নিজেকে পিটার দ্য গ্রেটের সঙ্গে তুলনা করলেন পুতিন
রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন দেশটির সাবেক শাসক ও জার পিটার দ্য গ্রেটের প্রতি সম্মান জানিয়েছেন।
পিটার দ্য গ্রেটের ৩৫০ তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত এক প্রদর্শনীতে বক্তব্য রাখতে গিয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার তিনি নিজেকে পিটারের সঙ্গে তুলনা করেন।
গতকাল বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা গেছে।
জারের উদ্দেশ্যে নিবেদিত প্রদর্শনীতে পুতিন বলেন, 'পিটার দ্য গ্রেট প্রায় ২১ বছর ধরে উত্তরাঞ্চলের মহান যুদ্ধে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। কেউ কেউ ভাবতে পারেন তিনি সুইডেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছিলেন এবং পরবর্তীতে তিনি তাদের (সুইডেনের) কাছ থেকে কিছু ছিনিয়ে নেন। তবে বাস্তবে তিনি কিছু নেননি, বরং তিনি কিছু ফিরিয়ে এনেছেন (যেটি রাশিয়ার ছিল)।'
ইউক্রেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধের ১০৬তম দিনে তিনি পিটার দ্য গ্রেটের অভিযানের সঙ্গে তুলনা করে আরও বলেন, 'অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, আমাদের ওপর ফিরিয়ে আনার (যেটি রাশিয়ার) এবং শক্তিশালী করার (দেশকে) দায়িত্ব অর্পিত হয়েছে। এবং আমরা যদি ধরে নেই, এই মৌলিক মূল্যবোধ আমাদের অস্তিত্বকে সংজ্ঞায়িত করে, তাহলে আমরা আগামীতে যেসব সমস্যার মুখোমুখি হব, সেগুলো নিশ্চিতভাবেই সমাধান করতে পারবো।'
এক অর্থে পুতিন বলতে চেয়েছেন, পিটার দ্য গ্রেট যেভাবে রাশিয়ার ভূখণ্ড রাশিয়ার কাছে ফিরিয়ে এনেছেন, একইভাবে তিনিও রাশিয়ার ভূখণ্ড রাশিয়ার কাছেই ফিরিয়ে আনার চেষ্টা চালাচ্ছেন।
২০১৪ সালে ইউক্রেনের কাছ থেকে ক্রিমিয়ার দখল নেয় রাশিয়া। এ মুহূর্তে দনবাস অঞ্চলের দনেৎস্ক ও লুহানস্কের দখল নিয়ে ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলের ওপর আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টা চালাচ্ছে রুশ বাহিনী। উল্লেখ্য,
পুতিনের বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কির জ্যেষ্ঠ উপদেষ্টা মিখাইলো পোদোলিয়াক জানান, এটি অন্য দেশের ভূখণ্ড চুরি করার অপরাধকে বৈধ করার প্রচেষ্টা।
একটি অনলাইন পোস্টে পোদোলিয়াক বলেন, 'পশ্চিমের উচিৎ একটি পরিষ্কার সীমারেখা টানা, যাতে ক্রেমলিন বুঝতে পারে তাদের প্রতিটি রক্তাক্ত উদ্যোগের জন্য কত বড় মূল্য চুকাতে হবে। আমরা জোর করে দখল করা ভূখণ্ডগুলো সহিংসতার সঙ্গে মুক্ত করে আনবো।'
পুতিন বারবার ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলাকে যুক্তি দিয়ে ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করেছেন। তিনি প্রাচীন ইতিহাসের বরাত দিয়ে জানাতে চেয়েছেন, ইউক্রেনের কোনো প্রকৃত জাতীয় পরিচয় বা রাষ্ট্র হিসেবে তাদের কোনো ঐতিহ্যও নেই।
ইতিহাস থেকে জানা যায়, রুশ রক্ষণশীল ও উদারপন্থী, উভয়ের কাছেই সমভাবে জনপ্রিয় রুশ একনায়ক ও জার পিটার দ্য গ্রেট সুইডেনের কাছ থেকে দখল করে নেওয়া ভূখণ্ডের ওপর রাশিয়ার নতুন রাজধানী স্থাপন করেন এবং এর নাম দেন সেইন্ট পিটার্সবার্গ। এ শহরেই বহু বছর পর পুতিন জন্ম নেন।
সাম্প্রতিক সময়ে পুতিন বেশ কয়েকবার ইতিহাসের উদাহরণ টেনে এনেছেন।
২০২০ সালের এপ্রিলে রাশিয়া প্রথমবারের মত যখন করোনাভাইরাস মহামারির মোকাবিলায় লকডাউনের প্রচলন করে, তখন তিনি সে ঘটনাকে নবম শতাব্দীতে মধ্যযুগীয় রাশিয়ায় যাযাবর তুর্কীদের হামলার সঙ্গে তুলনা করেন।
২০২১ সালের জুলাইতে ক্রেমলিনের পক্ষ থেকে পুতিনের একটি লেখা প্রকাশ করা হয়, যেখানে তিনি যুক্তি দেন, রাশিয়া ও ইউক্রেন প্রকৃতপক্ষে একই জাতি এবং কৃত্রিমভাবে এই দুটি দেশকে আলাদা করা হয়েছে।
Comments