লোডশেডিংয়ের বিরক্তিকর সময় মধুর করার উপায়

ছবি: স্টার

দেশে চলছে লোডশেডিং। বিদ্যুৎ বিভ্রাট নিয়ে বিরক্ত কমবেশি সবাই। তবে লোডশেডিং কয়েক বছর আগে এত বিরক্তির জন্ম দিতো না। বরং লোডশেডিংয়ে তৈরি হতো নতুন নতুন গল্প আর সম্পর্কের। ছোট ছোট বাচ্চারা নেমে যেত উঠানে খেলা করতে। বৃদ্ধরা গল্প করতো পুরোনো দিনের। পাশের বাসার প্রতিবেশীরা গোল হয়ে বলতো নানা রঙের দিনগুলোর কথা। কিন্তু প্রযুক্তির যুগে এসব মানবীয় যোগাযোগ আমাদের কাছে রূপকথার গল্পের মত শোনায়।

লোডশেডিংয়ের সময় বিরক্ত না হয়ে যেভাবে উপভোগ করতে পারেন…

ঘরে থাকুক প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি

লোডশেডিংয়ের সময় অন্ধকার দূর করতে হাতের কাছে রাখুন মোমবাতি, হাতপাখা, কয়েল। অনেকের কয়েলের গন্ধ সহ্য হয় না। তাছাড়া কয়েল পরিবেশ ও স্বাস্থ্যের জন্যও ক্ষতিকর। তারা ঘরে অ্যারোসল ব্যবহার করতে পারেন। অ্যারোসলেও স্বাস্থ্য ঝুঁকি থাকে। তবে অন্ধকার হলে মশা ও পোকামাকড় ভিড় করে। তাই মশার কামড় থেকে বাঁচতে কয়েল বা অ্যারোসল ঘরে থাকা ভালো। অনেকের বাড়িতে আইপিএস, জেনারেটরের ব্যবস্থা থাকে। তাদের জন্য লোডশেডিং ততোটা কঠিন না হলেও বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে এসব অনুষঙ্গ রাখতে পারেন। লোডশেডিং হলে দরজা জানালা খুলে দিন। এতে করে ঘরের গুমোট ভাব কিছুটা কমবে। বাতাসও ঢুকতে পারবে।

চলে যান খোলা হাওয়ায়

লোডশেডিং হলে খোলামেলা জায়গায় বসতে পারেন পরিবারের সবাইকে নিয়ে। কংক্রিটের শহরে খোলা জায়গার বড়ই অভাব। তারা বাসার ছাদে যেতে পারেন। আর যাদের বাড়িতে উঠোন বা খোলা বারান্দা আছে তারা সেখানে বসতে পারেন। পরিবারের সবার সঙ্গে সময় কাটানোর এই সুযোগ ব্যবহার করুন আনন্দের সঙ্গে।

গল্পের আসর বসুক অন্ধকারে

ফেসবুক, ইনস্টাগ্রামের কল্যাণে আমরা নিজেদের গল্প বলতেই ভুলে গেছি। একই পরিবারে বাস করা সত্ত্বেও আমরা হয়ত জানিনা মায়ের মন খারাপ কিনা, বাবার শরীর ভালো কী মন্দ, ছোট ভাই-বোনেরা কোনো সমস্যায় আছে কিনা। আমরা নিজেরা হাতের ছোট্ট জাদুর বক্সটা নিয়ে এত বেশি ব্যস্ত যে কারো দিকে কারো নজর দেওয়ারও সময় নেই। লোডশেডিং হলে পরিবারের সব সদস্য গোল হয়ে বসে একে অন্যের মনের ভাব প্রকাশ করতে পারি। মজার কোনো ঘটনা বা বেদনাবিধুর স্মৃতি রোমন্থন করে মন হালকা করতে পারি। এতে করে পারিবারিক বন্ধন দৃঢ় হয়, পরিবারের সবাইকে চেনা যায়, বুঝতে পারা যায়।

সময় কাটুক গানে গানে

লোডশেডিংয়ে গান করে সময় কাটানো খুবই উপভোগ্য একটি ব্যাপার। পরিবার বা বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে নিয়ে খেলতে পারেন গানের কলি। যারা কবিতা পড়তে ভালবাসেন তারা আবৃত্তি করে প্রিয় কবিতা কাছের মানুষদের শোনাতে পারেন।

চলতে পারে সাহিত্যচর্চা

যারা বই পড়তে ভালবাসেন তারা লোডশেডিংয়ের সময় গল্প, উপন্যাস, ম্যাগাজিন বা কবিতার বই পড়তে পারেন। মোমের আলোয় নিভু নিভু অন্ধকারে বই খুলে আপনি পৌঁছাতে পারেন রবীন্দ্র যুগ, হুমায়ূন আহমেদের রহস্যময় হিমু কিংবা জীবনানন্দের ধানসিঁড়ি নদীর তীরে।

হারিয়ে যাওয়া বন্ধুর খোঁজে

লোডশেডিংয়ের অবসরে হারিয়ে যাওয়া পুরোনো বন্ধুকে ফোনকল বা মেসেজ দিতে পারেন। প্রতিদিনের ব্যস্ততায় যেসব বন্ধুরা কালের গর্ভে হারিয়ে যেতে বসেছে, অভিমান করে দূরে সরে গেছে তাদেরকে ফিরে পাওয়ার একটি প্রচেষ্টা নিতে পারেন আপনাকে থামিয়ে দেওয়া এই লোডশেডিংয়ে। দেখবেন, আপনার বন্ধুটিও এই ফোনের অপেক্ষায়ই ছিল।

সেরে ফেলুন টুকিটাকি হাতের কাজ

টুকিটাকি হাতের কাজ যেমন জামায় বোতাম লাগানো, আলমারিতে থাকা এলোমেলো কাপড়চোপড় গুছিয়ে ফেলা, পড়ার টেবিল, বইয়ের তাকে ধুলো পড়া বইগুলোর যত্ন নেওয়া এসবই লোডশেডিংয়ে করা যেতে পারে। এতে শারীরিক পরিশ্রমও খুব বেশি হবে না, সময়ও কেটে যাবে কাজের ছলে।

ভুলে যাওয়া ইনডোর গেমস ফেরত আসুক

এককালে সবার সঙ্গে কতই না খেলা করা হতো। লুডু, ক্যারাম, চোর পুলিশ ডাকাত বাবু, দাবা। এসব গেমসই আজকাল ফোনে খেলা যায় বলে সবার সঙ্গে মুখোমুখি বসে খেলতে পারা যেন আমরা ভুলেই গেছি। এবার লোডশেডিংয়ে পুরনো দিন ফেরত আসুক। পরিবার বা বন্ধুবান্ধব মিলে মেতে উঠুন ইনডোর গেমসে।

খোঁজ নিন পাড়া-প্রতিবেশীদের

লোডশেডিং হলে ঘরে বসে না থেকে ঘুরে আসুন পাশের বাসা থেকে। আশপাশের মানুষ কেমন আছে তা খোঁজখবর করুন। প্রতিদিনকার প্রচণ্ড ব্যস্ত জীবনে আমরা হয়ত জানিই না আমাদের পাশের বাসায় কে থাকেন বা তারা কেমন আছেন। সামাজিক জীব হয়ে ওঠার মোক্ষম সুযোগ হয়ে উঠুক এই লোডশেডিং।

Comments

The Daily Star  | English

NBR officials call off shutdown after government warning

Officials of the National Board of Revenue have decided to withdraw their nationwide shutdown in view of the broader interests of trade and commerce.

1h ago