‘মেড ইন বাংলাদেশ’ পণ্যে কর সুবিধার সম্ভাবনা

স্টার অনলাইন গ্রাফিক্স

আমদানিকৃত বিলাসবহুল পণ্যের ভোক্তাদের জন্য মন খারাপের খবর হচ্ছে, ১ জুলাই থেকে শুরু হতে যাওয়া নতুন অর্থবছরে এসব পণ্যের দাম আরও বেড়ে যাবে।

গত সপ্তাহে প্রসাধনী, ফুল, ফল ও আসবাবপত্রসহ ১৩৫ ধরনের পণ্য আমদানির ওপর নিয়ন্ত্রক শুল্ক বৃদ্ধির পর ২০২২-২৩ অর্থবছরে এসব পণ্যের ওপর কর আরও বড় পরিসরে বাড়ানোর পরিকল্পনা করছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।

বর্তমানে পণ্য আমদানিতে শুল্ক, অগ্রিম আয়কর, মূল্য সংযোজন কর, সম্পূরক শুল্ক ও নিয়ন্ত্রক শুল্ক আরোপ করা হয়।

বাজেট ঘোষণার আগে গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলার অনুমতি না থাকায় নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, এনবিআর সবগুলো, একটি বা দুইটি উপাদানের ক্ষেত্রে এই হার বাড়ানোর কথা বিবেচনা করছে। উল্লেখ্য, আগামী ৯ জুন সংসদে বাজেট পেশ করা হবে।

'এই নীতি নিয়ে এখনো কাজ হচ্ছে। তবে অবশ্যই আগামী অর্থবছরে বিলাসবহুল পণ্যের আমদানির ওপর আগের তুলনায় বেশি শুল্ক আরোপ করা হবে', যোগ করেন তিনি।

রাজস্ব কর্তৃপক্ষ এখন একটি পণ্যের তালিকা তৈরি করছে, যে পণ্যগুলোকে বিলাসবহুল হিসেবে বিবেচনা করা যায়। তিনি আরও বলেন, যেসব পণ্যের শুল্ক বেশি, সেগুলোকেই বিলাসবহুল হিসেবে চিহ্নিত করা হবে।

তালিকা তৈরি হলে পরবর্তী উদ্যোগের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, 'কিছু আইটেমের অগ্রিম আয়কর (এআইটি) বাড়ানো হতে পারে, অথবা সব ধরনের ট্যাক্স উপাদানের সম্পূরক শুল্ক ও হার বাড়ানো হতে পারে। হিসাব করার জন্য এনবিআরের হাতে এখনও সময় আছে।'

তবে গাড়ি, ফ্রিজ ও এসির মতো পণ্যের দামও নিঃসন্দেহে বাড়বে বলে মত প্রকাশ করেন অর্থ মন্ত্রণালয়ের ওই কর্মকর্তা।

গত ২৫ মে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৪২ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়ায়, যা ৫ মাসের আমদানির জন্য যথেষ্ট এবং ৮ থেকে ৯ মাসের আমদানি বিলের নির্ধারিত সুরক্ষা নেটের চেয়ে অনেক কম।

এই উদ্যোগে বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ সংক্রান্ত অনিশ্চয়তা দূর হবে বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে।

২৫ মে বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ ছিল ৪২ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলার, যেটি ৫ মাসের আমদানি বিল মেটানোর সমপরিমাণ। আদর্শ পরিস্থিতিতে কমপক্ষে ৮ থেকে ৯ মাসের বিল মেটানোর মতো বৈদেশিক মুদ্রা থাকা প্রয়োজন।

একইসঙ্গে সরকার আশা করছে, এটি 'মেড ইন বাংলাদেশ' এজেন্ডাকে উৎসাহিত করবে।

এটি স্থানীয় হোম অ্যাপ্লায়েন্স নির্মাতাদের তাদের পণ্যের গুণগত মান আরও উন্নত করতে উত্সাহিত করবে বলে আশা করা হচ্ছে, যাতে দীর্ঘমেয়াদে এসব পণ্য আমদানি করার প্রয়োজন হয় না।

'মেড ইন বাংলাদেশ' পরিকল্পনার ওপর জোর দিয়ে সরকার উৎপাদনের সঙ্গে জড়িত থাকা তালিকাভুক্ত ও অ-তালিকাভুক্ত, উভয় ধরনের প্রতিষ্ঠানের জন্য করপোরেট করের হার ২ দশমিক ৫ শতাংশ পয়েন্ট কমিয়ে আনবে।

তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর ক্ষেত্রে করপোরেট করের হার ২০ শতাংশে নেমে আসবে। তবে ব্যাংক ও মোবাইল অপারেটরদের ক্ষেত্রে করপোরেট করের হার অপরিবর্তিত থাকবে।

এই উদ্যোগ প্রতিষ্ঠানগুলোকে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়ার জন্য উত্সাহিত করবে বলে আশা করা হচ্ছে, কারণ সেখানে ভালো মানের শেয়ারের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।

তালিকাভুক্ত নয়, এমন প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য করপোরেট করের হার ২৭ দশমিক ৫ শতাংশে নেমে আসবে।

এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান নাসিরউদ্দিন আহমেদ ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এটি সঠিক উদ্যোগ। কারণ বাংলাদেশে করপোরেট করের হার দক্ষিণ এশীয় গড়ের চেয়ে বেশি।'

ধীরে ধীরে করপোরেট করের হার ২৫ শতাংশে নামিয়ে আনা হবে বলে জানিয়েছেন অর্থ মন্ত্রণালয়ের সেই কর্মকর্তা।

এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, 'আমি বুঝতে পারছি না কেন তালিকাভুক্ত এবং অ-তালিকাভুক্ত সংস্থাগুলোর মধ্যে পার্থক্য থাকা দরকার। যদি করপোরেট খাত বিকশিত হয়। তবে এটি অর্থনীতির জন্য ভালো, কারণ এটি কর্মসংস্থান সৃষ্টি করবে।'

সরকার পোল্ট্রি ও মৎস্য শিল্পের কর ছাড় প্রত্যাহারের উদ্যোগ নিয়েও কাজ করছে।

কর ছাড়ের উদ্দেশ্য হলো দেশীয় শিল্পকে আরও প্রতিযোগিতামূলক হয়ে উঠতে সহায়তা করা।

'কিন্তু হাঁস-মুরগি ও মাছ আমদানি হয় না। তাই বিদেশি উৎপাদকদের কাছ থেকে কোনো প্রতিযোগিতা নেই। এই দুটি খাতের জন্য কর ছাড়ের কোনো প্রয়োজন নেই,' বলেন অর্থ মন্ত্রণালয়ের ওই কর্মকর্তা।

বরং কর ছাড় প্রত্যাহার করা হলে স্থানীয় শিল্পগুলো নিজেদের মানের উন্নয়ন ঘটাতে বাধ্য হবে।

নাসিরউদ্দিন আহমেদ জানান, অনেকে কর ফাঁকি দেওয়ার জন্যও এই সুবিধাকে কাজে লাগান।

তিনি বলেন, 'এটি একটি উদ্বেগের বিষয় এবং দুর্নীতি দমন কমিশন এ বিষয়টি নিয়ে অসংখ্য মামলা দায়ের করেছে।'

অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তার মতে, পোল্ট্রি ও মৎস্য খাতে অসংখ্য সংখ্যক ছোট উৎপাদক রয়েছে, যারা করের আওতার বাইরে রয়েছে।

'আপনি বলতে পারেন যে এই খাতগুলোতে পারফেক্ট কম্পিটিশন রয়েছে, যেমনটি অর্থনীতিতে বলা হয়', যোগ করেন তিনি।

অর্থনীতিতে পারফেক্ট কম্পিটিশন হলো একটি নির্দিষ্ট মূল্যে সমজাতীয় পণ্য সরবরাহ করার ইচ্ছা ও ক্ষমতাসহ বিপুল সংখ্যক উৎপাদকের অস্তিত্ব থাকা। ফলে কেউ ব্যক্তিগত পর্যায়ে পণ্যের দামকে তেমন একটা প্রভাবিত করতে পারে না।

'এবং কর কর্মকর্তারা এখনও তাদের কাছে পৌঁছাতে পারেননি। ফলে কর ছাড় সেবা বন্ধ করে দিলেও তাদের ওপর তেমন একটি প্রভাব পড়বে না। এর ভালো দিক হলো, কর ফাঁকি দেওয়ার অসংখ্য উপায়ের মধ্যে একটি বন্ধ হলো', যোগ করেন তিনি।

Comments

The Daily Star  | English

US retailers lean on suppliers to absorb tariffs

Rather than absorbing the cost or immediately passing it on to consumers, many US apparel retailers and brands have turned to their suppliers in Bangladesh, demanding they share the pain

8h ago