আগামী অর্থবছর বাজেটের আকার হবে ৮ লাখ কোটি টাকা

২০২৪-২৫ অর্থবছরে বাজেটের আকার হবে ৮ লাখ ৫ হাজার কোটি টাকা, যা চলমান ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা বাজেটের চেয়ে প্রায় ৬ শতাংশ বেশি।

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) পরামর্শের সঙ্গে মিল রেখে ও চলমান অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জের মধ্যে সরকার চলতি অর্থবছরের বাজেটের আকার কমানো এবং আগামী অর্থবছরে আরও কম রাখার পরিকল্পনা করেছে।

অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের সভাপতিত্বে গতকাল অনুষ্ঠিত রাজস্ব সমন্বয় পরিষদের সভায় ২০২৩-২৪ অর্থবছরের সংশোধিত বাজেট ও ২০২৪-২৫ অর্থবছরের নতুন বাজেটের পরিকল্পনা উত্থাপন করা হয়।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, সেখানে সামগ্রিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি এবং রাজস্ব ও মুদ্রানীতি নিয়ে আলোচনা হয়েছে।

রাজস্ব সমন্বয় পরিষদ সাধারণত একটি অর্থবছরে দুই থেকে তিনটি বৈঠক করে। গতকালের বৈঠকটি ছিল ২০২০-২৪ অর্থবছরের প্রথম বৈঠক এবং ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠেয় জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে শেষ বৈঠক।

বৈঠকের খসড়া অনুযায়ী, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে বাজেটের আকার হবে ৮ লাখ ৫ হাজার কোটি টাকা, যা চলমান ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা বাজেটের চেয়ে প্রায় ৬ শতাংশ বেশি।

ঐতিহাসিকভাবে, সরকার বিদায়ী বাজেটের চেয়ে নতুন বাজেটের আকার ১২ থেকে ১৩ শতাংশ বাড়িয়েছে।

একইভাবে সরকার চলতি বাজেট ৫১ হাজার কোটি টাকা কমিয়ে ৭ লাখ ১০ হাজার কোটি টাকায় নামিয়ে আনতে পারে।

সংশোধিত বাজেটে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি হবে ২ লাখ ৪৫ হাজার কোটি টাকা, যা মূল বাজেটে ছিল ২ লাখ ৬৩ হাজার কোটি টাকা।

বৈঠকে উপস্থিত অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, রাজস্ব প্রবৃদ্ধি কমে যাওয়ায় অর্থনৈতিক অস্থিরতা মোকাবিলায় সরকার বিভিন্ন কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে।

তিনি বলেন, 'নির্বাচনী বছরে ভর্তুকি ও উচ্চ ব্যয়ের চাপের কারণে চলতি অর্থবছরের বাজেটের আকার অনেকাংশে কমানো যায়নি। তবে, ২০২০-২৫ অর্থবছরে সরকারি ব্যয় কমে যাবে।'

আইএমএফ সরকারকে ব্যয় কমানোর পরামর্শ দিয়েছে।

এদিকে বাংলাদেশে রাজস্ব আদায়ের ধীর প্রবণতা অব্যাহত আছে, যেখানে কর-জিডিপি অনুপাত বিশ্বের সর্বনিম্ন, প্রায় ৯ শতাংশ।

২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম চার মাসে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) রাজস্ব আদায়ের প্রবৃদ্ধি দাঁড়িয়েছে ১২ শতাংশ, যা ২০২২-২৩ অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ১৪ শতাংশ।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের এই কর্মকর্তা বলেন, আগামী বাজেটে সরকারের মূল লক্ষ্য হবে চলতি বাজেটের মতো উচ্চ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করা।

২০২২-২৩ অর্থবছরে মূল্যস্ফীতি গড়ে ৯ দশমিক ০২ শতাংশ ছিল, যা এক দশকেরও বেশি সময়ের মধ্যে সর্বোচ্চ। এ বছরের নভেম্বরে তা ৯ দশমিক ৪৯ শতাংশে দাঁড়িয়েছে এবং এটি কমার কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না।

২০২৪-২৫ অর্থবছরে সরকারের লক্ষ্য হবে মূল্যস্ফীতি ৬ দশমিক ৫ শতাংশের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখা। চলতি অর্থবছরের জন্য লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৬ শতাংশ, তবে তা ৭ দশমিক ৫ শতাংশে সংশোধন করা হবে বলে মনে করা হচ্ছে।

তিনি বলেন, বাজার মনিটরিং বাড়ানো হবে এবং বাংলাদেশ ট্রেডিং করপোরেশন ভর্তুকিযুক্ত নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের উন্মুক্ত বাজার সম্প্রসারণ করা হবে।

সরকার ২০২৪-২৫ অর্থবছরে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি ৬ দশমিক ৭৫ শতাংশের লক্ষ্যমাত্রা মাত্রা নির্ধারণ করবে। আশা করা হচ্ছে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে ৬ দশমিক ৫ শতাংশে নামিয়ে আনা হবে, কারণ প্রায় সব সামষ্টিক অর্থনৈতিক সূচক চাপে আছে।

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, বৈদেশিক মুদ্রা বাজারে অস্থিতিশীলতা এবং রিজার্ভ কমা সত্ত্বেও চলতি অর্থবছরে উচ্চ জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য ছিল।

ওই কর্মকর্তা বলেন, সরকার বিনিময় হার পুরোপুরি বাজারের হাতে ছেড়ে দেবে না, তবে আরও বাজারমুখী করা হবে।

তিনি আরও বলেন, এছাড়া বিদ্যমান সুদের হার নির্ধারণ ব্যবস্থা আগামী অর্থবছরেও অব্যাহত থাকবে।

চলতি বছরের জুলাইয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ঋণের সুদের হারের সীমা প্রত্যাহার করে নেয় এবং সিক্স মাস মুভিং এভারেজ রেট অব ট্রেজারি বিল (স্মার্ট) চালু করে।

২০২৪-২৫ অর্থবছরে সরকার ৫ লাখ ৫৫ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করবে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য যে লক্ষ্যমাত্রা ৫ লাখ কোটি টাকা এবং তা সংশোধন করে ৪ লাখ ৭০ হাজার কোটি টাকায় নামিয়ে আনা হতে পারে।

(এই প্রতিবেদনটি ইংরেজি থেকে ভাষান্তর করেছেন রবিউল কমল)

Comments

The Daily Star  | English
interim government's dialogue with BNP

Reforms ahead of polls: BNP waits with cautious optimism

Having weathered a very difficult 15 years as de facto opposition, the BNP now wants only the essential reforms done to ensure free and fair polls.

14h ago