ডলার সংকটে বাড়ছে লোডশেডিংয়ের আশঙ্কা

ডলার সংকটে ফার্নেস তেল নির্ভর বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো জ্বালানি ঘাটতিতে পড়ছে। এর ফলে আসন্ন গ্রীষ্মের মাসগুলোতে দেশে লোডশেডিং বাড়তে পারে।
ফাইল ফটো

ডলার সংকটে ফার্নেস তেল নির্ভর বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো জ্বালানি ঘাটতিতে পড়ছে। এর ফলে আসন্ন গ্রীষ্মের মাসগুলোতে দেশে লোডশেডিং বাড়তে পারে।

বাংলাদেশ ব্যাংকে বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী সংস্থার পাঠানো একটি চিঠি অনুসারে, পর্যাপ্ত জ্বালানি আমদানির জন্য আগামী মার্চ থেকে জুনের মধ্যে এই বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর ১ দশমিক শূন্য ৫ বিলিয়ন ডলার প্রয়োজন হবে, যা মার্চ থেকে জুনে বিদ্যুৎ উৎপাদনে প্রয়োজনীয় জ্বালানির যে অনুমান বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) করেছে তার চেয়ে এক-চতুর্থাংশ বেশি।

এসব বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে উৎপাদিত বিদ্যুৎ ব্যয়বহুল এবং বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমছে বিধায় সরকার গ্যাসের মতো তুলনামূলক সস্তা জ্বালানিতে চলা বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোকে অগ্রাধিকার দিতে পারে।

দেশের বিদ্যুতের মোট চাহিদার ২৭ শতাংশই বেসরকারি কেন্দ্রগুলো থেকে আসে। কাজেই, এসব বিদ্যুৎকেন্দ্র উৎপাদন করতে না পারলে গ্রীষ্মে বড় আকারে লোডশেডিং হতে পারে বলে আশঙ্কা তৈরি হচ্ছে।

বাংলাদেশ ইন্ডিপেনডেন্ট পাওয়ার প্রডিউসারস অ্যাসোসিয়েশন গত ২০ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ ব্যাংককে পাঠানো চিঠিতে বলেছে, ফার্নেস অয়েল বা এইচএফও, বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য লুব ও খুচরা যন্ত্রাংশ আমদানির জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের সহায়তা ছাড়া দেশের জ্বালানি নিরাপত্তা ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে।

সমিতির সভাপতি ফয়সাল খানের সই করা চিঠিতে বলা হয়েছে, বাজারে ডলারের ঘাটতির কারণে সদস্য প্রতিষ্ঠানগুলোর পক্ষে প্রয়োজনীয় এইচএফও আমদানি করা সম্ভব নয়। বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর জন্য প্রয়োজনীয় জ্বালানি ও যন্ত্রাংশ আমদানি করা যাচ্ছে না।

চিঠিতে বলা হয়েছে, মার্চ থেকে জুনের মধ্যে এই বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর জন্য ২১ দশমিক ২ লাখ টন এইচএফও প্রয়োজন।

বাংলাদেশ ব্যাংককে আহ্বান জানানো হয়েছে যেন ঋণপত্র (এলসি) খুলতে স্থানীয় বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো ডলার সরবরাহ করে।

যোগাযোগ করা হলে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক মেজবাউল হক বলেন, 'সরকার যে সিদ্ধান্ত নেবে সেই অনুযায়ী কেন্দ্রীয় ব্যাংক সহায়তা দেবে। বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো ইতোমধ্যেই বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছ থেকে ১ বিলিয়ন ডলারের বেশি পেয়েছে।'

পিডিবির ২০২২ সালের প্রতিবেদন অনুসারে, ডলারের রিজার্ভ কমে যাওয়ার কারণে সরকার গত বছর এইচএফও এবং ডিজেল কেনার জন্য বরাদ্দ বাজেটের মাত্র অর্ধেক ব্যয় করেছে।

রিজার্ভের ঘাটতির মধ্যে সরকার তরল জ্বালানি আমদানি কমানোর পরেও বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য প্রয়োজনীয় তরল জ্বালানির খরচ ২০২১-২২ অর্থবছরে আগের বছরের তুলনায় দ্বিগুণ হয়েছে।

বেশিরভাগ বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্র তরল জ্বালানি নির্ভর হওয়ায় তাদের উৎপাদিত বিদ্যুতের দাম ৭৭ দশমিক ৪৩ শতাংশ বেড়েছে।

এত টাকা খরচ করার পরেও জ্বালানির অভাবে গত বছর গ্রীষ্মে বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো বন্ধ ছিল। এর ফলে তখন দেশে ব্যাপকভাবে লোডশেডিং করতে হয়।

বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর জ্বালানি চাহিদা মেটাতে সরকার ব্যাংকগুলোকে পর্যাপ্ত ডলার সরবরাহ করতে না পারলেও ক্যাপাসিটি চার্জ পরিশোধ করতে আইনত বাধ্য।

ডেইলি স্টারের একটি বিশ্লেষণ অনুসারে, ২০১৯ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোকে যে ক্যাপাসিটি চার্জ দেওয়া হয়েছে তা তাদের কাছ থেকে কেনা বিদ্যুতের মোট ব্যয়ের প্রায় ৪৫ শতাংশ।

পিডিবি সূত্রে জানা যায়, বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো সরকারের কাছে ১৪ হাজার কোটি টাকা পাবে যা ডলারের অংকে ১ দশমিক ৪ বিলিয়ন ডলারের বেশি।

Comments

The Daily Star  | English

Rooppur Nuclear Power Plant: First unit to start production in Dec

One of the two units of the Rooppur Nuclear Power Plant will be commissioned this December if transmission lines are ready although the deadline for the project’s completion has been extended to 2027.

5h ago