প্রভাবশালীদের কারণে কুড়িগ্রামের টোপের বাজার বিলে বঞ্চিত প্রকৃত মৎস্যজীবীরা

মৎস্যজীবীদের নাম ভাঙিয়ে স্থানীয় প্রভাবশালীরা লিজ নেওয়ায় গত ১০ বছর ধরে টোপের বাজার বিলে মাছ ধরতে পারছেন না স্থানীয়রা বলে অভিযোগ উঠেছে।
১০ বছর ধরে টোপের বাজার বিলে মাছ ধরতে পারছেন না স্থানীয়রা। ছবি: এস দিলীপ রায়/ স্টার

মৎস্যজীবীদের নাম ভাঙিয়ে স্থানীয় প্রভাবশালীরা লিজ নেওয়ায় গত ১০ বছর ধরে টোপের বাজার বিলে মাছ ধরতে পারছেন না স্থানীয়রা বলে অভিযোগ উঠেছে।

কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার থেতরাই ইউনিয়নে বুড়ি তিস্তা নদী থেকে উৎপত্তি টোপের বাজার বিলটি সবার জন্য উন্মুক্ত রাখার দাবি মৎস্যজীবী ও স্থানীয়দের।

স্থানীয়দের দাবি না মেনে মৎস্য বিভাগ ৪০ লাখ টাকা বরাদ্দ দিয়ে কিছু অংশ খনন ও তীর সংরক্ষণ করে বিলটিকে ৪টি পুকুরে পরিণত করেছে। স্থানীয়রা জানান, এতে তাদের দাবি পূরণ অনেকটাই অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।

ছবি: এস দিলীপ রায়/ স্টার

উলিপুর উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা তারিফুর রহমান সরকার দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, '৪৫ একর জমিতে টোপের বাজার বিল। কয়েকযুগ এটির উৎপত্তি হয়েছিল বুড়ি তিস্তা নদী থেকে। স্থানীয় মৎস্যজীবীরা সমিতির মাধ্যমে ভূমি মন্ত্রণালয় থেকে ১০ বছরের জন্য লিজ নেন। বিলটির ১০ একর অংশে খনন ও তীর সংরক্ষণ করা হয়েছে ৪০ লাখ টাকা ব্যয়ে। 

বিলের পাশে বসবাসকারী লাল মিয়া (৬২) ডেইলি স্টারকে বলেন, গেল ১০ বছর ধরে তারা বিলে নামতে পারছেন না। মাছ ধরতে পারছেন না। এর আগে যখন বিলটি উন্মুক্ত ছিল এটি ছিল তাদের জীবিকা নির্বাহের অবলম্বন। বিলে মাছ ধরে বিক্রি করে আয় করতেন এবং স্বচ্ছলভাবে সংসার চালাতেন। থেতরাই ইউনিয়নের ৬-৭ গ্রামের মানুষ এই বিলে মাছ ধরতেন। বিলের পাশে টাপুর চর গ্রামের প্রায় ৩০০ পরিবারের ৯০ শতাংশই এই বিলে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করতেন।

লাল মিয়া আরও বলেন, বিলটি লিজ দেওয়ায় তাদের মাছ ধরা বন্ধ হয়ে যায়। বাধ্য হয়ে জীবিকার প্রয়োজনে তিনি দিনমজুরি কাজ করে সংসার চালাচ্ছেন। এখন সংসারে অভাব অনটন লেগেই আছে। বিলটি পূর্বের ন্যায় উন্মুক্ত করলে তাদের জীবন-জীবিকায় স্বচ্ছলতা ফিরে আসবে বলে তিনি জানান।

বিলের পাশে বসবাসকারী শুককু মিয়া (৫৮) ডেইলি স্টারকে বলেন, মৎস্যজীবীদের নাম ভাঙিয়ে প্রভাবশালীরা বিলটি লিজ নিয়েছেন। আসলে এর সঙ্গে কোনো মৎস্যজীবী নেই। এ বিলে প্রচুর পরিমাণে দেশীয় প্রজাতির মাছ পাওয়া যায়। লিজ গ্রহণকারীরা পাহারা বসিয়ে স্থানীয়দের বিলে মাছ ধরতে বাধা দেয়। আগে বিলটিতে তারা মাছ ধরে পরিবারের প্রয়োজন মিটিয়ে অতিরিক্ত মাছ বিক্রি করতেন। বিলটি খনন করে পুকুরে পরিণত করেছে মৎস্য বিভাগ।

বিলের পাশে বসবাসকারী শাহ জামাল (৪০) ডেইলি স্টারকে বলেন, তারা বিলটিকে নদী হিসেবে জানেন। এটি বুড়ি তিস্তা নদীর একটি শাখা। এখন বিলটিকে পুকুরে রূপান্তর করা হয়েছে। বিলটি লিজের মাধ্যমে প্রভাবশালীদের দখলে চলে যাওয়ার পর থেকে তারা দেশীয় জাতের মাছের তীব্র সঙ্কটে ভুগছেন।

স্থানীয় মৎস্যজীবী নরেন দাস (৫৫) ডেইলি স্টারকে বলেন, মৎস্যজীবীদের নাম ভাঙিয়ে বিলটি লিজ নেওয়া হলেও মৎস্যজীবীরা সুবিধা বঞ্চিত। বরং পূর্বে যখন বিলটি সবার জন্য উন্মুক্ত ছিল তখন বিলটি ছিল তাদের জীবন-জীবিকার অন্যতম উৎস।

বিলটি লিজ নেওয়াদের একজন নয়া মিয়া বলেন, বিধি অনুযায়ী তারা বিলটি লিজ নিয়ে মাছ চাষ করছেন। এ বিলের সঙ্গে মৎস্যজীবীরাও আছেন বলে তিনি দাবি করেন।

কুড়িগ্রাম জেলা মৎস্য কর্মকর্তা কালীপদ রায় ডেইলি স্টারকে বলেন, ভূমি মন্ত্রণালয় বিলটি লিজ দিয়েছে। মৎস্য বিভাগ শুধু বিলটিকে মাছ চাষের উপযোগী করতে সহায়তা করে থাকে। মৎস্যজীবীরা সমিতির মাধ্যমে এই বিলে মাছ চাষ করে আসছেন। সরকারি বরাদ্দ আসায় ঠিকাদারের মাধ্যমে বিলটি খনন করা হয়েছে।

বিলটিকে পুকুরে রূপান্তর করার বিষয়ে তিনি জানান, বিষয়টি তেমন নয়। বিলের পাশে টাপুর চরের লোকজনের চলাচলের সুবিধার্থে বিলের মধ্য দিয়ে ৩টি রাস্তা তৈরি করা হয়েছে।

তিনি বলেন, 'শুধু ভূমি মন্ত্রণালয়ই পারবে বিলটির লিজ বাতিল করতে। চলতি বছরই শেষ হবে লিজের মেয়াদ।'

 

Comments