মে মাসে কর আদায় বেড়েছে, তবুও ‘অধরা’ অর্থবছরের লক্ষ্যমাত্রা

চলতি অর্থবছরে সংস্থাটি আগের অর্থবছরের তুলনায় ১৫ শতাংশ বেশি কর আদায় করেছেন, যার পরিমাণ ৮৮ হাজার ৯৬০ কোটি টাকা।
ফাইল ছবি

মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) ও আয়কর আদায় বৃদ্ধির সঙ্গে মে মাসে সার্বিকভাবে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কর আদায় বেড়েছে। এনবিআরের সাময়িক হিসাব অনুযায়ী, মে মাসে কর আদায় হয়েছে ৩০ হাজার ৪৮১ কোটি টাকা।

সেই হিসাবে, চলতি অর্থবছরের জুলাই-মে সময়কালে আগের অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে কর আদায় বেড়েছে ১১ শতাংশ।

এ নিয়ে চলতি অর্থবছরে মোট কর আদায়ের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ৮০ হাজার ৭৭৬ কোটি টাকায়। তবে এই অর্থবছরে কর আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ৩ লাখ ৭০ হাজার কোটি টাকা।

এই লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে হলে চলতি জুন মাসে এনবিআরকে আরও ৮৯ হাজার ২২৪ কোটি টাকা কর আদায় করতে হবে। যেখানে, গত ১১ মাসের কর আদায়ের হিসাব অনুযায়ী, প্রতি মাসে গড়ে প্রায় ২৫ হাজার ৫৩৫ কোটি টাকা কর আদায় হয়েছে।

পিআরআই স্টাডি সেন্টার অন ডোমেস্টিক রিসোর্স মোবিলাইজেশনের (সিডিআরএম) পরিচালক মোহাম্মদ এ রাজ্জাক বলেন, 'এই লক্ষ্যমাত্রা অর্জন চ্যালেঞ্জিং।'

তিনি জানান, চলতি অর্থবছরে সর্বোচ্চ ৩ লাখ ২০ হাজার কোটি টাকা কর আদায় করতে পারবে। ফলে, আগামী অর্থবছরের কর আদায়ের যে লক্ষ্যমাত্রা তার সঙ্গে চলতি অর্থবছরের কর আদায়ের পরিমাণের পার্থক্যটা হবে অনেক বেশি।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে না পারলে টানা ১১ বছরের মতো সরকার নির্ধারিত কর আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ব্যর্থ হবে এনবিআর।

এনবিআরের সাময়িক হিসাব অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরে সংস্থাটি আগের অর্থবছরের তুলনায় ১৫ শতাংশ বেশি কর আদায় করেছেন, যার পরিমাণ ৮৮ হাজার ৯৬০ কোটি টাকা।

এনবিআরের এক কর্মকর্তা বলেন, গত মাসে উৎস থেকে কর আদায় ও বকেয়া কর আদায়ের পরিমাণ বেড়েছে, যা সার্বিকভাবে কর আদায়ের প্রবৃদ্ধিতে ভূমিকা রেখেছে।

কর আদায়ের সবচেয়ে বড় উৎস ভ্যাট। এই খাত থেকে চলতি অর্থবছরের ১১ মাসে কর আদায়ের পরিমাণ ১ লাখ ৮ হাজার ১৩১ কোটি টাকা বেড়েছে, যা এর আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ১৩ দশমিক ৬৫ শতাংশ বেশি।

আগামী অর্থবছরে ভ্যাট বাড়তে পারে, এমন আশঙ্কায় ব্যবসায়ীদের একটি অংশ জুনের আগেই বেশি পরিমাণে পণ্য আমদানি করেছেন।

এনবিআরের ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, 'এই কারণেও আমরা আমদানি ও রপ্তানি থেকে কর আদায় বেড়েছে।'

এনবিআরের তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের এই সময়ে আমদানি শুল্ক আদায়ের পরিমাণ আগের অর্থবছরের তুলনায় প্রায় ৪ শতাংশ বেড়ে ৮৩ হাজার ৬৮৫ কোটি টাকা হয়েছে।

সিডিআরএমের পরিচালক রাজ্জাক বলেন, ভর্তুকির পাশাপাশি সরকারের অন্যান্য ব্যয় নির্বাহের জন্য কর আদায়ের পরিমাণ বৃদ্ধি জরুরি হয়ে পড়েছে।

তিনি বলেন, 'ডলারের দাম ১ টাকা বাড়লেও সরকারকে বিদ্যুৎখাতে বাড়তি ৪৭৬ কোটি টাকা ভর্তুকি দিতে হবে। টাকার দাম কমতে থাকলে ভর্তুকির প্রয়োজনীয়তাও বাড়বে।'

'কর আদায়ের বর্তমান গতিতে সেই চাহিদা পূরণ করা সম্ভব নয়। ডলারের দাম বাড়লে টাকায় ভর্তুকি দেওয়ার প্রয়োজনীয়তা আরও বেড়ে যেতে পারে', যোগ করেন রাজ্জাক।

তিনি আরও বলেন, 'অর্থনৈতিক সংকটের কারণে আমদানি কমেছে। তাই আগামী অর্থবছরে অর্থনীতিতে গতিশীলতা কমে যেতে পারে। এই কারণেও কর আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা কঠিন হবে।'

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সিনিয়র রিসার্চ ফেলো তৌফিকুল ইসলাম খান বলেন, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে এনবিআর কর আদায়ের ক্ষেত্রে বড় ধরনের ঘাটতির মুখে পড়বে।

তিনি বলেন, 'এটা বিস্ময়কর যে সংশোধিত বাজেটে এই বাস্তবতাকে বিবেচনায় নেওয়া হয়নি। যার ফলে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে কর আদায়ের উচ্চাভিলাষী লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।'

তৌফিকুল ইসলাম খান জানান, কর ফাঁকি রোধে কোনো প্রাতিষ্ঠানিক উদ্যোগ দেখা যায়নি। অপরদিকে সংস্কার ও ডিজিটালাইজেশনের বাস্তবায়নে ধীরগতি এ ক্ষেত্রে এনবিআরের উদ্যোগকে স্তিমিত করে রেখেছে।

অনুবাদ করেছেন মোহাম্মদ ইশতিয়াক খান

Comments