মূল ব্যবসাতেই গচ্চা দিচ্ছে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো

৪ রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক
৪ রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক

বাংলাদেশের ৪ রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক তাদের মূল ব্যবসায়িক কার্যক্রম, অর্থাৎ ঋণ দিয়ে ব্যবসা করতে হিমশিম খাচ্ছে। এর পেছনে দায়ী বড় আকারের কুঋণ ও সরকার নির্ধারিত সুদের হারের সর্বোচ্চ সীমা।

ফলে টিকে থাকার জন্য ব্যাংকগুলো বাধ্য হয়ে বন্ড ও বিলে বিনিয়োগ করছে এবং সেখান থেকে পাওয়া আয়ের ওপর নির্ভর করছে।

ঋণ থেকে পাওয়া আয় ও আমানতের বিপরীতে দেওয়া সুদের ব্যবধানকে নিট সুদ আয় বলা হয়।

আর্থিক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, সোনালী ব্যাংক, রুপালী ব্যাংক ও অগ্রণী ব্যাংক ২০২০ ও ২০২১ সালে নিট সুদে লোকসান দিয়েছে। জনতা ব্যাংকের নিট সুদ আয় ২০২১ সালে আগের বছরের তুলনায় কমেছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে সাক্ষরিত চুক্তি অনুযায়ী এই ৪ রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের ঋণ দেওয়ার সক্ষমতা সীমিত রাখা হয়েছে।

ব্যাংকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) সাবেক চেয়ারম্যান আনিস এ খান জানান, উচ্চ পর্যায়ের কুঋণ ও মূলধনে ঘাটতির কারণে ব্যাংকগুলোর ওপর বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। এসব কারণে নতুন ঋণ ও সুদ থেকে পাওয়া আয়ের ক্ষেত্রে এসব ব্যাংকের প্রবৃদ্ধি খুবই সীমিত। 

একইভাবে, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোতে সাধারণ জনগণ ও সরকারি সংস্থার কাছ থেকে পাওয়া বিপুল পরিমাণ অর্থ আমানত হিসেবে রাখা আছে। এই আমানতের ওপর উল্লেখযোগ্য পরিমাণ সুদ দিতে হয়। অপরদিকে রাজস্ব বাড়ানোর জন্য ইচ্ছেমতো ঋণও তারা দিতে পারে না।

দেশের সবচেয়ে বড় ব্যাংক সোনালী ব্যাংকের আয় পরিস্থিতি সবচেয়ে খারাপ অবস্থায় রয়েছে। ২০১৭ সাল থেকে নিট সুদ আয়ে লোকসান দিয়ে যাচ্ছে ব্যাংকটি। ২০২০ ও ২০২১ সালে নিট সুদ আয় বাবদ ব্যাংকটি যথাক্রমে ৯৯৪ কোটি ও ৯৭৯ কোটি টাকা গচ্চা দিয়েছে।

২০২১ সালে অগ্রণী ব্যাংক নিট সুদে ৭৪৪ কোটি টাকা লোকসান করেছে।

২০২০ সাল থেকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ঋণের সুদের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ হার ৯ শতাংশ নির্ধারণ করে রেখেছে। তবে ক্রেডিট কার্ডের ঋণের ক্ষেত্রে এটি প্রযোজ্য না।

১৫ জানুয়ারি বাংলাদেশ ব্যাংক ভোক্তা ঋণের ক্ষেত্রে এই হারকে ৯ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১২ শতাংশ করেছে।

নিট সুদ আয় নেতিবাচক হলেও অগ্রণী ব্যাংক ২০২১ সালে ২০৯ কোটি টাকার মুনাফা করেছে। বন্ড, বিল ও সিকিউরিটিতে বিনিয়োগ করে পাওয়া রাজস্ব এই মুনাফা পেতে সহায়তা করেছে।

২০২১ সালে অগ্রণী ব্যাংকের বিনিয়োগ থেকে পাওয়া আয়ের পরিমাণ ৩৩ শতাংশ বেড়ে ২ হাজার ৪১৭ কোটি টাকা হয়েছে।

একইভাবে রূপালী ব্যাংকও বিনিয়োগ থেকে পাওয়া আয়ে নিজেদের টিকিয়ে রাখতে পেরেছে। ২০২০ ও ২০২১ সালে ব্যাংকটির নিট সুদ থেকে লোকসানের পরিমাণ যথাক্রমে ৩৪৬ কোটি টাকা ও ৩২৫ কোটি টাকা।

রুপালী ব্যাংকের বিনিয়োগ আয় ২০২১ সালে ১৯ শতাংশ বেড়ে ১ হাজার ৪৩৩ কোটি টাকা হয়েছে। ২০২১ সালে ব্যাংকটি ৫০ কোটি টাকা মুনাফা করে। এর আগের বছরের মুনাফা ছিল মাত্র ২০ কোটি টাকা।

নগদ সংরক্ষিত অনুপাত (সিআরআর), বিধিবদ্ধ তরলতা অনুপাত (এসএলআর) এবং অন্যান্য বাধ্যবাধকতা পূরণের পর একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক ১০০ টাকা আমানতের বিপরীতে সর্বোচ্চ ৮১ টাকা বিনিয়োগ করতে পারে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী, আমানতের প্রবৃদ্ধি যেমনই হোক না কেন, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর ঋণের প্রবৃদ্ধি ১৫ শতাংশের বেশি হতে পারবে না।

সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ব্যাংকিং খাতের মোট কুঋণের পরিমাণ ১ লাখ ৩৪ হাজার ৩৯৬ কোটি টাকা। এই খাতের মোট ঋণের ৯ দশমিক ৩৬ শতাংশই কুঋণ। এর মাঝে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকেই রয়েছে সর্বোচ্চ ২৩ দশমিক শূন্য ৪ শতাংশ ঋণ।

জনতা ব্যাংকের নিট সুদের হার ২০২১ সালে নেতিবাচক হয়। এর আগের ৫ বছরের মধ্যে প্রথমবারের মতো এই খাতে ৭১ কোটি টাকা লোকসান দেয় ব্যাংকটি।

সংক্ষেপিত। মূল প্রতিবেদন পড়তে ক্লিক করুন State banks' core business in the red

অনুবাদ করেছেন মোহাম্মদ ইশতিয়াক খান

 

Comments

The Daily Star  | English

NBR officials call off shutdown

Officials of the National Board of Revenue have decided to withdraw their nationwide shutdown in view of the broader interests of trade and commerce.

45m ago