আট বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন গুঁড়ো দুধ আমদানি
গত অর্থবছরে বাংলাদেশ ১ লাখ ১৮ হাজার টন গুঁড়ো দুধ ও ক্রিম আমদানি করেছে, যা গত আট বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, চলমান উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে অনেকেই সংসারের খরচ সাশ্রয়ে দুগ্ধজাত খাবার ও দুধ চা পান করা কমিয়েছেন।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য অনুযায়ী, ২০২২-২৩ অর্থবছরে গুড়া দুধ ও ক্রিম আমদানি আগের বছরের তুলনায় প্রায় ১৬ শতাংশ কমেছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশীয় উৎপাদন বৃদ্ধি, মানুষের স্বাস্থ্য সচেতনতা বৃদ্ধি ও সংসারের খরচের ব্যাপারে সাশ্রয়ী হওয়ায় আমদানি কমেছে।
নিউজিল্যান্ড ডেইরি প্রোডাক্টস বাংলাদেশ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এসএ মল্লিক বলেন, 'উচ্চ মূল্যস্ফীতি, ইউক্রেন যুদ্ধ এবং করোনা মহামারির কারণে সামগ্রিকভাবে গুঁড়ো দুধের ব্যবহার কমেছে।'
তিনি আরও বলেন, 'নিন্মআয়ের মানুষের মাঝে এগুলোর ব্যবহার উল্লেখযোগ্যভাবে কমতে দেখছি, কারণ চা বা দুগ্ধজাত মিষ্টির জন্য গুড়া দুধ অথবা ক্রিম কেনার সামর্থ্য তাদের অনেকের নেই।'
তবে, উচ্চ-মধ্যম আয়ের মানুষের কাছে এখনো এগুলোর চাহিদা আছে বলে জানান তিনি।
ডিপ্লোমা ব্র্যান্ডের গুঁড়ো দুধ বাজারজাতকারী প্রতিষ্ঠান নিউজিল্যান্ড ডেইরির এই শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, মার্কিন ডলারের বিপরীতে টাকার দরপতনের পাশাপাশি ঋণপত্র (এলসি) খুলতে সমস্যায় পড়ছেন আমদানিকারকরা। এছাড়া, ডলারের দাম বৃদ্ধিতে আমদানি ব্যয়ও বেড়েছে।
তিনি বলেন, 'এ কারণে স্কিমড মিল্ক পাউডার আমদানিকারী অনেক ব্যবসায়ী আমদানি কমিয়ে দিয়েছেন।'
এছাড়া সাম্প্রতিক সময়ে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার ঘাটতি দেখা দিয়েছে। কারণ, রেমিট্যান্স ও রপ্তানি আয়ের তুলনায় আমদানি ও অন্যান্য বিল পরিশোধে পরিমাণ তুলনামূলক বেশি ছিল। একইসঙ্গে গত বছরের ৫ জুলাই থেকে এ পর্যন্ত ডলারের বিপরীতে টাকার ১৭ শতাংশ দরপতন হয়েছে। ফলে, সামগ্রিকভাবে আমদানি ব্যয় বেড়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, আমদানির পরিমাণ কমলেও গত অর্থবছরে বাইরের বাজার থেকে দুধ ও দুগ্ধজাত পণ্য কিনতে বাংলাদেশ প্রায় চার হাজার কোটি টাকা ব্যয় করেছে, যা আগের বছরের তুলনায় ২১ শতাংশ বেশি।
ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্য অনুযায়ী, গত এক বছরে গুঁড়ো দুধের দাম বেড়েছে।
ডানো ব্র্যান্ডেড পাউডার মিল্কের বিপণনকারী আরলা ফুডস বাংলাদেশ লিমিটেডের হেড অব কমিউনিকেশনস সালেহ উজ জামান বলেন, 'গুঁড়ো দুধ আমদানিতে আমরা ক্রমবর্ধমানভাবে সমস্যার মুখে পড়ছি।'
তিনি বলেন, 'এজন্য মার্কিন ডলারের ঘাটতি, ঋণপত্র খুলার অসুবিধা ও অপ্রত্যাশিত বিনিময় হারকে দায়ী করা যেতে পারে। তবে, আমরা গ্রাহকদের পুষ্টি ও দুগ্ধজাত পণ্য সরবরাহ নিশ্চিত করতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করি।
এসএ মল্লিক বলেন, 'বিনিময় হার স্থিতিশীল হলে মানুষ স্বস্তি বোধ করবে।'
শিল্প সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, স্বাস্থ্য সচেতন অনেকে দুধ চা পান করা বন্ধ করে দিয়েছেন। এছাড়া চিনি ও চালের দাম বৃদ্ধিতে অনেকে বাড়িতে মিষ্টি জাতীয় খাবার যেমন- ফিরনি, সেমাই তৈরি করা বাদ দিয়েছেন। দেশে এক বছরেরও বেশি সময় ধরে বিভিন্ন পণ্যের দাম বাড়ছে। এতে বাংলাদেশের ভোক্তাদের ক্রয় ক্ষমতাও কমেছে।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, ২০২২-২৩ অর্থবছরে গড় মূল্যস্ফীতি বেড়ে হয়েছে ৯ দশমিক ০২ শতাংশে, যা আগের বছর ছিল ৬ দশমিক ১৫ শতাংশ।
গুঁড়ো ও প্রক্রিয়াজাত তরল দুধ বাজারজাতকারী প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের বিপণন পরিচালক কামরুজ্জামান কামাল বলেন, 'হয়তো মূল্যস্ফীতির কারণে গুঁড়ো দুধের ব্যবহার কমেছে। এছাড়া স্থানীয় দুধের উৎপাদন বেড়েছে।'
দুগ্ধ খামারের প্রতি বাংলাদেশের কৃষকদের আগ্রহের কারণে প্রায় প্রতি বছর দেশে দুধের উৎপাদন বৃদ্ধি পাচ্ছে।
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ২০২২-২৩ অর্থবছরে দেশে দুধের মোট উৎপাদন ৮ শতাংশ বেড়ে প্রায় ১ লাখ ৪১ হাজার মেট্রিক টন হয়েছে।
Comments