এক দশকে নতুন ব্যাংকগুলোর ব্যবসা কেমন

বিশ্লেষক ও অর্থনীতিবিদদের সমালোচনা ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রাথমিক আপত্তি সত্ত্বেও সরকার ২০১৩ সালে নতুন ৯ ব্যাংক প্রতিষ্ঠার লাইসেন্স দেয়।
ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক, মিডল্যান্ড ব্যাংক, মেঘনা ব্যাংক, পদ্মা ব্যাংক,

বিশ্লেষক ও অর্থনীতিবিদদের সমালোচনা ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রাথমিক আপত্তি সত্ত্বেও সরকার ২০১৩ সালে নতুন ৯ ব্যাংক প্রতিষ্ঠার লাইসেন্স দেয়। যেহেতু বাংলাদেশে ব্যাংকের সংখ্যা বেশি তাই তারা নতুন ব্যাংক অনুমোদন দেওয়ার বিরোধিতা করেছিলেন। অনেকে মনে করেন মূলত রাজনৈতিক বিবেচনায় এসব ব্যাংকের অনুমোদন দেওয়া হয়।

ইউনিয়ন ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক, মিডল্যান্ড ব্যাংক, এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংক, এনআরবি ব্যাংক, এসবিএসি ব্যাংক, মেঘনা ব্যাংক, মধুমতি ব্যাংক ও পদ্মা ব্যাংকের মধ্যে কয়েকটি ব্যাংক বর্তমানে মোটামুটি ভালো করছে, তবে কয়েকটি ব্যাংক এখন ধুকছে।

মুনাফার দিক বিবেচনা করলে দেখা যায়, ২০২২ সালে এনআরবি কমার্শিয়াল, ইউনিয়ন ব্যাংক ও মধুমতি ব্যাংকের মুনাফা ১০০ কোটি টাকার বেশি মুনাফা করেছে। তবে, পদ্মা ব্যাংকের পুঞ্জিভূত লোকসানের পরিমাণ ৮০৫ কোটি টাকা। আর দুয়েকটি ব্যাংক খুব অল্প পরিমাণে মুনাফা করছে।

১৯৯২-১৯৯৬ সালে লাইসেন্স পাওয়া দ্বিতীয় প্রজন্মের ব্যাংক এবং ১৯৯৮ থেকে ২০১২ সালের মধ্যে অনুমোদিত তৃতীয় প্রজন্মের ব্যাংকগুলোর তুলনায় বেশিরভাগ নতুন ব্যাংকের খেলাপি ঋণের হার বেশি।

ব্যাপক আর্থিক কেলেঙ্কারির কারণে পদ্মা ব্যাংকের সর্বোচ্চ খেলাপির ঋণের অনুপাত ছিল ৬৩ দশমিক ৫ শতাংশ। মেঘনা ব্যাংক, এসবিএসি ব্যাংক ও এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংকের খেলাপি ঋণের অনুপাত ৪ শতাংশ ছাড়িয়েছে।

মধুমতি ব্যাংক খেলাপি ঋণের অনুপাত ১ দশমিক ৭ শতাংশে রাখতে সক্ষম হয়েছে। এটি ৯ ব্যাংকের মধ্যে সর্বনিম্ন।

পদ্মা ব্যাংক এখনো ২০২২ সালের আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেনি। বাকি ব্যাংকগুলোর প্রতিবেদনে দেখা গেছে—ব্যাংকিং খাতে আমানত, ঋণ ও অগ্রিমের  মাত্র ৫ শতাংশ তারা দখল করতে পেরেছে। এর অর্থ হচ্ছে গ্রাহকদের মনযোগা আকৃষ্ট করতে ব্যাংকগুলোকে এখনো হিমশিম খেতে হচ্ছে।

২০২২ সালের শেষে ব্যাংকগুলোর আমানতের পরিমাণ ছিল ৮১ হাজার ১৮৫ কোটি টাকা। ব্যাংকিং খাতে মোট আমানতের পরিমাণ ছিল ১৫ লাখ ৮৮ হাজার কোটি টাকা।

নতুন ব্যাংকগুলো এ পর্যন্ত ঋণ দিয়েছে ৭৫ হাজার ৩০৩ কোটি টাকা যেখানে ব্যাংকিং খাতে মোট ঋণ ১৩ লাখ ৮৭ হাজার কোটি টাকা।

এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী গোলাম আওলিয়া দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'দেশের অনেক মানুষ ব্যাংকিং সুবিধা থেকে বঞ্চিত। তাই আমরা তাদের আর্থিক ব্যবস্থার আওতায় আনার দিকে মনোনিবেশ করেছি।'

২০২২ সালে এই ব্যাংকটি নতুন ৯ ব্যাংকের মধ্যে সর্বোচ্চ মুনাফা করেছে। এর মুনাফা হয়েছে ১৯৩ কোটি টাকা।

তিনি আরও বলেন, 'আমরা বিপুল পরিমাণ ক্ষুদ্র ঋণ বিতরণ করেছি। এটি আমাদের বাড়তি সুবিধা দিয়েছে। এ থেকে গ্রামীণ অর্থনীতিও উপকৃত হয়েছে।'

মানুষ ব্যাংকে আমানত রাখতে বা ঋণ নেওয়ার ক্ষেত্রে ব্যাংকের খ্যাতি, ব্র্যান্ডিং ও সেবার ওপর গুরুত্ব দেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, 'এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংক এ সব ক্ষেত্রে মনোযোগ দিয়েছে। তাই আমরা বিপুল পরিমাণ আমানত সংগ্রহ করতে পেরেছি।'

গত বছর ব্যাংকটির আমানতের পরিমাণ ছিল ১৬ হাজার ১১৪ কোটি টাকা। এটি চতুর্থ প্রজন্মের ব্যাংকগুলোর মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ।

এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংক বিদেশ ফেরতদের জন্য বিশেষ উদ্যোক্তা ঋণ কর্মসূচি ও হাউস ফাইন্যান্স স্কিমসহ কয়েকটি নতুন সেবা চালু করেছে। এ ছাড়াও, এর সব শাখায় শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংকিং আছে।

দ্বিতীয় সর্বোচ্চ মুনাফা করেছে ইউনিয়ন ব্যাংক। এর মুনাফা ১৫১ কোটি টাকা। মধুমতি ব্যাংকের মুনাফা ১০০ কোটি টাকা ও গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকের মুনাফা ৯৬ কোটি টাকা।

পদ্মা ব্যাংকের পর সর্বোচ্চ খেলাপি ঋণ মেঘনা ব্যাংকের। মেঘনা ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ছিল ৬ দশমিক ৭৩ শতাংশ, এসবিএসি ব্যাংকের ৫ দশমিক ১৮ শতাংশ ও এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংকের ৪ দশমিক ৬৯ শতাংশ।

মেঘনা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী সোহেল আর কে হুসেইন ডেইলি স্টারকে বলেন, 'বেশিরভাগ খেলাপি ঋণ অতীতের। আমরা এখন সেসব ক্লিয়ার করছি। তাই খেলাপির অনুপাত এখন কমছে।'

২০২২ সালে ব্যাংকটির মুনাফা ছিল ১৯ কোটি টাকা।

কম মুনাফা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, 'ব্যাংকটি বিপুল মুনাফা অর্জনের পরিবর্তে আমানত ও ঋনের আওতা বাড়ানোর ওপর গুরুত্ব দিয়েছে।'

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, নতুন ব্যাংকগুলোকে অনেুমোদন দেওয়া হয়েছিল রাজনৈতিক বিবেচনায়, এখনও এদের অনেক ব্যাংকেই পেশাদারিত্বের অভাব রয়েছে।

নতুন ব্যাংকগুলোর বেশিরভাগই পুরোনো ব্যাংকগুলোর মতোই গতানুগতিক ব্যবসা করছে। তারা গ্রামাঞ্চলে যাচ্ছে না, কিংবা যারা এখনও ব্যাংকিং সেবার আওতায় নেই, তাদেরকে ব্যাংকিং সেবার আওতায় আনতে কাজ করতে পারছে না।

'তাহলে তাদেরকে অনুমোদন দিয়ে কি লাভ হলো?' বাংলাদেশ ব্যাংকের উচিত এই ব্যাংকগুলোর সাথে বসে কাজ করা যেন তারা ভিন্ন ভাবে দেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখতে পারে।

সাবেক তত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, তিনি নতুন ব্যাংক অনুমদোন দেওয়ার  বিপক্ষে, কারণ বাংলাদেশে ইতোমধ্যে ব্যাংকের সংখ্যা অনেক বেশি।

বর্তমানে 61টি ব্যাংক রয়েছে। গত কয়েক বছরে আরও চারটি ব্যাংকের অনুমোদন দিয়েছে সরকার। এরমধ্যে রয়েছে পিপলস ব্যাংক, কমিউনিটি ব্যাংক, সিটিজেন ব্যাংখ এবং বেঙ্গল কমাশিয়াল ব্যাংক।

এটি ইতিবচাক দিক যে, চতুর্ জেনারেশনের ব্যাংকগুলোর মধ্যে কয়েকটি অন্তত ভালো মুনাফা করেছে এবং খেলাপি ঋলণর হার কমা রাখতে পেরেছে। এখন তারা এটি ধরে রাখতে পারে কিনা এবং শেয়ারহোল্ডারদেরকে ভালো লভ্যাংশ দিতে পারে কিনা তার উপরই নির্ভর করতব তাদের সফলতা

(সংক্ষেপিত: ইংরেজিতে পুরো প্রতিবেদনটি পড়তে এই How new banks are faring after a decade লিংকে ক্লিক করুন)

Comments

The Daily Star  | English

Floods cause Tk 14,421 crore damage in eastern Bangladesh: CPD study

The study highlighted that the damage represents 1.81 percent of the national budget for fiscal year (FY) 2024-25

2h ago