিতে লিখতে হবে যে বিষয়গুলো

উচ্চশিক্ষায় আবেদনের সময় একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো স্টেটমেন্ট অব পারপাস বা এসওপি তৈরি করা। এখানে সাধারণত আবেদনকারী নিজের আগ্রহ, শিক্ষা, কর্মজীবনের অভিজ্ঞতা এবং সব শেষে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা তুলে ধরেন নির্দিষ্ট শব্দের মধ্যে। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় এবং বিভাগগুলোর নির্দিষ্ট শব্দ সংখ্যা থাকে এবং এই শব্দের মধ্যেই ব্যক্তিকে এই প্রতিটি বিষয় তুলে ধরতে হয়।
সাধারণত ৫০০ থেকে শুরু করে ১২০০ শব্দের মধ্যে এসওপি লেখা হয়। আবার কখনো এর বেশিও হতে পারে। কিন্তু শব্দ সংখ্যা যখন ৫০০ থেকে ৮০০ বলা থাকে, তখন এই প্রত্যেকটি বিষয় গুছিয়ে লেখাটা কিছুটা ঝামেলারই। তাই এসওপি লেখার শুরুতেই কয়েকটি বিষয় গুছিয়ে নিলে লেখাটা সহজ হয়। বিশেষ করে আবেদনকারী যখন একই সঙ্গে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন করেন, তখন এই বিভিন্ন এসওপির শব্দ সংখ্যাও একেক হয়ে থাকে। তাই সবার প্রথমে মূল এসওপির একটা ড্রাফট রাখা প্রয়োজন। পরে তাতেই কিছু বিষয় কাটছাঁট কিংবা পরিবর্তন করে গুছিয়ে নেওয়া যায়।
এসওপির শুরুটা কেমন হবে, এ নিয়ে অনেকেই দ্বিধান্বিত থাকেন। আসলে এখন একেক বিশ্ববিদ্যালয়, বিভাগ অনুযায়ী এসওপির ধরন একেক রকমের হয়ে থাকে, বিশেষ করে শুরুটা। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই আপনার স্টেটমেন্ট অফ পারপাস একেবারে ফর্মাল বা দাপ্তরিক ভাষায় না লিখে, নিজের কোনো অভিজ্ঞতার সঙ্গে মিলিয়ে লিখলে ভালো। যেমন: সাংবাদিকতার একজন শিক্ষার্থী হিসেবে, কেন আমি এই বিষয়ে পড়তে চাই, আমার জীবনে এমন কোনো ঘটনা আমাকে এই বিষয়ে পড়ার জন্য অনুপ্রাণিত করেছে কি, এভাবেও শুরু করা যায়। অর্থাৎ যেই বিষয়ে আপনি পড়তে আগ্রহী, তার বাস্তবিক প্রতিফলন আছে আপনার জীবনে।
শিক্ষাগত এবং পেশাগত অভিজ্ঞতা
এরপর আসে আপনার শিক্ষাগত অভিজ্ঞতা, মূলত আন্ডারগ্র্যাজুয়েট বা গ্র্যাজুয়েট পর্যায়ের। কোন বিষয়গুলো আপনার আগ্রহের, সেই কোর্স সম্পর্কিত কোনো গবেষণা কাজ, কিংবা প্রোজেক্টে কাজ করার অভিজ্ঞতা রয়েছে কি না, গ্রেড কেমন ছিল সেসব কোর্সে, এগুলোই মূলত আপনার শিক্ষাগত অভিজ্ঞতা। একইসঙ্গে এই চার-পাঁচ বছরের অভিজ্ঞতা আপনাকে কীভাবে উচ্চতর শিক্ষায় দক্ষতা অর্জনে সহযোগিতা করবে, প্রতিটি বিষয় সংক্ষেপে গুছিয়ে লেখা।
যদি শিক্ষাজীবনে কোন খণ্ডকালীন চাকরি, ফ্রিল্যান্সিং কাজের অভিজ্ঞতা থাকে, সে সম্পর্কেও গুছিয়ে লিখুন। মূলত, সেই কাজ কীভাবে আপনার উচ্চশিক্ষার বিষয়ের সঙ্গে সম্পর্কিত, সেভাবে লিখুন। এখানে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি হলো, আপনি কোন অধ্যাপকের সঙ্গে কী বিষয়ে কাজ করতে চাইছেন, তা গুছিয়ে লেখা। অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে বলাই থাকে, আবেদনকারী যে শিক্ষকের সঙ্গে গবেষণা, ল্যাবে কাজ করতে আগ্রহী তার কথা যেন সরাসরি এসওপিতে উল্লেখ করেন। কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ে, বিশেষ করে মাস্টার্স ডিগ্রির ক্ষেত্রে সব সময় এটি বলা না থাকলেও, বিষয়টি উল্লেখ থাকলে ভাল। এতে আপনার কাজের আগ্রহের জায়গা, পরিধি নির্দিষ্ট হয়।
এসওপিতে আরেকটি বিষয় বেশ গুরুত্বসহকারে দেখা হয়, তা হলো লিডারশিপ কিংবা আপনার নেতৃত্বের দক্ষতা। হতে পারে স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে কোনো কাজের অভিজ্ঞতা, কর্মজীবনে কোনো ইভেন্ট ব্যবস্থাপনা, শিক্ষক হলে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কোনো শিক্ষাসফর, ব্যাচ কাউন্সেলর হিসেবে যোগাযোগে আপনার ভূমিকা কী ছিল, সেগুলোও লিখতে পারেন। শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ক্লাব, কনফারেন্স, সিম্পোজিয়ামে অংশগ্রহণের অভিজ্ঞতা গুছিয়ে লিখতে পারেন।
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
সহজ কথায় কেন এই বিষয় আপনি উচ্চশিক্ষার জন্য নির্বাচন করছেন? আপনাকে যে বিশ্ববিদ্যালয় নানা দেশের শিক্ষার্থীদের মধ্য থেকে বাছাই করে ফান্ডের জন্য মনোনীত করবে, কেন করবে? একই সঙ্গে, এই বিশ্ববিদ্যালেয়ই কেন আপনি আবেদন করছেন? এই প্রতিটি বিষয়ের নির্দিষ্ট উত্তরগুলো আপনার জানা থাকতে হবে। এমনভাবে গুছিয়ে লিখতে হবে, যাতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের আসলেই মনে হয়, ফান্ডের জন্য আপনিই যোগ্য।
এক্ষেত্রে আপনার যেই পরিকল্পনা, কোন শিক্ষকের সঙ্গে কাজ করতে আগ্রহী, সেই স্টেটের আবহাওয়া, ফান্ডের পরিমাণ এই বিষয়গুলো সম্পর্কে সত্যিটাই বলতে হবে গুছিয়ে এবং উপযুক্ত শব্দ ব্যবহার করে। অনেকেই মনে করেন, এই বিষয়গুলোর উত্তর সব সময়েই শুধু গবেষণা, নিজের ক্যারিয়ার সংক্রান্ত হতে হবে। আসলে তেমনটি নয়। আপনি যদি কোনো কারণে যুক্তরাষ্ট্রের নির্দিষ্ট কোনো স্টেটে, সেখানকার ব্যয়, আবহাওয়ার কারণেই সেখানকার বিশ্ববিদ্যালয়টিতে আবেদন করে থাকেন, সে বিষয়ই গুছিয়ে লিখবেন। আপনার যেই শিক্ষাগত এবং পেশাগত অভিজ্ঞতা, তা নিয়ে আগেই গুছিয়ে লিখে ফেলুন। এই অংশটুকু রাখুন শুধু আপনার আগামী ৫-১০ বছর পর নিজেকে আপনি যেই অবস্থানে দেখতে চান, সেই অংশের জন্য।
Comments