চট্টগ্রামে কাল থেকে বসছে কোরবানির পশুর হাট

গত কয়েক বছরের মতো এবারও বন্দর নগরীর পশুর হাটে কোরবানির পশু কেনার ওপর কর অপরিবর্তিত থাকবে। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (সিসিসি) রাজস্ব কর্মকর্তা সৈয়দ শামশুল তাবরিজ বলেন, গরুর হাটে পশু বিক্রয় মূল্যের ওপর পাঁচ শতাংশ কর দিতে হবে।
আগামীকাল শুক্রবার থেকে বন্দর নগরীতে বসছে কোরবানির পশুর হাট। এ বছর অস্থায়ী হাট বসবে ৩টি। সাগরিকা পশুর হাট থেকে আজ ছবিটি তোলা হয়েছে। ছবি: রাজীব রায়হান/ স্টার

গত কয়েক বছরের মতো এবারও বন্দর নগরীর পশুর হাটে কোরবানির পশু কেনার ওপর কর অপরিবর্তিত থাকবে। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (সিসিসি) রাজস্ব কর্মকর্তা সৈয়দ শামশুল তাবরিজ বলেন, গরুর হাটে পশু বিক্রয় মূল্যের ওপর পাঁচ শতাংশ কর দিতে হবে।

এদিকে ঈদুল আজহা উপলক্ষে চট্টগ্রামে মোট ১০টি অস্থায়ী পশুর হাট বসানোর অনুমতি চাইলেও চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন চসিককে মাত্র তিনটি অস্থায়ী হাট বসানোর অনুমতি দিয়েছে।

সূত্র জানায়, কোরবানির পশুর বাজার স্থাপনের জন্য জেলা প্রশাসন মোট ১৭টি শর্ত আরোপ করেছে, যার বেশিরভাগই স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণের সাথে সম্পর্কিত।

অস্থায়ী গবাদিপশুর হাট ছাড়াও চসিক এর তিনটি স্থায়ী গরুর হাটে কোরবানির পশু পাওয়া যাবে। অর্থাৎ চলতি বছরে চসিক এর ব্যবস্থাপনায় ছয়টি পশুর হাটে বন্দর নগরবাসী কোরবানির পশু কিনতে পারবে।

চসিক সূত্র জানায়, জেলা প্রশাসন গত দুই বছরে কোভিড-১৯ মহামারী পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে বেশি  সংখ্যক গরুর বাজার স্থাপনের অনুমতি দেয়নি। গত বছরেও মাত্র তিনটি অস্থায়ী বাজার অনুমোদন করা হয়েছিল।

এক মাস আগেও কোভিড-১৯ পরিস্থিতি ভালো থাকায় চসিক গত ১৭ মে জেলা প্রশাসনের কাছে চিঠি দিয়ে ১০টি অস্থায়ী পশুর হাট বসানোর অনুমতি চেয়েছিল। এর পর ২৬ মে জেলা প্রশাসন চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশকে (সিএমপি) চিঠি পাঠিয়ে এ বিষয়ে তাদের মতামত চায়।

সিএমপি এবং চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, কোভিড-১৯ শনাক্তের হার বৃদ্ধি পাওয়ায় শেষ পর্যন্ত শহরে তিনটি অস্থায়ী পশুর বাজার স্থাপনের অনুমতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

যোগাযোগ করা হলে, সিএমপির কমিশনার সালেহ মোহাম্মদ তানভীর বলেন, কোভিড-১৯ পজিটিভিটির হার বৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে সিএমপি তিনটি অস্থায়ী পশুর বাজার স্থাপনের অনুমতি দেওয়ার সুপারিশ করেছে।

সিসিসির প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম বলেন, জেলা প্রশাসন তিনটি অস্থায়ী পশুর হাট স্থাপনের অনুমোদন দিয়েছে।

তিনি বলেন, ঈদুল আজহার ১০ দিন আগে বাজারগুলো শুরু হবে। অর্থাৎ আগামীকাল থেকে হাটগুলো বসবে।

তিনটি অনুমোদিত অস্থায়ী পশুর বাজার হল নুর নগর হাউজিং এস্টেট মাঠ, সল্টগোলা রেলওয়ে ক্রসিং সংলগ্ন মাঠ এবং দক্ষিণ পতেঙ্গার বাটারফ্লাই পার্কের দক্ষিণে টিকে গ্রুপের খালি মাঠ। চসিক এর রাজস্ব কর্মকর্তা সৈয়দ শামশুল তাবরিজ বলেন, এছাড়া রয়েছে শহরের তিনটি স্থায়ী পশুর হাট--সাগরিকা বাজার, বিবিরহাট বাজার এবং পোস্তারপাড় ছাগলের হাট।

চট্টগ্রাম জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. দেলোয়ার হোসেন বলেন, পশুর হাটে দায়িত্ব পালনের জন্য মোট ৩০টি ভেটেরিনারি মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে।

তিনি বলেন, মেডিকেল টিম ক্রেতাদের কাছে কোরবানির পশুর স্বাস্থ্যের অবস্থা নিশ্চিত করবে।

জেলা প্রশাসনের ১৭টি শর্ত

চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের বেঁধে দেওয়া ১৭টি শর্তের মধ্যে আছে- অস্থায়ী পশুর হাট প্রধান সড়ক থেকে কমপক্ষে ১০০ গজ দূরে সুবিধাজনক স্থানে স্থাপন করতে হবে, যাতে কোনো অবস্থাতেই প্রধান সড়কে যান চলাচল ব্যাহত না হয়; পশুর বাজারের সীমানার বাইরে বা রাস্তায় কোনো পশু রাখা বা খুঁটি রাখা যাবে না; কোভিড-১৯ সংক্রমণ ও বিস্তার রোধে পশুর হাটে স্বাস্থ্যবিধি পালন করতে হবে, প্রবেশ ও প্রস্থানে হ্যান্ড স্যানিটাইজার, সাবান ও পানি সরবরাহ করতে হবে।

এছাড়া কোরবানির পশুর অস্থায়ী হাটে ক্রেতা-বিক্রেতাদের একমুখী চলাচলের ব্যবস্থা থাকতে হবে, অর্থাৎ পৃথক প্রবেশ ও নির্গমন। পাশাপাশি সবাই স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলে তা নিশ্চিত করা। বাজারে যাতে কোনো জটিলতা না হয় সেদিকে বিশেষ খেয়াল রাখতে হবে; বৃদ্ধ ও শিশুদের গরুর হাটে প্রবেশে নিরুৎসাহিত করতে হবে; অনলাইনে পশু ক্রয়-বিক্রয়কে উৎসাহিত করা; গরুর হাটে ইজারাদারদের অবশ্যই তাদের নিজস্ব পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা সহ স্বেচ্ছাসেবক নিয়োগ করতে হবে; সব বাজারে পশুর স্বাস্থ্য যাচাই করার জন্য একজন পশুচিকিৎসক সার্জনের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে হবে; বাজার এলাকা নিজ দায়িত্বে পরিষ্কার করতে হবে; গরুর হাটের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে ইজারাদারদের সিসিটিভি ক্যামেরা বসাতে হবে।

রাস্তায় পশু পরিবহনের সময়, ইজারা গ্রহীতা বা তার মনোনীত প্রতিনিধিকে কোন প্রকার পশু পরিবহনের যানবাহনের রুট পরিবর্তন করতে বা পশুটিকে তার নিজস্ব হাটে নিয়ে যেতে বাধ্য করা হবে না।

Comments