দেশে উদ্ভাবিত চায়ের ২৮ জাতের মধ্যে জনপ্রিয় কেবল ৫টি

ছবি: শেখ নাসির/স্টার

বাংলাদেশ চা গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিটিআরআই) উদ্ভাবিত ২৮টি চায়ের জাতের মধ্যে মাত্র পাঁচটি দেশে ব্যাপকহারে চাষ হচ্ছে। উচ্চফলন, গুণমাণ ও জলবায়ু-সহিষ্ণুতার কারণে এসবের চাষ বেশি।

এই জাতগুলোকে 'চা ক্লোন' বলা হয়। এগুলো বীজের পরিবর্তে গ্রাফটিংয়ের মাধ্যমে উত্পাদিত গাছ। এই পদ্ধতিতে উচ্চফলন ও রোগপ্রতিরোধের বৈশিষ্ট্য নিয়ে চারা তৈরি করা হয়।

বিটিআরআইর পরিচালক মো. ইসমাইল হোসেন দ্য ডেইলি স্টারকে জানান—বিটি-ওয়ান (১৯৬৬ সালে তৈরি), বিটি-২ (১৯৭৫), বিটি-৪ (১৯৮১), বিটিএস-১ (১৯৮৫) ও টিভি-১ (১৯৪৯) নামের এই পাঁচ ক্লোন থেকে প্রতি হেক্টরে গড়ে তিন থেকে চার হাজার কেজি চা পাওয়া যায়।

খরা সহনশীলতা ও দার্জিলিংয়ের চায়ের মতো স্বাদ ও সুবাসের কারণে বিটি-২ সবচেয়ে জনপ্রিয় জানিয়ে তিনি দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'বিটি-২ ভালোমানের ব্ল্যাক টি ও গ্রিন টি তৈরিতে ব্যবহৃত হয়।'

তিনি আরও বলেন, 'দেশের চা শিল্পের আকার বিবেচনায় এখন পর্যন্ত উদ্ভাবিত ক্লোনের সংখ্যা পর্যাপ্ত নয়। আরও নতুন ক্লোন আবিষ্কারের জন্য গবেষণা চলছে।'

তিনি আরও জানান, সাধারণত মানুষ পুরোনো ও প্রমাণিত বিষয়গুলোকে গুরুত্ব দেন। চায়ের ক্ষেত্রেও তা সত্য। বাগান-মালিকরা পুরোনো ও পরীক্ষিত ক্লোনের চা গাছ রোপণ করতে পছন্দ করেন।

তার মতে, বাগান-মালিকরা সাধারণত তিন থেকে পাঁচটি বাছাই করা ক্লোনের চা গাছ রোপণ করেন, যাতে তারা বাণিজ্যিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত না হন। একটি ভালোমানের ক্লোন তৈরি করতে প্রায় ১৩ বছর সময় লাগে। এর বাণিজ্যিক উৎপাদন ক্ষমতা প্রায় ৫০ বছর।

তবে বাগান সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এর ফলে বহুমুখীকরণের ঘাটতি দেখা দিয়েছে।

বাগান-মালিকরা বলছেন, চায়ের উৎপাদন ও বিক্রি বাড়াতে জলবায়ু ও খরা সহিষ্ণু ও ভালোমানের দিকে মনোযোগ দিয়ে বিটিআরআইয়ের উচিত আরও ক্লোন তৈরি করা।

বাংলাদেশে চা শিল্পের শুরু হয় ১৮৪ বছর আগে। বর্তমানে ১৭০টি চা বাগান আছে। এর বেশিরভাগই উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সিলেট অঞ্চলে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ২০২৪ সালে দেশে বার্ষিক আট কোটি ৫৯ লাখ কেজি চাহিদার বিপরীতে চা উৎপাদিত হয়েছিল নয় কোটি ৩০ লাখ ৪০ হাজার কেজি।

বাগান-মালিক ও কর্মকর্তাদের ভাষ্য

নাম প্রকাশ না করার শর্তে শীর্ষ এক বাগানের কর্মকর্তা ডেইলি স্টারকে বলেন, 'বেশি ফলন, গুণগতমান, কীটপতঙ্গের আক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে সক্ষম, খরা সহনশীলতা ও মরে যাওয়ার হার কম হওয়ায় আমাদের বাগানের প্রায় ৫০ শতাংশ জমিতে বিটি-২ চাষ করা হয়েছে।'

পাশাপাশি টিভি-১ রোপণ করা হয়েছে উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, 'পণ্য বৈচিত্র্যকরণে জলবায়ু-সহিষ্ণুতার ওপর গুরুত্ব দিয়ে আরও ক্লোন করা দরকার।'

সিটি গ্রুপের বিজনেস ডেভেলপমেন্ট ডিরেক্টর লুৎফুল কবির শাহীন ডেইলি স্টারকে জানান, তারা জনপ্রিয় বিটি-১, বিটি-২ ও টিভি-১ জাতের চা চাষ করেন।

'এই ক্লোনগুলো জলবায়ু-সহিষ্ণু, স্বাদ ও সুগন্ধের কারণে অগ্রাধিকার পায়। বাজারে এগুলোর পছন্দসই বেশি,' বলে মন্তব্য করেন তিনি।

বেঙ্গল টি ব্র্যান্ড তাদের গ্রুপের মালিকানাধীন।

চা বাগান মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ টি অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান কামরান তানভীরুর রহমান ডেইলি স্টারকে বলেন, দেশে উচ্চ ফলনশীল জাতের সংকট আছে। আরও খরা-সহনশীল ক্লোনের প্রয়োজন।

'কারণ দেশে বছরের পাঁচ থেকে ছয় মাস খুব কম বৃষ্টি হয়। সব জায়গায় সেচ দেওয়া সম্ভব না। এতে উৎপাদন খরচ বেড়ে যাবে,' বলেন তিনি।

চা বিশ্বব্যাপী লাখো মানুষের সবচেয়ে প্রিয় পানীয়। ন্যাশনাল টুডের তথ্য অনুযায়ী, প্রতি সেকেন্ডে মানুষ ২৫ হাজার কাপ চা পান করেন। অর্থাৎ প্রতিদিন দুই বিলিয়ন কাপেরও বেশি চা পান করা হয়।

Comments

The Daily Star  | English

'Shoot directly': Hasina’s deadly order

Months-long investigation by The Daily Star indicates state forces increased deployment of lethal weapons after the ousted PM authorised their use

2h ago