তারল্য সংকট কাটছে না ইসলামি ব্যাংকগুলোর

২০২২ সালের শেষে ১০ ইসলামি ব্যাংকের সবগুলোর তারল্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতিমালা পূরণ করে। এর ছয় মাস পর দেখা যায়, ব্যাংকগুলোর মধ্যে চারটিতে নগদ অর্থের ন্যূনতম মজুদ ও নিয়ম অনুযায়ী তারল্য অনুপাত পূরণের জন্য পর্যাপ্ত অর্থ ছিল না।
ইসলামি ব্যাংক

আমানত কমে যাওয়ার পাশাপাশি সংকট কাটিয়ে উঠতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সহায়তা সর্বোচ্চ পর্যায়ে ব্যবহার করতে না পারায় বাংলাদেশে ইসলামি ব্যাংকগুলোর তারল্য সংকট রয়ে গেছে বলে মনে করছে মুডি'জ ইনভেস্টার্স সার্ভিস।

গত বৃহস্পতিবার যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গ্লোবাল রেটিং এজেন্সি মুডি'জ-এর প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্যে দেখা গেছে, শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংকগুলোয় এখনো তারল্য সংকট কাটছে না।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, 'আমানত কম হওয়ায় তারল্য সংকটের কারণে অনেক ইসলামি ব্যাংকের পক্ষে স্বল্পমেয়াদী নির্দেশনাগুলো পূরণ করা কষ্টসাধ্য হতে পারে।'

গত মঙ্গলবার ফিচ রেটিংসের প্রতিবেদনেও বাংলাদেশের ইসলামি ব্যাংকিং খাতে তারল্য সংকটের কথা তুলে ধরা হয়েছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুসারে, গত জুনে ইসলামি ব্যাংকগুলোর সিস্টেম ওয়াইড ইনভেস্টমেন্ট (ঋণ) ও আমানত হার দাঁড়িয়েছে ১০১ শতাংশে। এর আগের বছর তা ছিল ৯৪ শতাংশ।

মুডি'জ-এর প্রতিবেদনে বলা আরও হয়েছে, 'আনুপাতিক হারের এমন চিত্রের অর্থ দাঁড়ায় যথেষ্ট পরিমাণে কমে যাওয়ার পরও তারল্য ঘাটতি অব্যাহত আছে।'

বছরের পর বছর ভালো তারল্য থাকার পর সাম্প্রতিক সময়ে শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংকগুলোর আর্থিক পরিস্থিতি খারাপ হয়েছে।

২০২২ সালের শেষে ১০ ইসলামি ব্যাংকের সবগুলোর তারল্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতিমালা পূরণ করে। এর ছয় মাস পর দেখা যায়, ব্যাংকগুলোর মধ্যে চারটিতে নগদ অর্থের ন্যূনতম মজুদ ও নিয়ম অনুযায়ী তারল্য অনুপাত পূরণের জন্য পর্যাপ্ত অর্থ ছিল না।

মুডি'জ-এর প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, ২০২৩ সালের জুনের শেষে বাকি ছয় সূচক অপরিবর্তিত থাকলেও ইসলামি ব্যাংকগুলোর অতিরিক্ত তারল্য ছিল সামান্য পরিমাণে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুসারে, জুনে এ খাতে অতিরিক্ত তারল্য কমেছে ৬৬ দশমিক ৫৯ শতাংশ।

প্রতিবেদন অনুসারে, আমদানিকারকদের জন্য লেটার অব ক্রেডিট (এলসি) নিষ্পত্তি ও আমানত বৃদ্ধির ধীরগতির মধ্যে ঋণের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় ইসলামি ব্যাংকগুলোর তারল্য সংকট দেখা দিয়েছে।

এ ছাড়াও, উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে খরচ বেড়ে যাওয়ায় পারিবারিক সঞ্চয় কমেছে। ফলে ব্যাংকগুলোর তহবিলে সংগ্রহের এই প্রধান উৎসে ভাটা দেখা যাচ্ছে।

২০২৩ সালের জুনে দেশে মূল্যস্ফীতির হার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯ দশমিক ৭ শতাংশে। এর আগের বছর তা ছিল ৭ দশমিক ৬ শতাংশ।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য বলছে, আগস্টে মূল্যস্ফীতি ২৩ বেসিস পয়েন্ট বেড়ে ১২ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ ৯ দশমিক ৯২ শতাংশে দাঁড়িয়েছে।

মানুষের সঞ্চয় করার ক্ষমতা কমে যাওয়ায় ব্যাংকগুলোর তহবিল সংকট দূর করার প্রচেষ্টা আগামীতে প্রত্যাশিত ফল নাও দিতে পারে।

প্রায় দুই অঙ্কের মূল্যস্ফীতির কারণে ওয়েটেড এভারেজ ডিপোজিট রেট ৫ শতাংশেরও কম, যা নেতিবাচক অবস্থানে আছে। ব্যাংকিং খাতের পার্কিং তহবিল অনেক সঞ্চয়কারীর কাছে আকর্ষণীয় নয়।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুসারে, চলতি বছরের জুনে ইসলামি ব্যাংকিং খাতে আমানতের প্রবৃদ্ধি প্রায় ২ শতাংশে নেমে এসেছে। এটি গত বছরের একই সময়ে ছিল ১১ শতাংশ।

সম্প্রতি কয়েকটি ইসলামি ব্যাংকে ঋণ কেলেঙ্কারির কারণে গ্রাহকদের অনেকে আমানত তুলে নিয়েছেন।

গত বছরের জুনে শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংকগুলোর বিনিয়োগ (ঋণ) প্রবৃদ্ধি ছিল প্রায় ১৫ শতাংশ। গত জুনে তা ১০ শতাংশেরও কম হয়েছে।

শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংকগুলোকে তহবিল সংকট কাটিয়ে উঠতে সহায়তা করতে বাংলাদেশ ব্যাংক ২০২২ সালের ডিসেম্বর ও ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে দুটি তারল্য সুবিধা চালু করে।

এই দুই সুবিধা—ইসলামিক ব্যাংকস লিকুইডিটি ফ্যাসিলিটি (আইবিএলএফ) ও মুদারাবাহ লিকুইডিটি সাপোর্ট (এমএলএস) কর্মসূচির উদ্দেশ্য হলো ইসলামি ব্যাংকগুলোকে তহবিলের বিকল্প উৎস সরবরাহ ও তাদের স্বল্পমেয়াদি তারল্য ঘাটতি পূরণে সহায়তা করা।

মুডি'জ-এর প্রতিবেদন বলছে, 'কেন্দ্রীয় ব্যাংকের উদ্যোগ ইসলামি ব্যাংকগুলোর জন্য তারল্য চাপ উল্লেখযোগ্যভাবে কমাতে পারবে না। কারণ, এই উদ্যোগের সুবিধা নেওয়ার জন্য পর্যাপ্ত সম্পদ ব্যাংকগুলোর হাতে নেই।'

ফিচ র‌্যাটিংসের দৃষ্টিতে, ২০২২ সালে ইন্দোনেশিয়া, বাহরাইন, পাকিস্তান, মিশর, জর্ডান ও ওমানকে পেছনে ফেলে বাংলাদেশ ছিল বিশ্বে অষ্টম বৃহত্তম ইসলামি ব্যাংকিং বাজার।

Comments

The Daily Star  | English

Floods cause Tk 14,421 crore damage in eastern Bangladesh: CPD study

The study highlighted that the damage represents 1.81 percent of the national budget for fiscal year (FY) 2024-25

2h ago