হিমাগারে আলু সংরক্ষণে ন্যায্য ভাড়ার দাবিতে ডিসি অফিস ঘেরাও

ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসকের কার্যালয় ঘেরাও করেন আলু চাষিরা। ছবি: কামরুল ইসলাম রুবাইয়াত

হিমাগারে আলু সংরক্ষণের অতিরিক্ত ভাড়ার প্রতিবাদ ও ন্যায্য ভাড়া নির্ধারণের দাবিতে ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসকের কার্যালয় ঘেরাও করা হয়েছে।

আজ সোমবার দুপুরে আলু চাষি ও ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির ব্যানারে এই ঘেরাও কর্মসূচিতে জেলার দুই শতাধিক কৃষক ও আলু ব্যবসায়ী অংশ নেন।

তারা অভিযোগ করেন, এ বছর জেলার হিমাগার মালিকরা আলু সংরক্ষণের জন্য অস্বাভাবিক ভাড়া নির্ধারণ করেছেন। যা দেশের অন্যান্য অঞ্চলের হিমাগারের নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে বেশি। আলু চাষি ও ব্যবসায়ীরা ভাড়া পুনঃনির্ধারণে ব্যবস্থা নিতে জেলা প্রশাসকসহ  সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে বারবার দাবি জানালেও কোনো অগ্রগতি হয়নি।

ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার নারগুন গ্রামের চাষি খালেকুজ্জামান খোকন বলেন, 'গত মৌসুমে আমি পনের একর জমিতে আলু চাষ করেন এবং স্থানীয় একটি হিমাগারে ১ হাজার ৩০০ বস্তা (প্রতি বস্তায় ৫০ কেজি) আলু সংরক্ষণ করেছন। কিন্তু, কৃষি উপকরণের দাম বৃদ্ধির পাওয়ায় গত মৌসুমে আগের বছরের তুলনায় উৎপাদন খরচ বেশি হয়েছে।'

তিনি আরও বলেন, 'গত বছর হিমাগারে বস্তা প্রতি (প্রতি বস্তায় ৭০ কেজি) আলু সংরক্ষণের জন্য ভাড়া নির্ধারণ করা হয় ২৫০ টাকা। কিন্তু, এ বছর ৫০ কেজি ওজনের আলুর বস্তার জন্য নির্ধারণ করা হয়েছে ২৬০ টাকা। তাই এ বছর আমাদের কেজি প্রতি ১.৬৩ টাকা অতিরিক্ত ভাড়া দিতে হচ্ছে।'

জানা গেছে, মানিকগঞ্জের হিমাগারে প্রতি ৭০ কেজি আলুর বস্তার জন্য ১৭৫ টাকা এবং মুন্সীগঞ্জে একই ওজনের এক বস্তার জন্য ২০০ থেকে ২২০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। কিন্তু, ঠাকুরগাঁও হিমাগার মালিকরা সংরক্ষণের জন্য প্রতি ৫০ কেজি আলুর বস্তার জন্য ২৬০ টাকা নিচ্ছেন। ফলে, চাষি ও ব্যবসায়ীরা লোকসানের আশঙ্কা করছেন।

সদর উপজেলার আলু চাষি মো. জামান বলেন, 'প্রতি কেজি আলু উৎপাদন ও সংরক্ষণ করতে একজন আলু চাষির প্রায় ১৮ টাকা (ভাড়া প্রতি কেজি ৫.২০ টাকা ধরে) খরচ হয়েছে। অন্যদিকে একজন ক্ষুদ্র ও মাঝারি আলু ব্যবসায়ীর কেজি প্রতি খরচ পড়েছে ২১/২২ টাকা।'

'উৎপাদিত পণ্যের মূলধনের সুদ (যারা ঋণ নিয়েছেন) হিসেব করলে খরচ আরও বাড়বে। বর্তমানে প্রতি কেজি আলু হিমাগারের গেটে ১৮/১৯ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, ভাড়া না কমালে চাষি ও ব্যবসায়ীরা নিশ্চিতভাবেই ক্ষতির সম্মুখীন হবে', যোগ করেন তিনি।

ঠাকুরগাঁও আলু চাষি ও ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতি সাধারণ সম্পাদক হাসিবুল ইসলাম বলেন, 'সংরক্ষণ ক্ষমতার তুলনায় উৎপাদন অনেক বেশি হওয়ায় প্রতি বছর আলু সংরক্ষণের প্রশ্নে চাষি ও ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন সমস্যায় পড়েন। এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণে একটি নীতিমালা জরুরি।'

দেশের অন্যান্য অঞ্চলের হিমাগার মালিকদের নির্ধারিত ভাড়ার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে আলুর ভাড়া পুনর্নির্ধারণে ব্যবস্থা নিতে প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিদের অবিলম্বে হস্তক্ষেপের দাবি জানান তিনি।

তিনি বলেন, 'অবিলম্বে এই সমস্যা সমাধানে ব্যবস্থা না নেওয়া হলে চাষি-ব্যবসায়ীদের সমন্বয়ে কঠোর আন্দোলনে যাব আমরা।'

শাহী হিমাগারের মালিক মো. দেলোয়ার হোসেন বলেন, 'বাংলাদেশ কোল্ড স্টোরেজ ওনার্স এ্যাসোসিয়েশনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে।'

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আবু হোসেন বলেন, 'এবার জেলায় ২৭ হাজার ৬৭৭ হেক্টর জমিতে আলু আবাদ করে ৭ লাখ ৪০ হাজার ৫৮৪ টন আলু উৎপাদিত হয়েছে। কিন্তু, ঠাকুরগাঁওয়ে ১৬টি হিমাগারে ধারণক্ষমতা ১ লাখ ৩৬ হাজার ৫৫০ টন।'

জানতে চাইলে জেলা প্রশাসক মো. মাহবুবুর রহমান বলেন, 'শিগগির উভয়পক্ষের সঙ্গে সময়ে আলোচনা করে এ সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করা হবে।'

Comments

The Daily Star  | English

Rising remittance provides a breather amid forex crisis

Remittance inflow has continued to rise for the past few months, providing a breather for a country facing multiple challenges, including external payment pressures amid dwindling foreign exchange reserves.

17h ago