দক্ষিণ আফ্রিকায় নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি, বিপাকে প্রবাসীরা

বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো দক্ষিণ আফ্রিকার বাজারেও খাদ্যদ্রব্য ও নিত্যপণ্যের দাম ১০০ শতাংশ থেকে ২০০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে। জ্বালানির দামও হয়েছে দ্বিগুণ।
দক্ষিণ আফ্রিার জোহানসবার্গে বাংলাদেশি মালিকানাধীন একটি দোকান। ছবি - লেখক

বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো দক্ষিণ আফ্রিকার বাজারেও খাদ্যদ্রব্য ও নিত্যপণ্যের দাম ১০০ শতাংশ থেকে ২০০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে। জ্বালানির দামও হয়েছে দ্বিগুণ।

খাদ্য ও নিত্যপণ্য জনগণের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রাখতে দেশটির সরকার সবসময় মূল্য নির্ধারণে সর্তকতা অবলম্ব করলেও এখন সবকিছু লাগামহীন।

লাগামহীন মূল্যবৃদ্ধিতে প্রবাসী বাংলাদেশিসহ দেশটির কম আয়ের মানুষ নিত্যপণ্যে ও জ্বালানির চাহিদা মেটাতে বিপাকে পড়েছেন।  তাদের আয়ের চেয়ে ব্যয় বেড়েছে।

বাজার অস্থিরতার পাশাপাশি বিদুৎ সংকটেও নাভিশ্বাস জনজীবন।  লোডশেডিংয়ে আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছেন প্রবাসী ব্যবসায়ীরা।

৭০০ গ্রাম ওজনের পাউরুটির দাম স্থানীয় মুদ্রায় ১০-১২ রেন্ড (বাংলাদেশি মুদ্রায় ১ রেন্ড সমান ৫.৭২ টাকা) পর্যন্ত বেড়ে গেছে। ডিম, পাউরুটি, দুধের মতো খাদ্যপণ্যের দাম বড় কোম্পানিগুলো অতিরিক্ত বাড়ানোয় ভোক্তারা বিকল্প হিসেবে তুলনামূলক কম দামে স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত বেকারি ও ফার্মগুলোর দিকে ঝুঁকছেন।

বেননি শহরের গ্রোসারি ব্যবসায়ী প্রবাসী বাংলাদেশি মিয়া ইউনুছ বলেন, কম-বেশি সবকিছুর দাম বেড়েছে। মানুষ কেনাকাটা কমিয়ে দেওয়ায় আমাদের ব্যবসাতেও ভাটা পড়ছে।

দেড় বছরের ব্যবধানে নিত্যপ্রয়োজনীয় জালানির দাম দ্বিগুণ হয়েছে। এলপি গ্যাসের ১৩ কেজি সিলিন্ডারের দাম বেড়ে হয়েছে ৩২০ রেন্ড।  গতবছরের জানুয়ারিতে ছিল ১৫০ রেন্ড। ৫০ পিপিএম ডিজেলের দাম ১২ রেন্ড ৪৩ সেন্ট থেকে বেড়ে ২৫ রেন্ড ১১ সেন্ট দাঁড়িয়েছে।

যুদ্ধের কারণে ইউক্রেন থেকে সরবরাহ সংকট তৈরি হওয়ায় সয়াবিন তেলের দাম গতবছরের তুলনায় ২০০ গুন বাড়ে। তবে সম্প্রতি কিছুটা কমেছে।

জোহানসবার্গ একটনবিল এরিয়ায় হার্ডওয়ার ব্যবসায়ী বাংলাদেশি মোহাম্মদ নুরনবী জানান, তেল-গ্যাসের দাম বেড়ে যাওয়ায় বিক্রি কমেছে। নিয়মিত লোডশেডিং হচ্ছে। ডিজেল দিয়ে জেনেটার চালিয়ে ব্যবসা করায় খরচ কয়েকগুণ বেড়েছে।

'নিরবিচ্ছিনভবে বিদুৎ সংযোগ চালাতে হিমশিম খাচ্ছে কর্তৃপক্ষ। সপ্তাহে কমবেশি ৪ দিন নিয়মিত সকাল ও রাতে ২ ঘণ্টা লোডশেডিং দিচ্ছে বিদুৎ বিভাগ। নোটিশের বাইরেও হঠাৎ বিদুৎ চলে যাওয়ার ঘটনাও ঘটছে। বিদুৎ ব্যবহার কমাতে ছোট-বড় সড়কের সড়কবাতি বন্ধ রাখছে কর্তৃপক্ষ,' বলেন তিনি।

তিনি আরও বলেন, 'বিদুৎ সংকটে ছোট-বড় কলকারখানাগুলোতে উৎপাদনে ব্যাঘাত ঘটছে। বিপাকে পড়েছে খাদ্য ও নিত্যপণ্যের দোকানিরা।  দীর্ঘসময় ফ্রিজ বন্ধ থাকায় মাংস-সবজি-ফলের খাদ্যমান নষ্ট হচ্ছে। সড়কবাতি বন্ধ থাকায় সন্ধ্যার পর ক্রেতাদের চলাফেরাও সীমিত হয়ে পড়েছে। এ পরিস্থিতিতে ২ দিক থেকে ব্যবসায়ীক ক্ষতির মুখে পড়ছেন। জানিনা কবে বিদুৎ পরিস্থিতির উন্নতি ঘটবে।'

জোহানসবার্গের ডেবিটন মার্কেট এলাকায় মোবাইল ফোন সার্ভিসিং সেন্টারের মালিক বাংলাদেশি দেলোয়ার হোসেন বলেন, দক্ষিণ আফ্রিকায় ১৫ বছর ধরে আছি। করোনার সময় দোকান বন্ধ রাখতে হয়। সে ক্ষতি সামলে ওঠার আগেই নতুন করে বিদুৎ ঝামেলায় গ্রাহকদের কাজ ঠিক সময় মতো দিতে পারছি না। সময় বেশি লাগছে, কাস্টমারও হারাচ্ছি।

করোনা মহামারিতে দক্ষিণ আফ্রিকায় প্রবাসীরা বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়ে। যদিও দেশটির সরকার বাজার পরিস্থিতি জনগণের নাগালে রাখতে নানা উদ্যোগ নিয়েছে। কিন্তু, সেই ক্ষতি দেশটির জাতীয় অর্থনীতিতে এখনো প্রভাব ফেলছে। এরমধ্যে ইউক্রেন যুদ্ধ বাজারে অস্থিরতা সৃষ্টি করেছে। যা সামলে উঠতে নতুন নতুন পদ্ধতি প্রয়োগ করছে সরকার। তারপরও অবস্থা কতটা সামাল দেওয়া যাবে তা নিয়ে উদ্বিগ্ন প্রবাসী বাংলাদেশি ব্যবসায়ীরা। ব্যবসায়ীদের কপালে চিন্তার ভাজ।

লেখক: দক্ষিণ আফ্রিকাপ্রবাসী সাংবাদিক

Comments

The Daily Star  | English

Lucrative market here drawing interest of foreign powers: Momen

Foreign powers are now more interested in Bangladesh as this rapidly developing country has become a lucrative market for them, said Foreign Minister AK Abdul Momen yesterday

3h ago