ভালোবাসা দিবসে দেখতে পারেন যেসব সিনেমা
আজ ভালোবাসা দিবস। দিবসটি উদযাপনে ইতোমধ্যে অনেকে নানারকম পরিকল্পনা করে ফেলেছেন। এই উদযাপনকে আরও আবেগঘন করতে ও প্রিয় মানুষের সঙ্গে সুন্দর সময় কাটাতে একসঙ্গে দেখে নিতে পারেন কিছু সিনেমা।
১. ঘুড্ডি (১৯৮০)
আইএমডিবি রেটিং: ৮.১/১০
বাংলা সিনেমার ইতিহাসে কালজয়ী সিনেমাগুলোর একটি 'ঘুড্ডি'। ঢালিউডের সবচেয়ে আধুনিক সিনেমাগুলোর কথা বলতে গেলে এটির নাম আসবেই। যুদ্ধের ট্রমা কাটিয়ে উঠতে না পারা মুক্তিযোদ্ধা আসাদ ও ঘুড্ডিকে ঘিরে গড়ে ওঠে এই সিনেমার গল্প। সাবলীল প্রেমের গল্পের পাশাপাশি ঘুড্ডি আমাদের উপহার দিয়েছে 'চলো না ঘুরে আসি অজানাতে', 'কে বাঁশি বাজায় রে', 'ঘুম ঘুম' কিংবা 'সখী চলো না জলসা ঘরে'র মতো বেশ কয়েকটি জনপ্রিয় গান।
২. মাই স্যাসি গার্ল (২০০১)
আইএমডিবি রেটিং: ৮/১০
একই নামের উপন্যাস অবলম্বনে পরিচালক কোয়াক জে ইয়ংয়ের রোমান্টিক কমেডি ঘরানার সিনেমা 'মাই স্যাসি গার্ল'। ইঞ্জিনিয়ারিং ছাত্র গিওন উ একদিন সাবওয়ে স্টেশনে এক মাতাল তরুণীর জীবন বাঁচায়। পরে সেই তরুণীর জন্য তাকে পড়তে হয় একের পর এক বিড়ম্বনায়। এতসব বিড়ম্বনা ও পরিস্থিতি তাদের দুজনকে কাছাকাছি নিয়ে আসে। শান্ত গিওন উ এবং প্রাণোচ্ছল তরুণী জুটির গল্প আপনার হৃদয়ে পোক্ত আসন তৈরি করে নেবে। মজার ব্যাপার হলো—১২৩ মিনিটের এই সিনেমার কোথাও নায়িকার নাম বলা হয়নি। কমেডি, ড্রামা ও রোম্যান্সের অপূর্ব মিশেলে তৈরি এই সিনেমার রেশ আপনার মনে থেকে যাবে দীর্ঘদিন।
৩. হঠাৎ বৃষ্টি (১৯৯৮)
আইএমডিবি রেটিং: ৮/১০
চিঠি আদান-প্রদানের মাধ্যমে প্রেমের সূচনা হয় দীপা ও অজিতের। এক সময় দেখা করার পরিকল্পনা করেন দুজন। তবে নিয়তির পরিকল্পনা ছিল একটু আলাদা। সিনেমার মূল চরিত্রে অভিনয় করেছেন বাংলাদেশি অভিনেতা ফেরদৌস ও ভারতীয় অভিনেত্রী প্রিয়াংকা। তাদের অনবদ্য রসায়ন আপনার মনে এনে দেবে অন্যরকম আনন্দ। ভিন্ন আঙ্গিকের প্রেমের কাহিনির পাশাপাশি 'সোনালি প্রান্তরে', 'একদিন স্বপ্নের দিন'র মতো জনপ্রিয় গানগুলোর সঙ্গে ফিরে যেতে পারেন অতীতের কোনো সুন্দর স্মৃতির পাতায়।
৪. দ্য ক্লাসিক (২০০৩)
আইএমডিবি রেটিং: ৭.৮/১০
পরিচালক কোয়াক জে ইয়ংয়ের আরেক মাস্টারপিস 'দ্য ক্লাসিক' আপনাকে মনে করিয়ে দেবে নিজের প্রথম প্রেমের দিনগুলোর কথা। নায়িকা জি হে তার বান্ধবী সু কিয়ং ও বান্ধবীর প্রেমিক সাং মিনের গল্প দিয়ে শুরু হয় সিনেমাটি। লাজুক বান্ধবী সু কিয়ংয়ের হয়ে তার প্রেমিক সাং মিনকে ইমেইল করে জি হে। একদিন মায়ের এক পুরোনো ডায়েরি খুঁজে পায় জি হে। ডায়েরি পড়ে সে জানতে পারে তার মায়ের প্রথম প্রেমের গল্প। আর সেই গল্পের সঙ্গে নিজের গল্পের মিল খুঁজে পায়। দুই ঘণ্টা সাত মিনিটের সিনেমাটিতে সমান্তরালে চলতে থাকে দুটি গল্প। দুই সময়সীমায় দুই প্রেমের গল্প আপনাকে নিয়ে যাবে আবেগপূর্ণ এক যাত্রায়। সিনেমার কোনো কোনো দৃশ্য আপনাকে হাসাবে, কোনো দৃশ্য চোখ ভিজিয়ে তুলবে, আবার কোনো দৃশ্য নিয়ে যাবে স্মৃতির পুরোনো কোনো গলিতে।
৫. স্বরলিপি (১৯৭০)/ দেয়া নেয়া (১৯৬৩)
ধনী শিল্পপতির ছেলে শফিক মাহমুদ পারিবারিক ব্যবসা সামলানোর বদলে গায়ক হিসেবে ক্যারিয়ার তৈরির স্বপ্ন দেখেন। এ নিয়ে বাবার সঙ্গে ঝগড়া করে বাড়ি ছেড়ে চলে যান তিনি, আশ্রয় নেন বন্ধুর বাসায়। সেখান থেকে ছদ্মনামে রেডিওতে গান করে অর্জন করেন ব্যাপক জনপ্রিয়তা। ঘটনাক্রমে একদিন তার দেখা হয় মিতার সঙ্গে। মিতাকে ভালো লাগায় 'হৃদয় হরণ' ছদ্মনামে তার ড্রাইভারের চাকরি নেন শফিক। এভাবেই এগিয়ে যায় সিনেমার গল্প। সিনেমার মূল চরিত্রে অভিনয় করেছেন রাজ্জাক ও ববিতা। এই সিনেমার 'গানেরই খাতায় স্বরলিপি লিখে' গানটি এখনো ফিরে মানুষের মুখে মুখে।
একই গল্প নিয়ে ১৯৬৩ সালে কলকাতায় মুক্তি পায় উত্তম কুমার ও তনুজা অভিনীত 'দেয়া নেয়া'। পুরোনো দিনের বাংলা সিনেমার জগতে হারিয়ে যেতে চাইলে দেখে নিতে পারেন এই দুটি সিনেমা।
৬. অলওয়েজ (২০১১)
আইএমডিবি রেটিং: ৭.৭/১০
সাবেক বক্সার চুল মিন ও অন্ধ টেলিমার্কেটিং কর্মী জাং হোয়ার প্রেমের গল্প নিয়ে তৈরি 'অলওয়েজ' সিনেমার প্লট এসেছে চার্লি চ্যাপলিনের 'সিটি লাইটস' থেকে। বক্সিং ছেড়ে একটি গ্যারেজে কাজ করেন চুল মিন, সেখানেই ঘটনাক্রমে তার দেখা হয় জাং হোয়ার সঙ্গে। তাদের মধ্যে তৈরি হয় বন্ধুত্ব, সেই বন্ধুত্ব ধীরে ধীরে রূপ নেয় প্রেমে। পরিচালক ইল গন সং নিপুণভাবে চরিত্রগুলোকে ফুটিয়ে তুলেছেন। অসাধারণ অভিনয়ের পাশাপাশি অনবদ্য সিনেমাটোগ্রাফি ও আলোর খেলায় বিভিন্ন খুঁটিনাটি দর্শকদের নজর কাড়ে। মর্মস্পর্শী এই সিনেমা দেখার সময় ভিজে উঠতে পারে চোখ, তাই হাতের নাগালে রাখুন টিস্যুর বক্স।
৭. প্রাইড অ্যান্ড প্রেজুডিস (২০০৫)
আইএমডিবি রেটিং: ৭.৮/১০
জেইন অস্টেনের ক্লাসিক উপন্যাস 'প্রাইড অ্যান্ড প্রেজুডিস' অবলম্বনে তৈরি এই সিনেমা হৃদয়ে উষ্ণতা ছড়িয়ে দেয়। অভিজাত শ্রেণির সিঙ্গেল ও অহংকারী মিস্টার ডার্সির সঙ্গে দেখা হয় প্রাণবন্ত এলিজাবেথ বেনেটের। এলিজাবেথের সঙ্গে আলাপের প্রথমদিকে উদ্ধত আচরণ করলেও ধীরে ধীরে তাকে পছন্দ করতে শুরু করেন মিস্টার ডার্সি। সর্বকালের অন্যতম সেরা প্রেমের উপন্যাস হিসেবে বিবেচিত 'প্রাইড অ্যান্ড প্রেজুডিস'র রুপালি পর্দার সংস্করণে অভিনয় করেছেন কিইরা নাইটলি, ম্যাথু ম্যাকফেইডেন, রোজামুন্ড পাইকসহ অনেকে।
৮. অ্যাবাউট টাইম (২০১৩)
আইএমডিবি রেটিং: ৭.৮/১০
২১তম জন্মদিনে টিম লেক বাবার কাছ থেকে জানতে পারে তার পরিবারের সব পুরুষ সদস্য টাইম ট্র্যাভেল করতে পারে। একদিন রাস্তায় টিমের দেখা হয় মেরির সঙ্গে। মেরিকে প্রেমিকা হিসেবে পেতে সে তার বিশেষ ক্ষমতা ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নেয়। তারপর কী হয় জানতে আজই দেখে নিতে পারেন সিনেমাটি। এর মূল চরিত্রে অভিনয় করেছেন র্যাচেল ম্যাকঅ্যাডামস, ডমন্যাল গ্লিসন। 'লাভ অ্যাকচুয়েলি', 'নটিং হিল'র মতো সিনেমা পছন্দ করলে এই চলচ্চিত্রটি হয়ে যেতে পারে আপনার অন্যতম প্রিয় আরেকটি সিনেমা।
৯. দ্য লাঞ্চবক্স (২০১৩)
আইএমডিবি রেটিং: ৭.৮/১০
মুম্বাই শহরে ভুল ঠিকানায় চলে যাওয়া একটি লাঞ্চবক্সকে ঘিরে বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে বিপত্নীক সাজান ও নিঃসঙ্গ গৃহিণী ইলার মধ্যে। লাঞ্চবক্সের সঙ্গে আদান-প্রদান করা চিঠির মাধ্যমে একে অন্যের সম্পর্কে জানতে শুরু করে। সামান্য একটি ছোট ঘটনা কীভাবে আমাদের জীবনে বড় পরিবর্তন নিয়ে আসতে পারে, তা সাবলীলভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে এই সিনেমায়। সিনেমাটোগ্রাফি, মূল চরিত্রের অভিনয়, অনন্য গল্প বলার ঢং আপনাকে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত স্ক্রিনের সামনে বসে থাকতে বাধ্য করবে।
১০. সিলভার লাইনিংস প্লেবুক (২০১২)
আইএমডিবি রেটিং: ৭.৭/১০
মানসিক হাসপাতাল ফেরত প্যাটের জীবনের একমাত্র লক্ষ্য স্ত্রী নিকির মন জয় করে আবার একসঙ্গে হওয়া। এমন সময় তার পরিচয় হয় টিফ্যানির সঙ্গে, যে প্যাটকে আশ্বাস দেয় নিকিকে তার জীবনে ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করবে। তবে শর্ত হলো টিফ্যানির সঙ্গে একটি নৃত্য প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে হবে তাকে। ২০১২ সালে মুক্তি পাওয়া ছবির মূল চরিত্রে অভিনয় করেছেন ব্র্যাডলি কুপার, জেনিফার লরেন্স ও রবার্ট ডি নিরো। এই রোমান্টিক কমেডি ঘরানার ছবি আপনার ভালোবাসা দিবসের উদযাপনকে করে তুলবে আনন্দময়।
১১. রেইনকোট (২০০৪)
আইএমডিবি রেটিং: ৭.৭/১০
ও হেনরির 'দ্য গিফট অব ম্যাজাই' অবলম্বনে ঋতুপর্ণ ঘোষের অনন্য সৃষ্টি 'রেইনকোট'। প্রচলিত বলিউড রোম্যান্স থেকে অনেকটা আলাদা এই সিনেমা। এক বৃষ্টিভেজা দিনে মনোজ ও তার প্রাক্তন প্রেমিকা নীরজার দেখা হয়, দুজন নিজেদের অতীতের স্মৃতিচারণ করেন। সঙ্গে নিজেদের বর্তমান নিয়ে গড়ে তোলেন অজস্র মিথ্যের জাল। উদ্দেশ্য—অপর পাশের মানুষটিকে জানানো যে তিনি ভালো আছেন। খুব সাধারণভাবে অসাধারণ একটি গল্প বলার ধরন এই সিনেমাটিকে আপনার হৃদয়ে জায়গা করে নেবে। অপূর্ব সিনেমাটোগ্রাফি, দেবজ্যোতি মিশ্রের সংগীতায়োজন আপনার মনে অদ্ভুত এক আকুতি তৈরি করবে।
১২. জানে তু…ইয়া জানে না (২০০৮)
আইএমডিবি রেটিং: ৭.৪/১০
বলিউডের 'ফিল গুড' রোম্যান্সের কথা বললে এই সিনেমার নাম থাকবে সামনের দিকে। এই সিনেমা দেখেছেন কিন্তু ভালো লাগেনি, এমন কাউকে খুঁজে পাওয়া কঠিন। সিনেমার মূল চরিত্র জয় ও অদিতি ভালো বন্ধু। একে অন্যের জন্য ভালোবাসার মানুষ খুঁজে বের করতে বদ্ধপরিকর দুজনেই। ইমরান খান ও জেনেলিয়া ডি সুজা অভিনীত এই রোমান্টিক কমেডির সঙ্গে ঘুরে আসতে পারেন স্মৃতির অলিগলিতে।
Comments