আমাদের স্কুলে আরও সুযোগ-সুবিধা প্রয়োজন

ছবি: অর্কিড চাকমা

আমার মনে আছে, একবার হতাশ হয়ে স্কুলের প্রশাসনিক কার্যালয় থেকে বের হয়েছিলাম। বিতর্ক ক্লাবের জন্য কোচ নিয়োগের আবেদন নিয়ে প্রশাসনিক ভবনে গিয়েছিলাম। সেই আবেদন প্রত্যাখ্যান হওয়াতেই হতাশ হয়েছিলাম। যদিও এতে অবাক হওয়ার কিছু ছিল না।

সত্যি কথা বলতে, এটা এমন কোনো বিষয় নয় যা শুধু আমাদের স্কুলেই হয়েছে। দেশের বেশিরভাগ স্কুল কর্তৃপক্ষ ন্যূনতম প্রয়োজনীয় সুবিধার বাইরে সহশিক্ষা কার্যক্রমের জন্য বাড়তি বিনিয়োগে আগ্রহী নয়।

বেশিরভাগ স্কুলের কম্পিউটার ল্যাবে শিক্ষার্থীদের ব্যবহারের জন্য প্রয়োজনীয় সব সুবিধা নেই। তার ওপর ল্যাবের দায়িত্বে যারা থাকেন প্রায়শই তাদের প্রযুক্তি জ্ঞান এতটাই কম হয় যে, শিক্ষার্থীদের জন্য কম্পিউটার ও প্রযুক্তি সম্পর্কে জানা অত্যন্ত কঠিন বিষয় হয়ে ওঠে।

এখানেই শেষ নয়। সুযোগ-সুবিধার অভাবের মধ্যে খেলার মাঠ, ক্রীড়া সরঞ্জাম, স্কুল লাইব্রেরিতে পর্যাপ্ত বইয়ের অভাবসহ নানান বিষয় রয়েছে।

স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠতে পারে, কেন বেশিরভাগ স্কুলই ন্যূনতম প্রয়োজনীয় জিনিসের বাইরে আর কোনো সুবিধা দিতে এতটা কার্পণ্য করে?

একটি স্কুল শিক্ষার্থীদের ঠিক কতটা সুযোগ-সুবিধার দেবে তার সঙ্গে টিউশন ফি ও অন্যান্য ভর্তুকি পাওয়ার একটি শক্তিশালী সম্পর্ক রয়েছে। রাজধানীর বুকে বিদেশি পাঠ্যক্রমে পড়ানো কোনো ব্যয়বহুল স্কুলে শিক্ষার্থীদের সাঁতার শেখার জন্য সুইমিংপুল থাকতেই পারে। অপর দিকে, কিছু স্কুলের শিক্ষার্থীরা বিতর্ক দলের জন্য কোচও পায় না।

আরেকটি চিত্র দেখা যেতে পারে সরকারি স্কুলে। ঢাকার যেসব সরকারি স্কুল বেশি পরিমাণ বেতন নেয় বা ভর্তুকি পায় তাদের সুবিধা কম বেতন বা ভর্তুকির স্কুলের চেয়ে অনেক বেশি থাকে। আবার ঢাকার সরকারি স্কুলের সঙ্গে তুলনা করলে দেশের অন্য কোনো শহরের সরকারি স্কুলের বিপরীত চিত্র দেখাটাই যেন স্বাভাবিক।

সার্বিকভাবে বলা যায় যে, নিম্ন আর্থ-সামাজিক অবস্থানের শিক্ষার্থীরা অর্থাৎ কম বেতনের স্কুলে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীরা সাধারণত উচ্চতর আর্থ-সামাজিক অবস্থানের অর্থাৎ বেশি বেতনের স্কুলে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের তুলনায় পিছিয়ে থাকে। বেশি বেতনের স্কুলে একজন শিক্ষার্থী সহজেই পাঠ্যক্রমের বাইরের বই, ক্রীড়া সরঞ্জাম, কম্পিউটারসহ বিভিন্ন বিষয়ে তাদের কার্যক্রম বৃদ্ধির মাধ্যমে নতুন নতুন জ্ঞানার্জনের সুযোগ পায়। একে করে দীর্ঘমেয়াদে শ্রেণী বৈষম্য আরও বেড়ে যায়।

এর একমাত্র সমাধান হচ্ছে ভর্তুকি আকারে স্কুলগুলোর জন্য তহবিল বৃদ্ধি করা। পাশাপাশি লক্ষ্য রাখতে হবে যে, স্কুল কর্তৃপক্ষ শিক্ষার্থীদের জন্য বাড়তি সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করতে তহবিলের যথাযথ ব্যবহার করছে কিনা।

কেবলমাত্র পুঁথিগত বিদ্যায় যথার্থ শিক্ষা সম্পন্ন হয় না। এর সঙ্গে খেলাধুলা, চারুকলাসহ অন্যান্য জ্ঞানার্জনও জরুরি। আমাদের স্কুলগুলোতেও এসব বিষয়ে চর্চা থাকা দরকার।

হৃষিক রায় ধানমণ্ডি টিউটোরিয়ালের দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী

[email protected]

Comments

The Daily Star  | English

Govt relieves Kuet VC, Pro-VC of duties to resolve crisis

A search committee will soon be formed to appoint new candidates to the two posts

2h ago