বোরোর ভরা মৌসুমেও চালের দাম বাড়তি

ধান কাটার মৌসুম চলছে। ধানের সরবরাহেও কোনো কমতি নেই। তারপরও গত ২ সপ্তাহে চালের দাম কেজিপ্রতি ৮ থেকে ১০ টাকা বেড়েছে।
ছবি: সংগৃহীত

ধান কাটার মৌসুম চলছে। ধানের সরবরাহেও কোনো কমতি নেই। তারপরও গত ২ সপ্তাহে চালের দাম কেজিপ্রতি ৮ থেকে ১০ টাকা বেড়েছে।

গতকাল বিভিন্ন কাঁচাবাজারে প্রতি কেজি মোটা চালের দাম বেড়ে ৫২ থেকে ৫৪ টাকা এবং চিকন চালের দাম ৬৫ থেকে ৮০ টাকা হয়েছে।

ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, গত ৭ দিনে মোটা ও চিকন চালের দাম যথাক্রমে ৫ দশমিক ৩৮ শতাংশ ও ৩ দশমিক ১৭ শতাংশ বেড়েছে।

ব্যবসায়ীরা জানান, চালকল মালিকরা বাজারে যথেষ্ট পরিমাণ চাল সরবরাহ করছে না। সরবরাহ পরিস্থিতির উন্নতি না ঘটলে দাম আরও বাড়তে পারে বলে তারা শঙ্কা প্রকাশ করেন।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের (ডিএই) মহাপরিচালক বেনজির আলমের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে তিনি জানান, বাজারে চালের কোনো ঘাটতি নেই। কারণ চাষিরা এবার ৪৯ লাখ ৬৩ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো ধানের চাষ করেছেন, যা গত বছরের চেয়ে ৯০ হাজার হেক্টর বেশি।

তিনি জানান, বন্যায় ১৮ হাজার ৫০০ হেক্টর জমির ধান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

'এটুকু বাদ দিলে সার্বিকভাবে উৎপাদন ভালো হয়েছে', যোগ করেন তিনি।

মহাপরিচালক আরও জানান, এবারের বোরো মৌসুমে ২ কোটি ১১ লাখ টন ধান কাটার প্রত্যাশা ছিল এবং লক্ষ্যমাত্রার প্রায় ৯৪ শতাংশ ইতোমধ্যে পূরণ হয়েছে।

এ ছাড়াও, দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের চাষিরা জুনের শেষ নাগাদ জমি থেকে ধান কাটা অব্যাহত রাখবেন।

তিনি কৃত্রিম সংকট তৈরির জন্য ব্যবসায়ী ও চালকল মালিকদের দায়ী করেন।

তবে বিভিন্ন জেলার একাধিক চালকল মালিক জানান, তারা চাষিদের কাছ থেকে যে ধান কিনছেন, সেগুলো পরিপক্ব নয় এবং এগুলোকে যথেষ্ট পরিমাণে না শুকিয়ে তৎক্ষণাৎ চাল উৎপাদন সম্ভব নয়।

চালের দাম নিয়ন্ত্রণে দেশব্যাপী সরকারি অভিযানের প্রথম দিনটি মোটামুটি ব্যর্থ হয়েছে বলা যায়।

গতকাল বিকেলে কর্মকর্তারা পুরান ঢাকার বাবুবাজার এলাকায় অবস্থিত পাইকারি চালের বাজারে অভিযান চালান। তবে সে সময় বেশিরভাগ চালের দোকানই বন্ধ ছিল।

আজ বুধবার খাদ্য মন্ত্রণালয় ও খাদ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের ৮টি দল রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন অংশে অভিযান চালাবে।

মন্ত্রিপরিষদ বৈঠকে চালের অননুমোদিত ব্যবসা ও মজুতের সঙ্গে জড়িত প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়ার একদিন পর এই অভিযান হয়।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম রোববার জানান, কিছু বড় প্রতিষ্ঠান আইনি অনুমোদন ছাড়াই চাল মজুত করছে।

রাজধানীর এক কাঁচাবাজারে নাখালপাড়ার বাসিন্দা সিদ্দিকুর রহমান বলেন, 'আমি আগে মিনিকেট চাল ৬২ টাকা কেজি দরে কিনতাম। অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় আমি ৫২ টাকা কেজি দরের বিরি-২৯ চাল কেনা শুরু করি। এখন সেই চালের দামও ৫৭ টাকা কেজি।'

'আমি ব্যয় কমানোর চেষ্টা করলেও তা পারছি না', যোগ করেন তিনি।

একে-অপরকে দোষারোপ

দেশের অন্যতম বৃহৎ চালের বাজার দিনাজপুরের এনএ মার্কেটে গতকাল দ্য ডেইলি স্টারের সংবাদদাতা সরেজমিনে গিয়ে পান, মিনিকেট, বিআরআরআই-২৮, পাইজাম, স্বর্ণা ও বাসমতী চালের ৫০ কেজির বস্তা যথাক্রমে ৩ হাজার ২০০ থেকে ৩ হাজার ৩০০, ২ হাজার ৭৫০ থেকে ২ হাজার ৮০০, ২ হাজার ৬০০, ২ হাজার ৩০০ ও ৩ হাজার ৮০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

ব্যবসায়ীরা জানান, গত ২ সপ্তাহে প্রতিটি ৫০ কেজি ওজনের বস্তার দাম ৪০০ থেকে ৫০০ টাকার মতো বেড়েছে।

বাজারের এক দোকানি গোলাম রাব্বানী বলেন, 'প্রায় প্রতিদিনই দামের পরিবর্তন হচ্ছে।'

এই প্রবণতার জন্য তিনি চালকল মালিকদের দায়ী করেন।

দিনাজপুর চালকল মালিক সমিতির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আজিজুল ইকবাল চৌধুরী দাবি করেন, চালকল মালিকরা বেশি দামে ধান কিনছেন।

শনিবার কুষ্টিয়ায় চালের দাম কেজিপ্রতি ৪ টাকা করে বেড়েছে।

আজিজুল ইকবালের সঙ্গে একমত পোষণ করে পরিস্থিতির জন্য ধানের দামকে দায়ী করেন ফ্রেশ অ্যাগ্রো মিলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক উমর ফারুকও।

তবে চাষিরা এসব দাবির সঙ্গে একমত নন।

কুষ্টিয়ার খাজানগরের ধান চাষি জাকারিয়া হোসেন জানান, ধানের দাম বাড়েনি।

রাজশাহীর চাল ব্যবসায়ীরা সরবরাহ সংকটকে দায়ী করেন। বৃষ্টি, শিলাবৃষ্টি ও পোকামাকড়ের উপদ্রবে ধানের ফলন উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কমে গেছে বলেও তারা দাবি করেন।

নওগাঁয় ধান ও চালের আড়তদার সমিতির সভাপতি নিরোদ বরণ সাহা জানান, রাজশাহী বিভাগে প্রতি একরে প্রত্যাশার চেয়ে ১ দশমিক ১২ টন কম ফলন হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, 'আশা করা যায় এ সপ্তাহে চালের দাম কমে যাবে। কারণ চালকল মালিকরা চাল উৎপাদন ও সরবরাহ করতে পারবেন।'

রাজশাহী, দিনাজপুর ও কুষ্টিয়া প্রতিনিধি এ প্রতিবেদন তৈরিতে সহায়তা করেছেন।

অনুবাদ করেছেন মোহাম্মদ ইশতিয়াক খান

Comments