‘এ সিদ্ধান্ত জ্বালানি খাতের অন্ধকার জগতকে সুরক্ষা দেওয়ার জন্য’

শামসুল আলম
বাংলাদেশে চলমান জ্বালানি সংকট সম্পর্কে গত আগস্ট মাসে দ্য ডেইলি স্টার সেন্টারে এক আলোচনা অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক এম শামসুল আলম। ছবি: ভিডিও থেকে নেওয়া

গণশুনানি ছাড়াই জ্বালানির দাম সমন্বয়ের বিধান রেখে আইন সংশোধনের অনুমোদনের সিদ্ধান্তকে 'ভোক্তাদের জন্য দুর্ভাগ্যের ব্যাপার' ও 'উদ্বেগের বিষয়' বলে মন্তব্য করেছেন জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক এম শামসুল আলম। 

বিশেষ পরিস্থিতিতে সরকার নিজেই বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দাম সমন্বয় করতে পারবে, এমন বিধান রেখে আজ সোমবার বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন আইন (সংশোধন) অধ্যাদেশ ২০২২ এর খসড়ার চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।

অধ্যাপক এম শামসুল আলমের মতে, এ সিদ্ধান্ত জ্বালানি খাতের অন্ধকার জগতকে সুরক্ষা দেওয়ার জন্য নেওয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, 'এ সিদ্ধান্তের মাধ্যমে বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দাম নির্ধারণের ক্ষমতা দেওয়া হলো জ্বালানি বিভাগ ও বিদ্যুৎ বিভাগের হাতে। এ ক্ষমতা এতদিন বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) হাতে ছিল।'

অধ্যাপক শামসুল আলম বলেন, 'শাসন বিভাগ রেগুলেটরি ক্ষমতা পেতে পারে না। রেগুলেটরি কমিশনের পাশাপাশি সরকারের রেগুলেটরি ক্ষমতা থাকতে পারে না। এটা আইনের যে মূল ভিত্তি, উদ্দেশ্য ও স্পিরিট, সেটাকেই খর্ব করে।'

'এর মাধ্যমে গত ১০ বছরের বেশি সময় ধরে বিইআরসি যে একটি স্থায়ী কাঠামোর দিকে যাচ্ছিল, সেটা অকেজো হয়ে গেল,' যোগ করেন তিনি।

অধ্যাপক শামসুল আলম ভোক্তাদের সংগঠন কনজিউমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ ক্যাবের সিনিয়র সহসভাপতি। তিনি বলেন, 'এই আইনের (বিইআরসি আইন ২০০৩) উদ্দেশ্য ছিল এ খাতের ব্যবসায়ে প্রতিযোগিতা সৃষ্টি করা ও ভোক্তার স্বার্থ সংরক্ষণ নিশ্চিত করা, ভোক্তার স্বার্থকে সুরক্ষা দেওয়া।'

'কিন্তু নতুন এই সিদ্ধান্তের ফলে বিনিয়োগকারীদের জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ডও সৃষ্টি হবে না, ভোক্তাদের স্বার্থও সংরক্ষণ হবে না,' বলেন তিনি।

বিইআরসি বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম নির্ধারণের আগে যে গণশুনানি করতে, তার মাধ্যমে এই খাতের সব অংশীজনের অংশগ্রহণ নিশ্চিত হচ্ছিল উল্লেখ করে তিনি বলেন, 'এগুলো থাকার পরও সরকার দীর্ঘদিন ধরে যা খুশি তাই করে আসছিল। এই আইনের আগে আরও খারাপ অবস্থা ছিল, এখন আবার সে জায়গায় ফিরে গেল।'

হঠাৎ কেন সরকারের এ ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হলো? এ প্রসঙ্গে অধ্যাপক শামসুল আলমের মন্তব্য, 'আমরা অনেকদিন ধরেই বলে আসছিলাম এই খাতের অযৌক্তিক ব্যয়, অদক্ষতাজনিত ব্যয়ের কথা। সেগুলো চিহ্নিত হচ্ছিল, এ খাত থেকে পাচারকৃত অর্থ কত, সেটা নিয়ে আলোচনা হচ্ছিল। ফলে সরকার ও আমলাদের মধ্যে একটা চাপ তৈরি হচ্ছিল।'

'কিন্তু সরকার এই বিষয়গুলো চিহ্নিত না করে, যেন এ বিষয়ে কেউ প্রশ্ন তুলতে না পারে, সেদিকে গেল। জ্বালানি খাতে একটা অন্ধকার জগত তৈরি হয়ে আছে। এই জগতকে সুরক্ষা দেওয়ার জন্যই এই সিদ্ধান্ত,' বলেন তিনি।

অধ্যাপক শামসুল আলমের মতে, জ্বালানি খাতে সরকার যে প্রতিনিয়ত ঘাটতি দেখিয়ে ভর্তুকি দিচ্ছে, গ্যাস-বিদ্যুতের দাম না বাড়িয়ে শুধু এ খাতের অনিয়মগুলো কমিয়ে এনেই সেই ঘাটতি মেটানো সম্ভব।

তিনি বলেন, 'যখন এসব কথা বলা হচ্ছে, অনিয়মগুলো যখন প্রকাশিত হচ্ছে, তখনই এই অনিয়ম উন্মোচনের পথ বন্ধ করে দেওয়া হলো। এগুলো নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি যদি বন্ধ হয়ে যায়, অন্য অনেক সেক্টরের মতো এই সেক্টরের অনিয়ম-দুর্নীতিগুলোও অন্ধকারে ঢেকে যাবে। সরকার সমস্যার সমাধান না করে এগুলো ঢেকে রাখার পথেই গেল। নিজেকে এই অনিয়মের অংশ করে ফেলল, যা খুবই দুর্ভাগ্যের ব্যাপার। ভোক্তাদের জন্য উদ্বেগের বিষয়।'

 

Comments

The Daily Star  | English

Fitch flags risk to Bangladesh after Trump tariffs

Bangladesh is among several Asia-Pacific economies at risk of credit pressure from escalating US tariffs, Fitch Ratings warned yesterday, as trade tensions continue to rattle global markets.

6h ago