আমরা কিন্তু নির্বাচনের সময় কঠোর হবো: সিইসি

আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কমিশন কঠোর হবে বলে জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল।
cec_habibullah.jpg
ছবি: সংগৃহীত

আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কমিশন কঠোর হবে বলে জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল।

আজ রোববার দুপুরে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের মিলনায়তনে তিনি এ কথা বলেন। আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্যভাবে অনুষ্ঠানের জন্য নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর পরামর্শ নিতে আজ থেকে আনুষ্ঠানিক সংলাপ শুরু করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।

এদিন ইসি জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলন এমডিএম–এর সঙ্গে সংলাপে বসে।

নির্বাচনে অংশ নিতে জনৈতিক দলগুলোকে আলোচনায় বসার আহ্বান জানিয়ে সিইসি বলেন, আপনারা বারবার বসেন। রাজনৈতিক যে দায়িত্বশীলতা, কনস্ট্রাকটিভ রেসপন্সিবিলিটি অব দ্য পলিটিশিয়ান দ্যাট ইজ ভেরি হাই। আমার না, এটা আপনাদের ব্যাপার। রিসেন্টলি একটি সতর্কবার্তা; পলিটিক্যাল ম্যানেজমেন্ট যদি ফেইল করে, তারা যদি নিষ্ক্রিয় হয়ে থাকে, খালি ইকোনমিক প্ল্যানিংয়ে ভুল ছিল এ জন্য দেশটির এ অবস্থা হয়েছে। তা না, আমি এটি বিশ্বাস করি না। পলিটিক্যাল ম্যানেজমেন্ট ডিফেকটিভ ছিল সে জন্য ইকোনমিক ম্যানেজমেন্টকে ডিসপিউট করতে পারেনি। যদি ইকোনমিক ম্যানেজমেন্ট ডিফেকটিভ হয়, পলিটিক্যাল অথরিটি বসে থাকবে কেন! আমি সে জন্য বলতে চাচ্ছি, আমরা সবাই এবং বিশেষ করে রাজনীতিবিদ যারা রাষ্ট্রের ম্যানেজমেন্টের দায়িত্ব নেবেন তাদের কিন্তু অনেক বেশি দায়িত্বশীল হতে হবে।

তিনি বলেন, দীর্ঘ দিনের একটি ঐতিহ্য গড়ে উঠেছে। সেই ঐতিহ্য থেকে আমরা সরে যেতে চাই। কুমিল্লায় এবার আমরা সিসিটিভি ক্যামেরা দিয়েছি। অসংখ্য মিডিয়াম্যানকে আমরা ভেতরে ঢুকিয়ে দিয়েছি, শুধু ওই কক্ষে থাকবে না। আমরা স্বচ্ছতা চেয়েছি আর সেই স্বচ্ছতার কারণে...আমাদের মধ্যে একটা জিনিস আছে যে, আমি নিজেও কিন্তু খুব গুজব ভালোবাসি। ছোটবেলা থেকেই গুজব শুনতে ভালো লাগতো, সত্য কথা শুনতে কখনোই ভালো লাগতো না—এখন দেখলাম, একটা টেলিফোন কলেই নির্বাচন পাল্টে যাচ্ছে কুমিল্লার। আমার কিন্তু হাতে একটা ক্ষমতা এসে গেছে, ইনশাল্লাহ আগামীতে ৩০০টা কল দিয়ে ৩০০টা পাল্টে দেবো আমি। এত যদি সহজ হয় তাহলে ৩০০টা ইলেকশনের যে ফলাফল আমি ৩০০টাই আগামীতে পাল্টে দেবো একটা টেলিফোন কল করে।

টেলিফোনে ইলেকশনের ফলাফল মুহূর্তে পাল্টে দেওয়া; এটার যে পারমুটেশন-কম্বিনেশন, ৭-৮ জনের কাছে রেজাল্টগুলো আছে। ৪টা সেন্টার নিয়ে গণ্ডগোল ছিল। গণ্ডগোল না, ওই রেজাল্টগুলো এসে পৌঁছেনি। সব রেজাল্ট একসঙ্গে আসে না। দুপক্ষে গণ্ডগোল শুরু হয়ে গেল, আমি পুলিশ পাঠাতে বললাম। যখন অবস্থা ঠান্ডা হয়ে গেল তখন উনি ফলাফল ঘোষণা করলেন। এটা অ্যাবসোলুটলি অ্যাবসার্ড অ্যান্ড ইমপসিবল যে একটা টেলিফোন কল দিয়ে মুহূর্তে ফল পাল্টে দেওয়া যায়। বলতে পারেন সারা দিন গণ্ডগোল হয়েছে কিন্তু একটা টেলিফোন কল করে নির্বাচন পাল্টে দেওয়া যায় না, বলেন সিইসি।

হাবিবুল আউয়াল আরও বলেন, আমরা এটা স্পষ্টভাবে উচ্চারণ করতে চাই, আমরা কিন্তু নির্বাচনের সময় কঠোর হবো। সে যে-ই হোক, আমরা কঠোর হবো। সংবিধানে এবং আইনে যে দায়-দায়িত্ব আমাদের ওপর আরোপ করা হয়েছে, সেই দায়িত্ব আমরা সর্বোতভাবে পালন করার চেষ্টা করব। আমাদের রাজনৈতিক ঐতিহ্যটা অপসংস্কৃতিতে পরিণত হয়েছে। রাজনীতিবিদদের চেষ্টা করতে হবে সহিংসতার রাজনীতি নয়, সহিংসতার নির্বাচন নয়, সৌহার্দমূলক-সম্প্রীতিমূলক এবং আনন্দমুখর পরিবেশে নির্বাচন অনুষ্ঠান করা। এটা সম্ভব এবং পৃথিবীর বিভিন্ন দিকে আপনি তাকিয়ে দেখেন, নির্বাচন হচ্ছে অত্যন্ত শান্তিপূর্ণভাবে। একটা পুলিশ ভ্যান বা পুলিশ ওখান দিয়ে হেঁটেও যায় না কিন্তু নির্বাচন হয়ে যাচ্ছে। আমাদেরকেও কমান্ড নয়, ওই সভ্যতার দিকে, শুভ সংস্কৃতির দিকে আমাদের অগ্রসর হতে হবে।

ইভিএম প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ইভিএম নিয়ে কিছুটা সংশয় অনেকেরই আছে। আমরা কিন্তু ইভিএম নিয়ে অত্যন্ত গভীরভাবে চিন্তাভাবনা করেছি। নিজেরা ৫-৭টা ওয়ার্কশপ করেছি।

সিইসি বলেন, আমি সায়েনটিস্ট না, যারা সায়েনটিস্ট তারা কিন্তু আমাদের সার্টিফাই করবেন। আর আমার অফিসে যারা সায়েনটিস্ট ওরা কিন্তু দায়-দায়িত্ব নিয়ে বা ঝুঁকি নিয়ে আমাদের সার্টিফাই করতে হবে যে, আমরা মেশিনগুলো বুঝে নিয়েছি, আমরা পরীক্ষা করে দেখেছি এখানে ম্যানিপুলেশনের কোনো সুযোগ নেই। একটা মানুষ চুরি করতে পারে, তাই বলে সে চুরি করবেই তা কিন্তু সব সময় সত্য না। এই জিনিসটা আমাদের মাথায় রাখতে হবে। যদিও ইভিএমের বিষয়ে আমরা এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নেইনি।

এ বিষয়ে আরও আলোচনা হবে বলে জানান তিনি।

রাজনৈতিক সম্প্রীতি-ঐক্যমত্য খুবই দরকার উল্লেখ করে হাবিবুল আউয়াল বলেন, আমরা কালকেও দেখেছি একটি বড় ঐক্যমত্য এক দিকে, আরেক দিকে সরকার। আমরা খুব বেদনাহত হই যখন বক্তব্যগুলো সাংঘর্ষিক হয়। আমরা চাচ্ছি, বক্তব্যগুলো মিউচুয়ালি, অ্যাকোমোডেটলি হোক এবং সমঝোতা দিয়ে দেশ এগিয়ে যাক। যেন নির্বাচনটা শান্তিপূর্ণ হয়।

অনেকে হয়তো ভয় পাচ্ছেন, আমাকে হয়তো পদ ছেড়ে দিতে হবে। কারণ নতুন করে সরকার হলে তার একটা শর্ত থাকবে এই কমিশন...সবাইকে আশ্বস্ত করবেন, এখানে সামান্যতম ভয়-ভীতি নেই। বলার আগেই পদ ছেড়ে দিয়ে চলে যাব, যদি এটা শর্ত হয় নতুন নির্বাচন কমিশন হবে, যোগ্যতর লোকদেরকে আনা হবে। আমাকে আহ্বান করতে হবে না। আমি চাই সম্প্রীতি, রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সমঝোতা, ঐক্যমত্য এবং একটা সুন্দর নির্বাচন। আমাদেরকে দিয়ে না, যে কাউকে দিয়ে। যে কাউকে দিয়ে করানোর জন্য যদি আমাকে এই পদ থেকে সরে যেতে হয়, সে জন্য আমাকে রিকোয়েস্ট করতে হবে না। রিকোয়েস্ট করার আগেই চলে যেতে পারব। কাজেই এই ভয় যেন বিএনপি বা কারোর মধ্যে না থাকে। এই পদে কিন্তু আমরা আমোদ-ফূর্তি করতে আসিনি। কঠিন একটা দয়িত্ব নিয়ে কঠোর পরিশ্রম করতে এসেছি, বলেন সিইসি।

Comments