ঘণ্টায় ঘণ্টায় লোডশেডিং, ব্যবসা নেমে এসেছে অর্ধেকে

সময়সূচি মেনে রংপুরে লোডশেডিং হচ্ছে না বলে অভিযোগ করেছেন রংপুরের ব্যবসায়ীরা। এতে করে ব্যবসায় বিরূপ প্রভাব পড়ছে বলে জানিয়েছেন তারা। ছবিটি রংপুর জেলা পরিষদ সুপার মার্কেট থেকে বৃহস্পতিবার তোলা। ছবি: কংকন কর্মকার/ স্টার

'ব্যবসা করবেন কীভাবে? দিনে সমানে লোডশেডিং হচ্ছে। রাত ৮টার পর দোকান বন্ধ। সরকার বলছে একরকম, আর রংপুরে নেসকো করছে আরেক রকম। এক ঘণ্টার কথা বলা হলেও বাস্তবে দিনে ৭ থেকে ৮ বার লোডশেডিং হচ্ছে।'

রংপুর জেলা পরিষদ সুপার মার্কেটের ব্যবসায়ী অমিত হাসান জনি আক্ষেপ নিয়ে কথাগুলো বলছিলেন।

তিনি বলেন, 'ঘন ঘন লোডশেডিংয়ের কারণে একদিনের ব্যবধানে ১০ হাজার টাকা বিক্রি কমেছে। সময়সূচি মেনে লোডশেডিং হোক, এতে অন্তত স্বস্তির সাথে ব্যবসা করা যাবে।'

তিনি আরও বলেন, 'এলাকাভেদে লোডশেডিংয়ের যে সময়সূচি করা হয়েছে, রংপুরে তা মানা হচ্ছে না। প্রতি এক থেকে দেড় ঘণ্টা পরপর লোডশেডিং অব্যাহত আছে। এতে মার্কেটে আসা ক্রেতারা দোকানবিমুখ হওয়ায় বিক্রি কমেছে ব্যবসায়ীদের।'

জানা গেছে, রংপুর জেলা পরিষদ সুপার মার্কেটে সকাল ৯টার পর থেকে দোকানপাট খুলতে শুরু করেন ব্যবসায়ীরা। বেলা বাড়ার সাথে সাথে শুরু হয় ক্রেতাদের আনাগোনা। ভিড় থাকে রাত ১১-১২টা পর্যন্ত। কিন্তু এখন বিদ্যুৎ সাশ্রয়ে সরকারি নির্দেশনা মেনে রাত ৮টার মধ্যে দোকানপাট বন্ধ করতে হচ্ছে ব্যবসায়ীদের। একারণে প্রায় ১২ ঘণ্টা মার্কেটের দোকানপাট খোলা থাকলেও বারবার লোডশেডিংয়ের কারণে বিপাকে পড়েছেন ব্যবসায়ীসহ ক্রেতারাও।

ব্যবসায়ী অমিত হাসান এই প্রতিবেদককে বলেন, 'সুপার মার্কেটে ৩০০ দোকান রয়েছে। এদের মধ্যে কারো দোকানে জেনারেটর আছে কারো দোকানে রয়েছে আইপিএস/ইউপিএস। আগে দিনে দুই একবার লোডশেডিং হলে সমস্যা হতো না। 

কিন্তু দুদিন ধরে যেভাবে লোডশেডিং দেয়া হচ্ছে, তা খুব কষ্টের। এখন কাস্টমার দোকানে এসে কথাবার্তা বলতে বলতে হঠাৎ লোডশেডিং হলে কোনো কিছু না কিনেই পরে আসবেন, বলে চলে যাচ্ছেন। এটা তো আমাদের ব্যবসার ক্ষতি হচ্ছে। আগে যেখানে দিনে ২০ হাজার টাকা বিক্রি হতো, এখনো ১০ হাজারের নিচে নেমে এসেছে।'

একই অভিযোগ করেন ছালেক মার্কেটের পোশাক ব্যবসায়ী রায়হান মিয়া। বলেন, 'ক্রেতারা দোকানে আসছেন ঠিকই। কিন্তু প্রচণ্ড গরম, এর ওপর বিদ্যুৎ থাকছে না- যার কারণে ক্রেতারা এলেও বিদ্যুৎ নেই দেখে ফিরে যাচ্ছেন। বিদ্যুৎ না থাকায় ক্রেতারা দোকানের ভেতরেই আসছে না। সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত ৩/৪ বার বিদ্যুৎ গেছে। দিনে এক-দুই ঘণ্টা লোডশেডিংয়ের কথা বলা হলেও বাস্তবে উল্টো চিত্র।'

সুপার মার্কেট ও ছালেক মার্কেটের  মতো রংপুর নগরীর অন্যান্য ছোট-বড় মার্কেট, শপিংমল ও  বিপণী বিতানের ব্যবসায়ীদেরও একই অভিযোগ। ঘন ঘন লোডশেডিংয়ে শুধু ব্যবসায়ীরাই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন না, ক্ষতির মুখে উৎপাদনমুখী ছোট কলকারখানাগুলো।  নগরীর করণজাই রোডে ওয়েল্ডিং ব্যবসায়ী শাহীন মিয়া বলেন, 'আমাদের কাজ হলো বিদ্যুৎ নিয়ে, কিন্তু আজ সকাল থেকে কয়েকবার লোডশেডিং হয়েছে, যার কারণে কাজ হচ্ছে না। দিনে একঘণ্টা করে লোডশেডিংয়ের কথা থাকলেও সকাল থেকে ৩/৪ বার করে বিদ্যুৎ গেল। যার কারণে ঠিকমতো কাজ হচ্ছে না। '

ধাপ এলাকার একটি বেসরকারি ডায়াগনস্টিক সেন্টারের পরিচালক কয়েস বলেন, 'বিদ্যুৎ এক ঘণ্টা থাকছে তো দুই ঘণ্টা থাকে না। এ অবস্থায় জেনারেটর দিয়ে কার্যক্রম চালিয়ে নিতে হচ্ছে। দীর্ঘক্ষণ জেনারেটর চালানো ব্যয়বহুল। এতে আমাদের খরচ বাড়ছে। তাছাড়া ঘন ঘন লোডশেডিংয়ের কারণে রোগীসহ সবার ভোগান্তি চরমে উঠেছে।'

এ ব্যাপারে রংপুর চেম্বার অব কমার্সের প্রেসিডেন্ট মোস্তফা সোহরাব টিটু বলেন, লোডশেডিংয়ের কারণে জেনারেটর দিয়ে হিমাগার চালানো হচ্ছে। এতে করে হিমাগারের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করা যায় না। মজুদকৃত পণ্যের সমস্যা হওয়ার আশঙ্কা থেকে যায়। আলু বীজের সমস্যা আরও বেশি দেখা দিতে পারে।

নর্দান ইলেকট্রিসিটি সাপ্লাই কোম্পানি-নেসকোর পক্ষ থেকে এলাকাভিত্তিক লোডশেডিংয়ের সময়সূচি প্রকাশ করা হলেও কোথাও নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ হচ্ছে না। বলা হয়েছিল, এলাকাভিত্তিক লোডশেডিংয়ের পর ৪ ঘণ্টা পর্যন্ত বিদ্যুৎ থাকবে। তবে বাস্তবে এমন চিত্র দেখা যাচ্ছে না। কিছু কিছু এলাকায় সকাল থেকে সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত অন্তত ৪ বার লোডশেডিং হয়েছে।

নেসকো কার্যালয় সূত্র জানায়, রংপুর জেলায় প্রতিদিন বিদ্যুতের চাহিদা ১৫০ থেকে ১৫৫ মেগাওয়াট। সেখানে চাহিদার বিপরীতে বিদ্যুৎ পাওয়া যাচ্ছে প্রায় ৭৫ মেগাওয়াট। চাহিদার প্রায় অর্ধেক মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ কম। এ কারণে লোডশেডিংয়ের শিডিউল পুরোপুরি রক্ষা করা সম্ভব হচ্ছে না। তবে তারা সমন্বয় করার চেষ্টা করছেন।

চাহিদার বিপরীতে অর্ধেক মেগাওয়াট বিদ্যুৎতের কারণে এই সংকট ও লোডশেডিংয়ের শিডিউলে হেরফের হচ্ছে বলে জানিয়েছে নেসকোর রংপুর আঞ্চলিক কার্যালয়ের প্রধান প্রকৌশলী শাহাদত হোসেন। তিনি বলেন, রংপুর বিভাগের আট জেলায় প্রতিদিন বিদ্যুতের চাহিদা ৯০০ মেগাওয়াট। এর বিপরীতে বিদ্যুৎ পাওয়া যাচ্ছে ৪৫০ মেগাওয়াট। আমরা এলাকাভিত্তিক লোডশেডিংয়ের তালিকা তৈরি করেছি। তবে নানা কারণে সেটিও রক্ষা করা সম্ভব হয়ে উঠছে না।

Comments

The Daily Star  | English

Russia warns strike on Iran's Bushehr nuclear plant could cause 'Chernobyl-style catastrophe'

Iran and Israel traded further air attacks on Thursday as Trump kept the world guessing about whether the US would join Israel's bombardment of Iranian nuclear facilities.

18h ago